somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশহীন মানুষের বেদনার ইতিকথা

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গেল মে মাসে যখন জানলাম কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে কাজ করতে হবে মনটা তখন খুব খারাপই হয়েছিল । ভাবলাম শরণার্থী শিবিরে কাজ করার জন্য আমাকেই খুঁজে পেল ? এখন মনে হয় শরণার্থী শিবিরে কাজ না করলে দেশহীনতার যে কি যন্ত্রণা তা অজানাই থেকে যেত । প্রায় আট মাস ধরে কাজ করছি এখানে । কাজের স্বার্থেই শরণার্থীদের সাথে কথা বলতে হয় । ইতোমধ্যে তাদের অজানা অনেক কথা জানার সুযোগ হয়েছে । কেন তারা ভিনদেশে অপরিচিত পরিবেশে বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে । কেনইবা ঘুটঘুটে অন্ধকার ছোট্ট খুপরি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছে । ১৫ ফুট বাই ১৫ ফুট প্লাস্টিকের ছাউনি দেয়া ঘরে আটকে আছে যাদের জীবন, তাদের বেঁচে থাকা খুব সম্মানের যে নয় তাতো সহজেই অনুমেয় । তবু তারা বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের দয়ায় বেঁচে বর্তে আছে । বাংলাদেশে অফিসিয়ালি নিবন্ধিত ৩৩ হাজার শরণার্থী উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প ও টেকনাফ নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাস করছে । ধারণা করা হয় অনিবন্ধিত ৩ লাখের বেশি শরণার্থী কক্সবাজার ও বান্দরবন জেলার বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছে । অনেকেই ইতোমধ্যে বাঙ্গালি জনগণের সাথে মিশে এদেশেরেই নাগরিক পরিচয়ে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছে । যেখানে বাংলাদেশকে নিত্য রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সামাল দেয়ার জন্য হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে আমাদের দেশ হতে প্রতিনিয়ত হাজারো অভিবাসন প্রত্যাশী মানুষ শাপদসঙ্কুল সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে । হচ্ছে সর্বশান্ত । নিয়তির কি নির্মম পরিহাস !

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

সপ্তম শতাব্দির শুরুতে আরব, মরিশ এবং মোগল ব্যবসায়ীগণ আরাকান অঞ্চলে ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি বসবাস করতে শুরু করে । অষ্টাদশ শতাব্দি পর্যন্ত আরাকান স্বাধীন রাজ্য ছিল । ১৭৮৪ সালে বার্মার সেনাপতি মহাবান্দুলা সীমান্ত রাজাদের সহায়তায় আরাকান রাজ্য দখল করে নেয় । আর তখন থেকেই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আরাকানিদের উপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসে । অষ্টাদশ শতাব্দিতে (১৭৫০সালে )এ্যাংলো- বার্মা যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশরা সমগ্র বার্মা দখল করে নেয় । বৌদ্ধ রাখাইন এবং বার্মিজ জান্তা সরকার অভিযোগ করে যে, ব্রিটিশরা বার্মা দখল করার পর ঊনবিংশ শতাব্দিতে চট্টগ্রাম অঞ্চল হতে বাঙ্গালি অভিবাসীগণ আরাকান রাজ্যে প্রথম বসবাস করতে শুরু করে । ঐতিহাসিকভাবে আরাকানি মুসলিম ও বৌদ্ধ রাখাইনদের সম্পর্ক কখনো ভালো ছিলো না । ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীন হওয়ার পর আরাকান রাজ্যের উত্তরাংশ পূর্ব পাকিস্তানে যুক্ত করার জন্য উত্তর আরাকান মুসলিম লীগ সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয় । দৃশ্যত সে সংগ্রাম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় । অষ্টম ও নবম শতাব্দিতে বার্মার মুসলমানগণ ক্রমান্বয়ে ঐদেশের উপকূল অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে বলে জানা যায় । অধিকাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠী রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে যা মায়ানমারের মূল ভূখন্ড হতে কার্যত বিচ্ছিন্ন । রাখাইন রাজ্যটি ঐতিহাসিকভাবে আরাকান রাজ্য হিসেবে পরিচিত ।

