somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবাস্তব বাস্তবতা

০১ লা মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি চিরবাস্তববাদী মানুষ । প্রেম-ভালবাসা আমার কাছে একটা অতিতুচ্ছ বিষয়।

যেখানে একজন মেয়ের অনার্স ২য় বর্ষে বিয়ের বয়স হয়ে যায়,৩য় বর্ষে আবশ্যকীয় এবং অনার্সের রেজাল্টের সাথে সাথেই অত্যাবশকীয় হয়ে যায় ।সেখানে একজন ছেলের ক্ষেত্রে মাস্টার্স পাসের পর যদি ধরি সাথে সাথে চাকুরী হয় তারপরও আরও দুই বছর লাগবে বিয়ের বয়স হতে,আবশ্যকীয় আর অত্যাবশকীয় তো আরও দুরের কথা । এটা বোঝার পরও আমার ক্লাসমেটরা কি করে এবং কোন যুক্তিতে একে-অপরের সাথে প্রেম-ভালবাসা করে কে জানে ?

অপর্ণার কথাই যদি ধরি,একসাথে পড়ছি,চলছি,ফিরছি, আড্ডা দিচ্ছি,খাচ্ছি;বুদ্ধিমতী মেয়েটা বলা নেই,কওয়া নেই,হুট করে একদিন আমাকে বলে বসল,''তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে । তোমাকে আমি ভালবাসি ।''হাতে একরাশ টকটকে রক্তলাল ভেজা গোলাপ । উজ্জল শ্যামলা কপালে ছোট্ট একটা কাল টিপ,চোখে কাজল । পড়নে আকাশ রঙা শাড়ি।

এটা কোন কথা হলো । ছ্যাঁ ।

তাকে আমি বাস্তবতা বোঝাই,বলি আমি অন্যসব ছেলের মতো স্বপ্নবিলাসী আর কান্ডঙ্গানহীন নই,আমি বাস্তববাদী । বুদ্ধিমতী মেয়েটা আমার কথা শুনে কাঁদে ।

কাজলের সাথে অশ্রু । কালো একটা অশ্রুধারা নিঃশব্দে বেয়ে আসে তার গাল গড়িয়ে । যেন আকাশে ঘনকালো মেঘ জমেছে । কালো টিপটা আর কপালে নেই ।

এরপর ব্যাপারটা জানাজানি হবার পর আমার বন্ধুরাও আমাকে ধরলো,''দোস্ত অপর্ণাকে ফিরিয়ে দিস না ।''আমি বলি,দূর হো যতোসব অবাস্তববাদী । বন্ধুরা ফিরে গেল দীর্ঘশ্বাস ফেলে । দীর্ঘশ্বাসটা তাদের জন্য না আমার জন্য তা অজানাই রয়ে গেল ।

দিন যায়,দিন আসে । হঠাৎ একদিন শুনি অপর্ণা হাসপাতালে ।

কেন? ঘুমের ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল ।
কেন? আমার জন্য ।
কেন?আমাকে ভালবাসে,আমাকে ছাড়া নাকি বাঁচবে না ।

ছ্যাঁ ।

যে নিজেকেই ভালবাসতে পারে না,সে আবার আমাকে কি ভালবাসবে! দুই দিনের ভালবাসার কাছে মা-বাবা,ভাই-বোনদের সারাজীবনের ভালবাসা নিরর্থক !

কিন্তু তার অবুঝ ভালবাসার কাছে কি আমার মতো বাস্তববাদী পরাজিত হবে?

************************************

অপর্ণা হাসপাতালে । তাই অপর্ণাকে দেখতে যাওয়াকে আমি একটা দায়িত্ব মনে করলাম । হাজার অবুঝ হোক, বন্ধু তো । হাসপাতালে গেলাম,তাকে আত্মহত্যা আর এহেন ভালবাসার কুফল বোঝালাম । শেষ-মেশ কি হলো? সবাই আমাকে উপেক্ষা করতে লাগল । অপর্ণাও । যাহ,বাবা!এই জন্যেই বলে যেঁচে উপকার করতে যেও না ।

ছ্যাঁ ।

অদ্ভূদ ! আশ্চর্য ! সেই দিন থেকে কেউ আমার সাথে ঠিকমতো কথা বলে না । আমাকে দেখলেই এড়িয়ে যায় । মুখো-মুখি হলে এমনভাবে নাক-মুখ কুঁচকে তাঁকায় যেন আমি কোন দুর্গন্ধযুক্ত কদাকার প্রাণী । আরে এসব হচ্ছেটা কি? কেউ কি আমায় বলবে আমার অপরাধটা কি?

