সদ্য মুক্তি প্রাপ্ত রুবাইয়াত হোসেন পরিচালিত ‘মেহেরজান’ সিনেমাটি নিয়ে নানান মহলে চলছে বিতর্ক। কেউ পক্ষে কেউ বিপক্ষে। আমার কাছে মনে হয়েছে ব্লগে অনেকে অনেক ভারি ভারি মন্তব্য করে বসেছেন। অনেকে বলেছেন, এখনি সরকারের উচিত ছবিটি নিষিদ্ধ করা। আমার কাছে সন্দেহ হয়, যারা এমন মন্তব্য করেছেন তারা আদেও ছবিটি দেখেছেন কিনা ?
অনেক বিজ্ঞ মানুষ এ বিষয়ে লিখেছেন। ছবিটির প্রিমিয়ার শো আমারো দেখার সুযোগ হয়েছিল। আমি শুধু এটুকু বলবো, ছবিটির যেখানেই প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে তার উত্তর পাশাপাশি রয়েছে। যেমন নানাজানের ভুমিকা, তার বক্তব্যের শুরুতে অস্পষ্ট ছিল। কিন্তু পরে স্পষ্ট হয়েছে। সিনেমা টি দেখার পরে নানাজানকে দেশদ্রহী বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধের মানুষ বলাটা যুক্তিযুক্ত হবে না।
ভিক্টর ব্যানার্জির বক্তব্যের মাধ্যমে তার ইচ্ছা এবং মানুষের প্রতি তার ভালবাসা প্রমান করেছ্।ে যারা গ্রামের রক্ষনশীল পরিবারের মানুষ তারা বুঝবেন। আমাদের সমাজে নানাজানের মত মানুষ অনেক রয়েছেন। যারা সর্বচ্চো আপোষ করে শান্তি চাই।
নানাজান চরিত্রটি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আরো আগে মাটির ময়না সিনেমায় জয়ন্ত চট্্েরাপাধ্যায় এর চরিত্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠানো দরকার ছিলো। এ দুটি চরিত্র আমার কাছে অনেকটা এক মনে হয়েছে। আমি মনে করি তার আর দরকার নাই। আসলে আমাদের সমাজের মানুষগুলো এমনি। তারা সহজ সরল ও শান্তি প্রিয়।
যারা সরাসরি গ্রামের রক্ষনশীল পরিবার থেকে এসেছে তারা বুঝবে। এই সমাজের ঘরে ঘরে আজও দেখা যাবে এমন অনেক নানাজানকে। সিনেমাটিতে কিছু অতি কাল্পনিক ব্যাপার রয়েছে। যেমন, যুদ্ধ বিগ্রহের মাঝে একটি গ্রামে অবাধে প্রেম করে বেরাচ্ছে ওয়াসিম খান মেহেরজানকে নিয়ে। একজন পাক সেনার দ্বারা এটা করা কতটা বাস্তবিক।
‘খানেলাগা’ বিষয়টা আসলে কী ? এই শব্দটা না আনলে ভাল হতো।
ছবিটি শুধু যুদ্ধের গল্প নয়। শুধু ভালবাসার গল্প নয়। এটি যুদ্ধ ও ভাল বাসার গল্প। ব্লগ-পত্রপত্রিকা এবং প্রিমিয়ারশো থেকে যা বুঝেছি তা হলো, এখানে যুদ্ধের মধ্যে এক পরিবারের নানান ঘাত প্রতিঘাতের কথা উঠে এসেছে।
যারা ছাত্র ইউনিয়য়ন করেন বা করতেন তাদের জন্য একটা বড় হানিকর ব্যাপার ঘটেছে। নীলা পরোক্ষ ভাবে বলেছে, সে আগেই ধর্ষিত হয়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখিয়েছে সে একজন ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী। ছাত্র ইউনিয়নের নিয়মিত কাজের এমন কোন রেকর্ড পরিচালকের কাছে আছে বলে আমার জানা নেই থাকলেও ছিনেমায় এই কথাটাকে ব্যাবহার না করলেও পারতেন।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি নানাজানের চরিত্রের মাঝে আমাদের দেশের রক্ষনশীল নিরীহ মানুষের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। এখানে অন্য কিছু খোজার চেষ্টা নিছক হবে। একাত্তরে খান সেনারা যে হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ যা যা করেছে তা দেখানো হয়েছে এ ছবিতে। সমস্যা টি এসেছে একটি মেয়ে কি করে একটি বেলুচ সেনার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছিল। ছবির পরিচালক এ গল্পের একটি বাস্তব ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেটা আজ প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে।
বাংলাদেশে যুদ্ধরত পাকিস্তানী এক সেনাসদস্য নিজ দল ত্যাগ করে বাঙালিদের নৈতিক সমর্থন দিয়েছেন। রক্ষা করেছেন এক বাঙালি নারীকে ধর্ষণের হাত থেকে। একজন গ্রামের কিশোরীর কাছে একটি সুশ্রি, জীবন ও মান বাঁচানো মানুষটি প্রিয় মানুষ হতেই পারে। একজন মেয়ে একটি ছেলেকে ভালবেসেছে। তাই বলে আমাদের সমাজ তো তাকে মেনে নেয়নি। এমনকি মেহেরজানের পরিবার সেটা করে নি। সমাজের মানুষ ওয়াসিম খানকে হত্যা করতে এসেছে। পরিবার সমাজ কেউ তাকে মেনে নেয়নি।
আমাদের সর্বপরি মনে রাখা দরকার ছিল এটা একটি গল্প। একজনের একান্ত ব্যাক্তিগত গল্প। একজন তার ডাইরী খুলে খুলে কথাগুলো বলেছেন। এটা কোন ভাবেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি হতে পারে না।
কিছু সত্য কথা হইতো এখানে রয়েছে। যা অনেকের গাঁয়ে লাগতে পারে। আমি বলব, তার সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কিসের সম্পর্ক। যারা ছবিটি দেখেছেন তারা মন্তব্য করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




