(এই লেখার সব চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কোন চরিত্রের সাথে বাস্তবে কারো মিল থাকলে তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ও কা্কতলীয়। বাস্তবে এইসব চরিত্রের কোন অস্তিত্ব নাই)
আজ রিনার মন ভালো নেই। ওর ঘরের জানালা দিয়ে আকাশটা দেখা যায়। ও বাইরে তাকাল। আকাশে ঘন কালো মেঘ করেছে। যে কোন মুহূর্তে শুরু হতে পারে ঝড়ো বাতাস। গত বছরের এই দিনটার কথা ওর বড় বেশী মনে পরছে। এই দিনে রিনার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সব ঠিক পথেই এগুচ্ছিল। হঠাৎ করে পাত্র পক্ষ বেঁকে বসল। বিয়েটা ভেঙ্গে গেল। এর আগেও এরকম হয়েছে। কিন্তু এইবার রিনা সত্যি সত্যি বিয়ের জন্য সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
বিয়ে ভাঙ্গার পর যথারীতি মনোয়ারা খালার আগমন। "কিরে রিনা কেমন আছিস? তোর বিয়ের কথা শুনেছিলাম। সেকি বিয়ে ভেঙ্গে গেছে? ওমা এত ভাল পাত্র হাতছাড়া হয়ে গেল? আর ওঁদেরই বা দোষ কি মা? তোর কপালই মনে হয় এরকম।..........." মনে হয় সব কিছুর জন্য শুধু রিনাই দায়ী। অথচ সবাই জানে ঠিক কেন ওর বিয়েটা প্রতিবার ভেঙ্গে যায়।
রিনা হিসাব মিলাতে পারে না। কেন বার বার এই একই ঘটনা ঘটছে? ওর চেহারা বা গায়ের রঙের জন্যতো ও দায়ী নয়। একজন মানুষের সব চেয়ে বড় পরিচয় কি তাঁর গায়ের রঙ অথবা তাঁর চেহারা? তাঁর চিন্তা, চেতনা, মননের কি কোন দাম নেই সমাজের কাছে?
রিনা ঠিক করলো ও আর বিয়ে করবে না। তবে কেন জানি এই দিনটার কথা ওর বারে বারে মনে পরছে। মায়ের ডাকে রিনা ভাবনার জগত থেকে ফিরে এল। "রিনা রিনা ছাদ থেকে কাপড় গুলো নিয়ে আয়তো মা। বৃষ্টিতে সব ভিজে যাবে যে।" "যাচ্ছি মা" একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রিনা ছাদের দিকে রওনা হল।
খুব ছোট বেলায় রিনা ওর বাবাকে হারিয়েছে। মাঝে মাঝে ওর বাবার কথা মনে পরে। বাবা ওকে খুব আদর করতেন। ওর শত অন্যায় আবদারও বাবা হাসি মুখে মেনে নিতেন। একবার এইরকম ঝড়ের দিনে ছোট রিনার আইসক্রিম খাওয়ার শখ হয়েছিল। মা শুনেই প্রচণ্ড ধমক দিলেন। কিন্তু বাবা বললেন, " আচ্ছা ছোট মানুষ শখ করেছে। কি হয়েছে? আমি যাচ্ছি।" বলেই বাবা রিনার জন্য আইসক্রিম আনতে ছুটলেন। মা ছাতা আনার আগেই বাবা রওনা হয়ে গেছেন। সেইবার বৃষ্টিতে ভিজে বাবার আকাশ পাতাল জ্বর হয়েছিল। মা রাগী দৃষ্টিতে রিনার দিকে তাকালে বাবা বলতেন, "আমার মেয়েকে কিছু বলবা না।"
রিনা কাপড় নিয়ে ঘরে ঢুকল। জানালায় বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে। কারেন্ট চলে গেছে। ও ওর বিছানার উপর বসলো। মাঝে মাঝে ওর বড় বেশী ক্লান্ত লাগে। রিনার পথ চলা শেষ হয় না। ও আবার উঠে দাঁড়ায়। এখানে থামলে চলবে না। ওকে এখনো যেতে হবে অনেকটা পথ। হয়তো একদিন রিনা তাঁর সকল প্রশ্নের উত্তর পাবে। সেদিনের জন্য আমরাও নাহয় অপেক্ষায় থাকলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩৩