somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সালমা আমাদের ক্ষমা করিয়ো... আমাদের মত বাঙালী হিংসুটে প্রাণী আর কে হতে পারে..?

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যতটুকু জানি সেই ছোটকাল থেকে বাড়ীর মা-বাবা থেকে শুরু করে স্কুলের গুরুজন সহ মইমরুব্বিদের কাছে শিখেছি যে ভাষা হচ্ছে বিধাতার দান সেটা যেই ভাষা হউক না কেন। কিন্তু পাকিস্তানে খেলতে যাওয়া মহিলা টাইগার বাহিনীর অধিনায়ক সালমা পাকিস্তানের এক সংবাদ সম্মেলনে উর্দুতে কথা বলে বিপাকে পড়েছেন।
এনিয়ে আমাদের কিছু আজবমার্কা দেশপ্রেমিক ইয়া বড় বড় স্টাটাস বমি করছে যে
"ভাষা আন্দোলন কি এই জন্য করেছিলাম”
“উর্দু হচ্ছে জঙ্গিদের ভাষা”
“নব্য রাজাকার সালমাকে দেশে এনে কঠিন শাস্তি দেওয়া হউক”
ইত্যাদি ইত্যাদি
*
প্রকৃত দেশপ্রেমিকের পায়ের জুতারো সমান না এইসব হিংসুটে খামাখা দেশপ্রেমিককে কিছু প্রশ্ন করছি-
“আজ বাংলার সংস্কৃতির কবর রচনা করে আপনার বাড়ীতে যখন হিন্দি টিভি চ্যানেল এর জয় জয়কার তখন কোথায় চলে যায় আপনার দেশে প্রেম? আপনার মা, আপনার বোন, আপনার বউ যখন সারাদিন হিন্দি সিরিয়ালে ঢুকে হাবুডুবু খাচ্ছে, বাংলার আদলে বলছে “কিয়া খাবার হে তেরা” তখন বুঝি দেশ প্রেম বেড়ে যাচ্ছে..?
*
আচ্ছা বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমাতে যখন দেশি মুল্লা বিদেশী মুল্লার সাথে বসে কথিত উর্দু ভাষায় ইয়া বড় মোনাজাত পরিচালনা করে, যখন লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালী সেই উর্দু ভাষাতে মোনাজাতে আমিন আমিন বলে রব তোলে, সেই আমিন আমিন ধ্বনীতে আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী সহ অন্যান্য কর্তারা যখন সুর মেলান তখন কোথায় থাকেন আমাদের সেই দেশপ্রেমিকরা যারা আজ সালমার উপর আঙ্গুল তুলছেন?
*
যখন যেখানকার মানুষ যেভাষাতে কথা বলতে বুঝতে পারে সেই ভাষা বললে দোষ কোথায়? সেখানে যদি সালমা সেখানকার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর বাংলায় দিতেন তাহলে তাদের বুঝতে একটু দেরি হতো সেখানে উর্দুতে বলায় বোধগম্য হয়েছে সবার সেখানে জীবন বাজি রেখে এমন দেশে খেলতে যাওয়া আমাদের ক্যাপটানকে সাহসি না বলে রাষ্ট্রদোহী বলতে একটুই গলা আটকালো এইসব কথিত দেশপ্রেমিকদের??
*
আজ আমরাই যখন বিদেশীদের এনে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে পার্শ্ববর্তী দেশের নায়িকাদের ইয়া বড় বড় বিলবোর্ড ঢাকা,চট্টগ্রাম সহ দেশের কানায় কানায় লাগাচ্ছি তখন দেশপ্রেম যায় না, না? দেশি গুনবতি অভিনেতা অভিনেত্রী থাকার পরেও যখন আমরা শাহরুখ খান কিংবা ভারতীয় গায়কদের এক বড় দলকে ঢাকায় এনে সারা রাত হিন্দু গান “মেরা ভারাত মাহান” ইত্যাদি শুনি তখন দেশপ্রেম যায় না?
