somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবাকে নিয়ে লিখা ছোট একটা সত্য গল্প

৩০ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি নিচের গল্পটা পড়ে চোখে পানি ধরে রাখতে পারি নাই। অনেকই হয়তো পড়ে থাকবেন তাও মনে হল যারা পড়েন নাই তাদের জন্য অবশ্যই এইটা সবার শেয়ার করা উচিৎ।

আজকাল লিলির সাথে সম্পর্কটা আমার ভালো যাচ্ছে না । লিলি আমার বিয়ে করা বউ ।

দেখতে অসম্ভব সুন্দরী সে , আধুনিকা , স্মার্ট আর অত্যন্ত রুচিশীল এই মেয়েটাকে ভার্সিটি লাইফের প্রথম থেকেই আমি পছন্দ করতাম ।
আমেরিকা থেকে পি এইচ ডি করে আসার পর নামকরা এক ভার্সিটিতে আমি লেকচারার হিসেবে জয়েন করি ।
তার কিছুদিন পরেই লিলির সাথে আমার বিয়ে হয় ।

এবার লিলির সাথে আমার সম্পর্কের অবনতির কারণটা ক্লিয়ার করছি ।
আমার বাবার বয়স প্রায় ৬৫ বছর। মা অনেক আগেই মারা গিয়েছেন । আমার বাবা আলঝেইমার্স নামের এক কঠিন রোগে আক্রান্ত । এই রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকেনা ।

সে কাউকে চিনতে পারেনা, ঠিকমত কথা বলতে পারেনা, সবকিছু ভুলে যায়।
বাবার সেবা যাতে ঠিকমত করা হয় এ জন্য আমি এক মহিলা পরিচারিকাকে ঠিক করেছিলাম। একবার গুরুত্বপূর্ণ এক সেমিনারে যোগ দেয়ার জন্য আমাকে কয়েকদিন ইন্ডিয়াতে যেতে হয়েছিল ।

এই সময়ে আবার ঐ পরিচারিকার ভীষণ জ্বর হয়।
কাজেই আমার বাবার বাথরুম পরিস্কার করা থেকে শুরু করে ভাত খাইয়ে দেয়া পর্যন্ত সব কাজ লিলিকে করতে হয়।
ইন্ডিয়া থেকে বাসায় আসা মাত্রই লিলি আমার সাথে প্রচণ্ড ঝগড়া করা শুরু করল। তল্পিতল্পা গুছিয়ে সে বাপের বাড়ি চলে গেল।
যাওয়ার আগে আমাকে একটা কন্ডিশন দিয়ে গেল।
তার সাথে যদি আমি সংসার করতে চাই , তাহলে আমার অসুস্থ বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখতে হবে ।

আজ বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এলাম । আসার সময় বাবার মুখের দিকে তাকানো মাত্রই আমার বুকের ভেতরতা মোচর দিয়ে উঠল ।
মুখ তার থরথর করে কাঁপছে যেন আমাকে কিছু বলতে চান উনি , চোখ দিয়ে তার অশ্রু বেয়েবেয়ে পড়ছে ।
বাড়িতে এসে বাবার রুম পরিস্কার করা শুরু করলাম । আমার প্লান এই রুমে আমার পার্সোনাল লাইব্রেরি থাকবে ।
হঠাৎ বিছানার নিচে ধুলাবালি ভরা বাবার একটা ডায়েরি পেলাম।
পরিস্কার করে সেটা পড়তে লাগলাম ।

### আজ ভরা পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে । চাঁদের জোছনার মত আমার সংসার আলোকিত করে আজ আমার ছেলে জন্ম নিয়েছে । আমি জানি আমার এই ছেলেই একদিন তার ভালবাসার আলোতে আমার জীবনের সব অন্ধকার দূর করবে ।

### আজ আমার ছেলের আকিকা । নাম রেখেছি তার শামসুদ্দিন হেলাল । শামস মানে সূর্য আর হেলাল মানে চাঁদ । আমার ছেলের পৌরুষত্ব হবে সূর্যের মত আর মনটা হবে চাঁদের আলোর মত । ১১০০ টাকা দিয়ে তার আকিকার খাসিটা কিনেছি । এর কাছ থেকে ১০০ , ওর কাছ থেকে ২০০ এইভাবে ধার করে ১১০০ টাকা যোগার করেছি । ধার করতে আমার ভালো লাগে না , কিন্তু ছেলের জন্য আমি সব করব ।

### আজ আমার মনটা খুব খারাপ । আমার ছেলে আজ আমেরিকায় পড়াশুনা করতে যাবে । আমার গর্বিত হওয়া উচিত ছিল , কিন্তু আমি আজ খুব কষ্টে আছি । ছেলের মুখ না দেখে আমি একদিনও থাকতে পারেনি । সামনের দিনগুলো আমি কিভাবে ছেলেকে না দেখে কাটাবো ??

ডায়েরিটা বন্ধ করলাম । খেয়াল করলাম আমার চোখদুটো কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ।

বাথরুমের দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষন নিঃশব্দে কাঁদলাম । আয়নায় তাকিয়ে দেখি চোখ আমার রক্তবর্ণ হয়ে উঠেছে । সে রক্তবর্ণ চোখ নিয়েই আমি সে রাতে বাবাকে বৃদ্ধাশ্রম থেকে বাড়িতে নিয়ে আসলাম । আমিও পারব না , আমার বাবাকে ছাড়া একদিন থাকতে । তোমাকে বড় ভালবাসি বাবা ।
ক্ষমা কর আমায় !!!

(সংগৃহীত: সাদ আহমেদ । ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ )


-
জিশান আহমেদ

আপনারডিল.কম - শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপন এর সব খবর একসাথে
১৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×