
আজ মংগল বার সুমাইয়ার ক্লাস শেষ হবে সাড়ে বারোটায়।দুপুর দুইটা পরযন্ত সে অপেক্ষা করে লাইব্রেরি তে তার বান্ধবী নূপুরের জন্য।এরপর তারা দুইজন টীচারস বাসে একসাথে বাসায় যায়।সব স্টূডেন্ট বাস এর সুবিধা পায়না।তারা পায় কারন নূপুরের বাবা ফিলসফির টীচার।
ইমন আজ ঠিক করেছে নিজের ম্যাথ ক্লাস বাদ দিয়ে আজ দুপুর সাড়ে বারোটায় সুমাইয়ার সাথে কথা বলতে যাবে।নিজের ম্যাথ ক্লাসের সাড়ে বারটা বাজিয়ে দুপুর বারোটা বিশ মিনিটে সে হাজির হল লাইব্রেরীর দরজায়।
এই সময় সুমাইয়া একা বসে থাকে লাইব্রেরীতে।অবশেষে বহু দিনের চেষ্টা তার সফল হতে যাচ্ছে।একটু ভয় এবং টেনশন নিয়ে সে লাইব্রেরীর দরজা ঠেলে ভিতরে উঁকি দেয়।যাক বিশেষ টেবিল টি তে বিশেষ মানুষ বসে রয়েছে।আজ ভাগ্য টা তার খুলেই গেল মনে হয়।সে এগিয়ে যায়।
লাইব্রেরীর আরেকটি দরজা ক্যান্টীনের দিকে।সেই দরজার মুখে মিজান কে দেখে তার মন টা একটু দমে যায়।কারণ এই মিজান হল আঠা মিজান।তাদের ডিপারটমেন্টে দুই জন মিজান।একজন গরু মিজান,আরেকজন এই আঠা মিজান।কোরবাণীর ঈদের সীজনে কোন এক কুক্ষণে গরু মিজান গরুর দড়ি হাতে ক্লাসের এক মেয়ের চোখে পড়ে গিয়েছিল।তারপর সেই মেয়ে খুবি নিষ্ঠুর ভাবে ক্লাসের সবার কাছে গরু হাতে মিজান কে কতটা আনস্মারট আর হাস্যকর দেখাচ্ছিল তার গল্প বলে।সেই থেকে পুরা ডিপারটমেণ্টে মিজানের নাম গরু মিজান।
আর আঠা মিজানের কাহিনী তো আরো ভয়াবহ।এ কে আঠা না বলে সুপের গ্লু বলা উচিত।সে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এ পড়ায়।সে যে ছাত্রদের কাছে কত জনপ্রিয় তা ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে কোন কার্পন্য করেনা।ঘুরে ফিরে তার কথা অই প্রসঙ্গে চলে যায় ,তার হাত থেকে কমপক্ষে এক ঘন্টার আগে ছাড়া পাওয়া এক বিরাট কেরামতি ব্যাপার।
ইমন একটি ফাকা টেবিলে বসে পড়ে।মিজানের দিকে পিছন ফিরে।এই ব্যাটা বিদায় হলেই সে বাঁচে।যাক,অসুবিধা নাই।সময় আছে।এখন বাজে বারোটা চল্লিশ।আরো প্রায় এক ঘন্টা পর সুমাইয়ার মানিক জোড় বান্ধবী নূপুর এসে হাজির হবে।এই এক ঘন্টার মাঝে সে কি কি বলবে একবার মনে মনে ভেবে নেয়ার চেষ্টা করে।হঠাত ঘ্যার ঘ্যার শব্দে ধ্যান ছুটে যায় ইমনের।চেয়ার টানছে আঠা মিজান।
তার ফাকা টেবিলের বিপরীতে একটা চেয়ার যতটা শব্দ করে টানা যায় তার চেয়ে বেশি শব্দে টেনে বসে পড়ল সে।শব্দটা শুনে বিরক্ত চোখে এদিকে তাকাল সুমাইয়া।তারপর ওয়াশ রুমের দিকে চলে গেল।ইমনের মন টা হায় হায় করে উঠে।ও কি এদিকে আর এসে বসবে নাকি রেগে বেরিয়ে গেল?
