somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়ে ফ্যান্টাসি (শুভ-পুস্পিতার প্রেম)

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুন্দর কোনো এক দিনের সকাল ১১:১৬। কাঁধে ব্যাগ নিয়া চা খাওয়া শেষ করে একটু বড় ডিস্টেন্সের হাঁটা দেবো বলে ঠিক করলাম, এমন সময় খালি পেটে থাকা মোবাইলটা কান্না জুড়ে দিলো। খাইছে, খুবই আকাঙ্ক্ষিত নাম্বার, কিন্তু রিসিভ করতে ভয় পাই। অবশ্য রিসিভ না করেও থাকা যায় না। সবুজ বাটন টিপ দিলাম।

: হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।

: এই বিয়ে করবা আমাকে?

হাত থেকে ৪৯০০০ টাকার এলজি মোবাইল পড়ে প্রায় তিন টুকরা; কোনো মতে তুলে নিয়া বিদ্যুৎ বেগে ফোন ফ্যাক্সের দোকানের দিকে দৌড়, এরপর ত্রিশ সেকেন্ড পরে দিলাম কল

: হ্যালো, তুমি ঠিক আছো? তুমি এখন কই?

: আমি এখন আমানিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, বিয়ে করতে চাইলে ১ ঘন্টা সময় দিলাম চলে এসো।

: মানে কি? কিছু তো বুঝলাম না

পুস্পিতা কথা না বলে লাইন কেটে দিল। এক মুহুর্ত চিন্তা করলাম, মানিব্যাগে হাত দিলাম; নাহ, আজকে এনেছি , ভেতরে ডেবিট কার্ডটাও আছে, বাঁচা গেলো অটোরিক্সার দিকে দৌড় দিলাম

: হেই হেই মামা.... চলেন মাইঝদি।

: যাওন যাইবো না ঐদিকে এক ট্রিপ মাইরতেই দিন পার
অইয়া যাইবো জামে।

: এক টিপে আপনার যত টাকা উঠে দিব, চলেন চলেন।

ভ্রুউম ভ্রুউউম; সিএনজি ছেড়ে দিলো; ঠিক ৫১ মিনিটের মাথায় চৌরাস্তা থেকে আমানিয়ার সামনে; দেখলাম পুস্পিতা দাঁড়িয়ে আছে, হাতে একটা ছোট পার্স

(প্রথমে ওঁর প্রশ্ন)
: পরিচিত কোনো কাজি অফিস চেনো?

: তোমার কী মনে হয়, আমি আগেও কাজি অফিসে বিয়ে করেছি?

: ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলবা না, বিয়ে করতে এসেছো বিয়ে করে চুপচাপ আমাকে নিয়ে যাবা।
(মেজাজ পুরাই ফরটি নাইন )

: আচ্ছা ঠিক আছে। কাছে নতুন বাস স্ট্যান্ড এর এখানে একটা কাজি অফিস চিনি , ঐখানে যাবা?

: চলো

: আচ্ছা চলো, আগে একটু ওইদিকে যাই

: কেনো, ওদিকে কেনো?

: বিয়ে করতে হবে না, টাকা লাগবে না? বুথ থেকে টাকা তুলবো।

: বুথ কাজী অফিসের সামনেও পাবা, ঘুরে যাওয়ার দরকার নেই চলো।
(চোখ পাকিয়ে ঝাড়ি)

২ জনে হাঁটছি, কিছুক্ষণ উসখুস করে জিজ্ঞাসা করলাম
: তোমার বিয়ে করার সিদ্ধান্তে আমি পুরাটাই আনন্দিত; আচ্ছা বাসায় কী কিছু হয়েছে?

: (পুস্পিতা চুপ)

: এই মানে বলছিলাম কী, বিয়ে করে কী তোমার বাসায় তুমি চলে যাবে?

: (কড়া ভাষায়) তুমি কী বলতে চাও? মেয়েরা কী বিয়ে
করে বাবার বাড়িতে থাকার জন্যে বা যাবার জন্যে?

