(copied from Proloy Hasan) আমার কিশোরবেলার একটা অংশ কেটেছে আইয়ুব বাচ্চু, জেমস আর হাসানের গান শুনে। এখন আর সেই রাম নাই অযোধ্যাও নাই। এখন পাড়ার মোড়ে মোড়ে যত না চায়ের দোকান তার চাইতে বেশী ব্যান্ড। ছেলেপেলেরা এখণ আগের চাইতে অনেক বেশী ক্রিয়েটিভ। আমরা যে সময়ে একটা এ্যালবামের জন্য ১ মাস ওয়েট করতাম, তারা সেই সময়ে দুইটা ট্রাক নামায় ফেলে। দেশ আউগাইয়া যাইতেছে।
আমার ছোটবেলার তিন গায়ক এখনো বেচেঁ বর্তেই আছেন। জেমস বলিউডে গান টান গেয়ে বেড়াচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। এই দেশে তার ফর্ম নাই এখন কিন্তু পাশের দেশে সে তার ফর্ম গড়ে নিছে। হাসান বিয়ে থা করে শুনছি পুরোপুরি থিতু হয়ে গেছেন। আর আইয়ুব বাচ্চু পুরোপুরি থিতুও হতে পারেন নাই। আবার পাশের দেশে ফর্মও গড়তে পারেন নাই। তাঁর খুব শখ ছিলো দেশে একটা মিউজিক্যাল ইনসট্রুমেন্টের মিউজিয়াম করবেন। কিন্তু পারেন নি। এখন আর কেউ ডাকে না তেমন। এলআরবির আইয়ুব বাচ্চু মেটাল ব্যান্ডের আড়ালে হারায় গেছে। ফিল্মে তারঁ আম্মা গান এখনো সবার মুখে মুখে। কিছুদিন আগে পত্রিকার ইন্টারভিউতে তিনি বল্লেন - ”আমার সবগুলা গিটার আগুন দিয়ে পুড়ায় ফেলতে ইচ্ছে করে।” একটা মানুষ কতটা অভিমানী হলে নিজের সবচাইতে শখের জিনিসগুলো আগুনে পোড়াতে চায়?
দুইটা তথ্য দেই তারঁ ব্যাপারে। অনেকেই হয়তো জানেন না।
১. আইয়ুব বাচ্চুর গিটারের কালেকশন চমকে দেবার মতো। দুনিয়ার হেন গিটার নাই যেটা তার কালেকশানে নাই এবং তিনি তা বাজাতে পারেন না।
২. আইয়ুব বাচ্চু বাংলাদেশের সেরা গিটারিষ্ট। তার চাইতে দ্রুত গিটার এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কেউ বাজাতে পারে নাই। এত বেশী টিউনও কেউ তোলে নাই।
লোকটাকে সামনি সামনি দেখেছিলাম দেশের বাইরে। কনসার্টের পর তারঁ সাথে কথা বলার জন্য সামনে যেতেই নিজেই হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেইক করল। বিদায় নেবার সময় যা বল্লা এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। -“দেশ ছেড়ে এত দূরে এসে পড়াশোনা করছেন। একা একা রান্না বান্না করে খাচ্ছেন। আপনাদের জন্য আমরা দেশের মানুষরা খুব গর্ব করি। ...পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে যান। আপনাদের মতো মানুষগুলোর দরকার আছে দেশে।” তিনি মিউজিশিয়ান, গান লেখেন, সুর করেন, নিজেই গান। সুতরাং সে এত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলবে এতে অবাক হবার কিছু নাই।
একটু আগে একজন স্ট্যাটাস দিসে - “ ধুর এইসব প্যান প্যান তো সারা বছরই শুনি। দোস্ত এ আর রহমান স্টেজে উঠলে জানাইস।” হুম ভারতে থেকে এ আর রহমানকে আনা হয়েছে। মূল আর্কষন সবার শেষে থাকে। মূল আর্কষন এ আর রহমান মঞ্চে উঠবেন সন্ধ্যার পর। তার আগে পাবলিককে ওয়ার্ম আপ করার জন্য পাতি ব্যান্ড বা সস্তা গায়ক দিয়ে কাজ চালাতে হয়। এই নিয়মটা সব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিই ফলো করে। তাই ওয়ার্ম আপের দায়িত্বটা আজ পড়েছে বাচ্চু ভাইর কাধেঁ। নিজের দেশের নতুন ব্যান্ডকে জায়গা ছেড়ে দেয়া যায়। কিন্তু পরের দেশের গায়কের কাছে যখন নিজের দেশের সেরা গায়ক হার মানে, তখন অপমানটা কতটা লাগে গায়ে। কতটা? আাইয়ুব বাচ্চুর নিজের মুখেই শোনেন।
"আপনারা যারা বাংলা গান শুনছেন তাদের অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের হাত না চলুক, চোখ আর কান তো খোলা আছে? এতেই চলবে, হাততালি এখন খরচ করে লাভ নেই,এটা পরের জন্য রেখে দিন, চোখ কান খোলা আছে এটাই যথেষ্ট, আপনারা ধৈর্য ধরে বাংলা গান শুনছেন, তার জন্য অনেক ধন্যবাদ, আর একটি গান গাইবো কেবল"
ভাইবেন না এই লজ্জা আইয়ুব বাচ্চুর। এই লজ্জা আর অপমান আমাদের। পুরো জাতির। মাফ করবেন আইয়ুব বাচ্চু। আপনার কাছে আসলে মাফ চাইবার মতো মুখও আমাদের থাকার কথা না।