somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্যার এরকম করতেই পারেন না

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাজনিনকে প্রথম দর্শনে আপাদমস্তক স্মার্ট আর আধুনিকই মনে হয়েছে । সদা হাস্যেজ্জল মেয়েটি চমৎকার ইংরেজীর সাথে স্পষ্ট উচ্চারণে বাংলাটাও খুব সুন্দর করে বলে । বেসরকারী সংস্থায় মোটামুটি উচ্চ বেতনেই চাকুরি করে । লম্বা একহারা গঠন । বেশ সুন্দরীই বলা চলে । চাল চলনে এক ধরণের আত্নবিশ্বাস ফুটে উঠে সমস্ত অবয়বে । দৃশ্যত রক্ষণশীল মেয়েটি পুরুষ সহকর্মীদের সাথে কথোপকথনে সুযোগ পেলেই স্বামীর প্রসঙ্গ নিয়ে আসে এবং এটা বলতেও ভুলে না যে, স্বামীকে সে প্রচণ্ড ভালোবাসে । তার ধারণা এ রকম করে না বললে হয়তো কোন সহকর্মী আকস্মিক তাকে প্রেম নিবেদন করে বসতে পারে । তাকে দেখে মনে হয় পুরুষ মানুষ সম্পর্কে ব্যাখ্যাতীত সন্দেহ অবিশ্বাসের দোলাচলে সে ঘুরপাক খাচ্ছে । অথচ কয়েক মাস আগেও সে এমনটি ছিল না । চাকুরিতে যোগদানের পর থেকে বেশ হাসি খুশি আর প্রাণোচ্ছল ছিল সে । মাঝে মাঝে মনে হতো সে যেন দুরন্ত প্রজাপতি কিংবা মুক্ত বিহঙ্গের মতো আকাশে উড়ে বেড়াতো । হঠাৎ কি এমন ঘটলো কেউ বুঝতে পারেনি । কিন্তু ধীরে ধীরে তার মধ্যে দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল । কেন জানি মনে হচ্ছিল রক্ষণশীলতার বাতাবরণে মেয়েটি যেন নিজেকেই আড়াল করার চেষ্টা করছে ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে নিজের পছন্দের একটি চাকুরি পাওয়াটা নাজনিনের জন্য অত্যন্ত সুখকর এবং আনন্দের্ ছিল বলা যায় ।তার কাজের ধরণটাও বেশ মজার । একটি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিয়ে মূলত: তার কাজ । পারিবারিক সহিংসতায় বিপন্ন নারীর জীবনে শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া তার প্রাত্যহিক নেশায় পরিণত হয়েছে । অন্য নারীর জীবন নিরাপদ করার কাজে সদা অবিচল নাজনিন কখনো কখনো নিজেকে নিয়ে বিপন্ন বোধ করে । নাজনিনের মতো এটা প্রতিটি নারীর চিরায়ত অসহায়ত্ব আর বিপন্নতার গল্পও । প্রায় প্রতিটি নারীই প্রতিনিয়ত কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী পুরুষের লোলুপ দৃষ্টির তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে থাকেন । নাজনিনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি । তাকেও কর্মস্থলে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় । সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকানো নাজনিন স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি অচেনা পরিবে্শে ক্ষমতাধর বস একজন নারী সহকর্মীর ভীতির কারণ হয়ে উঠতে পারেন । অনভিজ্ঞ নাজনিন জীবনবোধ সম্পর্কে অভিজ্ঞতার অভাবে হয়তো প্রথম প্রথম বুঝতেও পারেনি তার জন্য কি অপেক্ষো করছে । শুরুর দিকে তাকে উদ্দেশ্য করে বসের ধরাজ গলায় দুর্বোধ্য কবিতা আবৃত্তি শুনে কিছুটা হতচকিত নাজনিন নিজেকে সামলে নিয়েছিল এই ভেবে যে, লোকটা হয়তো সাহিত্যপ্রেমী টাইপের কিছু একটা হবে । “তুমি চাঁদের মতো সুন্দর কিংবা তুমি অপূর্ব অতুলনীয়” প্রকৃতির দুয়েকটা লাইন ইঙ্গিতপূর্ণ হলেও নাজনিনের মনে কোন সংশয় জাগেনি ।
কিন্তু অযাচিত আপ্যায়নের আড়ালে অফিসের বড় কর্তা তাকে যে প্রবলভাবে শয্যাসঙ্গী হিসেবে কামনা করতো এটা বুঝতে নাজনিনের খুব বেশি সময় লাগেনি । কখনো ডিনার, কখনো লাঞ্চ কিংবা কখনো ব্রেকফাস্টের অব্যাহত অনুরোধে বিভ্রান্ত নাজনিন দুয়েকবার গিয়েও ছিল । বসের অদ্ভুত চাহনি, রহস্যঘেরা বাক্যালাপে বিমোহিত করার কৌশল যখন বুঝতে পারলো তখন নিজেকে গুটিয়ে নেয়া ছাড়া নাজনিনের আর কোন উপায় ছিল না । আর কিইবা করতে পারতো সে । আশীর্বাদের ছলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়াকে আপাত দৃষ্টিতে নির্দোষ শুভকামনা মনে হলেও এসবের আড়ালে যে যৌনতার সুপ্ত বাসনা লুকিয়ে ছিল অন্য অনেকের মত নাজনিনও তা টের পেত । কিন্তু এসব ঠেকানোর কৌশল তার জানা ছিল না ।