: না না না; তা তো অবশ্যই না। তবে আমি তো মেচে থাকি সেখানে তো তোমাকে নেওয়া যাবে না , তবে
এটা নিয়ে আমি চিন্তিত না, কতো ঘর-বাসা আছে। হুঁহ!

আমরা চুপচাপ হাঁটছি। কয়েকটি চিন্তা আমার মাথায় ঘুর দিচ্ছে প্রথম চিন্তা বিয়ের আগমুহুর্তে মত যেন আবার না পাল্টায়; দ্বিতীয় চিন্তা, হঠাৎ এমন বিয়ের জন্য ডাকার কারণ কী?, তৃতীয় চিন্তা মাসের এই মাঝে বাসা ভাড়া পাওয়া যাবে না, ভালো হুটেলে থাকলে টাকা যাবে বর্ষাকালের গাঙের পানির মতো। চতুর্থ চিন্তা আমি এখনো স্টুডেন্ট সেও স্টুডেন্ট এত খরচ কিভাবে আমি কালেক্ট করব। এই চিন্তা করতে করতেই বুথের সামনে এসে দুজনে বুথে ঢুকলাম
: এই বিয়ে করতে কত টাকা লাগতে পারে, কত তুলব?

: আমিও তো আগে বিয়ে করিনি আমি কিভাবে বলব?

: আচ্ছা আচ্ছা, আমি শুনেছিলাম হাজার চারেক নাকি
লাগে, আমি হাজার পাঁচেক তুলছি।

:এ্ত তুলতে হবে না, আমার কাছে কয়েক হাজার আছে, টাকার অনেক প্রয়োজন হবে আমাদের।

: ঠিক আছে

: অ্যাই শোনো সাক্ষীর বন্দোবস্তো তো হয় নি

:তা তো ঠিক তোমার কোন বান্ধবী বা বব্ধু আছে?

: আমি কাউকে আনি নি, আনব না, তুমি ব্যবস্থা কর। এবং দয়া করে তাড়াতাড়ি কর, আমি টেনশন নিতে পারছি না।

ঠিক পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর কাজির সামনে। আমি আর পুস্পিতা সাথে চার সাক্ষী। এক বড় ভাইকে অফিস থেকে ডেকে আনলাম, আর ৩ জন ভার্সিটির ফ্রেন্ডরে ।

বড় ভাই এসে গল গল করে বলতে শুরু করল
: শুভ!, তুমি মিয়া পুরাই আনপ্রেডিক্টেবল ,এখন যাচ্ছি দুপুরের খাবার খেতে, এদিকে বিয়ার সাক্ষী হয়া গেলাম কিছু কি খাওয়াবা?

বিয়া করে বাহির হলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে কিছু টাকা বেঁচে গেল। বড় ভাই (এবি) আমারে টাকা দিতে দিলেন না। নিচে এসে দাঁড়ালাম।পুস্পিতার রাগ পুরোপুরি শেষ, তবে যে মন খুশি তাও না। বিশাল
রহস্যের চাদরে ঢাকা, এমতাবস্থায় তাকে আর প্রশ্ন না করে ঘাটানোই উত্তম কাজ।

: এখন কী করবা বলে ঠিক করলা?
বড় ভাই নীরবতা ভাঙল

: আপাতত কিছু না, বুঝছিনা কি করব

: তো কই যাবা?

আমি চুপ করে আছি তারপর বললাম
: চলেন আপনাদের বিবাহত্তোর খানাপিনা খাওয়ায়।

মাইঝদিতে রাজমহল নামে একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট
আছে। খাবার ভালো, তবে দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেক আগে একবার পেট ভরে খেতে পারিনি, আজ
টাকা আছে ঘাটতি টা পূরণ হবে।

: চলো।

: শুভ আমাদের কে বাসা যেতে হবে, খুব আর্জেন্ট
পাশ থেকে বন্ধুরা চিক্কুর

: তো বিয়াটা খেয়ে তারপর যা।

: অতো খায় না, হটেলের লোকের রান্না খাবনা। যার
বিয়া, তার বউয়ের হাতের রান্না খাব।

