প্রেম সবসময় প্রেমিকার রুপে আসে না। জীবনে প্রেম আসে নানা রুপে। হয়ত সব সময় তা আমরা বুঝতেও পারি না। আমারও এসেছেছে। একবার না একাধিক বার। ২০০৯ সালের দিকে যখন চুটিয়ে প্রেম করছি, সুযোগ পেলেই প্রেমিকার বেড রুমে ঢুঁকে যাচ্ছি বা হাত ধরে রেল লাইনের বিশাল পাতের উপর দিয়ে হেটে চলেছি, ঠিক সেই সময় সুচনা হয়েছিল আরেকটি প্রেমের। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি। রোজ একসাথে কথা বলছি, ভালো লাগা- মন্দ লাগা সেয়ার করছি, কিন্তু বুঝতে পারিনি একটি পুর্নাজ্ঞ প্রেমের ফোঁকর গোলে আরেকটি প্রেম আমার জীবনে উঁকি দিচ্ছে। মেয়েটিও ঠিক ক্লিয়ার করে আমাকে কখনোই কিছু বলেনি। এর পরে দীর্ঘ একটি গ্যাপ। ২০১৩ সাল। পুরাতন প্রেমের ইতি টেনে ততোদিনে আমি শূন্য। পুরাতন প্রেমিকার কিছু সৃতি নিয়ে ভালোই চলছে জীবন। হটাত একদিন সেই মেয়েটির সাথে ধানমন্ডি লেকে দেখা হয়ে গেল। সাথে তার প্রেমিকও। অনেকটা মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মত। প্রায় তিন বছরের একটি বিরতি। এর মাঝে অনেক কিছুই বদলেছে। শরিরিক গঠন, মানসিক পরিপক্কতা। পৃথিবীর জটিলতা গুলো বুঝে ওঠার মত অনেক বেশি পরিপক্ব তখন আমরা। হটাত আমার মনে হল আমি ভালো নেই। শুধু ভালো থাকার এক ধরনের ভান করে চলেছি। অতীতের সৃতি বয়ে নিয়ে চলা আর সত্যিকারের ভালো থাকা এক বিষয় না। মেয়েটির আগমনির পর থেকে হটাত জীবনে যেন ছন্দ ফিরে আসতে শুরু করেছে। যতক্ষণ তার পাশে থাকি যেন স্বর্গ থাকে আমাকে ঘিরে । তখন আমি পুরোদমে মিডিয়াক কাজ করছি। প্রফেশনের নানা জটিলতা, কুটিলতা, প্রতিযোগিতা। দিন শেষে সকল প্রকারের মানসিক ফ্রাস্ট্রেশন, ক্লান্তি নিয়ে তার বাসার সামনে হাজির হই। সে একটু মিষ্টি করে হেসে ছুঁয়ে দেয়। সারাদিনের ক্লান্তি যেন বাতাসে মিলিয়ে যায়। ঠিক যেন টনিকের মত। রোজ এই টনিকের লোভে আমি তার বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। রাত- ৯, ১০, কখনো বা ১১ টা। আমরা দুজনেই বুঝতে পারলাম আমরা একে অপরের প্রেমে পড়েছি। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছি না। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুজনই দুজনের হৃদয়ের স্পন্দন বুঝতে পারি। চোখের ভাষা বুঝি। কিন্তু মুখ ফুটে বলা নিষেধ। পাশা পাশি বসে রিক্সায় যাচ্ছি, কিন্তু একে অপরকে ছুঁয়ে দেখা নিষেধ। দিন যত যায়, প্রেম ততোই ঘনীভূত হয়। মনের মাঝে ঝুড়ি ঝুড়ি কথা জমে। সব কথা শেষ পর্যন্ত আর ব্যাক্ত হয় না। লেকের পাড়ে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে যাচ্ছি। কিন্তু সেই নাবলা কথাটি বলা হয় না। বুঝতে পারি বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্বের