মিজানের কোন কথাই তার কানে ঢুকছেনা।
বিরক্তি,রাগ ,হতাশা চেপে সে মিজানের দিকে তাকাল এবার।মিজান তখন ও বলেই চলছে,তুমারে ত মিয়া ক্লাস টাইমে দেখা পাওয়া ভাইগ্যের বিষয়।আইজকা এদিকে আইলা এমুন সময় কি মনে কইরা?ক্লাস হইতাছে না নাকি?আমরা ত মনে কর তুমাগ মতন বইএর পুকা না।সাজেশনে চলি বুঝলা না।পরীক্ষার আগে জলিল স্যার,মকবুল স্যার আর মনে কর রওশন ম্যাডাম এর সাজেশনের ককটেল বানাইয়া এমুন একখান পড়া দিমু,কেহই ঠেকাইতে পারবনা,বুঝলা?যেই কোন পরীক্ষার সাজেশন আমারে বানাইতে দাও,দ্যাখবা এই ওস্তাদ তুমারে ঠিকোই টাইন্না উডাইয়া ফালাইছে।এই কারনে শুধু এই কারনে বুঝলা ইমন আমার কোচিং সেন্টারের পুলাপাইন আমারে এত লাইক করে।হেরা তো কয় মিজান ভাই এর সাজেশন হইল গিয়া ছু মন্তর।ফেইল বইলা কিছু নাই।হা হা হা।তবে তোমরা ক্লাসমেট হইয়া ও আমারে সেই ভাবে কোনদিন চিনলানা এই আর কি।
ইমন ঘড়ি দেখে।একটা বিশ।এখন ও আশা আছে।ইমন উঠে দাড়ায়।ও কে দোস্ত উঠি আমি আজ পরে কথা হবে।মিজান কে কিছু বলার সুযগ না দিয়ে প্রায় দৌড়ে ওয়াশ রুমের দিকে আগায়,ঠিক আছে আমি একটু টয়লেটে যাচ্ছি আমার জন্য ওয়েট করার দরকার নাই ,ও কে।
দুই হাত উলটে মিজান বসে থাকে কিছুক্ষন।তারপর কি মনে করে মেইন দরজা ঠেলে আস্তে আস্তে বেরিয়ে যায় আঠা মিজান।ইমনের বুক থেকে যেন বিশাল একটা পাথর নেমে যায়।
টিস্যু পেপার এ মুখ মুছতে মুছতে সুমাইয়া ওয়াশ রুম থেকে আসছে।ইমনের মনে হল পরিবেশ টা এতক্ষনে তার ফেবারে এসেছে। মানুষজন ও বেশি নাই যারা আছে বেশ দূরে আর অপরিচিত সব।যদি ও সময় খুব একটা বেশি নাই তবু প্রথম কথা বলার পক্ষে মোটামুটি যথেষ্ঠ বলা যায়।
ইমন ও কে গুছিয়ে বসার সময় দিচ্ছে।ও টেবিলে গিয়ে বসলে ওর সামনের চেয়ারে বসার অনুমতি চাইবে এরকম ইচ্ছা।
ও বসল।কিন্তু নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে কি যেন খুজল,তারপর আবার এগিয়ে গেল যেদিকে মুখ ধোয়ার বেসিন সেদিকে।সেখানে তখন জুলোজীর আঁতেল রুবি আপা।সুমাইয়া কি যেন বলছে আর রুবি আপা ও আংগুল বাড়িয়ে কি যেন দেখাচ্ছেন,এত দূর থেকে ইমন কিছুই শুনতে পাচ্ছেনা।
একটা পয়ত্রিশ।শেষ পরযন্ত কথা শেষ করে সে ফিরে আসছে হাতে ঘড়ির চেইন লাগাচ্ছে।ও আচ্ছা,বোঝা গেল,সে তাহলে বেসিনে ঘড়ি ফেলে এসেছিল।কিন্তু ইমনের কি এখন উচিত হবে কথা বলতে যাওয়া?যদি কথার মাঝখানে নূপুর চলে আসে?তার তো আসার সময় হয়ে গেছে।না থাক।আজ থাক।ইমন খুব ইনডিসিসনে আছে।
কিন্ত এখন ও নূপুর আসেনাই।তাছাড়া এমন কুল পরিবেশ,কোনার টেবিলে একা সুমাইয়া বসে আছে ,দুপুরের রোদ, কয়েকজন ঘুমাচ্ছে,বাকি রা কেউ ও কে চেনেনা।ওর মূড টা ও আজ খারাপ না মনে হচ্ছে।সে সিদ্ধান্ত নিল এগিয়ে যাবে। কথা বলবে।হোক তা অল্প কথা তবে তার মাঝে থাকবে গভীরতা।হ্যাঁ আজই বলবে সে।
ঠিক এমন সময় একটা হাসিমুখ মেইন দরজা ঠেলে ঢূকে পড়ল।অতি দ্রূত হাটে মেয়ে টা ।নিমেষে পৌছে গেল সেই টেবিলের কাছে যেখানে সুমাইয়া বসে আছে।যেদিন তার ক্লাস আগে শেষ হয় সে ও ওই টেবিলেই সুমাইয়ার জন্য অপেক্ষা করে।তারা দুইজন একসাথে দুপুর দুইটার বাস এ বাসায় যাবে।
ইমন জানে সবসময় ভাগ্য তার সাথে এইভাবে খেলে।কখনো তার ভাগ্যে কাংখিত শিকা টি ছিঁড়েনা।দুই হাত পকেটে ঢূকিয়ে শান্ত পায়ে ইমন লাইব্রেরি হল ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৪:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