মুসলিম ছাড়াও রাখাইন রাজ্যের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী যারা ঐ রাজ্যের আদি বাসিন্দা । তবে রাখাইন রাজ্যের উত্তরাংশে বসবাসকারী মুসলিম জনগোষ্ঠীকে রোহিঙ্গা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় যাদের রয়েছে স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা । রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ একই আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে । ভাষাগত সুবিধা ব্যবহার করে তারা অতি সহজে বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর সাথে মিশে যেতে পারে । মায়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মূলত উত্তরের তিনটি অঞ্চল Maungdaw, Buthidaung , Rathidaung এ বসবাস করে ।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, আরাকান মুসলিমগণ নিজদেশে নানাবিধ অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বহুবার তাদের দেশ থেকে পলায়ন করে এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় । যতদূর জানা যায় ১৭৯৬ সালে অসংখ্য আরাকানি মুসলিম শরণার্থী কক্সবাজার অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করে । ওয়ারেন হেস্টিংস এর সময় তৎকালীন ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি আরাকানি মুসলিম শরণার্থীদের পূনর্বাসনের জন্য ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স (Captain Hiram Cox)কে এ অঞ্চলে প্রেরণ করে (তখন কক্সবাজারের নাম ছিল পালঙ্কি) । তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে আরাকানি রিফিউজিদের পূনর্বাসন করতে সক্ষম হন । ১৭৯৯ সালে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স মারা গেলে তাঁর প্রতি সন্মান দেখিয়ে পালঙ্কি’র নামকরণ হয় কক্সবাজার । সেই থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত বেষ্টিত পালঙ্কি’ কক্সবাজার হিসেবে পরিচিতি পায় । ১৯৭৮ সালে তৎকালীন নে উইন সরকার পরিচালিত অপারেশন কিং ড্রাগন’ এর কারণে ২ লক্ষের অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় । এ সময় বার্মিজ সেনারা রোহিঙ্গাদের উপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়, অসংখ্য নারী ধর্ষণের শিকার হয়, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ও অনেক মসজিদ ধ্বংস করা হয় । দ্বিপাক্ষিক আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালে মায়ানমার সরকার অধিকাংশ শরণার্থীকে ফেরত নেয় । রাষ্ট্রীয় সিস্টেমেটিক বৈষম্য, নির্যাতন এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে পুনরায় ১৯৯১-৯২ সালে প্রায় আড়াই লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে । ফ্রেবুয়ারি ২০০১ সালে মুসলিম ও বৌদ্ধদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অসংখ্য রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয় এবং তাদের সম্পত্তি ধ্বংস করা হয় । একই ঘটনার পূনরাবৃর্তি হয় ২০০৯ ও ২০১২ সালে । ১৯৯১ সাল থেকেই বাংলাদেশ সরকার অনুপ্রবেশকারী শরণার্থীদের দায়িত্ব নেয় এবং ২০টি শরণার্থী ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শরণার্থীদের আশ্রয় শুধু নয় এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর খাদ্য,মেডিসিন,পানীয় জলের ব্যবস্থা করে । নতুন অফিস প্রতিষ্ঠা করে বিপুল সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা কর্মচার্রীকে রিফিউজি অপারেশনে নিযুক্ত করে । অনেক দেন দরবারের পর দীর্ঘ সময় ধরে ২,৩৬,৫৯৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মায়ানমার ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়। ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রত্যাবাসন কার্যক্রম চললেও জান্তা সরকারের অনীহার কারণে প্রত্যাবাসন বন্ধ হয়ে যায় । দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ফেরত পাঠানো শরণার্থীদের অধিকাংশই আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে আনডকুমেন্টেড রিফিউজি হিসেবে উখিয়া ও টেকনাফসহ কক্সবাজার অঞ্চলে বসবাস করছে ।

