somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিত্যদিনের অপমানগুলো

০৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিষ্টাচার , বিনয়, ভদ্রতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা এসব গুনাবলি প্রতিটি মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য হওয়ার কথা হলেও দিন দিন বাঙ্গালির এসবের কমতিটা লক্ষণীয় । আমাদের নিত্য পথচলায় বিব্রতকর ও অপমানজনক ব্যবহারের মুখোমুখি হতে হয় । ব্যক্তি জীবনের গন্ডি পেরিয়ে জাতীয় জীবনেও অন্যের প্রতি স্বাভাবিক শিষ্টাচার প্রদর্শনে রয়েছে আমাদের সীমাহীন দীনতা । হাজার বছরের বাঙ্গালি সংস্কৃতির নান্দনিক ও মানবিক দিকগুলো যেন ক্রমান্বয়ে অপসংস্কৃতির কানাগলিতে হারিয়ে যাচ্ছে । তুচ্ছ কারণে একে অন্যকে অসম্মান করা কিংবা কথার মারপ্যাচেঁ কাবু করতে না পারলে উন্নত সংস্কৃতির চর্চা হয় না। এরকম অসম্মানজনক অভিজ্ঞতা প্রতিটি বাঙ্গালির ভাগ্যে প্রতিনিয়তই ঘটতে থাকে । রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে অফিসের বড়কর্তা পর্যন্ত প্রত্যেকের ব্যবহারের মধ্যে অন্যকে অপমান করার ব্যাপারে অদ্ভুত অন্তমিল রয়েছে । শিক্ষিত মানুষের নিকট পরিশীলিত আচরণ প্রত্যাশিত হলেও অপ্রত্যাশিতভাবে তা পাওয়া আজ সত্যিই দুষ্কর । পথ চলতে গিয়ে এরকম অগুনতি অসম্মানজনক আচরণের অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার । একবার নিজ জেলার একটি অফিসে গিয়ে পিয়নের নিকট কিভাবে আবেদন করতে হবে জানতে চাইলে হাটতে হাটতে পিয়ন সাহেব একবার জবাব দিলেন বটে, দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করতেই বিরক্ত হয়ে বললেন "আপনি বাংলা বোঝেন না" ? আমার বাংলা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি প্রথমবারের মত বুঝতে পেরে বরং লজ্জিতই হলাম । বাস কাউন্টারে বসা টিকেট বিক্রেতার নিকটও দু'বার প্রশ্ন করা যায় না । চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন আমার অজ্ঞতা । একদিন ট্রেনের টিকেট কাটতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি । কাউন্টারে একমাত্র টিকেট ক্রেতা হিসেবে আমি একাই ছিলাম । প্রথম শ্রেণীর একটি টিকেট চাইতেই টিকেট বিক্রেতা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বললেন "কখনও ট্রেনে চড়েছেন" ? তার রাগের কারণ না জেনেই বললাম "জি মাঝে মাঝে চড়ি" । তিনি বললেন "আপনি জানেন না শায়েস্তাগঞ্জ থেকে ফেনী প্রথম শ্রেণীর টিকেট হয়না "। আমার অজ্ঞতা বুঝতে পেরে বললাম তাহলে চট্টগ্রামের টিকেট দেন। এবার অপেক্ষাকৃত শান্ত স্বরে বললেন "সেটা বলেন" । আরেকবার বাড়ি যাওয়ার জন্য সহকর্মীসহ ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে উঠে আমাদের জন্য নির্ধারিত আসনের উপরে ব্যাগ রাখার স্থানে অন্য একটি ব্যাগ দেখে সেটা কার জিজ্ঞাসা করলাম । ব্যাগের মালিককে না পেয়ে সেটি সরিয়ে পাশে রাখলাম । কিছুক্ষণ পর একজন শ্মশ্রুমন্ডিত পৌঢ় মত লোক এসে জিজ্ঞাসা করলেন ব্যাগটি সরালো কে? আমি সরিয়ে রেখেছি বলতে না বলতেই লোকটি রুদ্র মূর্তি ধারণ করে বলতে লাগলেন "আপনি মিয়া বেকুব নাকি" আপনি পাগল নাকি ? আপনি জানেন মিয়া এই ব্যাগের মধ্যে কি আছে ? ভয়ে ভয়ে বললাম না চাচা আপনার ব্যাগে কি আছে আমি কি করে জানবো ?তিনি বললেন এরমধ্যে কোরআন শরীফ রয়েছে । কিছুটা ভয় পেয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে বললাম চাচা আমি কিছুটা বেকুব, পাগলামিও আছে কিঞ্চিত, ভুল হয়ে গিয়েছে, আপনার ব্যাগটা এখন নিয়ে যান । বিনা টিকেটের ঐ যাত্রী অবশেষে শান্ত হয়ে আমাকে নিষ্কৃতি দিলেন । রিক্সা কিংবা সিএনজি ড্রাইভার সুযোগ পেলে যাত্রীটাকে অপমান করতে ছাড়েন না । অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাত্রীর নিকট তারাও ভালো ব্যবহার কমই পান । অনেক বাস ড্রাইভার আস্তে চালানোর অপরাধে যাত্রীদের গালাগাল শুনে অপমানে জোরে বাস চালাতে গিয়ে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন । এসব ক্ষেত্রে ড্রাইভারকে সম্পূর্ণ দায়ী করা হলেও যাত্রীদের দায়ও নেহাত কম নয় । ।অফিসের ছোট থেকে বড় কর্তার কাছে ন্যায়সঙ্গত কাজে গিয়ে সেবা প্রত্যাশী মানুষের একটা বড় অংশ পত্রপাঠ অপমানিত হয়ে ফিরে যেমন আসেন, তেমনি সেবা গ্রহিতার অন্যায্য ও অযৌক্তিক আবদার না রাখার কারণে অনেক ছোট বড় কর্মকর্তা কর্মচারীকে অপমানিত ও লাঞ্চিত হতে হয় । একজন মানুষ অন্যের নিকট যে আচরণ প্রত্যাশা করেন না তিনি নিজেই আবার আরেকজনের সাথে একই আচরণ করে অন্যের আশাভঙ্গের কারণ হন । আমরা কি ক্রমান্বয়ে চরম অসহিষ্ণু জাতিতে পরিণত হচ্ছি ? রাজনীতি থেকে সামাজিক, ব্যক্তি থেকে সামষ্টিক সর্বক্ষেত্রে শিষ্টাচারের বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে আজ । এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে সভ্য,বিনয়ী ও পরিশীলিত জাতিতে পরিণত হতে পারবো কবে?







১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×