শুরুর দিকে বাবার বয়সী বসের ভারী কণ্ঠের গুরুগম্ভীর বচনে বরং তাকে শ্রদ্ধাই করত সে । সময় যত গড়িয়েছে গম্ভীর বচন ততটাই হালকা চটুল রসিকায় রুপান্তরিত হয়েছে । চটুল রসিকতার সাথে পাল্লা দিয়ে বসের প্রতি নাজনিনের শ্রদ্ধাবোধও খুব দ্রুত আলগা হয়ে আসছিল । ক্ষমতাধর বসের বাক্যবিলাসে কামনার স্পষ্ট ইঙ্গিত সে অনুভব করতে পারলেও চাকুরি হারানোর ভয়ে মুখের উপর প্রতিবাদ করার সাহস তার ছিল না । নাজনিনের মৌনতাকে বস যখন সম্মতি ভেবে আরেকটু অগ্রসর হলেন তখনি বিপত্তিটা দেখা দেয় । নাজনিন কিছুটা নড়েচড়ে বসে । জানার চেষ্টা করে শুধু কি তার সাথে বস্ এ রকম আচরণ করছে ? নাকি অন্য নারী সহকর্মীদের প্রতিও বসের দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম । সহকর্মীদের সাথে কথা বলে নাজনিন জানতে পারে অনেকেরই এধরণের অভিজ্ঞতা রয়েছে । কেউ কেউ নাজনিনকে সাবধানও করেছে । ক্ষমতা, অর্থ, প্রতিপত্তি খাটিয়ে তিনি অনেককে প্রভাবিত করে তার বাসনা চরিতার্থও করেছেন । দুয়েকজন চাকুরি ছেড়ে বসের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাঁচতে পারলেও অনেক সময় কারো কারো সম্পর্কের টানাপোড়েনের সুযোগ নিয়ে দুর্বল মূহুর্তে তাদের শিকারে পরিণত করতে ছাড়েননি সুযোগ সন্ধানী মানুষটি । অর্গানাইজেশনের অন্দর মহলের অন্ধকার দিকটি ধীরে ধীরে নাজনিনের কাছে স্পষ্ট হতে লাগলো । কেউ কেউ হয়তো বাধ্য হয়েছিল । তবে স্বেচ্ছায় কারো কারো বসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার ঘটনাও রয়েছে । নাজনিন বিশ্বাস করে করে টেলেন্ট এবং কোয়ালিটি থাকলে সহজে টিকে থাকা যায় । নাজনিন অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করে বসের যৌন হয়রানীর শিকার কয়েকজন কত সহজে এডজাস্ট করে চলছে । এসব ঘটনা নাজনিনকে ভাবিয়ে তুলেছিল, কিছুটা ক্ষুব্ধও । সে সিদ্ধান্ত নিল চাকুরি ছেড়ে দেয়া কিংবা পালিয়ে বাঁচা কোন সমাধান নয় । বসের মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেকে সে বরং তৈরি করছিল ।
অবশেষে একদিন নাজনিন সুযোগ পেয়ে গেল । বসের কেবিনে তার ডাক পড়লো । কথোপকথনের এক পর্যায়ে বস বললেন “আমি আমার অর্গানাইজেশনের ফিমেল কলিগদের সব সময় ফেভার করি এবং বিপদে আপদে খুব সহায়তা করি” । নাজনিন তখন বলল “স্যার আমি বিশ্বাস করি আমার বিপদে আপদেও আপনি আমাকে সহযোগিতা করবেন । আমি জানি আপনি আমার বাবার মত” । নাজনিনের মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই বিনা মেঘে বজ্রপাত । বস রেগে বললেন, “ আমি বাবার মত কি করে হলাম ?(বাবা হলেইতো যত সমস্যা) তোমার মধ্যে প্রোফেশনালিজমের অভাব রয়েছে” । নাজনিন দৃঢ় অথচ শান্তভাবে বলল, “স্যার এইযে আপনি নারীদের সহযোগিতা করেন এর একটা নেগেটিভ দিকও রয়েছে । আমি নাম বলতে পারবোনা, তবে অনেকে বলাবলি করছিল আপনি নাকি সহযোগিতার আড়ালে অনেককে বিভিন্নভাবে Exploit করেছেন । তারা আমাকেও আপনার বিষয়ে সতর্ক করেছে । আমি তাদের বলেছি, ধ্যুৎ স্যার আমার সাথে এ রকম করতেই পারেন না । স্যার আপনিই বলুন, আমার সাথে কখনো এরকম হতে পারে? আমি তাদের বলেছি, স্যার যদিওবা কখনো এ রকম আচরণ করেন তাহলে আমিও ছেড়ে কথা বলবোনা । আপনিই বলুন স্যার আমি ঠিক বলেছি না” ? বস তখন প্রচণ্ড ঘামছিলেন, তাকে খুব বিমর্ষ এবং উত্তেজিত দেখাচ্ছিল । এক পর্যায়ে তিনি বলে বসলেন, “তুমি জান তোমার অনেক ফিমেল কলিগ স্বেচ্ছায় আমার কাছে এসেছিল” । মুখ ফসকে গোপন অভিলাষ বেরিয়ে পড়লেও তাকে একবারের জন্য লজ্জ্বিত মনে হয়নি । নাজনিনের নিকট তখন হালকা বোধ হচ্ছিল, এক ধরণের আনন্দও । সে মনে মনে ভাবছিল যাক বেটাকে আচ্ছা জব্দ করা গেছে । ধীরে ধীরে নাজনিন রুম থেকে বেরিয়ে আসলো । নাজনিন এখনো ঐ অর্গানাইজেশনে নির্বিঘ্নে কাজ করছে এবং সেই বসের অধীনেই ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×