: যা তাইলে।

শালা বন্ধু বিপদেও কাছে পাওয়া যাইনা।এমনি তে সারাদিন নাস্তা করার জন্য পোষা কুত্তার মত ঘেউ ঘেউ করে।বন্ধুরা চলে গেলো। বড় ভাই গাড়ি নিয়ে আসছেন সেটাতে চড়েই রেস্টুরেন্টের দিকে রওনা হলাম। সামনে
ড্রাইভারের পাশে এবি। পেছনে নিশ্চুপ বাচাল আমি আর নিচুমুখে পুস্পিতা। পুস্পিতা বলার চাইতে মনে হই বউ বলাটা শ্রেয় হবে। আবহাওয়ার রিপোর্ট পেন্ডিং।যেকোন মুহূর্তে বৃষ্টি ঢেলে দিতে পারে। রেস্টুরেন্টে এসে স্বভাবস্বরূপ কোণার টেবিল দখল করলাম। বড় ভাই কথা কথা বলার সুযোগ দিয়ে চলে গেলো। যাবার আগে বলে গেলো....

: তোমরা অর্ডার দাও, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। (সুযোগ
দেওয়ার কী যুক্তি! )

বড় ভাই চলে গেছেন। আমি আর পুস্পিতা থুক্কু আমার বউয়ের নীরবতা প্রথমে আমিই ভাঙি।

: বুঝলে এবি আমার চোখে দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষদের মাঝে একটা। চরম একটা মানুষ। দেখছো, কথা বলার সুযোগ দিয়ে কেমন চলে গেলো?

: দেখেছি।

: শোনো, তোমার কী মন খারাপ?

: না, চিন্তায় আছি।

: আমি বুঝতে পারছি। এখন কী করতে চাও?

: ঠিক জানি না, তবে বাসায় যেতে হবে বাবা-মাকে
জানাতে হবে।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার

: তা ঠিক বটে! (আমি চিন্তিত মনে বললাম )

: যদি বাসায় খারাপ কিছু হয়ে যায়, এই মার খেতে তোমার আপত্তি নেই তো?

আমার কপালে চোখ!! চিন্তা বেড়ে গেলো, বিয়ের প্রথম দিনে শ্বশুর শাশুড়ির মাইর! এই কেমন জামাই আদর খোদা!!!!
: না না তোমার জন্য মাইর খাওয়া এ আর এমন কী?
তোমাকে না মারলেই হলো....

: আমাকে না, তোমাকে নিয়েই চিন্তিত আমি।

: হুম!

(বড় ভাইয়ের আগমন)
: তোমরা এখনো অর্ডার দাও নি?শুভ তুর কি এখনো কান্ড জ্ঞান হইনি। ভালো আমি দিচ্ছি।
বড় ভাই অর্ডার দিলেন, এরপর মুখ খুব কঠিন করে আমাদের দিকে তাকালেন
: শোনো অর্ডার আসতে সময় লাগবে। এর মধ্যে কিছু কথা বলে নিই....। বিয়ে করেছ, এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। প্রথম রাত কোথায় কাটাবে কিছু ভেবেছো? বৌমা তুমি বলো।

: না (নতুন বৌয়ের শর্টকাট উত্তর)

: ভালো। আমি ঠিক করেছি তোমরা আমার বাসায়
কাটাও। ও বিয়েতে আসার সময় তোমাদের ভাবীকে
বলে এসেছি সিচুয়েশন। বর্তমানে সে তাঁর দুই বোনকে
নিয়ে ফুলশয্যা সাজানোর প্ল্যান করছে। সো প্রথম রাত
তোমরা আমার বাড়িতেই কাটাচ্ছো। এবার বলো নিজ
নিজ গার্ডিয়ানদের জানানোর ব্যাপারে তোমরা কে
কী ঠিক করেছো? (আমার দিকে তাকিয়ে) তুমি আগে
বলো।

