somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রজন্মের সেতুবন্ধন

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘আজকের শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যৎ’ এই কথাটা শুনতে শুনতে বুড়া হয়ে গেলাম কিন্তু আর ভবিষ্যৎ হইতে পারলাম না। তাই বলে কি ভবিষ্যতের স্বপ্ন ছেড়ে দিবো? পৃথিবী দিনে দিনে ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে বলে কি পৃথিবীকে ধ্বংসের মুখে ছেড়ে দিবো? না, ছেড়ে দিবো না। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভবিষ্যৎ হিসেবে না, বর্তমান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যাতে বর্তমান পৃথিবী ভবিষ্যতের জন্য একটা উদাহরন হয়ে থাকে।

আমরা প্রায় সময়ই বলে থাকি আমরা যারা ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছি তারাই শেষ ভাগ্যবান প্রজন্ম। কারণ আমরাই শেষ প্রজন্ম যাদের শিকড়ের সাথে সম্পর্ক ছিল, আমরা শেষ যারা প্রকৃতির অনেক কাছাকাছি ছিলাম, আমাদের সময়েই শেষ যখন জীবন সহজ- সরল ছিলো। আমাদের নানু-দাদু রূপকথার গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াতো, ঘুম থেকে উঠে বাবার হাত ধরে ফুল কুড়াতে যেতাম আর মায়ের সাথে বসে মালা গাঁথতাম, গাছে পিড়ি দিয়ে দোলনা বানিয়ে খেলতাম, গাছে ঝুলতাম, পুকুরে সাঁতার কাটতাম, মাঠে নেমে কানামাছি- ছোঁয়াছুঁয়ি খেলেছি, হাড়ি-পাতিল, মাটির পুতুল খেলে অল্পতেই খুশি হতাম। আবার বিচি খেয়ে ফেললে পেটে গাছ হবে, চাঁদের বুড়ি চাঁদে বসে চরকা কাটছে, আমরা যেদিকে যাই চাঁদও সেদিকে যায় এরকম কতো সহজ-সরল চিন্তা ভাবনা ছিলো আমাদের। হ্যাঁ, আমাদের সাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তুলনা করে লাভ নেই। এখন পৃথিবী দ্রুত হয়ে গেছে, জীবন ধারা ও জীবন মান বদলে গেছে। এখনকার মা-বাবাদের প্রায় অভিযোগ করতে দেখা যায়, আমাদের বাচ্চাদের সকাল শুরু হয় ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে, বাচ্চাকে ইউটিউবে কার্টুন না দেখালে ভাত খায় না, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হলে গিফট হিসেবে স্মার্ট মোবাইল চাই, খেলাধুলা বলতে গেলে নামই নেই, সামাজিকতা মানেই চ্যাট, ভার্চুয়াল জগতই ওদের আসল ঠিকানা। এরকম শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন প্রজন্মকে নিয়ে কি কোনো আশা করা যায়? হ্যাঁ, আমি আশাবাদী। কারণ এই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম থেকেই আমাদের ভবিষ্যৎ নেতা তৈরি হবে যে কিনা সাত সাগরের মাঝি হবে এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে কাজ করতে হবে এবং ওদের মনস্তত্ব ধরতে হবে। ওরা কি ভাবে কি চায় জানতে হবে এবং ওদের চিন্তা ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে ওদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। ওদের জন্য একটা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে ওদের সাথে মিলে আমরা একটা নতুন পৃথিবী উপহার দিতে পারি। একটু ভেবে দেখলে দেখা যাবে, ‘জেনারেশন জেড’ এর টেকনোলজির উপর বেশি নির্ভরতার পেছনে আমরা মা-বাবারাই দায়ী। ওদেরকে মাটির সাথে, শিকড়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে আমাদেরই। আমাদের আনন্দ দেয়া ছোটো ছোটো গল্প, সরলতার সাথে ওদের মেলবন্ধন তৈরি করে দিতে হবে আমাদেরই। ওদের নিজেদেরকে অন্বেষণ করার পটভূমি আমাদেরই রচনা করে দিতে হবে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে কাজ করার এখনি সময়। কারণ এখন আমরা এমন একটা পর্যায়ে আছি যেখানে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ‘জেনারেশন জেড’, আমাদের প্রজন্ম ‘জেনারেশন ওয়াই’ বা ‘মিলেনিয়ালস’, আমাদের মা-বাবার প্রজন্ম ‘জেনারেশন এক্স’, আমাদের নানু-দাদুর প্রজন্ম ‘বেবি বুমারস’ একসাথে রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের নানু-দাদুর প্রজন্ম লোপের পথে। এই প্রজন্মগুলোর সেতুবন্ধন কারা করতে পারে? আমরাই যারা ‘জেনারেশন ওয়াই’ তারাই করতে পারি। এই ‘জেনারেশন জেড’ ২০২০ সালের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবায় যোগ দিবে, ওরা নিজেদের আলাদা গুণকে চিনে নিবে, তারা এই জগত নিয়ে চিন্তা করবে, বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে দান করবে, আর মুখোমুখি কথোপকথনকে পছন্দ করবে। তাই ওরা ওদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কম সচেতন এই ভাবনা থেকে বের হয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরি করতে হবে। এই পৃথিবীর বুকে শিশুর জন্য বেহেশত গড়ে দিবো ঐক্যের ডাক দিয়ে। তাইতো কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এর কণ্ঠে-

এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৬
১০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×