(এই লেখার সব চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কোন চরিত্রের সাথে বাস্তবে কারো মিল থাকলে তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ও কা্কতলীয়। বাস্তবে এইসব চরিত্রের কোনো অস্তিত্ব নাই।)
ছেলেটার মাথায় এলোমেলো চুল। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করা থাকে সবসময়। মায়ের কাছে বকুনি খেতে খেতে ওর কেমন জানি গা সওয়া হয়ে গেছে ব্যাপারটা। মাও ক্লান্ত ওকে বোঝাতে বোঝাতে। কিন্তু কোন লাভ হল না। ও এরকমই থাকবে।
ছোটবেলায় আকাশ অনেক দুরন্ত আর ডানপিটে ছিল। আকাশের পিছনে পিছনে মা সারাদিন খাবার নিয়ে ঘুরতেন। "আকাশ বাবা আয় খেয়ে নে। তারপর খেলা করিস............" কিন্তু কে শোনে কার কথা। আকাশ ব্যস্ত বন্ধুদের সাথে ঘুড়ী ওড়াতে। প্রতিদিনই ওর নামে পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে একটা না একটা অভিযোগ থাকবেই। আজ এক বাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙেছে তো কাল প্রতিবেশীর বাড়ির দেওয়াল টপকে ফল পেড়ে খেয়েছে।
আকাশের বাবা মজিদ সাহেব খুব কড়া মানুষ। ছেলের এই অবস্থা দেখে তিনি কঠিন সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছিলেন। কিন্তু সেবার আকাশের দাদা দাদির চাপে তা আর হয়নি। "ছেলে মানুষ এরকম তো করতেই পারে।" দাদা বলতেন। "ছোটবেলায় তুমিও ওর মতই ডানপিটে ছিলে।" মজিদ সাহেব আর কি বলবেন। বাবার কথা মাথা নিচু করে শুনে চলে আসলেন।
একবার ছোট আকাশ মায়ের কোলে চড়ে বাইরে বেড়াতে গেছে। দোকানে একটা মাত্র লাল গাড়ি। সেটাই ওর কিনতে হবে। মা ওর কোন কথাই না করতে পারেন না। ছেলের খুশি তাঁর খুশি।
হঠাৎ একটা ঝড়ে পরিবারটা এলোমেলো হয়ে গেল। স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিল আকাশ। কিন্তু রাস্তায় ঘাতক ট্রাক তার ছোট স্বপ্নগুলোকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিল।
আজ আকাশ নেই। শুধু একটা ছবি হয়ে রয়েছে মার কাছে। আকাশের ছবির সামনে প্রায়ই একজনকে চোখে জল আর বুক ভরা কষ্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলছেন, "বাবা কেন তুই আমার আগে চলে গেলি? আয় ফিরে আয় বাবা আর কখনো তোকে বকবো না। তোর বাবা তোকে আর মারবে না। ফিরে আয় বাবা।"
ছোট আকাশ আর মায়ের কোলে ফিরে আসে না। অনেক অভিমানে সে আজ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। প্রতিদিন গভীর রাতে আকাশের ঘর থেকে কিছু শব্দ ভেসে আসে, "বাবা তুই যেখানেই থাকিস ভাল থাকিস। আর পারলে আমাদের ক্ষমা করে দিস।........"