: আমার তেমন টেনশন নেই আম্মুকে মেনেজ করতে পারলে হল।তবে এখন বাসায় জানাবো না।আর মাসের শেষে বাসা ভাড়া পাওয়া যাবে না, তাই আমরা ভালো কোনো হটেলে দিনগুলো পার করতে পারি। এক ঢিলে দুই পাখি মারার নিয়তে আমার প্রস্তাব হল, হটেলে কাটানোর সময়টা আমরা বাইরে হানিমুন করে কাটানো টা ভালো হবে? আর বাসায় বলে দিবো যে,ভার্সিটি থেকে ট্যুর। যেতে হবেই। সেখান থেকে আবার একটু প্রমোদ ভ্রমণে যাবো, আসতে দিন দশেক দেরি হবে....

: বুদ্ধি খারাপ না, গল্প বানাতে তোমার কষ্ট হবে না।
আচ্ছা বৌমা তোমার কী অবস্থা?

: আমি আজই জানাবো বাসায় গিয়ে, শুভ আর আমি এক সাথে যাব (পুস্পিতারর বর্ষণকারী উত্তর)

: তাই ভালো। এখান থেকেই
যাবা বলে ঠিক করেছো?

: জ্বি।

: ভালো। শোনো, আমি আমার গাড়ি দিয়ে যাচ্ছি। ড্রাইভারকে বলা আছে। মাইঝদির ভেতরে সব জায়গায়
যেতে পারবে। তোমার কী মনে হয় বাসায় ব্যাপারটাকে সহজভাবে নেবেন। আর ফিরে আসতে কতো সময় লাগবে?

: দু ঘন্টা

: আচ্ছা দু ঘন্টা পর আমি কল দেবো ওর নাম্বারে (আমার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন)।

খাবার চলে এসেছে। চুপচাপ খাওয়া শেষ করলাম। নিজের বিয়ের খাওয়া হিসেবে বিলটা আমিই মেটালাম। রেস্টুরেন্ট থেকে নেমে বড় ভাই চলে গেলেন। গাড়ি নিয়ে সোজা শ্বশুর বাড়ির দিকে যাচ্ছি। গাড়িতে প্রস্তুতিমূলক কথাবার্তা হচ্ছে।

: বাড়িতে কোনো হিন্টস দিয়ে এসেছিলে?

: না।

: তাঁরা চমকে যাবেন না?

ওঁ এ কথার কোনো জবাব দেবার প্রয়োজন মনে করলো না। যা হোক বাকি পথ কথা হলো না। শ্বশুর় বাড়ির সামনে নামলাম। দরজার কলিংবেল চাপার আগে পুস্পিতার কড়া হুশিয়ারি...

: প্রথমেই সালাম করতে যাবা না; মার খেলেও কিছু
বলবা না, আমি মার খেলেও চুপ করে থাকবে।

আমার পত্রপাঠ সম্মতি জ্ঞাপন। শ্বাশুড়ি আম্মা দরজা
খুললেন। আমি আর পুস্পিতা হাত ধরে বাড়িতে ঢুকলাম। শ্বশুর-শাশুড়ি আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।বুক টা যেন কাঁপতেছে আমার।
(শ্বশুর-শাশুড়ির সামনে পুস্পিতার প্রথম বক্তব্য)

: মা-বাবা, এই যে ছেলেটা দেখছো, একে কিছুক্ষণ আগে আমি বিয়ে করেছি। তোমাদের মতামত নেই, আমি জানি,কারণ সে এখনো স্টুডেন্ট তার আমি এই নই যে সে লাইফ সাইন করতে পারবেনা। আমার তাকে পছন্দ তার সাথে যেহেতু আমার বিয়ে তোমরা দিচ্ছো না, তাই ব্যাপারটা প্রতিশোধ ও অভিমানমূলক বলতে পারো, তবে সুবিবেচনা । আর এটুকু জেনে রেখো এই ছেলেকে বিয়ে করে আমি ভুল করিনি, কারণ সে আমার যোগ্য এবং আমাকে সে অনেক ভালোবাসে। আর আমি কখনো চাইনি আমার সাথে আমার ১৫/২০ বছরের বড় একজন বুড়ার সাথে বিয়ে হোক।

