somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গাইড হিসেবে আমার Langkawi, Malaysia ভ্রমন....।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার নিজস্ব পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি যে বস্তুটার সম্মুখীন আমাকে হতে হয় তা হলো, বিষ্ময়। যা আমার ভাবনার মাঝে আশ্রয় করে, তা সম্ভাবনার মুখ দেখে না । আর যা কল্পনাতে আনাও এক বাক্যে অবাস্তব, তা আমার সামনে এসে দাড়ায় অযাচিতের মতো।এমনি ভাবেই সুযোগ এসেছিল Langkawi যাবার।


সম্প্রতি সময়ে একা কিংবা দলবেঁধে অনেক ঘুরে বেড়ালেও Langkawi বেড়াতে যাওয়া যেন সম্পূর্নই আলাদা, এবার আমি গাইড, আর আমার সংগী একজন ষাটোর্ধ ভদ্রমহিলা।

সচরাচর এই বয়সী মানুষেরা হয় খুব বেশি অস্থির, অল্পেই রেগে যান কিংবা ভয় পেয়ে যান দ্রুত। তার চাইতেও বড় ভয় - অসুস্থতা। উচ্চরক্তচাপ, সামান্যই ক্লান্তি কিংবা কেবল রাতের ঘুমে সমস্যা হলেই , পরেরদিনের সময়সূচি থেকে শুরু করে নির্ধারিত সকল কিছুর পরিবর্তন অনিবার্জ। সমস্যা আরো ব্যপক হয় যদি - ভদ্রমহিলাটি বাঙ্গালী, উপরোন্তু জন্মদাত্রী মা হন।


আমার "বাঙ্গালী" মা, আজো বাঙ্গালী । সন্তান গাইড হলেই দুঃশ্চিন্তা দ্বিগুন, তারপর যদি আবার তার অভিজ্ঞতার ঝুলি হয় খালি, তা হলেই হলো। সাদা চামড়াদের এডভেঞ্চারের গল্পে আহ্লাদিত হলেও, নিজেদের সামান্য অনিশ্চয়তা
- অমার্জনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হয় আমাদের কাছে। কিন্তু বিধাতার ইচ্ছা বলে কথা।


জীবনে প্রথমবারের মতো গাইড হবার এই অভিজ্ঞতা আমার মোটেও সুখকর না। এই পেশায় দায়িত্ব অনেক, কাষ্টোমারের সন্তুষ্টি কম। আয় বলতে কিছুই নাই। তারপর আবার নিজেরও এই প্রথমবারের মতো মালেশিয়া যাওয়া, তাই উপভোগের চাইতেও উদ্বিগ্ন এই আমার, দুশ্চিন্তাতেই কেটেছিল পুরোটা সময়। তবে আমার ভ্রমনের সাথী (মা) উপভোগ করেছেন খুব। ভালোও লেগেছে মালেশিয়া আমাদের দুজনেরই।


***ক্যামেরার চোখ দিয়ে দেখা টুকরো টুকরো Langkawi ***

আকাশ থেকে Langkawi এর ৯৯টা দ্বীপের কয়েকটা...



Langkawi এর Pantai Cenang রাস্তার ধারেই সবচেয়ে popular আর সুন্দর beach। দ্বীপের south-western beachটা সবচেয়ে আকর্ষনীয়। ২ কিমি দীর্ঘ এই beachটা Sunset Beach নামে পরিচিত।




Beach এর ধার ঘেষে আছে অসংখ্য খাবারের দোকান...



অসাধারন এই ডাব আর তার বিক্রেতা (পরে কোনদিন সুযোগ হলে বলবো তার কথা), হয়তো আমার স্মরনে থাকবে সারা জীবন...।পরেপরে



Sunset Beach এ Sunset এর অপেক্ষায়....



Langkawi sunset beach এর এই resort গুলোতে থাকবার অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারন:



Beach ৯৯-১৫০ রিংগিতে উপভোগ করা যায় এমন অনেক অভিজ্ঞতার, যদি সাথে সাহসী সংগী থাকে, আমার ষাটোর্ধ মাকে নিয়ে উড়বার সাহস করিনি...তবে Beach বসে চুপচাপ এই দৃশ্য উপভোগ করার জন্য তো লোক চাই, তাই না?