দিন যায়,মাস যায় ।

প্রথম প্রথম বিষয়টা পাত্তা দেই নাই । কারন আমার
বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে, বন্ধুদের মাঝে এমন মনোমানিল্য আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায় । কিন্তু এতোদিন পরও যখন ঠিক হচ্ছে না, তখন বিষয়টা আমার কাছে কেমন যেন লাগছে ।

হঠাৎ এক শূন্যতা,এক বিষন্নতা আমায় ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলল। কেমন কেমন যেন লাগে বুকের মাঝে । চারদিকে তাকালেই কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে । কি যেন নেই! একেই কি বলে ভালবাসা?

এতদিন বন্ধুরা আমার শত তাচ্ছিল্য সত্ত্বেও আমাকে ভালবাসায় ভরিয়ে
রেখেছিল, তাই আমি তা অনুভব করতে পারি নাই । এখন সবাই দূরে চলে গিয়েছে,নিয়ে গিয়েছে ভালবাসা,রেখে গিয়েছে ঘৃণা শুধুই ঘৃণা । বুঝলাম আমার এই অপরাধের কোন ক্ষমা নেই । ক্ষমা নেই অপর্ণার নিষ্পাপ ভালবাসা উপেক্ষা করার জন্য । ক্ষমা নেই আমার কিছুতেই । এখন বুঝি বন্ধুদের দীর্ঘশ্বাসটা আমার জন্যে ছিল ।

মাস যায়,মাস আসে ।

পড়াশুনা শেষ,চাকুরী করছি । অপর্ণাকে আর বলা হয়নি যে,তাকে আমি ভালবাসে ফেলেছি। আমি তাকে ভালবাসি।কোন মুখে বলব, সেইবা কেন আমায় আর ভালবাসবে?

শুনেছি অপর্ণার একটা ছেলে হয়েছে । আমার আর বিয়ে করা হলো না । হলো না ঠিক না নয়, আসলে পারলাম না । অপর্ণাকে এত ভালবেসে ফেলেছি যে তের জায়গাতে আর কাউকে বসাতে পারব না । অথচ যে অপর্ণা আমার জন্য আত্মহত্যা(!) পর্যন্ত করতে চেয়েছিল, সেই অপর্নাই আজ অন্যের ঘরে এক সন্তানের গর্বিত জননী হয়ে সুখে আছে ।

হায়রে ভালবাসা, অসময়ে এলি,যাতনা দিয়ে গেলি ।

এমনি কি আর বলে মেয়েরা ছলনাময়ী । অপর্ণাও তাই । মিছে সব ভালবাসা । সব মিছে। সব মিছে।
****************


বছর যায়, বছর আসে ।

এবারের পোস্টিং চট্টগ্রাম । রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছি । ট্রেন থামল । নামল কে? অপর্ণা,সাথে তার ছেলে । সময় যেন থমকে গেল । থমকে গেল চারপাশ । অপর্ণা চমকে উঠেও সামলে নিল । কথা হলো কিছুক্ষন। প্রায় সাত বছর পর কিছুক্ষন কথা!

ট্রেন ছাড়ার সময় হলো । অপর্ণা বলল, বুকপকেটে ওভাবে কলম রাখবে না ,শার্ট ইস্ত্রি করে পড়বা, চুল চিরুনী করবা ঠিকমতো,শেভ করবা যত্ন করে যেন কেটে না যায় । আর হ্যাঁ, বিয়েটা করে নিও । বাস্তবতা যতই নির্মম হোক না কেন,তা মেনে নিয়ে তো আমাদের চলতে হবে, তাই না । আচ্ছা যাই ।

এবার আমার চমকাবার পালা । আমার চিরকালের বদঅভ্যাসগুলোকে সে সযতনেই মনে রেখেছে । কেন মনে রেখেছে?!

ট্রেন দরজায় দাঁড়ালাম । অপর্ণা তার ছেলেকে ডেকে কোলে নিল ,''এই রুদ্র,আসো, আম্মুর কোলে আসো ।''

অদ্ভুত, আমার নাম রুদ্রাক্ষ,কিন্ত অপর্ণা ডাকতো রুদ্র বলে । তাহলে কি সে আজ ও আমায় ভুলে নি ?

ট্রেন রওনা হলো । ছেড়ে যাচ্ছে প্লাটফর্ম । অপর্ণার প্রতি যত ছিল অভিমান, তা যেন প্লাটফর্মের সাথে সাথে ছেড়ে যাচ্ছি । নিয়ে যাচ্ছি ভালবাসা । শুধুই ভালবাসা ।

আজ বুঝলাম,ভালবাসা কোন বাস্তবতা মানে না । নেই এর কোন সময়,নেই এর পেছনে কোন যুক্তি ।

ভালবাসার তুলনা কেবলই ভালবাসা ।

''যদি এই হৃদয় ,
করতে চাই বিনিময়,
মিথ্যে মূল্য প্রনয়-সময়,
ভালবাসার চেয়ে বড় কিছু নয় ।''
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×