somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নন্দন নন্দিনী তুমি -- ৭

১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গাড়ির হর্নের শব্দে নিলি চমকে উঠে/ গ্রিল ধরে আরেকটু ঝুঁকে নীচে দ্যাখে/
বাবার গাড়ি/

সারা পৃথিবীতে নিলির ভালো লাগা মানুষের সংখ্যা মাত্র কয়েকজন/ ক্যালকুলেটর লাগে না , হাতে গুনেই বলে দেয়া যায় / তাও তিন বা চার দাগের বেশী হবে না / আর প্রথম যে দাগ সেখানে আছেন মা/এই ব্যাপারটা মাও জানে না/
কিছু কিছু ভালোবাসার কথা বলতে হয় না / জানাতে হয় না/ সব সময় অবহেলা করার মত ভাব দেখাতে হয় / তাতে করে অনেক অতিরিক্ত পেরেশানি থেকে রেহাই পাওয়া যায় /আর মা তো সারাক্ষনই নিলির ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে / নিলি একটা হাচিঁ দিল তো অমনি রোজা রাখতে শুরু করবে/ রাত জেগে নামাজে পর নামাজ করবে/ আর তারপরই ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়ে/ হাসপাতাল -বাসা দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যায়/

ভালোবাসার মানুষদের কষ্ট সহ্য করা যায় না/ আর তাই ভালোবাসার মানুষের এত কাছেও যেতে হয় না / নিজেকে আটকে রাখতে হয় বন্ধ কামরায়/ নিলি তাই করে /

নিলি – এই নিলি দরজা খোল , কি করছো ?

বাবা!

এই যে অস্থির মানুষটা এও সেই দাগের মধ্যে বসবাস করে / তবে এখন যে কত নাম্বারে তা নিয়ে নিলি কনফিউজড/ গুগুল যেমন অনেক দিন নিজেকে আপডেট করছে না .. নিলিও করছে না /ভালোবাসার মাপামাপি বড্ড কনফিউজিং কাজ/
তবে এক সময় বাবাকে দারুন ভালোবাসতো নিলি/
এখন কি বাসে না ?
নাহ্ / বাসে তো /

কিছু কিছু ভালোবাসা নিরবে থাকে/

বাবা তো বাবাই / সে তার কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক/
ভেতরে ঢুকেই উনি প্রথমে বারান্দায় গেলেন/ লাইট জ্বালালেন /আতিঁপাতিঁ করে এখানে সেখানে খুজলেন /তারপর রুমে ফিরে এলেন/
নিলি চুপচাপ বাবার কাজকর্ম দেখছিলো / একগাদা কাগজ তার হাতে/ নিলির দিকে শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,

সই করো/

কি এ গুলো?

পড়ে দেখো /

না আমার এত কিছু পড়ার সময় নাই/যা বলার দয়া করে তুমিই বল/

বাইরে যাচ্ছো তুমি / পড়তে/ সব কাজ শেষ /শুধু সইটা বাকী/ আর আগামী পনের দিনের মধ্যে রাসেলের সাথে বিয়েটাও সেরে ফেলবো /

বাবা ... আমি কোথাও যাচ্ছিনে/ আর এতকিছু ডিসিশন নিয়েছো আমি কিছু জানলাম না ?

থাপড়াঁইয়া তোর দাতঁ ফালাইয়া দিমু/বেয়াদব মাইয়া কোথাকার /

নিলির হাসি পায় /প্রানপনে দম বন্ধ করে হাসি চেপে রাখে/
মনে মনে হাসে / হি হি হি /
বাবা যখন রেগে যায় তখন তার পজিশন , তার ষ্টাটাস সব ভুলে যায়/
এমনিতেও বাংলাদেশে খুব কম মন্ত্রী আছে যারা শুদ্ধ বাংলায় কথা বলে/নিলির বাবা তেমন না হলেও যখন রেগে যায় তখন এক কাতারে এসে দাড়িয়ে যায়/

বৃহত্তর বরিশালের সাধারন এক কৃষক পরিবারের ছেলে ছিলো নিলির বাবা/দাদু –দিদা যখন বেচেঁ ছিলেন তখন নিলিরা প্রতি ঈদেই বরিশালে যেত/নদীর শব্দ. পাখির ওড়াওড়ি. বিস্তীর্ন মাঠের গম্ভীরতা আর রহস্যময় বাশঁঝাড় ভালো লাগতো নিলির/ নিলি অবাক হয়ে নদী দেখতো /রাত কেটে যেত লন্চের শব্দ শুনে শুনে/বাবার কোল ঘেষে শুয়ে থাকতো সারা রাত /একবার রাতের বেলা ইলিশ মাছের ঝোল দিয়ে ভাতও খেয়েছিলো/তাজা ইলিশ / বাবা বলেছিলো/আর ভোরের নদী কি যে শান্ত দেখাতো যে নিলির মন খারাপ হতো /
বরিশালের লোকদের কথা শুনে নিলি হেসেই খুন হতো /বাবাও তখন যেন মন খুলে কথা বলতো /লুংগিটাকে গুটিয়ে বাবা যখন ঝাপটাঁঝাঁপটি করে মাছ ধরতো নিলির তখন আনন্দে চোখে পানি আসতো/ কারন নিলি সাঁতার জানে না যে/একটা মাছ জালে উঠলেই হাত তালি দিয়ে লাফাতে শুরু করতো/ জলের মাছ মাটিতে পড়ে আঁকুপাকু করতো/ তখন মজা লাগলেও পড়ে মন খারাপ হতো নিলির/ জলের গভীরে কি স্বাধীন ছিলো ওরা ! না জানি ওই মাছ গুলো কার বন্ধু ছিলো/ আচ্ছা ওই মাছটার কি মা বাবা আছে ? কিংবা কোনো ছোট ভাই?? আরো এলেবেলে ভাবনা / বেশি মন খারাপ হলে মা যেন কেমন করে টের পেত/ কাছে টেনে নিতেন/আদর করতো অনেকটা সময় ধরে/ এতে আরো মন খারাপ হয়ে যেত/ কিছু কিছু আদর একদম মনের সবচেয়ে গোপন জায়গাটা ছুঁয়ে দেয়/

এ্যাই চুপ কইরা আছস ক্যান ? সই কর/

বাবা তুমি জানো আমি একবার যা না বলি তা আর হ্যা হয় না / সুতরাং তুমি এখন আমার সামনে থেকে যাও/

যামু ক্যান ? তুই কইলেই আমি যামু? বাপ কে ? তুই না আমি ?

তুমিই / কিন্তু এখন তোমাকে আমার সহ্য হচ্ছে না –তাই দয়া করে যাও /

মন্ত্রীমহোদয় কটমট করে নিলির দিকে তাকিয়ে রইলেন/ কার্টুন চরিত্র হলে নিলি এতক্ষনে পুড়েই যেত/ ভাগ্য ভালো তা না/
নিলির তুচ্ছ চাহনী দেখে মন্ত্রী সাহেব দুপদাপ করে বের হয়ে গেলেন/কাগজগুলো পড়ে রইলো বিছানার উপর/

হঠাৎ রাগ ধরলো নিলির/ প্রচন্ড আক্রোশে কাগজগুলো ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দিতে লাগলো অন্ধকারে /

আমি কোথাও যাবো না / কোথাও না/

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×