দুর্জনের হাত থেকে নিজের অধিকার বুঝে নেয়াটা কত ব্যায় বহুল তা বাঙালি জাতি জানে। এই ব্যায়টাই এবার পরিশোধ করলো মূলত: তরুন সমাজ। আমি-আপনি মুখে, ফেবুতে সক্রিয় হয়তো ছিলাম, কিন্তু আনাসের মতো চিঠি লিখে বাবা-মায়ের অগোচরে রাস্তায় নামতে পারিনি। দায়িত্বের অজুহাতে। ছোট করতে চাইনা, কেওকে। তাই তো, নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেছি- পারতাম কি আমি সেই ১১ বছরের সাফকাত সামীরের মায়ের জায়গাটা নিতে, যার সন্তান হেলিকপ্টার থেকে ছুটে আসা বুলেটের কারনে তার কোলে আর কোন দিন মাথা রেখে আদর নেবেনা। না। পারিনি নিজে রাস্তায় নামতে, পারিনি বুলেটে মাথার খুলি ফুটো হওয়া কারো সন্তানের জায়গায় আমার সন্তানকে কল্পনায় আনতে। হ্যা, আমরা পারিনা। আমরা পারিনা "সংকটের কল্পনাতে হয়োনা মৃয়মান"- বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যেতে। কারন আমারা "তরুন" না। তোমরা তরুন। তোমরা পারো অনেক কিছুকে এড়িয়ে যেতে, ক্ষুদ্র স্বার্থ উপেক্ষা করে বিশাল দায়িত্ব নিতে। তাইতো তোমাদের মানায়না এই তুচ্ছ স্বার্থনেষী দাবী নিয়ে রাস্তায় নামতে। তোমরা কি নিজেদের ক্ষমতাকে খাটো করছো না? সাবধান। তোমরা বোধ করি তুচ্ছ অপরাধের চুনপুটিদের নিয়ে ব্যস্ত থাকায় রাঘোব বোয়ালেরা পার পেয়ে যাচ্ছে। "দিনে নাটক - রাতে আটকের" নাট্যকার পালালেও, শিল্পীরা যে আজো নিরাপদে নতুন নাটক মঞ্চস্থ করতে ব্যস্ত। থামাও তাদের।
মনে রেখো একা আবু সাঈদ কিংবা মুগ্ধ যতো সাহসীকতাই দেখাক না কেনো এতো বড় অপশক্তিকে সরাতে পারতোনা। যেমনি ভাবে বৃথা গেছে "নিরাপদ সড়ক চাই" আন্দোলনের শহীদদের প্রাণ বিসর্জন। এইবার ২০২৪ এ রাফি, শান্তদের মিছিলের বিরাট সংখ্যাটা কিন্তু নাড়িয়ে দিয়েছে সেই শক্ত ভীতটাকে জুলাই মাসে। তবে আবার আবু সাঈদ যদি সেদিন বুক পেতে না দিতো, জিল্লুররা তবে মরিয়া হয়ে ব্র্যাক এর সামনে আবু সাঈদ হত্যার জবাব চাইতোনা। নির্বিচারে গুলিতে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও তোমরাই দাঁড়িয়ে ছিলে সেদিন ঢাকার রাস্তায়, সাথে ছিলো সমাজের সকল স্তরের মানুষ, ধর্মের বিভেদ ভূলে , নিজের অবস্থানকে বিবেচনায় না নিয়ে। কেবল দাঁড়িয়ে ছিল অন্যায়ের প্রতিবাদে- তোমাদের ডাকে সাড়া দিতে।
তোমাদের ডাকের জোর কতো সেটা বোধ করি তোমরা নিজেরাও জানোনা। বিশ্ববরণ্য ব্যক্তিত্ব তোমাদের শক্তিকে নেতৃত্ব দিতে এসেছেন কেবল দেশকে ভালোবেসে। নতুন করে গড়ে তোলা এই দেশটাকে যে এগিয়ে নেবার দায়িত্ব পরবর্তীতে তোমাদের, নেতার মতো অহিংস, দৃঢ় আর জ্ঞানের আলোয় দীপ্ত হয়ে দেশের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বন্যা দূর্গত এলাকা রক্ষা করবার মতো পুরো দেশটাকেও যে সামলাতে হবে..পারবেনা?
কোন একদিন লজ্জার রঙ কি- জানতে চেয়েছিলাম। আজ তাই ভাবলাম আমায় লজ্জার হাত থেকে উদ্ধার করা মানুষগুলোকে কৃতজ্ঞতার রঙে না রাঙিয়ে, জীবনের ব্যস্ততায় জড়ানো কি মানায় ?