আজ নীরার বিয়ে। বাইরে জাঁকজমক। বাদ্য বাজনার আওয়াজ।
এই উপলক্ষে জামান সাহেব বাড়িটাকে মনের মত করে সাজিয়েছেন। তাঁর বড় মেয়ে বলে কথা। তাছাড়া নীরাকে তিনি ছোট বেলা থেকেই অনেক আদর যত্নে মানুষ করেছেন। নীরা একদিকে, বাকিরা অন্যদিকে। মেয়ে যখন যা চেয়েছে, তিনি কোন দিন না করেননি।
এজন্য নীরার মা, সেলিনা বেগমের সাথে তাঁর প্রায়ই ঝগড়া হত। " তুমি আদর দিয়ে এই মেয়ের মাথা আর নষ্ট করো না। কয়েকদিন পর ও আর কারো কথা শুনবে না।" জামান সাহেব উত্তরে বলতেন, " আমার মেয়েকে আমি চিনি। ও কখনো আমার অবাধ্য হবে না।" "বুঝবা একদিন ঠিকই বুঝবা। তখন আর আফসোস করে কোন লাভ হবে না।" বলতে বলতে রাগে গজগজ করে ঘরে ঢুকে গেলেন সেলিনা বেগম।
নীরা ঠিক কি করবে বুঝতে পারছে না। একবার ভাবলো জাহিদকে একটা ফোন করবে। বারেবারে মোবাইলটা হাতে নিয়েও ও রেখে দিলো।
" কি হবে ফোন করে? জাহিদ কখনই ওকে মন থেকে ভালবাসেনি। সবটাই ছিল ওর অভিনয়।" বিয়ের আগে কতবার যে ওকে ফোন করার চেষ্টা করেছে নীরা! প্রতিবারই সুইচ অফ বলছে।
অথচ নীরা এখনো শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তারই জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। নীরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মাথা নীচু করে বউয়ের সাজে বসে আছে নীরা। ওর মনের ক্যানভাসে পুরনো সেই স্মৃতিগুলো বারেবারে জেগে উঠছে।
"জাহিদ কি করে পারলো ওকে ভুলে যেতে? কই ওতো তা পারছে না। কি করে পারলো এতটা স্বার্থপর হতে?"
আজকে কেন জানি ওর বারবার ওদের প্রথম দেখার দিনটার কথা মনে পরছে। একটা নীল পাঞ্জাবি পরে এসেছিল জাহিদ। পাঞ্জাবিতে ওকে ভারি সুন্দর দেখায়। ছেলেটা কোনদিনও ঠিক মত চুল আঁচড়ায় না। নীরা ঠিক করলো বিয়ের পর ও প্রতিদিন জাহিদের চুল ঠিক করে দিবে।
"এতদিন একসাথে থাকার পরও এখন কেন জানি মনে হচ্ছে জাহিদকে ও পুরোপুরি চিনতে পারেনি।"
ও শেষবারের মত মোবাইলটা হাতে নিলো। না এখনো সুইচ অফ। বাইরে থেকে ওর খুব প্রিয় একটা গানের সুর ভেসে আসছে। "তুঝে ভুলা দিয়া, ফির কিউ তেরে ইয়াদো মে।" ও কখনো জানতো না এটা ওর নিজের জীবনের সাথেই মিলে যাবে।
বাইরের আলোকজ্জল বর্ণালীর সবগুলো রঙ যেন নীরাকে তার অনাগত সুন্দর ভবিষ্যতের বার্তাই দিয়ে চলেছে। নীরা চোখ মুছে জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো। এই আলোকঝর্ণা ধারায় পৃথিবীর সকল দু:খের অবসান ঘটবে।