শ্বশুর আব্বার হাত থেকে পত্রিকা ভূপাতিত হল। শাশুড়ি আম্মা টলায়মান অবস্থায় পাশ্ববর্তী টুলে বসে গেলেন। শ্বশুর আব্বা এগিয়ে আসলেন, ও পঞ্চাশোর্ধ
বলিষ্ঠ ডান হাতের চার আঙুল পুস্পিতার গালে বসে দিলেন। শক্তির বিনাশ নাই। কিছুটা গালে তাপশক্তি আকারে গাল লাল করে দিলো, কিছুটা শব্দ আকারে ঘর কাঁপালো, বাকিটা শক্তি চাপ শক্তি আকারে ওঁকে ফেলে দিচ্ছিলো প্রায়।পুরাটাই যেন শক্তির নিত্যতার সুত্র। আমি চুক্তি মোতাবেক কাপুরুষের ন্যায় ওঁকে রক্ষা করলাম না, শুধু পড়ন্ত ওঁকে ধরে ফেললাম। সুন্দরভাবে দাঁড় করিয়ে একটু পেছনে সরে আসলাম। ভাবখানা এমন যে নেন আবার মারেন।


: ওঁকে নিয়ে বেরিয়ে যাও।
আমার দিকে তাঁকিয়ে শ্বশুর আব্বার হুঙ্কার

গ্রিন সিগনাল পাওয়া মাত্র আমি সবাইকে সালাম দিয়ে
ওকে টেনে নিয়ে হিড় হিড় করে বেরিয়ে গেলাম। গাড়িতে উঠে লক্ষ্য করলাম ওর লাল গালে এক ফোটা অশ্রু।

: কই যাইবেন স্যার (ড্রাইভারের প্রশ্ন)

: পার্কে চল

: আইচ্ছা

ত্রিশ মিনিট পর পার্কের এক বেঞ্চে বসে আছি দুজন।
প্রথমে আমি-ই নীরবতা ভাঙি।

: খুব কষ্ট হচ্ছে? গাল জ্বলছে খুব?

: গালটা একটু জ্বললেও মনটা হাল্কা লাগছে।

: মানে?

: মনে আশংকা ছিলো খারাপ কিছু না হয়, শেষ পর্যন্ত
হলো না বেঁচে গেছি।

: বুঝলাম না।

: মা হার্ট অ্যাটাক করে নাই, বাঁচছি। বুঝলে কিছু?

: এখনো তো সময় যায় নি।

: তখন না হলে এখন আর হবে না, কারণ তখন ছিলো চরম মুহুর্ত।

: ও

: অ্যাই মার্কেটে চলো।

: কেনো কী কিনবা?

: তোমার কী মনে হয়, আমি এই পার্সে করে আমার সব
জামা-কাপড় নিয়ে চলে এসেছি?

: অবশ্যই না, অবশ্যই না। আফটার ইউ, মাই লেডি।

মার্কেটের পুস্পিতার অদ্ভুত আচরণ দেখে জিজ্ঞাস করলাম
: বিয়ের শাড়ি কিনবে না? এগুলো কি দেখ

: বিয়ের যখন নরমাল শাড়ি পরে করেছি, বাসরও নরমাল শাড়িতেই করবো।

: এটা কী বলো, এটা কোন কথা হল? বিয়ে রাস্তায়
করছি, এখন বাসরও রাস্তায় করবো? গয়নাগাটি কিনবে
না?

: না, এখন টাকার দরকার হবে। তবে তুমি চাইলে একটা
রিং দিতে পারো।আর আমি একটি নীল শাড়ি নিব তুমি নীল পাঞ্জাবি। ঠিক আমাদের নীল ভালোবাসার নীল স্বপ্ন টুকু যেমন ছিল।

: আচ্ছা চলো।

ওর পছন্দমতো একটা রিং কিনলাম, চুপি চুপি পরিয়েও
দিলাম। এবার বাসায় যাওয়ার মুহুর্ত।

:পুস্পো তুমি এখানে বস।আমি রোমে যাব কিছু কাপড়-চোপড় নিব আর আম্মুকে কল দিয়ে ট্যুরের গল্প সাবমিট করে কিছু টাকা নিব

: এই কতক্ষণ লাগবে

: বড় জোর পনের মিনিট । তুমি আবার কোথাও যেও না।

: কী আবোল-তাবোল বকছো? আমি কোথায় যাব?

