somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিপুরুষ । হালকা ২২ ++ । দয়াকরে ২০ এর নিচে কেউ দেখবেন না ।

১৯ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি দিবসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের দুই কৃতী সৈনিকের নাম, এ দেশের দুই মহান সন্তানের চিন্তাভাবনা। একজন আবু তাহের এবং অন্যজন জিয়াউর রহমান। দুজনই অত্যন্ত উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। আপন আপন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতোই। তাঁদের পাশাপাশি রয়েছে খালেদ মোশাররফের নাম। তিনিও একজন কৃতী মুক্তিযোদ্ধা। এই তিনজন মুক্তিযোদ্ধার কৃতিত্ব ও ব্যর্থতার পটভূমিকায় সৃষ্টি হয়েছে ৩ নভেম্বরের অধ্যায়।

এ অধ্যায় বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথে এক সুস্পষ্ট মাইলফলক। সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশের এক সূচক। কথাগুলো বলছি এ জন্য যে ৭ নভেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে সূচিত হয় বহুমুখী ধারা। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের যে আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে বাংলাদেশ তার জয়যাত্রা শুরু করেছিল এবং মাঝপথে যার গতি রুদ্ধ হয়েছিল, সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনর্বাসনের সমূহ সম্ভাবনা দেখা দেয়। খণ্ড-ছিন্ন-অনৈক্যে ভরা জাতীয় জীবনে নতুনভাবে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির সূচনা হয় ওই সময় থেকে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপরিহার্য শর্তাবলি যেমন_বহুদল, স্বাধীন বিচার বিভাগ, স্বাধীন সংবাদপত্র প্রভৃতির ক্রমবিকাশের পথও হয় সুগম।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও আধুনিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যগুলো একে একে বিকশিত হতে থাকে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রুশ-ভারতের কক্ষপথের অন্ধকার থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি মুক্তি লাভ করে বিশ্বময় বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ পায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মুক্তিযুদ্ধের অনলকুণ্ড থেকে প্রাণ পেয়ে বাংলাদেশ যেভাবে মাথা উঁচু করতে শিখেছিল, নতুনভাবে আবারও মাথা না নোয়ানোর সংকল্প লাভ করে ৭ নভেম্বরের পর। এই আন্দোলনে সৈনিক এবং জনতার মধ্যে এত দিন পর্যন্ত যে অনতিক্রম্য ব্যবধান বিদ্যমান ছিল, তাও অপসারিত হয়। জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে সিপাহি ও জনতার সম্মিলিত উচ্চকণ্ঠ সমগ্র সমাজকে সচকিত করে তোলে।

এই বিপ্লবে নাম ভূমিকায় ছিলেন কর্নেল আবু তাহের। প্রথমে সামরিক বাহিনীকে 'শ্রেণীহীন' করে গড়ে তুলে, তাকে তীব্রভাবে 'সচেতন' এবং 'শাণিত' করে তারই মাধ্যমে বাংলাদেশে শ্রেণীহীন সমাজ গঠনের পরিকল্পনা ছিল তাঁর। এই লক্ষ্যেই ১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোয় বহুসংখ্যক বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা গঠিত হয়েছিল। তাঁর এই পরিকল্পনার অংশীদার ছিল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। কর্নেল তাহের ছিলেন জাসদের গণবাহিনীর প্রধান কর্মকর্তা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা একবার হাতে এলে শ্রেণীহীন সমাজ গঠন সহজতর হয়ে উঠবে_এই বিশ্বাস নিয়ে তাঁরা অগ্রসর হচ্ছিলেন। জিয়াউর রহমান এই বিপ্লবের সূচনায় ছিলেন না। ছিলেন না এর সমাপ্তি পর্বেও। কিন্তু এই বিপ্লবের উত্তাল তরঙ্গে তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতার উচ্চ বেদিতে চলে এলেন, যদিও ৩ নভেম্বরের সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি গৃহবন্দি হন।

উদ্যোগ ব্যর্থ হলো কেন? এর উত্তর খুব সহজ নয়। কারন, কর্নেল তাহের এবং জাসদের নেতারা তখনকার সামাজিক চেতনায় যে দুটি ধারা প্রবাহিত হচ্ছিল, সে সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন ছিলেন না। সমাজতান্ত্রিক পুনর্গঠনের চেতনায় তাঁরা এত বেশি উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন যে তারই পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনা যেভাবে সমান্তরাল প্রভাবিত হয়ে সাধারণ জনগণ, এমনকি সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন স্তরে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা রচিত হয়েছিল, সেই বাহিনীর সাধারণ সিপাহিদের মন-মানসিকতাকেও প্রভাবিত করেছিল গভীরভাবে সে সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না।

স্বাধীন ভারত বা পাকিস্তানের জন্ম যে প্রক্রিয়ায় হয়েছিল_সুতীক্ষ্ন বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা-পর্যালোচনা-সমালোচনার তীর ঘেঁষে, বাংলাদেশের জন্ম কিন্তু সেভাবে হয়নি। বাংলাদেশের প্রাণ পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত প্রান্তরে। তাই স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে 'আমার দেশ', 'আমাদের জাতি' 'আমাদের রাষ্ট্র', 'আমাদের বাংলাদেশ' ইত্যাদি শব্দ উচ্চারিত হয়েছে নতুন ব্যঞ্জনায়, নতুন বোধিতে, নতুন দ্যোতনায়।

যেহেতু এক গণযুদ্ধের ফসল হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা, যেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশ জন্মের পূর্বেই এই ভূখণ্ডে জাতীয়তার সূত্র সুদৃঢ় হয়েছে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে জাতি-রাষ্ট্ররূপে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে, তাই আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক পুনর্গঠনের চেতনা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, জাতীয়তাবাদী গণচেতনাও বিকশিত হয়েছে তেমনি প্রবল পরাক্রমে। সামরিক বাহিনীর মধ্যে ভারতবিরোধী চিন্তাভাবনা এই চেতনাকে আরো শক্তিশালী করে।

রক্ষীবাহিনী সংগঠন, এই বাহিনী ভারতের প্রত্যক্ষ মদদ, এই বাহিনীর প্রতি সরকারের দুর্বলতা, প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর উন্নয়নে সরকারের অনীহা, ভারতীয় সামরিক বাহিনীর বিজয় উল্লাস, পরাজিত পাকিস্তান বাহিনীর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া সকল প্রকার অস্ত্রশস্ত্র ভারতে পাচার_এসবই বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন স্তরে ভারতবিরোধী মনোভাবকে ভীষণভাবে সঞ্জীবিত করে। সিপাহি-জনতার এই ভারতবিরোধী চেতনা চূড়ান্ত পর্যায়ে জতীয়তাবাদী চেতনাকে জয়যুক্ত করে। ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানকারী খালেদ মোশাররফ এই চেতনার মোকাবিলায় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হন। প্রথম আঘাতেই, বিশেষ করে যখন সিপাহি-জনতার মুখে ভারতবিরোধী স্লোগানগুলো উচ্চারিত হতে থাকে, সেই অভ্যুত্থান ঘায়েল হয়ে পড়ে।

কর্নেল তাহের, জিয়াউর রহমান ও খালেদ মোশাররফ ইতিহাস। প্রশংসা বা সমালোচনার ঊর্ধ্বে তাঁরা। তাই এই দিনে তাঁদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন প্রয়োজন। কেননা যে মুক্তিযুদ্ধকে আমরা আমাদের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায় বলে চিহ্নিত করি, সেই মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিপুরুষ তাঁরাই।





























সংগৃহিত ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৪:৩৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×