*
আজ হিন্দি সংস্কৃতির প্রভাবে রাস্তা ঘাটে, স্কুল কলেজে, অলি গলিতে বাড়ী বাড়ীতে যখন কমবেশি সবাই হিন্দিতে কথা বলছি, আমরা যখন “কোথায় যাচ্ছো” এর আদলে আজ “কাহা যা রাহেহো” বলছি, আমরা যখন বলি “পরে কথা বলবো আভি টিভি দেখ রাহি হু” তখন আমাদের মস্ত বড় দেশপ্রেমিক কোথায় চলে যান কিছুই বুঝি না। তখন বাংলা ভাষার কি অপমান হয় না?
*
কিছুদিন আগে বাংলাদেশে এসেছিলেনভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তিনি বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে সমস্ত মিডিয়ার সামনেই পরিষ্কার বাংলায় উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, "আপনারা ভালো আছেন?" অথচ মোদি যখন পরিষ্কার বাংলায় কথা বলেছিলেন তখন তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা কোন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল জানেন? সালমা খাতুনের ব্যাপারটাও ঠিক এইভাবে চিন্তা করুন না কেন? নাকি পাকিস্তানিদের কাছ থেকে শ্রদ্ধা পাওয়াটাও দেশপ্রেমহীনতা???
কই কোন ভারতীয়রাকতো মোদির দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলে নি। আর যদি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই যদি ভারতের কোন এক সফরে গিয়ে হিন্দিতে কথা বলতেন যাতে তাদের বুঝতে সুবিধা হয় তাহলে কি তিনি রাষ্ট্রদোহী হয়ে যাবেন? এরুপ যাদের যুক্তি হয় তাহলে বলবো মাথার ভিতরে যে ছোট মগজ আছে তার চিকিতসা করান আপনারা। অবশ্য চিকিতসার ফলাফল হবে শুন্য (0), কারন ভবিষ্যতে হয়তো এইডস রোগের ঔষধ বের হতে পারে কিন্তু যাদের মনে হিংসা তাদের কোন চিকিতসা নেই।
*
কথা বলতে গেলে এই সব আজব মার্কা দেশপ্রেমিকদের কালো চেহরা উত্থাপন করতে হয়তো কয়েক খন্ডে পুস্তক রচনাও কম হবে। শুধু এই টুকু বলবো যারা আমাদের সাথে অতিতে অন্যায় করেছে আজ যদি তাদের সাথে সেইরুপ ব্যবহার আমরা করি তাহলে পাকিস্তান আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায় রইলো? একজন যদি বহু ভাষায় কথা বলতে পারে তাহলে তার যোগ্যতানুসারে তাকে সম্মান না করে তাকে অপমান করে, দেশদ্রোহী রাজাকার বলে কোন দেশ প্রেমের সংজ্ঞা দিচ্ছেন আপনারা? ভাষাগত গোড়ামী হিংসুটে মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট তাহলে কি আমরা হিংসুটে প্রানীতে পরিনত হচ্ছি? সালমা আমাদের ক্ষমা করো আমরা তোমার অবদানকে ভুলে গিয়েছি কারন আস্তে আস্তে আমরা মানুষ থেকে হিংসুটে প্রানীতে রুপান্তরিত হচ্ছি।
বিসিবি’র দেশপ্রেমিকরা আজ যারা সালমার উপর চটেছেন অনুরোধ রইলো নিজেকে যদি এতই দেশপ্রেমিক মনে করে থাকেন তাহলে উপরে উত্থাপিত প্রশ্নগুলির সঠিক উত্তর দিবেন বাঙালীকে নাহলে আমাদের সরকার কর্তৃক ঢাকাতে লাগানো বিলবোর্ডে একটু নজর দেওয়ার আহবান রাইলো যেখানে বড় বড় করে লেখা আছে “'সব দেশের সাথেই সুসম্পর্ক, কোন বৈরিতা নয়”.......
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯
১৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×