শরণার্থী জীবনের নেপথ্যে

এ বৃহৎ সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীর বারবার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের কারণ সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য জানা যায় । এরমধ্যে স্টেটলেসনেস অন্যতম কারণ । এছাড়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের ভূমি হতে উচ্ছেদ শুধু নয় রাজ্য কর্তৃপক্ষ তাদের ভূমি দখল করে নেয় । তারা স্বাধীনভাবে নিজ দেশে চলাফেরা করতে পারেনা , বিয়ে করতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে, রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হয় কিন্তু কোন পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। শিক্ষার মত মৌলিক মানবাধিকার হতে তাদের বঞ্চিত করা হয় । দৃশ্যত কোন স্বাস্থ্য সেবা তারা পায়না । রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারে না । রাখাইন রাজ্য কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় অকারণে তাদের ফাঁসিয়ে দেয় । রয়েছে অনাকাঙ্খিত অভ্যন্তরীণ রিসেটেলমেন্ট এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো মধ্যযুগীয় বর্বরতা । ২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কয়েকশ’ রোহিঙ্গা মুসলমান নিহত হয় । এরপর মায়ানমার কর্তৃপক্ষ রাখাইন বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা ক্যাম্প স্থাপন করে । বৌদ্ধদের ক্যাম্পে সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা থাকলেও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় । রাখাইন বৌদ্ধরা যখন তখন ক্যাম্পের বাইরে যেতে পারলেও রোহিঙ্গা মুসলিমদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কার্যত বন্দি জীবন কাটাতে হয় । এছাড়া রাখাইন অঞ্চলটি অর্থনৈতিকভাবে অনেক পিছিয়ে থাকার কারণে কিছু রোহিঙ্গা শুধুমাত্র চিকিৎসা বা উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশে পাড়ি দেয় ।

১৯৮২ সালে মায়ানমার সরকার নতুন সিটিজেনশীপ ল’ পাশ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব অস্বীকার করে । ঐ আইনে উল্লেখ করা হয় যারা ১৮২৩ সালের পূর্বে মায়ানমারে এসেছে তারাই শুধু পূর্ণ নাগরিক হতে পারবে । বর্তমানে সেখানে তিন ধরণের সিটিজেনশীপ রয়েছে । ১. Full Citizens ২. Associate Citizens ৩. Naturalized Citizens. রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এর কোন ক্যাটাগরিতেই রাখা হয়নি । এসোসিয়েট এবং নেচারালাইজড নাগরিক হিসেবে তারাই বিবেচিত হবে যারা ১৯৪৮ সালের পর নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করেছে অথবা ১৯৪৮ সাল হতে মায়ানমারে বসবাস করে আসছে । মায়ানমারে বসবাসরত ১৩৫ টি নৃগোষ্ঠীর মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম নেই । মোদ্দা কথা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব হতে বঞ্চিত করার জন্য সব রকমের ব্যবস্থাই মায়ানমার সরকার করেছে । অথচ এরকম হওয়ার কথা ছিল না । জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, ‘রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সবচেয়ে নিগৃহীত জনগোষ্ঠী’ । জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে তাদের জাতিসংঘ সনদ মেনে চলার কথা । কিন্তু জান্তা সরকার তা মানবে কেন ? জাতিসংঘ সনদের অনুচ্ছেদ ৫৫(সি) তে ঘোষণা করা হয়েছে “ Universal respect for, and observance of, human rights and fundamental freedoms for all without distinction as to race, sex, language, or religion” । জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার অনুচ্ছেদ ১৫ তে ঘোষণা করা হয়েছে “Everyone has the right to a nationality” । এছাড়া The Convention on the Rights of the Child(CRC), The Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women (CEDAW) এর মত সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিলসমূহে বিবৃত নিয়ম কানুন অগ্রাহ্য করে মায়ানমান সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সকল মৌলিক মানবাধিকার বছরের পর বছর অস্বীকার করে আসছে । এ প্রসঙ্গে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ঘোষণা হলো “ To be deprived of one’s rights because of a characteristic that one’s cannot change- such as one’s race or ethnic origin- or because of a characteristic that is so central to one’s being that one should not be forced to change it, such as religion.” আমাদের দেশের মানবাধিকারের প্রশ্নে সদা উচ্চকণ্ঠ এসব আন্তর্জাতিক সংগঠনের সকল ঘোষণা, নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নিজ দেশের একটি এথনিক জনগোষ্ঠীর উপর সিস্টেমেটিক রাষ্ট্রীয় বৈষম্য চাপিয়ে দিয়ে মায়ানমার সরকার বিশ্বকে নিত্য বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চললেও বিশ্ব ’মাতুব্বরগণ এ বিষয়ে রহস্যজনক কারণে খুব বেশি সরব নয় । আমাদের দেশে মানবতা, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকারের বুলি সহজে ফেরি করা গেলেও মায়ানমারের জান্তা সরকার সহজে ঐসব বুলি গিলছে না । কয়েকদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির ৪ জন সদস্য এবং ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ৩ জন কর্মকর্তা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে এলে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী তাঁদের প্রশ্ন করেন “প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য মায়ানমার সরকারকে অনুরোধ করলেও সরকার তা রাখছে না, যুক্তরাষ্ট্র মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিবে কিনা ? জবাবে একজন কংগ্রেসম্যান বলেন, মায়ানমার সার্বভৌম দেশ, সুতরাং তারা অনুরোধ না শুনলে কি করার আছে ।” এরকম অবস্থায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধনে মায়ানমার সরকারের পরিকল্পিত, উদ্যত, অমানবিক আচরণ পরিবর্তনের কোন সুযোগ রয়েছে কী ? গত ৮ নভেম্বর, ২০১৫ মায়ানমারে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে । নির্বাচনে অং সান সূচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা পেয়েছে । যদিও ক্ষমতার রশিটা জান্তা সরকারের হাতেই থাকবে বলে মনে হয় । তবু গত ২৫ বছরের মধ্যে এটাই ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন । এখন আশা করা যায় সূচির দল এনএলডি-র সরকার গঠন করা সময়ের ব্যাপার । আমাদের অপেক্ষা করতে হবে সূচি ও তাঁর দলের মানবিক, সহনশীল এবং গণতান্ত্রিক আচরণের উপর কবে তারা রোহিঙ্গাদের মানুষ ভেবে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে ।

