রজনীতি নিয়ে একেবারেই কিছু লিখতে চাই না। কারণ সরকারের পক্ষে লিখলে দলকানা বা দালাল আখ্যা পা্ওয়া যাবে, আর বিপক্ষে লিখলে আছে ৫৭ ধারার ভয়। তারপরও আজ রাজনীতি বা নির্বাচন উত্তর-পূর্ব সমিকরণ নিয়ে নিরামিষ বা গোল আলু টাইপের কিছু লিখতে চাচ্ছি।
গনতন্ত্রের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে নির্বাচন পূর্ব এবং নির্বাচন উত্তর সমস্যা বা ক্ষমতায় আরোহন এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার সমস্যা। গনতন্ত্রে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যাদের উপর নির্ভর করতে হয় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নির্ভর করতে হয় ঠিক তার বিপরীত ধর্মী ব্যাক্তিদের উপর।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে- নির্বাচনের পূর্বে একজন রাম, সাম, যদু মধু এবং একজন জেনারেল, সচিব বা বিচারপতি সবারই (আদর্শ নির্বাচনের ক্ষেত্রে) একটি ভোট বা ক্ষমতা সমান, কিন্তু নির্বাচন উত্তর ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং শাসন ক্ষমতা পরিচালনার জন্য একজন জেনারেল বা সচিবের ক্ষমতা লক্ষ রাম, সাম এর সমান। তাই নির্বাচনের পূর্বে রাম, সাম, যদু, মধুদের মাথায় তেল দিতে হয়, তাদের পিছে পিছে ঘুরতে হয়, মন ভোলানো কথা বলতে হয় কিন্তু নির্বাচনের পরে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মন পেতে হয় রথি, মহারথিদের। যে সব দেশের মানুষ শিক্ষিত এবং সভ্য সে সব দেশে এ সমস্যা এত প্রকট না। কিন্তু আমাদের মত একটি অশিক্ষিত দেশে এ সমস্যা খুব বেশি। এ দেশের জনগণ, দল, প্রতিষ্ঠান কোনটিই গণতান্ত্রিক মন মানসিকতার নয় শুধু এদেশে আমরা গনতন্ত্রের নামে এক ধরনের নির্বাচনী খেলা খেলি।।
নির্বাচনের পরের দিন থেকে সরকার তার আখের গোছায়, বিরোধীদল চেষ্টা করে সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলতে আর সচিব , জেনারেলরা চায় সরকারের কাছ থেকে নিজেদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা কুক্ষিগত এবং স্বার্থ চরিতার্থ করতে, না পারলেই তারা চেষ্টা করে বিরোধীদলের সাথে গাঁটছাড়া বাঁধতে বা নিজেরাই ক্ষমতায় যেতে। আমাদের দেশের কোন প্রতিষ্ঠান, সচিব, জেনারেলরা গণতন্ত্রের প্রতি অনুগত নয়, তাই সরকারের জন্য তাদের সমর্থন পাওয়ার উপায় হচ্ছে তাদের চাহিদা মোতাবেক সুযোগ সুবিধা দেয়া অথবা জনগনকে সংগঠিত করে তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা।
কিন্তু দ্বিতীয় পথটিও এখন সহজ নয়। বর্তমানে আমাদের দেশে ধনতন্ত্রের হা্ওয়া বইছে, এখন এ দেশে ন্যায়, নীতি, আদর্শ বা নৈতিকতার বিষয়টি তিরোহিত। সবকিছুই বিচার বিবেচনা করা হয় অর্থনীতি, গোষ্টি বা স্বার্থের মানদন্ডে । এখন নিজের উপর যতক্ষন আঘাত না আসে, নিজের স্বার্থ ক্ষুন্ন না হয় ততক্ষন কোন মানুষ সরকারের পক্ষ নিয়ে কোন সামরিক জান্তা বা আমলা তন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায় না। অপরদিকে সরকারের এমপি, মন্ত্রীরা্ও থাকে দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত তাই জনগনকে সংগঠিত করার মতো নৈতিক শক্তি্ও তাদের থাকে না। সে কারণে বিরোধী দলের সরকার পতনের আন্দোলন দমনের জন্য সরকারকে নির্ভর করতে হয় সরকারে হালুয়া রুটি খোর নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীর উপর আর সচিবদের ষড়যন্ত্র আর জেনারেলদের চোখ রাঙানীর মোকাবিলা করতে হয় প্লট, ফ্ল্যাট অথবা হাউজিং প্র্রকল্প দিয়ে।
এটাই হচ্ছে এ দেশের নির্বাচন উত্তর-পূর্ব জটিল সমিকরণ।