somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কপালে শিকা না ছেঁড়ায় বিড়াল টি দুঃখিত

২৭ শে এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৫:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইমন আজ কোন কাজে ঠিকমত মন বসাতে পারছেনা।আজকে তার জন্য বিশেষ একটি দিন।সে ঠিক করেছে আজ সুমাইয়া র সাথে কথা বলবে যে ভাবেই হোক।গত কয়েক দিন ধরে সুমাইয়ার আশেপাশে বিস্তর ঘুরাঘুরি করে কোন লাভ হয়নি।মেয়েটির সাথে সবসময় ই কেউ না কেউ আছে।বাধ্য হয়ে সে মুখস্থ করেছে তার ক্লাস রুটিন।

আজ মংগল বার সুমাইয়ার ক্লাস শেষ হবে সাড়ে বারোটায়।দুপুর দুইটা পরযন্ত সে অপেক্ষা করে লাইব্রেরি তে তার বান্ধবী নূপুরের জন্য।এরপর তারা দুইজন টীচারস বাসে একসাথে বাসায় যায়।সব স্টূডেন্ট বাস এর সুবিধা পায়না।তারা পায় কারন নূপুরের বাবা ফিলসফির টীচার।

ইমন আজ ঠিক করেছে নিজের ম্যাথ ক্লাস বাদ দিয়ে আজ দুপুর সাড়ে বারোটায় সুমাইয়ার সাথে কথা বলতে যাবে।নিজের ম্যাথ ক্লাসের সাড়ে বারটা বাজিয়ে দুপুর বারোটা বিশ মিনিটে সে হাজির হল লাইব্রেরীর দরজায়।

এই সময় সুমাইয়া একা বসে থাকে লাইব্রেরীতে।অবশেষে বহু দিনের চেষ্টা তার সফল হতে যাচ্ছে।একটু ভয় এবং টেনশন নিয়ে সে লাইব্রেরীর দরজা ঠেলে ভিতরে উঁকি দেয়।যাক বিশেষ টেবিল টি তে বিশেষ মানুষ বসে রয়েছে।আজ ভাগ্য টা তার খুলেই গেল মনে হয়।সে এগিয়ে যায়।

লাইব্রেরীর আরেকটি দরজা ক্যান্টীনের দিকে।সেই দরজার মুখে মিজান কে দেখে তার মন টা একটু দমে যায়।কারণ এই মিজান হল আঠা মিজান।তাদের ডিপারটমেন্টে দুই জন মিজান।একজন গরু মিজান,আরেকজন এই আঠা মিজান।কোরবাণীর ঈদের সীজনে কোন এক কুক্ষণে গরু মিজান গরুর দড়ি হাতে ক্লাসের এক মেয়ের চোখে পড়ে গিয়েছিল।তারপর সেই মেয়ে খুবি নিষ্ঠুর ভাবে ক্লাসের সবার কাছে গরু হাতে মিজান কে কতটা আনস্মারট আর হাস্যকর দেখাচ্ছিল তার গল্প বলে।সেই থেকে পুরা ডিপারটমেণ্টে মিজানের নাম গরু মিজান।

আর আঠা মিজানের কাহিনী তো আরো ভয়াবহ।এ কে আঠা না বলে সুপের গ্লু বলা উচিত।সে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এ পড়ায়।সে যে ছাত্রদের কাছে কত জনপ্রিয় তা ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে কোন কার্পন্য করেনা।ঘুরে ফিরে তার কথা অই প্রসঙ্গে চলে যায় ,তার হাত থেকে কমপক্ষে এক ঘন্টার আগে ছাড়া পাওয়া এক বিরাট কেরামতি ব্যাপার।

ইমন একটি ফাকা টেবিলে বসে পড়ে।মিজানের দিকে পিছন ফিরে।এই ব্যাটা বিদায় হলেই সে বাঁচে।যাক,অসুবিধা নাই।সময় আছে।এখন বাজে বারোটা চল্লিশ।আরো প্রায় এক ঘন্টা পর সুমাইয়ার মানিক জোড় বান্ধবী নূপুর এসে হাজির হবে।এই এক ঘন্টার মাঝে সে কি কি বলবে একবার মনে মনে ভেবে নেয়ার চেষ্টা করে।হঠাত ঘ্যার ঘ্যার শব্দে ধ্যান ছুটে যায় ইমনের।চেয়ার টানছে আঠা মিজান।

তার ফাকা টেবিলের বিপরীতে একটা চেয়ার যতটা শব্দ করে টানা যায় তার চেয়ে বেশি শব্দে টেনে বসে পড়ল সে।শব্দটা শুনে বিরক্ত চোখে এদিকে তাকাল সুমাইয়া।তারপর ওয়াশ রুমের দিকে চলে গেল।ইমনের মন টা হায় হায় করে উঠে।ও কি এদিকে আর এসে বসবে নাকি রেগে বেরিয়ে গেল?
মিজানের কোন কথাই তার কানে ঢুকছেনা।