Beach এর পাশেই নামকরা রেস্তোরা The Cliff ,



প্রথমদিনে, আমরা Beach এর রুপে মুগ্ধ হয়ে কাটিয়ে দিলাম আমাদের
সারা সন্ধ্যা। দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি যেন কেটে গেল এক নিমিষে।

তারপর আবার রাতের এই খাবার Delta restaurant এ... খাওয়ার



সাথে এই Sunset ফ্রি



রাতের Beach





পরদিন সকালে বের হলাম, Langkawi ভ্রমনে।সময় একদিন তাই, শুরু করলাম টেক্সিতে। ২৫ রিংগি প্রতি ঘন্টা হিসেবে, ঘুরে বেড়ানো খুবই লাভজনক যদি দলটা বড় হয়। আমাদের দুই জন হিসেবে খরচটা একটু বেশি মনে হচ্ছিল।


Kilim Geoforest Park হচ্ছে Langkawi এর Mangrove forest দেখবার একটা আকর্ষন। বিভিন্ন রকম Package এ যাওয়া যায়। আমরা Reserve নৌকায়, ১ঘন্টার Package এ ২৫০ রিংগি দিয়ে ঘুরেছিলাম, তবে ৪ ঘন্টার Package অনেকে মিলে বেড়ালে খরচ অনেক কম। Fish farm, Eagle feeding, Cave visit ....



জেটি ।



এই Trip এ Fish farm (বাম দিকের ঘরগুলো) এ দেখা মেলে জ্যন্ত অনেক মাছের..বিষয়টা আমাদের কাছে তেমন কিছু না হলেও সাদা-চামড়াওয়ালাদের কাছে আকর্ষনীয়।



মাছের ফার্মে দেখা মিললো, এই কাকড়া জাতীয় প্রানীটির সাথে



Trip এ আছে (Cave visit) গুহায় ঘুরে বেড়াবার ব্যবস্থা।



গুহায় যাবার রাস্তা।



Air Hangat Village হচ্ছে Hot Spring Spot। যদিও আমার অদ্ভুত ভালোলাগায় মন ভালো হয়ে গিয়ে ছিল এখানে এসে, Air Hangat Village আপনার কাছে আকর্ষনীয় কিনা দেখে নিন tripadvisor থেকে।



Langkawi Craft Complex সুন্দর জায়গা, Langkawi ঐতিহ্য এক নজরে দেখতে পাবেন, তবে "কেনাকাটা পাগল" সাথে থাকলে, না যাওয়া মঙ্গল। তাই ছবি যোগ করে, আপনাদের বিপদে ফেললামনা। নিজেকেই সামলাতে আমার কষ্ট হয়েছে, অন্যদের আর কি বলবো।

Black sand beach টা খুব ছোট হলেও, দেখবার মতো , যদিনা আপনার আগে কোন কালো বালির সৈকত দেখার অভিজ্ঞতা না থাকে।



এছাড়াও আছে, Oriental village, এখান থেকেই ক্যাবেল কারে ওঠার স্টেশন দেখে নিন THE ORIENTAL VILLAGE ,



ক্যাবল কার, Sky Bridge, এ উঠবার সৌভাগ্য হয়নি, বৃষ্টির কল্যানে। এক অর্থে আমাদের ২০০ রিংগি বেচেও গেল।

Wild Life Park এর ঢোকার মুখে টিকিটের দামটা শুরুতে সামান্য দ্বিধায় ফেলে দিলেও হাজারও পাখির ভীরে, সত্যিই মন ভালো হয়ে যায়। টিকিট জন প্রতি ২৫ রিংগি ছিল, সম্ভবত।

......

Eagle Squre , অসাধারন সুন্দর একটা জায়গা। স্পটে নেমে দেখি আমার ক্যামেরার ক্ষিদে পেয়েছে। তাই চোখের ক্যামেরায় ভিডিও করে রাখলাম সারা জীবনের জন্য।

শেষের দিন বিকেলে, নামলো মুষলধারে বৃষ্টি। মনটা খারাপা হলো ঠিকই কিন্তু এই সুযোগে, কটেজের বারান্দায় বসে দেখতে পেলাম, শান্ত-মায়াময় এক সৈকত।

[ বি.দ্র।
গাইড হিসেবে এটা আমার প্রথম ভ্রমন কাহিনী..।জান
জানিনা ব্লগের পাতায় কতটুকু আকর্ষনীয় করে ফুটে উঠলো langkawi? তবে নির্জন দ্বীপের এই সৈকত আসলেই সুন্দর।

সবচেয়ে ভালোলাগার জিনিসটা আমি লক্ষ্য করলাম ফিরে আসবার পর। তা হলো- অসাধারন এক মুক্তির স্বাদ, মোবাইল নামক যন্ত্রনাটার হাত থেকে আমার মাকে রেহাই দেবার কারনে। চেনা পৃথিবী, অজানা দুঃচিন্তা, কেবল শংকা সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়াবার এই যন্ত্রনাটা আমাদের সাথে ছিলনা ১০দিন। আমরা যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম বহুদুরে।

এতটুকু শেয়ার করতেই আমার রবিবার শেষ। হয়তো কোনদিন জানাবো বাকি অংশ...যদি বেঁচে থাকি..।]
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৪:২০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×