somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সে এবং নীল পরী

২১ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রতিটা মানুষেরই একা একা খুব খারাপ লাগে। বিশেষ করে যখন কেউ কারো জন্যে অপেক্ষা করে। তবে মারুফের খারাপ লাগছে না, তার খুব ভালই লাগছে। সে ঝালমুড়ি ওয়ালাকে বলল আরও ১০ টাকার মুড়ি দিতে। ঝালমুড়ি ওয়ালা একটু ভ্রু কুচকে তাকাল। মারুফ বিষয়টি লক্ষ্য করল এবং মিসকি একটা হাসি দিল। মারুফ ঝালমুড়ি ওয়ালার ভ্রু কুচকে তাকাবার কারন বুঝতে পারছে। কেউ যদি জায়গায় বসে ৭০ টাকার ঝালমুড়ি খাই, আর যাই হোক কেউ তাকে সহজ ভাবে নিবেনা।
মারুফ বলল, মামা আপনি মুড়ি খুব ভাল মাখান।
ঝালমুড়ি ওয়ালা বলল, জে আপনাগো দোয়া।
মারুফ বলল, আপনার ছেলে-মেয়ে কয় জন?
ঝালমুড়ি ওয়ালা বলল, ৪ জন।
মারুফ বলল, মাশাল্লাহ!
এখন রাত ১০ টা ২০ মত বাজে। মারুফের বন্ধু সুমনের আসার কথা ৯ টার দিকে, কিন্তু সে এখনও আসেনি। কিছুদিন হল মারুফের এইচ, এস, সি পরিক্ষা শেষ হয়েছে। তার বাবা বলেছে বাড়িতে আসার দরকার নাই, ঢাকায় থেকে ভার্সিটি পরিক্ষার পস্তুতি নিতে। মারুফ বলেছিল কেবলতো পরিক্ষা শেষ হল আগে রেজাল্ট বের হোক তারপর না হয় করবে। কিন্তু মারুফের বাবা আফজাল সাহেবর এক কথা বাড়িতে এখন আসা যাবেনা।
মারুফ ছোট বেলা থেকেই খুব ভাল ছেলে হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। কিন্তু আজ সে খুব খারাপ একটা কাজ করতে চলেছে। সে আর তার বন্ধু সুমন আজকে পতিতালয়ে যাচ্ছে। মারুফ সুমনকে বলেছিল এটাতো খুব খারাপ কাজ। কিন্তু তার বন্ধু সুমনের কিছু নিজস্ব যুক্তি রয়েছে। সুমন মনে করে মুদি দোকানির কাছে যেমন তার খদ্দের পবিত্র, ঠিক তেমনি একটা পতিতার কাছেও তার খদ্দের পবিত্র।
মারুফ সুমনকে ফোন করল সুমন বলল দোস্ত আর দুই মিনিট। দুই মিনিটের আগেই সুমন এসে পড়লো।
মারুফ বলল, কিরে তোর এত দেরি হল কেন?
সুমন বলল, আর বলিসনা রাস্তাই খুব জ্যাম ছিল। বাদদে চল যাওয়া যাক।
মারুফ ঝালমুড়ি ওয়ালাকে ৭০ টাকা দিয়ে তারা চলে গেল।

মারুফ ও সুমন একটি আবাসিক হোটেলে আসল। এখন আর আগের মত পতিতালয়ে যাবার দরকার হয়না। আবাসিক হোটেলের নামেই চলে পতিতাবৃতির ব্যবসা। আবার অনেক পতিতা হোম সার্ভিসও প্রদান করে তাদের খদ্দেরগণকে।
বাইরে কাউন্টারে টাকা জমা দিলে তাদের দুটি টোকেন দেয়। একটি লোক তাদের একটি রুমের সামনে নিয়ে যায়।
লোকটি বলল এই রুমে মাল আছে। এবং লোকটি ঐখান থেকে চলে যায়।
সুমন বলল, দোস্ত তোর এবার প্রথম বার তাই তুই আগে কাজ সেরে আই, পরে আমি যাব।
মারুফ তার বন্ধুর কথা মত ঘরটির দরজায় টোকা দেয়। কিছুক্ষন পর একটি মেয়ে দরজা খুলে দেয়, আর মারুফ অবাক হয়ে মেয়েটিকে দেখতে থাকে। এত সুন্দরী মেয়ে সে এর আগে কখনও দেখেনি। সে মনে মনে ভাবতে থাকে, এত সুন্দরী মেয়ে পতিতা হয় কিভাবে!
