somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দবির হোসেনের গল্প ॥ জোহরার সামনে এক মহা সংকট

৩০ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জোহরা খাতুনের জন্য আজ উভয় সংকট। শেষ পর্যন্ত তার দুই সন্তানের নামে থানায় মামলা করতে হয়েছে। অথচ এই দুই সন্তান জন্ম নেবার পর আহ্লাদিত হয়ে গ্রাম থেকে হিজড়া ডেকে তাদের নাচিয়েছে। শখ করে খাইয়েছে গ্রামের অন্যান্যদের। প্রাণের ধন সেই সন্তানদের শাস্তি প্রার্থনা করে জোহরা খাতুন ২৯ আগস্ট বুধবার মাগুরা থানায় স্বামী হত্যার মামলা করেছে।
জোহরা খাতুনের স্বামী দবির হোসেন। সদর উপজেলার জগদল-রূপাটি গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের ছেলে। ওয়ারিশ সূত্রে তিনি প্রায় ১ একর সম্পত্তি পেয়েছেন। মা সখিনা খাতুন সাকু বিবির নামেও রয়েছে আরো ১ একর সম্পত্তি। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হিসেবে দবির হোসেনের প্রাপ্তিটুকু কম নয়। ৫ ছেলে। সবাই কর্মক্ষম। আর ৫ মেয়ের মধ্যে ৩ জনকে বিয়ে দিয়েছেন। বাকি ২টি ছোট। ছেলেদের সঙ্গে দবির হোসেনের প্রায় ঝগড়া বাধে জমির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে। ছেলেরা জমি ভাগ করে দিতে বললেও সে কখনো রাজি নয়। উপরোন্তু বড় ছেলে আইয়ুব হোসেন এবং মেঝে ছেলে সাহেব আলিকে বাড়ি থেকে দেড় মাস আগে তাড়িয়ে দিয়েছে। ছেলেদের বসবাসের জায়গা থেকে ঘর ভেঙ্গে সেখানে তিনি দেড়শটি বেগুনের গাছ লাগিয়ে দিয়েছে। দবির হোসেনের ওই দুই ছেলে নিরুপায় হয়ে বাড়ির সামনে সরকারি খাস জমিতে এখন ঘর তুলে বসবাস করে। এখানেই শেষ নয়। মা সাকু বিবির কাছে দবির হোসেন প্রায় তার জমিটুকু লিখে দেবার জন্য পিড়াপিড়ি করে। কিন্তু সাকু বিবিও দিতে রাজি নয়। বিধায় দবির হোসেন রোজার মাসে মাকে বাড়ির সামনে মাদরাসার পুকুরের মধ্যে চুবিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। তাতেও মায়ের কাছ থেকে জমি নিতে পারে নি। এ অবস্থায় দবির হোসেন মাকে পিটিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে সাকু বিবিও বাড়ি ছাড়া। রাতের বেলা ওই দুই নাতির কাছেই থাকে। সকাল হলেই আবার বেরিয়ে পড়ে বাজারের দোকানে দোকানে ভিক্ষা করতে। দুই সপ্তাহ আগে সাকু বিবি সদয় হয়ে নিজের নামের প্রায় ১ একর সম্পত্তি শেষ পর্যন্ত ওই দুই নাতি আইয়ুব ও সাহেব আলির নামে লিখে দিয়েছে। এ খবরটি দবির হোসেন পেয়েছেন ২৪ আগস্ট শুক্রবার সন্ধায়। ক্ষুব্দ হয়ে জগদল বাজারের কালিতলায় ওই দুই সন্তানকে পেয়ে তাদের উপর আক্রমন চালায়। এ অবস্থায় আইয়ুব ও সাহেব আলি কাঠের চেলা নিয়ে দবির হোসেনকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। গুরুতর আহত দবির হোসেনকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি দেখে ঢাকায় পাঠানো হলে বুধবার সকালে সে মারা যায়। এই হচ্ছে দবির হোসেনের পরিবারের গল্প। আর এভাবেই বর্ণনা করছিলেন তার স্ত্রী জোহরা খাতুন। তার সামনে এখনো মহা সমুদ্র। অবিবাহিত দুটি কন্যা সন্তান বড় হচ্ছে তারই ঘরে।
বুধবার দুপুরে জগদল-রূপাটি গ্রামে দবির হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঠিকই বাড়ির দক্ষিনের পোতা যেখানে আইয়ুব হোসেন এবং সাহেব আলি বসবাস করতো সেখানে এখন বেগুনের ক্ষেত। তার সামনে দাড়িয়ে কথা হয় ওই গ্রামের বাসিন্দা গোলাম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, দবির হোসেন সম্পত্তির জন্য ছেলেদের হাতে নির্দয় ভাবে খুন হয়েছে। কিন্তু এটাও সত্যি যে সম্পত্তির জন্যে দবির মিয়া নিজের বৃদ্ধ মায়ের উপর নির্যাতন চালাতে ভয় পায়নি। সাকু বিবিকে সে খেতেও দিতো না। বাধ্য হয়ে সে ভিক্ষা করে বেড়ায়।
দুপুরে খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ লাশটি ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। সদর থানার এসআই সুভাষ কুমার বিশ্বাস পুরো ঘটনাটিকে নজির বিহিন আখ্যা দিয়ে ঘাতক সন্তানদের আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানান।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×