বিরক্তি,রাগ ,হতাশা চেপে সে মিজানের দিকে তাকাল এবার।মিজান তখন ও বলেই চলছে,তুমারে ত মিয়া ক্লাস টাইমে দেখা পাওয়া ভাইগ্যের বিষয়।আইজকা এদিকে আইলা এমুন সময় কি মনে কইরা?ক্লাস হইতাছে না নাকি?আমরা ত মনে কর তুমাগ মতন বইএর পুকা না।সাজেশনে চলি বুঝলা না।পরীক্ষার আগে জলিল স্যার,মকবুল স্যার আর মনে কর রওশন ম্যাডাম এর সাজেশনের ককটেল বানাইয়া এমুন একখান পড়া দিমু,কেহই ঠেকাইতে পারবনা,বুঝলা?যেই কোন পরীক্ষার সাজেশন আমারে বানাইতে দাও,দ্যাখবা এই ওস্তাদ তুমারে ঠিকোই টাইন্না উডাইয়া ফালাইছে।এই কারনে শুধু এই কারনে বুঝলা ইমন আমার কোচিং সেন্টারের পুলাপাইন আমারে এত লাইক করে।হেরা তো কয় মিজান ভাই এর সাজেশন হইল গিয়া ছু মন্তর।ফেইল বইলা কিছু নাই।হা হা হা।তবে তোমরা ক্লাসমেট হইয়া ও আমারে সেই ভাবে কোনদিন চিনলানা এই আর কি।

ইমন ঘড়ি দেখে।একটা বিশ।এখন ও আশা আছে।ইমন উঠে দাড়ায়।ও কে দোস্ত উঠি আমি আজ পরে কথা হবে।মিজান কে কিছু বলার সুযগ না দিয়ে প্রায় দৌড়ে ওয়াশ রুমের দিকে আগায়,ঠিক আছে আমি একটু টয়লেটে যাচ্ছি আমার জন্য ওয়েট করার দরকার নাই ,ও কে।
দুই হাত উলটে মিজান বসে থাকে কিছুক্ষন।তারপর কি মনে করে মেইন দরজা ঠেলে আস্তে আস্তে বেরিয়ে যায় আঠা মিজান।ইমনের বুক থেকে যেন বিশাল একটা পাথর নেমে যায়।

টিস্যু পেপার এ মুখ মুছতে মুছতে সুমাইয়া ওয়াশ রুম থেকে আসছে।ইমনের মনে হল পরিবেশ টা এতক্ষনে তার ফেবারে এসেছে। মানুষজন ও বেশি নাই যারা আছে বেশ দূরে আর অপরিচিত সব।যদি ও সময় খুব একটা বেশি নাই তবু প্রথম কথা বলার পক্ষে মোটামুটি যথেষ্ঠ বলা যায়।

ইমন ও কে গুছিয়ে বসার সময় দিচ্ছে।ও টেবিলে গিয়ে বসলে ওর সামনের চেয়ারে বসার অনুমতি চাইবে এরকম ইচ্ছা।

ও বসল।কিন্তু নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে কি যেন খুজল,তারপর আবার এগিয়ে গেল যেদিকে মুখ ধোয়ার বেসিন সেদিকে।সেখানে তখন জুলোজীর আঁতেল রুবি আপা।সুমাইয়া কি যেন বলছে আর রুবি আপা ও আংগুল বাড়িয়ে কি যেন দেখাচ্ছেন,এত দূর থেকে ইমন কিছুই শুনতে পাচ্ছেনা।

একটা পয়ত্রিশ।শেষ পরযন্ত কথা শেষ করে সে ফিরে আসছে হাতে ঘড়ির চেইন লাগাচ্ছে।ও আচ্ছা,বোঝা গেল,সে তাহলে বেসিনে ঘড়ি ফেলে এসেছিল।কিন্তু ইমনের কি এখন উচিত হবে কথা বলতে যাওয়া?যদি কথার মাঝখানে নূপুর চলে আসে?তার তো আসার সময় হয়ে গেছে।না থাক।আজ থাক।ইমন খুব ইনডিসিসনে আছে।

কিন্ত এখন ও নূপুর আসেনাই।তাছাড়া এমন কুল পরিবেশ,কোনার টেবিলে একা সুমাইয়া বসে আছে ,দুপুরের রোদ, কয়েকজন ঘুমাচ্ছে,বাকি রা কেউ ও কে চেনেনা।ওর মূড টা ও আজ খারাপ না মনে হচ্ছে।সে সিদ্ধান্ত নিল এগিয়ে যাবে। কথা বলবে।হোক তা অল্প কথা তবে তার মাঝে থাকবে গভীরতা।হ্যাঁ আজই বলবে সে।

ঠিক এমন সময় একটা হাসিমুখ মেইন দরজা ঠেলে ঢূকে পড়ল।অতি দ্রূত হাটে মেয়ে টা ।নিমেষে পৌছে গেল সেই টেবিলের কাছে যেখানে সুমাইয়া বসে আছে।যেদিন তার ক্লাস আগে শেষ হয় সে ও ওই টেবিলেই সুমাইয়ার জন্য অপেক্ষা করে।তারা দুইজন একসাথে দুপুর দুইটার বাস এ বাসায় যাবে।

ইমন জানে সবসময় ভাগ্য তার সাথে এইভাবে খেলে।কখনো তার ভাগ্যে কাংখিত শিকা টি ছিঁড়েনা।দুই হাত পকেটে ঢূকিয়ে শান্ত পায়ে ইমন লাইব্রেরি হল ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৪:৩২
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×