somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ব পরিবেশ দিবস – ৫ জুন, ২০১৬ঃ গো ওয়াইল্ড ফর লাইফ (Go Wild for Life)

০৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভদ্রে! আপনার কি মনে পড়ে সর্বশেষ কবে শিয়ালের ডাক শুনেছেন? সর্বশেষ কবে ভোররাতে ব্যাঙের ডাক শুনে হঠাৎ আপনার ঘুম ভেঙ্গেছে? সর্বশেষ কবে সামনে দিয়ে চলমান কোন সাপ দেখে ভয়ে আঁতকে উঠেছেন? অথবা কোন বাজপাখি বা চিল আপনার সামনে থেকে কোন কিছু ছোঁ মেরে উড়ে গেছে? আমি দৃঢ়স্বরে বলতে পারি আমরা বেশিরভাগই বলতে পারবো না কবে আমারা এই ধরনের দৃশ্য বা প্রানীগুলির দেখেছি! সত্যিই তাই!

প্রকৃতপক্ষে এই দৃশ্যগুলো এখন খুবই বিরল! এক সময়ের সহজদৃশ্য এই প্রানী গুলো মোটামুটি অদৃশ্য হয়ে গেছে। বনের প্রানীগুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম, আমাদের চারপাশে শিয়াল, সাপ, সোনাব্যাঙ, বাজপাখি, চিল এই জাতীয় সহজদৃশ্যমান বন্যপ্রানীগুলো আজ বিলুপ্ত প্রায়। কখনো বা নিজেদের প্রয়োজনে আবার কখনোবা অপ্রয়োজনে আমারা এগুলো নিধন করেছি, নষ্ট করেছি এদের আবাসভূমি।

ছোট্ট একটা উদাহরন দিলে বিষয়টা আরো বোঝা যাবে আমারা কি-ভাবে এইসকল প্রানী গুলো বিলুপ্ত করেছি, ইদানিং আপনারা পত্র-পত্রিকায় তক্ষক (Tokay Gecko) সম্পর্কে আলোচনা বা লেখা দেখেছেন, বিষয়টা এই প্রানীর দাম আর ওষুধী গুণাবলী সম্পর্কে জনশ্রুতি থাকায় আজকে আমাদের আশেপাশে থেকে এই গিরগিটি শ্রেনীর নিরীহ প্রানী বিলুপ্ত। বাস্তবিকই আমাদের এই সহজদৃশ্য বন্যপ্রানীগুলি এই ভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আশির দশকে আমাদের দেশ থেকে ব্যাঙের পা রপ্তানী হত এবং প্রকৃতি নির্ভরশীল এই ব্যাঙ আহরণ মোটেও টেকসই হইনি আজকে আমাদের জলাশয় গুলো এই ব্যাঙ শূন্য।

যাই হোক এতকথার অবতারণা করলাম আপনাদের সাথে একটি বিষয় শেয়ার করার জন্য, আজকে ৫ জুন, আজ “বিশ্ব পরিবেশ দিবস (World Environment Day)”। বিশ্বের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করার জন্য আজকে একটি প্রতিকী দিন। এই বছররে (২০১৬ সাল) বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল “Go Wild For Life” অর্থাৎ বন্যপ্রাণীর প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই প্রতিপাদ্য বিষয়ের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকার বাংলায় পরিবেশ দিবসের শ্লোগান ঠিক করেছে “বন্যপ্রানী ও পরিবেশ, বাঁচায় প্রকৃতি বাঁচায় দেশ”।

বন্যপ্রানী আমাদের পরিবেশের এর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। প্রতিবেশের (Ecosystem) ভারসাম্য বজায় আর খাদ্য-শৃঙ্খল (Food Chain) সু-সংহত রাখতে আমাদেরকে বন্যপ্রানীর প্রতি সহঅনুভূতিশীল হতে হবে। আমাদের মোটেও ভুলে গেলে চলবে না যে প্রকৃতি বাঁচলেই আমারা বাঁচব। আজকে বিশ্বব্যাপীই বন্যপ্রানী হুমকির সন্মুখিন। বিশ্বব্যাপী চোরাকারবারী আর বন্যপ্রানীর অবৈধ বিপণনে এই হুমকি দিনে দিনে বেড়েই চলছে।

২০১১ সালেই ভিয়েতনাম থেকে ‘জাভা গন্ডার’ আর ক্যামেরুন থেকে এক শ্রেনীর ‘কালো গন্ডার’ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে আর গাম্বিয়া, বুরকানাফেসো, টোগো ও বেনিন থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে “গ্রেট এপেস (Great Apes)” নামে ‘বন মানুষ’ বা গরিলা। আমাদের সুন্দর বনের বাঘও মারাত্মক হুমকীর সন্মুখীন, সম্প্রতি পরিসংখ্যানে ১০০ টি ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ বিদ্যমান বলে পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল, বংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, দেশে ৩৪ প্রজাতির উভচর, ১০৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩০১ প্রজাতির পাখি, ১৭৬ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি, ১২০ প্রজাতির স্থলচর স্তন্যপায়ী আর ৩ প্রজাতির সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী ছিল। এখন আইইউসিএন (IUCN – International Union for Conservation of Nature and Natural Resources) এর “রেড বুক” অনুযায়ী গত শতাব্দীতেই বাংলাদেশ থেকে এক ডজনের মত বন্যপ্রানী সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর মধ্য এক শিং ওয়ালা গন্ডার, জাভা গন্ডার, এশিয় দুই শিং ওয়ালা গণ্ডার, গোউড় আর মিঠা পানির কুমিড় উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও অনেক বন্যপ্রানী আজ মারাত্মক ভাবে বিপদাপন্ন।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রতি বছর ‘৫ জুন’ এ পালন করা হয়। দিবসটি জাতিসংঘ ঘোষিত একটি বিশেষ দিন যা ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের ‘সাধারন পরিষদ’ কর্ত্বৃক এই দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এই দিবসটি বিশ্বব্যাপী জনসাধারণকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করতে একটি ‘বৈশ্বিক প্লাটফর্ম’ হিসেবে কাজ করছে। শুরু থেকেই এই দিনে সামুদ্রিক দূষন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, টেকসই সম্পদ ব্যবহার আর বন্যপ্রানী রক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে বিশ্ববাসীকে সচেতন করে আসছে। এই বছরের “বিশ্ব পরিবেশ দিবস” হোষ্ট করছে “এঙ্গোলা”। আফ্রিকার এই দেশটি তাদের ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধের পরে দেশের পুনর্গঠনের সাথে সাথে দেশের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করছে।

এবছরের “বিশ্ব পরিবেশ দিবস” আমাদেরকে বন্যপ্রানীর উপরে সহঅনুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে আর। আসুন আমরা বন্যপ্রানীর প্রতি আরও সচেতন হয়ে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করি। এর জন্য যে আমাদের আলাদা হয়ে অথবা আলাদা সময় বের করে কাজ করতে হবে এমন নয়, যার যার মত নিজেদের অবস্থান আর সাধ্য মত আমরা চেষ্টা করি বর্তমান পরিবেশকে স্বাভাবিক রাখতে আর ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ, সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে। সবসময় মনে রাখি প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকলেই আমাদের আবাসভূমি আমাদের জন্য বাসযোগ্য থাকবে।
=================================================
ছবিঃ "বিশ্ব পরিবেশ দিবস - ২০১৬" এর লোগোঃ http://www.wed2016.com/
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:১৭
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×