somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অন্য রকম ভালোবাসার গল্প।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেম সবসময় প্রেমিকার রুপে আসে না। জীবনে প্রেম আসে নানা রুপে। হয়ত সব সময় তা আমরা বুঝতেও পারি না। আমারও এসেছেছে। একবার না একাধিক বার। ২০০৯ সালের দিকে যখন চুটিয়ে প্রেম করছি, সুযোগ পেলেই প্রেমিকার বেড রুমে ঢুঁকে যাচ্ছি বা হাত ধরে রেল লাইনের বিশাল পাতের উপর দিয়ে হেটে চলেছি, ঠিক সেই সময় সুচনা হয়েছিল আরেকটি প্রেমের। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি। রোজ একসাথে কথা বলছি, ভালো লাগা- মন্দ লাগা সেয়ার করছি, কিন্তু বুঝতে পারিনি একটি পুর্নাজ্ঞ প্রেমের ফোঁকর গোলে আরেকটি প্রেম আমার জীবনে উঁকি দিচ্ছে। মেয়েটিও ঠিক ক্লিয়ার করে আমাকে কখনোই কিছু বলেনি। এর পরে দীর্ঘ একটি গ্যাপ। ২০১৩ সাল। পুরাতন প্রেমের ইতি টেনে ততোদিনে আমি শূন্য। পুরাতন প্রেমিকার কিছু সৃতি নিয়ে ভালোই চলছে জীবন। হটাত একদিন সেই মেয়েটির সাথে ধানমন্ডি লেকে দেখা হয়ে গেল। সাথে তার প্রেমিকও। অনেকটা মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মত। প্রায় তিন বছরের একটি বিরতি। এর মাঝে অনেক কিছুই বদলেছে। শরিরিক গঠন, মানসিক পরিপক্কতা। পৃথিবীর জটিলতা গুলো বুঝে ওঠার মত অনেক বেশি পরিপক্ব তখন আমরা। হটাত আমার মনে হল আমি ভালো নেই। শুধু ভালো থাকার এক ধরনের ভান করে চলেছি। অতীতের সৃতি বয়ে নিয়ে চলা আর সত্যিকারের ভালো থাকা এক বিষয় না। মেয়েটির আগমনির পর থেকে হটাত জীবনে যেন ছন্দ ফিরে আসতে শুরু করেছে। যতক্ষণ তার পাশে থাকি যেন স্বর্গ থাকে আমাকে ঘিরে । তখন আমি পুরোদমে মিডিয়াক কাজ করছি। প্রফেশনের নানা জটিলতা, কুটিলতা, প্রতিযোগিতা। দিন শেষে সকল প্রকারের মানসিক ফ্রাস্ট্রেশন, ক্লান্তি নিয়ে তার বাসার সামনে হাজির হই। সে একটু মিষ্টি করে হেসে ছুঁয়ে দেয়। সারাদিনের ক্লান্তি যেন বাতাসে মিলিয়ে যায়। ঠিক যেন টনিকের মত। রোজ এই টনিকের লোভে আমি তার বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। রাত- ৯, ১০, কখনো বা ১১ টা। আমরা দুজনেই বুঝতে পারলাম আমরা একে অপরের প্রেমে পড়েছি। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছি না। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুজনই দুজনের হৃদয়ের স্পন্দন বুঝতে পারি। চোখের ভাষা বুঝি। কিন্তু মুখ ফুটে বলা নিষেধ। পাশা পাশি বসে রিক্সায় যাচ্ছি, কিন্তু একে অপরকে ছুঁয়ে দেখা নিষেধ। দিন যত যায়, প্রেম ততোই ঘনীভূত হয়। মনের মাঝে ঝুড়ি ঝুড়ি কথা জমে। সব কথা শেষ পর্যন্ত আর ব্যাক্ত হয় না। লেকের পাড়ে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে যাচ্ছি। কিন্তু সেই নাবলা কথাটি বলা হয় না। বুঝতে পারি বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্বের ঘরে নাই। সম্পর্কটা বুঝি বন্ধুর চেয়ে একটু খানি বেশি হয়ে গেছে। হটাত একদিন দুজনই বুঝতে পারি আমরা ভুল করছি। দিন দিন আমরা একটি জটিল সম্পর্কের মাঝে আটকে যাচ্ছি। আমাদের মাঝে আরও একজন বসবাস করে। সে ঠিক আমাদের মত না। সে আমাদের থেকেও ভালো। ছেলেটিকে ঠকানোর অধিকার আমাদের নেই। আমরা তা পারি না। অন্যকে কষ্ট দিয়ে সুখি হওয়া যায় না। পরামর্শের জন্য গেলাম এক সাইকোলজি পড়ুয়া বড় ভাইয়ের কাছে। তিনি বললেন- "আপনার তো কোন দোষ নাই। অবশ্যই তাদের সম্পর্কের মাঝে ফাঁক ছিল। না হলে আপনি ঢোকার চান্স পেতেন না। সিদ্ধান্তটা তাকেই নিতে দিন"। বহুদিন আমি তাকে বুঝিয়েছি, সে শোনেনি। কিন্তু আমি যখন প্রায় তলিয়ে যেতে লাগলাম তখন সেও বুঝতে পারল, আমাদের এখন ফেরা উচিৎ। সে উঠেপড়ে লাগলো আমাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য। তার কথা- আমকে বিদেশে যেতেই হব। অন্যথায় আমরা ক্রমাগত ভুল করতেই থাকব। বিদেশে পড়ার স্বপ্ন খুব প্রবল ভাবে কখনোই ছিল না। কিন্তু আমার আর দেশে থাকা হল না। আমি দেশ ছাড়লাম। দেশ ছাড়ার বহু আগে ছাড়লাম তাকে। দেখা বন্ধ, কথা বন্ধ। বিদেশে আসার আগে শেষবার মিলিত হয়েছিলাম আজিজ সুপার মার্কেটের তিনতলার ঐ রেস্টুরেন্টে। খুব মনে আছে তার উপর রাগ করে সেবছর সরস্বতী পূজার আগে মাথার চুল কেটে কুচ্ছিত সেজেছিলাম। দরকার নেই নিজেকে স্মাট করে সাজানোর। কিন্তু তারপরেও আনস্মার্ট একজন ন্যাড়া মাথার ছেলের হাত ধরে সারাটা বিকেল, সন্ধ্যা, মধ্য রাত অবধি সে ঘুরে বেরিয়েছিল জগন্নাথ হলের পূজার মেলায়। জনে জনে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল এক অদ্ভুত ভঙ্গিমায়। অব্যাখ্যান সেই সুখের দিনটি মনে হলে আজও চোখে জল জমে। দেশ থেকে আসার পরে আজ অবধি আমরা দেখা করিনি, কথা বলিনি। আমরা আজ আর কেউ কারো না। হয়ত ফোঁটার অপেক্ষায় থাকা সেই প্রেমটি আজীবনই সেভাবে অফোঁটাই থেকে যাবে। কেউ কখনো জানবেও না। ফেসবুকের পাতা জুড়ে তাদের যুগল ছবি ভেসে বেড়ায়। আমি দেখি। আমার কেমন কেমন যেন এক ধরনের অনুভূতি হয়। সেটা ভালো লাগা না মন্দ লাগা জানি না। সে সুখে আছে, তার জীবনটা নির্ঝঞ্জাট করতে পেরেছি ভেবে ভালোই লাগে। তার স্পর্শে হয়ত নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম। কিন্তু হারিয়ে গেছে আমার সেই নিখাদ বন্ধুত্বটা। ভালো থাকিস টম বয়। ভালোবাসা দিবসের অফুরন্ত ভালোবাসা তোদের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫০
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×