: তা তো জানি না, তবে পাওয়ার পরই আসে হারানোর
ভয়।

: দর্শনের উক্তি না দিয়ে যাও। আমি ওয়েট করছি।

: আচ্ছা।

: এই শুন তাড়াতাড়ি আসিও

রোমে কাউকে পাওয়া গেলনা।দেরি না করে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। ব্যাগ-প্যাক ঝুলিয়ে বেশ খানিকটা এসে আশেপাশে তাকিয়ে গাড়িতে উঠলাম। এবার সোজা এবির বাসায় যাবো।

:এতক্ষণ লাগে আসতে

: কই বরাবর সময়ে তো আসলাম

: কচু

: ওয়েট আম্মুকে ফোন দিই

রিংগিং

: হ্যালো আম্মু

: কেমন আছ শুভ

: ভালো, আপনা কেমন আছেন?

: ভালো

: আর্জেন্ট কিছু টাকা দরকার,হাজার দশেক

: দশ হাজার টাকা!! এত টাকা দিয়ে কি করবি

: না ভার্সিটি একটি কোর্সে ভর্তি হব সেখানে পাঁচ লাগবে আর পাঁচ ফ্রেন্ডের সাথে ট্যুরে যাচ্ছি

: বলা নেই কওয়া নেই কীসের আড্ডা দিতে ট্যুরে যাবি?
কই যাবা?

: এই দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গ। এক্সজাক্ট জেলা ঠিক না হলেও
টাইম ঠিক হয়েছে। ৮/১০ দিন।

: এতো দিন?তোর যাওয়ার দরকার নাই।মন দিয়ে লিখাপড়া কর

: না না যেতেই হবে, কোনো উপায় নাই। কথা দিয়া ফেলছি। ভদ্রলোকের এক কথা।আমার বুথে টাকা দিয়ে দিও।আল্লাহ হাফেজ।


: শুভ

: হ্যা বল

পুস্পিতা আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর হাত দিয়ে কিছু টাকা আমার দিকে এগিয়ে দিল

: এখানে দশ হাজার টাকা আছে, এগুলো তুমি রাখ। প্রয়োজনে খরচ করবে

আমি অবাক হয়ে পুস্পিতার দিকে তাকিয়ে আছি

: শোনো, তোমার এবি ফোন দিয়েছিলো। বাসায় যেতে
বলেছে তাড়াতাড়ি। পুস্পিতা বলল

: কোনো সমস্যা?

: না, তোমাকে বলেছে, বউ নিয়ে প্রথম দিনই এতো ঢ্যাং
ঢ্যাং করে ঘুরে বেড়াচ্ছো কেনো?

: এইতো এখনই যাচ্ছি।

এবির বাসায় ঢুকে দেখি সে বিশাল বড় ব্যাপার-স্যাপার।
তার দুই শ্যালিকাকে নিয়ে এবি ভাবী ঘর সাজাচ্ছেন।
ঘরে ঢুকতেই খুব আনুষ্ঠানিকভাবে পুস্পিতাকে অন্য ঘরে নিয়ে গেলেন। বলে গেলেন একেবারে দেখা হবে বাসরে। আমার জন্যেও সারপ্রাইজ ছিলো। আমার সব বন্ধু এ বাসায় বসে আছে। আমাকে দেখে বলল

: কখনো কি বন্ধুকে বিপদে ফেলে থাকতে পারি।তোকে সারপ্রাইজ দিতে অভিনয় করলাম।
খিলখিল করে হেসে বলল রানা

: শালা আমার তো রাগের আকাশে চিল উড়েছিল তখন,

তারা সবাই হু হু করে হেঁসে উঠল আমিও না হেঁসে পারলাম না। এবির দায়িত্ব পড়েছে রান্নাঘরে, বেচারা। আয়োজকদের বড় জ্বালা।

