"রাশেদ........."
"অ্যাই রাশেদ......"
"ওঠো না........."
নিলা ডেকেই চলেছে। রাশেদের উঠার কোন লক্ষ্মণ দেখা গেল না।
নিলা আবার ডাকল,
"অ্যাই রাশেদ ওঠো না।"
"দেখ কত সুন্দর ভোর হয়েছে।"
ছুটিতে বেড়াতে এসে কেউ এভাবে ঘুমায়?
নিলা ভাবল মনে মনে।
অথচ কত কষ্ট করে নিলা অফিস থেকে ছুটিটা ম্যানেজ করেছে ঘুরতে যাবে বলে। রাশেদকে নিয়ে আর পারা
গেল না! এত ঘুমকাতুরে না ছেলেটা উফ! নিলা এবার নিজেই নিচে রওনা হল।
আজ সকালটা সত্যি অন্যরকম সুন্দর। সূর্যের আগমনে আকাশ লাল হয়ে আছে। সমুদ্রের ঠাণ্ডা বাতাস এসে
লাগলো নিলার গায়ে। নিলার খোলা চুল বাতাসে উড়ছে। সাগরপাড়ে খালি পায়েই হাঁটতে ভাল লাগে নিলার।
নরম বালির স্পর্শ ওর ভাল লাগে। কেন জানি এখানে এলেই ওর মনটা ভাল হয়ে যায়। সাগরের ঢেউগুলো ওর
পায়ের কাছে এসে আছড়ে পরছে। ঢেউয়ের গর্জন শোনা যাচ্ছে দূরে।
নিলার মনটা ভাল হয়ে গেল। কর্মব্যস্ত যান্ত্রিক শহর থেকে দূরে এসে ওর বেশ ভাল লাগছে। দূরে কয়েকটা
ছোট ছোট ছেলে মেয়ে ঝিনুক কুড়াচ্ছে। কোথা থেকে জানি একটা মন হালকা করা গানের সুর ভেসে আসছে।
নিলা একবার ভাবল রাশেদকে ডেকে আনবে। কত সুন্দর ভোর। ওকে ছাড়া কেমন অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে।
তারপর ভাবল থাক ও ঘুম থেকে উঠে নিজেই এখানে চলে আসবে।
ওমা কি সুন্দর একটা ছোট লাল কাঁকড়া বালুর উপর দিয়ে হেঁটে গেল। কাঁকড়া যে এত সুন্দর হতে পারে তা
নিলার জানা ছিল না। ওর সমস্ত মনোযোগের কেন্দ্রে এখন সেই কাঁকড়াটি। কি সুন্দর অপরূপ। ঘুমকাতুরে
রাশেদ সব মিস করছে।
কয়েকটা ছোট ছোট ছেলে লাল পাঞ্জাবিওয়ালা গানটি গাইছে আর তাদের ঘিরে রয়েছে কয়েক জোড়া বিদেশি
টুরিস্ট। তারা বেশ মজা পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। একটা মেয়ে তো গানের সাথে সাথে নাচতে শুরু করে
দিয়েছে। গানের সুর ভেসে আসছে, "দিলে বড় জ্বালারে পাঞ্জাবিওয়ালা..........."
একটা ছোট মিষ্টি মেয়ে নিলার পাশ দিয়ে হেঁটে গেল। নিলা মনে মনে ভাবল ওর এমন একটা সুন্দর মেয়ে হলে
মন্দ হত না। রাশেদকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি ওর ছেলে পছন্দ না মেয়ে। নিলা বালুতে নিজের নাম লেখার চেষ্টা
করলো। একটা ঢেউ এসে নামটা মুছে দিল।
বাতাসে নিলার ওড়না উড়ছে। একটা ঠাণ্ডা আর কোমল বাতাস নিলাকে ছুঁয়ে গেল। নিলা সামনে তাকাল। যদি
রাশেদকে দেখা যায়। না ওকে দেখা যাচ্ছে না। ছেলেটা এখনো পরে পরে ঘুমুচ্ছে।
দূরে আকাশ আর সমুদ্র মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এত সুন্দর নীলের সমারোহ চারিদিকে। আজকের
আকাশটাও পরিষ্কার। সাদা সাদা মেঘগুলো মনে হয় খেলা করছে। একেকটা মেঘের একেক রকমের আকৃতি।
কোনটা হাতির শুরের মত, কোনটা হার্টের মত, আবার কোন কোনটা মানুষের মুখের মত। নিলা অবাক হয়ে
তাকিয়ে আছে যেন ওরা আজ নিলাকে এখানে স্বাগত জানাচ্ছে।
"অ্যাই নিলা........."
রাশেদের ডাকে নিলা ভাবনার জগত থেকে ফিরে এল।
"তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে এসেছি। আমাকে ডাকনি কেন?"
"এদিকে আস" বলে নিলা রাশেদের হাত ধরল।
গানের আসর এখন চলছে। গানের তালে তালে কয়েকজনকে নাচতে দেখা যাচ্ছে।
নিলা একটা ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলো, " এই তোমার নাম কি?"
"কেন আফা? টাকা দিবেন?"
"তোমরা টাকা নিয়ে গান করো?"
"হ আফা"
"৫ মিনিট ৫০০ টাকা, ১০ মিনিট ১০০০ টাকা, ১/২ ঘন্টা ২০০০ টাকা।"
"তয় সারাদিন গান শুনলে মাত্র ৫০০০ টাকা। এইটা খালি আপনাগো জন্নি স্পেশাল।"
রাশেদ জিজ্ঞাসা করলো, "এই তোমার নাম কি?"
"মন্টু মিয়াঁ"
"যাইগা আপনারা খামাখা টাইম নষ্ট করেন। ইংরেজরা হইলে এতক্ষণে কত বিদেশি টাকা দিত!"
আমরা হা করে মন্টু মিয়াঁর কথা শুনলাম। বলে কি এই ছোট ছেলেটা!
"আমি আজ সারাদিন এখানেই থাকবো।" নিলা বলল।
"তাহলে দুপুরের আর রাতের খাবারের কি হবে?"
"বাইরে কোথাও খেয়ে নিব। আচ্ছা চলতো ঐদিকটা থেকে একটু ঘুরে আসি।" নিলা বলল।
আকাশে সূর্য ঢলে পরলে অন্যরকম একটা মায়াবী রক্তিম আভা চারিদিকে ছড়িয়ে পরে। সূর্যটা মনে হয় পানির
মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। রক্তিম আভায় মানুষের চেহারাও মনে হয় কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে যায়। কেমন একটা আলো
আধারির মায়াবী খেলা চারিদিকে। সাগরের ঢেউয়ের গর্জন আগে থেকে আর জোড়াল হচ্ছে।
নিলা রাশেদের এলোমেলো চুলগুল ঠিক করে দিল।
"চল কোথাও বসি। আমি আর দাঁড়াতে পারছি না।" নিলা বলল।
ক্লান্ত নিলা রাশেদের ঘাড়ে মাথা রাখল।
রাতের আকাশে তারারা মিটি মিটি হাসছে মনে হয়। ওদের থেকে লক্ষ কোটি মাইল দূরে পৃথিবী নামক গ্রহের
দুইজন মানব মানবী যে প্রগাঢ় ভালবাসায় একে ওপরের হাত ধরে বসে আছে, সেই ভালবাসার সৃষ্টি সীমাহীন
কোন এক গন্তব্যে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৫