বনের রাজা সিংহ। তিনি যেমন অহংকারী, ঠিক তেমনি বদমেজাজি। পান থেকে চুন খসিলেই প্রজাদের আর রক্ষে নেই।
তবে মাঝে মাঝে তিনি সভায় কৌতুক বলিয়া থাকেন। এই কৌতুক আবার সবাই বুঝিতে পারেন না।
একবার সভায় বোকা খরঘোস আর থাকিতে না পারিয়া বলিয়া উঠিল, "জাঁহাপনা, যদি বলিতেন ঠিক কখন হাসিতে হইবে, তাহা হইলে আমাদের সবিশেষ উপকার হইতো।" এই কথা শুনিয়া রাগে সিংহ রাজার চক্ষু লাল হইয়া উঠিল। সেই যাত্রায় মন্ত্রী শেয়াল পণ্ডিতের উপস্থিত বুদ্ধির জোরে খরগোস প্রাণে বাঁচিয়া গেল।
সিংহ রাজা রাগী হইলেও সুরের প্রতি তাঁহার অঘাধ মমত্ববোধ। তিনি বনের প্রাণিদের আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রক এন্ড রোল গানের তালে তালে নৃত্য করিয়া থাকেন।
এহেন রাজা আজ সকল প্রজাদের জরুরী বৈঠকে ডাকিয়াছেন। দুরু দুরু হৃদয়ে প্রজারা একে একে রাজার দরবারে উপস্থিত হইতেছে।
রাজা সিংহাসনে বসিলেন। বসিয়াই রাজা হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিলেন। সভাসদগণ একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করিতে লাগিলেন। কেউ কিছুই বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছেন না। কিছু সময় এভাবেই কাটিয়া গেল।
রাজার হাসি আর কোনক্রমেই থামে না। শেষমেশ মন্ত্রী মশাই শেয়াল পণ্ডিত ভয়ে ভয়ে রাজাকে বলিলেন, " জাঁহাপনা, বেয়াদবি মাফ করিলে একটি প্রশ্ন করিতাম।" রাজা হাসি থামাইয়া বলিলেন," নির্ভয়ে করো মন্ত্রী। আজ আমার মন হাস্যরসে ভরপুর।"
শেয়াল পণ্ডিত সু্যোগ বুঝে রাজাকে তাঁর এই অট্টহাসির কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। রাজা কোনক্রমে হাসি থামাইয়া বলিলেন," ওরে কে কোথায় আছিস? তোরা কেউ আমারে মাইরালা। আজকের খবরের কাগজে লিখিয়াছে, মনুষ্য সমাজে নাকি মানবিকতা খুঁজিয়া পাওয়া গিয়াছে।"
এই কথা শুনিয়া সভাসদ আর বনের সকল প্রাণি একই সাথে হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল। আজ আর কাউকে কৌতুকের অর্থ বোঝাইতে হইলো না।
(চলবে)