: শুভ এই দিকে আই ,তুরে বিয়ের পোষাক পরাই দিমু। খালি আন্ডারওয়্যার পরে খাড়াইয়া থাকবি। রানা বললে সবাই হেসে উঠল

: মজা নিস না? টেনশনে আমি মরি।

: বন্ধু আমরা ক্যামনে মজা নিব,মজা তো তুই নিবি আজ ভাবীর সাথে।
নাকিব বড় গলায় ফ্যাঁক ফ্যাঁক করে বলল। আর এমনিতে হাসির আরেকটি আভা

সবার মাঝে আশরাফ বলে উঠল
:আই দোস্ত বিয়ের শেরওয়ানি পরে দিই

: আমি কোন শেরওয়ানি পরব না। নীল জামা পরে নীল ভালোবাসা সার্থক করব

: এইডা কোনো ব্যাপার না, পুস্পিতা কেও নীল শাড়ী পরানো হচ্ছে, নীল প্রেমের জন্য।
হঠাৎ এবির আগমন ও প্রথম বক্তব্য

: শোনো বাসার ঝামেলা কেমন?

: আজকে হামলা করবে না এইটা মোটামুটি সিওর। আর
আমার বাসা জানে আমি এখন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গের ট্রেনে।

: ভালো। তবে মোবাইল বন্ধ রাখবা না কারোর। তাহলে
টেনশন বাড়বে।

: তা ঠিক বটে।

: তুমি বাসা থেকে কী কী আনছো?

: এই ব্যাগপ্যাক। এতে প্রায় সবই আছে। ভাইয়া, কালকেই চলে যাবো।

: কোথায়? হানিমুনে?

: জ্বে, তারপর আপনি এই ফাঁকে একটা বাসা আর সম্ভব হলে একটা পার্ট টাইম চাকরি দেখে ফেলবেন।

: ভালো কথা মনে করেছো, তুমি এখন বৌকে খাওয়াবা
কী?

: ব্যাংকে যা আছে কয়েকমাস চলে যাবে। নেটের
ফ্রিল্যান্স কাজটা আপাতত বাড়িয়ে দিতে হবে। আগে
যা আসতো, এখন একটু বেশি আসবে।

: ওসব দিয়ে হবে না। চাকরি দেখো।

: আমিও তাই বলি। আপনি দেখেন। আমি তো হানিমুনে
চাকরি খুঁজে বেড়াতে পারি না।

: তা বটে, তা বটে।

: হানিমুন থেকেই নিজের বাসায় উঠে যাবা? এ তো
ভালো টাকার ব্যাপার।

: কী করবো, বউয়ের মান-সম্মানের ব্যাপার আছে না। ভাইয়া আপনে লাখ খানেক টাকা ধার দিয়েন।

: ফাইজলামি করো?

: না, ফাইজলামি না। তবে আপনি রেডি থাকবেন। লাখ খানেকের ব্যাপারটা সত্যি হবার পারে।

: হ, আমার বউরে নিয়া রাস্তায় বসি, আর তুমি আমার
বাসায় উঠে আসো। যত্তোসব, যাও মিয়া নীল জামা পরো।
: হুঁ।

: তুদের কথায় বাম হাত-পা কোনোটাই ঢুকাইতে পারলাম না, খালি শুনে গেলাম, আফসোস। নাকিব বলল

: দোস্ত ব্যাপার না টাকা দরকার হলে আমরা কিছু দিব
নাইম বলে উঠল

হঠাৎ এবি ভাবির বিদ্যুৎ বেগে আগম
: এই যে নীল প্রেমিক। বিয়ে করেছো, বউয়ের জন্য কেনাকাটা তো কিছুই করোনি।

: উই করতে দেয় নাই ভাবী। আমার দোষ নেই। সে বলে বিয়ের মতো সবই হবে সিম্পল। উদাহরণ: ম্যাগি নুডলস।

: এই সব ফাজলামি করতে হয় না। বিয়ে কী বারবার করে কেউ?