শেষ কথা

বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ উন্নয়নশীল ছোট একটি দেশ । এদেশের পক্ষে এ বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর চাপ নেয়া কার্যত অসম্ভব । তবুও বাংলাদেশ বছরের পর বছর রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলা করে যাচ্ছে । বিশ্ব ইতিহাসে এত দীর্ঘ সময় ধরে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার নজির খুব বেশি নেই । উপরন্তু শরণার্থীদের শ্রমবাজারে অনুপ্রবেশের কারণে চট্টগ্রামসহ এর দক্ষিণাঞ্চলে দেশীয় শ্রমিকদের কাজ করার সুযোগ সংকুচিত হয়ে এসেছে । নির্বিচারে কক্সবাজার অঞ্চলে বন ও পাহাড়ি গাছ কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে । শরণার্থীগণ নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে প্রতিনিয়ত মাছ ধরার ফলে দেশীয় মৎস্যজীবীগণ জীবনধারণে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে । তাদের অনেকে মানবপাচারের মত ঘৃণ্য অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে । কেউ কেউ মানবপাচারের নির্মম শিকারে পরিণত হচ্ছে । সীমাহীন ঝুঁকি নিয়ে ইতোমধ্যে অবৈধভাবে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে । খুন,মাদক ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ হেন কোন অপরাধ নেই যাতে তারা জড়িত নয় । অনেক শরণার্থী মেয়ে কখনো স্বেচ্ছায় কখনো বাধ্য হয়ে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ছে । বাল্যবিবাহ, বহু বিবাহ, অপ্রত্যাশিত প্রেগনেন্সি এখানকার নিত্যদিনের ঘটনা । জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহার রোধে কোন ফর্মূলা সে অর্থে এখানে কার্যকর হচ্ছে না । স্থানীয়দের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তারা পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে উঠছে । পারিবারিক সহিংসতায় জর্জরিত ও বিপর্যস্ত রোহিঙ্গা নারীর জীবন । এখানে বউ পেটানো যেন পিতৃ প্রদত্ত অধিকার । এই অধিকার ফলাতে সকল রোহিঙ্গা পুরুষই মুখিয়ে থাকে । তুচ্ছ কারণে নারীর উপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসে । অবৈধ পন্থায় বাংলাদেশী পাসপোর্ট করায়ত্ত্ব এবং তা ব্যবহার করে বিদেশে গিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করছে । এসব কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে । রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ হয়তো এমন ছিলো না । দেশহীনতার যন্ত্রণা, বেদনাদায়ক শরণার্থী জীবন, অনিশ্চিত ভবিষ্যত এবং প্রাত্যহিক জীবনের নিষ্ঠুর বঞ্চনা তাদের অপরাধপ্রবণ ও মূল্যবোধের সংকটে নিমজ্জিত করেছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×