somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিসেম্বর.....কিছু না বলা কথা..

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সব বিজয়ই কি সাথে অসহ কিছু বেদনা নিয়ে আসে ? সুখের সাথে কিছু দুঃখ মিশে না থাকলে কি সুখটা খাটি হয়না ?এত আনন্দের স্মৃতি...কিন্তু কেন মনে পড়লেই চোখে পানি আসে ?

বাঙালীর জীবনের অবিস্মরণীয় সেই ডিসেম্বর আমি দেখিনি। তবু উপলব্ধি থেকেই উৎসবে মাতি, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরে জন্মেছি, তারাও।
ডিসেম্বর আমার জন্য কিছু ব্যক্তিগত বিজয়ের মাসও বটে। আমার মা-বাবার বিয়ের দিনটি এ মাসেই (১৬ ডিসেম্বর ), আমার জন্মের দিনটিও। মাঝে মাঝে মনে হয়, ডিসেম্বর মাস ছিলো বলেই তো পৃথিবীর সাথে পরিচয় হলো। ফলে আমার জীবনের যত বিজয়, সবকিছুর কারন তো এটাই।(সব যন্ত্রনারও অবশ্য )।
কথাটা আবেগী, জানি। বিষয়টাও আবেগী। জীবন আমাদের প্রত্যেককে একধরনের স্ট্রাগলের মধ্যে ঠেলে দেয়। একেকজনের স্ট্রাগল একেকরকম। কিন্তু কারোটাই সহজ নয়। এ লড়াই লড়তে আবেগও তো একধরনের হাতিয়ার ।

যখন স্কুলে পড়তাম , নভেম্বর মাসটা সাধারনত ফাইনাল পরীক্ষা চলত। আর ডিসেম্বর মাসটা থাকত...আহা কি আনন্দ...ছুটি। আর ছুটি মানেই তো পুরো পরিবারসহ দেশের না দেখা কোনো জায়গা বেড়াতে যাওয়া। কাজেই ডিসেম্বরের অপেক্ষা করতাম সারা বছর ধরে। ডিসেম্বর মানেই আমার জীবনে অজস্র অপেক্ষার শেষে পাওয়া একমুঠো খুশীর মুহূর্ত।

কিছু কিছু স্মৃতি থাকে, যা আনন্দের না বেদনার তা বুঝতে আমাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। জানি বিজয়ের জন্য কিছু ত্যাগ স্বীকার করতেই হয়। আমাদের ব্যক্তিগত বিজয়গুলোর জন্যও এ কথাটি পুরোপুরি সত্যি। যা পেয়েছি তার জন্য আনন্দিত হই, কিন্তু যা হারিয়েছি তার জন্য দুঃখ করা উচিত কিনা তা বুঝতে পারিনা। হয়তো "past is past" বলে ভূলে যাওয়াটা অনেক ক্ষেত্রেই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু ভুলতে পারিনা যখন মনে পড়ে, আমাকে হারাতে হয়েছে অন্য কেউ বিবেক হারিয়েছে বলে , আমাকে হারাতে হয়েছে কারন অন্য কেউ ন্যায় অন্যায়ের পার্থ্যক্য বুঝতে পারেনি।

আমার কাছে জীবনটা একটা ভ্রমনের মত । শিক্ষা সফর। কত অভিজ্ঞতা আসবে জীবনে..কত আনন্দ বেদনা তিক্ত মধুর ঘটনা ঘটবে। কখনো চোখভর্তি করে পানি আসবে, কখনো অস্থির হবে রাগে। কখনো নায়ক হবে, কখনো হবে ভিলেন। কিন্তু এই সবকিছুর ওপরে থাকবে একটা বিবেচক মন , সব ঘটনা থেকেই কোনো না কোনো শিক্ষা নেবে । আর অতীতে পাওয়া শিক্ষাগুলো মনে রাখবে, ভবিষ্যতে কাজে লাগাবার জন্য।

শুধু যদি আমরা.... আর একটু .....বিবেকের ব্যবহার করতাম । শুধু যদি আর একটু ...আমরা পরস্পরের ব্যথা বুঝবার চেষ্টা করতাম।



রিডার্স ডাইজেস্টের অনেক পুরনো একটা সংখ্যায় গল্পটা পড়েছিলাম :

মৃত্যুর পর পরলোকে গিয়েছেন এক সাধু। অনেক তার পূণ্য। দেবদূতেরা জানালেন, সব ইচ্ছেই পূর্ণ হবে তার। সমস্ত জীবন জ্ঞান অর্জন করে কাটিয়েছেন, এবার সাধুর ইচ্ছে হল পরলোক সম্বন্ধে জানতে । স্বর্গে তো যাবেনই, তার আগে একটু ঘুরে দেখতে চান নরকটাও। কেমন ওটা ?
দেবদূতেরা তাকে নিয়ে গেল একটা বিশাল ঘরে। ঘরের ঠিক মাঝখানে রাখা একটা চৌবাচ্চা। তাতে রাখা আছে সাধুর প্রিয় খাবার, মজাদার স্যুপ।
নরকের সব লোকের হাতেই দেয়া হয়েছে স্যুপ খাবার চামচ। কিন্তু চামচগুলোর হাতল অনেক অনেক লম্বা। মানুষগুলোর চাইতেও লম্বা।ফলে তারা স্যুপ তুলতে পারে ঠিকই, কিন্তু মুখ পর্যন্ত আনতে পারেনা। সবাই চিরক্ষুধার্ত । চিৎকার, আহাজারী,অভিশাপ, কান্না সারা নরক জুড়ে। সাধু আর দেখতে পারলেননা এই কষ্ট। দেবদূতদের সাথে বের হয়ে এলেন দ্রুত।
এবার তাকে নিয়ে যাওয়া হল স্বর্গে। অবাক হয়ে সাধু দেখলেন বিশাল এক ঘর। ঘরের মাঝে চৌবাচ্চায় রাখা একইরকম মজাদার স্যুপ। স্বর্গের সব লোকের হাতেও একইরকম বিরাট লম্বা হাতলওয়ালা চামচ। তাদেরকেও তাই দেয়া হয়েছে , যা নরকের লোকেরা পেয়েছে।
কিন্তু কি আশ্চর্য !
এখানে কোনো চিৎকার নেই, কান্না নেই, আহাজারী নেই। এখানে কেউ ক্ষুধার্ত নয়। কারন এরা কেউ খাবার তুলে নিজের মুখে আনবার চেষ্টা করছেনা। সবাই খাবার তুলে খাওয়াচ্ছে দূরে অবস্থিত অন্য কাউকে।


মানুষই একটি জায়গাকে স্বর্গ অথবা নরকে পরিণত করে। এখানে ঈশ্বরের কোনো হাত নেই। যতক্ষন মানুষ শুধুমাত্র নিজের সুখের কথা ভাবে, ততক্ষন কেউ সুখি হয়না । রূপকথার গল্পের মত অদ্ভুত অবিশ্বাস্য শোনালেও কথাটা আসলে সত্যি।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:৪৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×