somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তবুও সংসার টিকে থাকে.....

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছর ত্রিশের এক যুবক আলম (ছদ্মনাম) একদিন এসে তার স্ত্রী রহিমার (ছদ্মনাম) বিরুদ্ধে ব্যাভিচারের লিখিত অভিযোগ দিল ( অভিযোগটি প্রথাগত কোন আদালতে করা হয়নি । পারিবারিক সহিংসা নিয়ে কাজ করা একটি অফিসে অভিযোগ করা হয়েছে ।) । লিখিত অভিযোগের সাথে একটি ফটোগ্রাফ দেয়া হয়েছে যাতে একজন স্বল্পবসনা নারীর সাথে একজন পুরুষের অসংলগ্ন মূহুর্তের দৃশ্য । দেখে মনে হয়েছে কোন হোটেলে রাত্রি যাপনের ছবি । নারীটি আর কেউ নয় আলমের স্ত্রী, তবে সঙ্গীয় পুরুষটি অন্য কেউ । আলম তার স্ত্রীর বিচার চায় । স্ত্রীর সাথে কথা বলা হল এবং ফটোগ্রাফ দেখিয়ে আলাদা করে তার কাছে জানতে চাইলে সীমাহীন লজ্জায় নীল মেয়েটিকে উদভ্রান্ত আর এলোমেলো মনে হল । প্রথমে এড়িয়ে গেলেও চোখের সামনে নিজের ছবি দেখে কতক্ষণ আর অস্বীকার করা যায়? নিষিদ্ধ সম্পর্ক এভাবে সামনে চলে আসবে হয়তো কখনও ভাবেনি মেয়েটি । লজ্জায় অপমানে কান্নায় বুক ভাসিয়ে কিছু না বলেও অনেক কথা বলে দিল মেয়েটি । তারপর অনেকক্ষণ ধরে অফিসার ,স্বামী দেবতা আর মেয়েটি কারো মুখেই কোন কথা ছিল না । এক ধরণের অস্বস্থিকর নীরবতা নেমে এলো সমস্ত কক্ষ জুড়ে । জানা গেল ৬ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল । দু’টো মেয়েও রয়েছে তাদের ।স্বামীটি একসময় ইয়াবা/গাঁজায় আসক্ত হয়ে বুঁদ হয়ে থাকত ।স্ত্রী সন্তান কিংবা সংসারের কোন খবর নেয়ার প্রয়োজনই মনে করত না । তারপর কোন একদিন হঠাৎ উদাও হয়ে গেল স্বামীটি । টানা ৩ বছর কোথায় যেন হারিয়ে গেল । এদিকে দু’টো সন্তান নিয়ে জীবনের চরম অনিশ্চয়তায় স্ত্রীটি যখন দিশেহারা এমনি দুর্বল মূহুর্তে দৃশ্যপটে হাজির হলেন প্রতিবেশী সুযোগ সন্ধানী জাহিদ । বিবাহিত এবং ৩ সন্তানের জনক জাহিদ উপর্যপুরি নানা প্রলোভনে রহিমার সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন করে তার লালসা চরিতার্থ করতে সক্ষম হয় এবং অসতর্ক মূহুর্তে মোবাইলে অশ্লীল ছবিগুলো ধারণও করে । ঘটনাচক্রে জাহিদের স্ত্রীর হাতে সেসব ছবি পড়ে একদিন। শুরু হয় দু’টো পরিবারের মধ্যে টানাপোড়েন । হঠাৎ দৃশ্যপটে রহিমার স্বামী হাজির হয় এবং জাহিদের স্ত্রী সব দোষ রহিমার কাঁধে চাপিয়ে ফটোগ্রাফগুলো আলমের নিকট পাঠায় । স্ত্রীর নিশ্চিত ব্যাভিচারের প্রমাণ পেয়ে আলম বীরদর্পে বিচারকের কাছে প্রমাণ সমেত হাজির হয়ে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে । হাতে স্ত্রীর ব্যাভিচারের জলজ্যান্ত প্রমাণ, আর যায় কোথায় । অদ্ভুত ব্যাপার হলো বিচার চাইলেও আলম তার স্ত্রীর সাথে পুনরায় সংসার করতে চায় । পর পুরুষের সাথে স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের নিশ্চিত প্রমাণ পেয়েও সংসার করার অভিপ্রায় অবাক করার মতই ছিল বৈকি ।কারণ হিসেবে দু’টো সন্তানের ভবিষ্যতের কারণ দেখালেও রহস্যটা জানা গেল একটু পরেই । বছর তিনেক ধরে ভারতের একটি শরণার্থী শিবিরে অন্য নারীর পাল্লায় কাটিয়ে অবশেষে চ্যাঁকা খেয়ে রিক্ত হস্তে পুরোনো ডেরায় ফিরতে চাইলেও স্ত্রী বেঁকে বসায় স্ত্রীর অনৈতিকতার প্রমাণ সমেত এই (ন্যায়!) বিচার প্রার্থনায় অবতারণা । বিচারক কি আর বিচার করতে পারতেন ।রহিমা হয়তো অনৈতিক সর্ম্পকে জড়িয়ে অন্যায়ই করেছে । কিন্তু সমাজের দৃষ্টিতে তার অনৈতিকতার অতলে হারিয়ে যাওয়ার পেছনে অনুঘটকের ভূমিকায় কি কাজ করেছে তা ভেবে বিচারক চিরায়ত ন্যায় বিচারের পথে না গিয়ে সীমাহীন লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া অসহায় রহিমাকে নিষ্কৃতিই দিলেন। একজনের সুযোগ সন্ধানী লাম্পট্য, অন্যজনের মাদকের নেশা এবং পারিবারিক জীবনের প্রতি চরম উদাসীনতা দুটো পরিবারের যাপিত জীবনের বিশ্বাসের জায়গাটুকু চিরতরে নষ্ট করে দিয়েছে ।

মাস খানেক পরে রহিমার সাথে দেখা । চেহারায় প্রশান্ত ভাব । স্বামী আলমের কথা জিজ্ঞাসা করতেই বলল তার সাথে দিব্যি সংসার চালিয়ে যাচ্ছে এবং সে আয় রোজগারও করছে। জাহিদের সংসারও চলছে আগের নিয়মেই । যদিও ভাঙ্গা হাড়ি জোড়া লাগেনা বলে মনে করা হয়। জীবনে বেঁচে থাকার তাগিদে , জীবনকে কোনভাবে টেনে নেয়ার জন্য হলেও মানুষকে কম্প্রোমাইজ করতে হয়, বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে ভাঙ্গা হাঁড়িতে জোড়া লাগাতেও হয় কখনো কখনো ।কিন্তু পূর্বের মসৃন ভাব আর থাকেনা । হারিয়ে যায় চিরতরেই । তবু মানুষ হারানো বিশ্বাস খুঁজতে থাকে ভাঁঙ্গা হাড়ির অমসৃন ভাঁজে । হায়রে মানুষ, হায়রে সংসার, প্রচণ্ড ঝড়ের পরও তবু টিকে থাকে, টিকে থাকতে হয় ।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×