: হুম! (মনে মনে ভাবলাম, অনেকেই করে )

: থাক হুম করতে হবে না। আমি সব গুছিয়ে এনে
রেখেছিলাম। বিয়ের সময় তোমার ভাইয়ের কল দিছিলো তখন শপিং করে রেখেছি। তুমি এখন তৈরি হয়ে নাও।

: ইয়া আলী!
এবিকে পুরাটাই পথে বসায় ছাড়ছি, আমার জন্য এত খরচ মনে মনে ভাবলাম

: আলীর কথা আসলো কেনো আবার?

: তোমার আন্তরিকতায়।

: থাক, ঢং করা লাগবে না।

বাসর ঘরে ঢোকার সময় হয়েছে অবশেষে। যেহেতু
নিয়মতান্ত্রিক বিয়ে না, তাই বাসর তুলনামূলক আগেই শুরু হচ্ছে। পুস্পিতা নতুন বউয়ের মত লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। সিম্পল নীল শাড়িরে তাকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে তার সাজটাও সিম্পল। মূলার মত ফর্সা টকটকে মুখ,হরিণের টানা চোখ, কপালের লাল টিপ এবং হাতের মেহেদীর আভা যেন ভিন্ন গ্রহের এক মায়াবী পরি
আমাকে দেখে বলল
: একটু দাঁড়াও
আমি বুঝিনি ও কি করতে চায়।

পুস্পিতা বিছানা থেকে উঠে এসে মাথায় আরেকটু ঘোমটা টেনে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো আমাকে। আমি তাড়াতাড়ি ওকে দুহাতে ধরে তুলে চুমু খেলাম ওর কপালে। এরপর অনেকক্ষণ ও মিশে রইলো আমার বুকের সাথে। এক সময় আমার বুকের ভেতর থেকেই বলে উঠলো -

"চলো বারান্দায় গিয়ে বসি"।

আমি সায় দিলাম, কিন্তু ও নড়লো না। বললাম
:চলো যাই।

:আমার যে এখান থেকে নড়তে ইচ্ছে করছে না, হাঁটতেও ইচ্ছে করছে না, কিন্তু বারান্দায় যেতে ইচ্ছে করছে।

:তাহলে আমার পায়ের উপর উঠে এসো।

ও একটু অবাক হয়ে আমার পায়ের উপর ওর পা রাখলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরেই আস্তে আস্তে হেঁটে বারান্দা পর্যন্ত এলাম। বারান্দায়, আমার কোলে মাথা দিয়ে পুস্পিতা বলল
: আজ কোন কবিতা লিখনি?

: না,

: কেন লিখনি

: কারণ আমি আর কবি না, বিয়ে করলে একজন কবির মৃত্যু হই তখন জন্ম হই একজন পুরুষের।

: এই পুরুষত্ব কার জন্য

: পুস্পিতার ও তার নীল প্রেমের জন্য

পুস্পিতা আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমাকে কখনো দেখেনি





: পুস্পো শুনছ?

: বল

: একটি বাবু দাওনা,বাবা হতে ইচ্ছে করছে

:সময় হলে পাবে

: না এখন দিবে

: যাহ পাগল এখন কিভাবে দিব

: জানিনা এখন দাও

পুস্পিতা আমার অদ্ভুত ভালোবাসা দেখে হাসে আর তার আঁচল আমার গলায় জড়িয়ে কাছে টেনে এনে বলল
: আস বাবু তোমাকে ছোট্ট একটি বাবু দিব দিব




:
হানিমুন পার্ট দেয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু না! ওইটা গোপন থাকুক।
পরিশিষ্ট বলছি যাকে সত্যি ভালোবাস যেমন হোক পাওয়ার চেষ্টা কর কষ্ট বেশি হলেও পাওয়াটা বেশি মধুর হই।

-আহমেদ শুভ
শুভ-পুস্পিতার প্রেম অধ্যায় (969)

গল্পটি pdf. বই আকারে ডাউনলোড করুন
Click This Link
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×