ঘরে নাই। সম্পর্কটা বুঝি বন্ধুর চেয়ে একটু খানি বেশি হয়ে গেছে। হটাত একদিন দুজনই বুঝতে পারি আমরা ভুল করছি। দিন দিন আমরা একটি জটিল সম্পর্কের মাঝে আটকে যাচ্ছি। আমাদের মাঝে আরও একজন বসবাস করে। সে ঠিক আমাদের মত না। সে আমাদের থেকেও ভালো। ছেলেটিকে ঠকানোর অধিকার আমাদের নেই। আমরা তা পারি না। অন্যকে কষ্ট দিয়ে সুখি হওয়া যায় না। পরামর্শের জন্য গেলাম এক সাইকোলজি পড়ুয়া বড় ভাইয়ের কাছে। তিনি বললেন- "আপনার তো কোন দোষ নাই। অবশ্যই তাদের সম্পর্কের মাঝে ফাঁক ছিল। না হলে আপনি ঢোকার চান্স পেতেন না। সিদ্ধান্তটা তাকেই নিতে দিন"। বহুদিন আমি তাকে বুঝিয়েছি, সে শোনেনি। কিন্তু আমি যখন প্রায় তলিয়ে যেতে লাগলাম তখন সেও বুঝতে পারল, আমাদের এখন ফেরা উচিৎ। সে উঠেপড়ে লাগলো আমাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য। তার কথা- আমকে বিদেশে যেতেই হব। অন্যথায় আমরা ক্রমাগত ভুল করতেই থাকব। বিদেশে পড়ার স্বপ্ন খুব প্রবল ভাবে কখনোই ছিল না। কিন্তু আমার আর দেশে থাকা হল না। আমি দেশ ছাড়লাম। দেশ ছাড়ার বহু আগে ছাড়লাম তাকে। দেখা বন্ধ, কথা বন্ধ। বিদেশে আসার আগে শেষবার মিলিত হয়েছিলাম আজিজ সুপার মার্কেটের তিনতলার ঐ রেস্টুরেন্টে। খুব মনে আছে তার উপর রাগ করে সেবছর সরস্বতী পূজার আগে মাথার চুল কেটে কুচ্ছিত সেজেছিলাম। দরকার নেই নিজেকে স্মাট করে সাজানোর। কিন্তু তারপরেও আনস্মার্ট একজন ন্যাড়া মাথার ছেলের হাত ধরে সারাটা বিকেল, সন্ধ্যা, মধ্য রাত অবধি সে ঘুরে বেরিয়েছিল জগন্নাথ হলের পূজার মেলায়। জনে জনে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল এক অদ্ভুত ভঙ্গিমায়। অব্যাখ্যান সেই সুখের দিনটি মনে হলে আজও চোখে জল জমে। দেশ থেকে আসার পরে আজ অবধি আমরা দেখা করিনি, কথা বলিনি। আমরা আজ আর কেউ কারো না। হয়ত ফোঁটার অপেক্ষায় থাকা সেই প্রেমটি আজীবনই সেভাবে অফোঁটাই থেকে যাবে। কেউ কখনো জানবেও না। ফেসবুকের পাতা জুড়ে তাদের যুগল ছবি ভেসে বেড়ায়। আমি দেখি। আমার কেমন কেমন যেন এক ধরনের অনুভূতি হয়। সেটা ভালো লাগা না মন্দ লাগা জানি না। সে সুখে আছে, তার জীবনটা নির্ঝঞ্জাট করতে পেরেছি ভেবে ভালোই লাগে। তার স্পর্শে হয়ত নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম। কিন্তু হারিয়ে গেছে আমার সেই নিখাদ বন্ধুত্বটা। ভালো থাকিস টম বয়। ভালোবাসা দিবসের অফুরন্ত ভালোবাসা তোদের জন্য।
একটি অন্য রকম ভালোবাসার গল্প।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫০
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ
কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।