মেয়েটি তখন ফোনে কথা বলছিল। মারুফকে ঘরে ঢোকার জন্য ইশারা করল। মারুফ ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল। সে তখনও মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি তার ফোনের কথা শেষ করে মারুফকে বলল, কি হল দাড়িয়ে আছেন কেন! কাপড় খুলেন।
মারুফ কোন কথা বলল না। আগের মত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়েই রইল। এবার মেয়েটি একটু রেগে গিয়ে বলল, কাপড় খোলেন দিয়ে কাজ করে ফোটেন এখান থেকে।
মারুফ এবার মেয়েটিকে ভাল করে দেখল। মেয়েটি একটি মেরুন কালারের থ্রি পিচ পরে আছে। চুল খোঁপা করে বাধা। খোঁপায় পেঞ্ছিল টাইপের কি যেন দেয়া রয়েছে। চোখে কাজল দেয়া আছে। আর ঠোঁটে হালকা করে লাল লিপিস্টিক।
মারুফ বলল, আচ্ছা কাজ না করলে কি হয়না।
মেয়েটি বলল, দেখেন প্রেমের আলাপ বাদ দিয়ে কাজ করে চলে যান, আমার আরও অনেক কাস্টমার আছে।
মারুফ বলল, আমি যদি কাজ করে চলে যায় আপনি কত টাকা পাবেন?
মেয়েটি বলল, ৫০০ টাকা।
মারুফ বলল, কিন্তু কাউন্টারে তো ১০০০ টাকা দিলাম!
মেয়েটি বলল, ওরা আমাকে অর্ধেক টাকা দেয়।
মারুফ বলল, আচ্ছা আমি যদি আপনাকে আলাদা ভাবে কিছু টাকা দিই তাহলে কি আপনি আমাকে একটু বেশি কাজ করতে দিবেন?
মেয়েটি বলল, হ্যাঁ দিব।
মারুফ তার মানি ব্যাগ থেকে একটি ৫০০ টাকার নোট বের করে মেয়েটির হাতে দিল আর বলল, আপনি আমার সাথে কিছুক্ষন কথা বলবেন এটিই আপনার কাজ। আমার সাথে অন্য কিছু করতে হবেনা।
মেয়েটি টাকা ধরেই আছে, আর তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে একটু ঘোরের মধ্যে আছে। যেন মারুফের কথা বিশ্বাসই করতে পারছেনা।
মারুফ বলল, আমরা কি একটু বসে কথা বলতে পারি?
মেয়েটি এবারে একটু হাসল আর বলল, হ্যাঁ আসুন বসুন।
পাশাপাশি দুটো খাট, যেমন মেসে থাকে সেই রকম। একটিতে মারুফ আর অন্যটিতে মেয়েটি বসল। দুজনে সামনা সামনি বসে আছে।
মারুফ বলল, আপনার নাম কি?
মেয়েটি বলল, নিশি।
মারুফ বলল, আপনার বাড়িতে কে কে আছে?
নিশি বলল, বাবা মারা গেছেন ২ বছর হল, মা আর ছোট ভাই আছে বাড়িতে।
মারুফ বলল, এ কাজ ছাড়া আর কিছু কি করেন?
নিশি বলল, এইতো এইবার ইন্টার পরিক্ষা দিলাম।
মারুফ বলল, এর মানে আমি আর আপনি একই রকম। আচ্ছা আপনি এ কাজে কি করে এলেন?
নিশি বলল, বাবা মারা যাবার পরে সংসারে খুবই অভাব দেখা দেয়। আমাদের ৩ জনের ঠিকমতো খাবারই জুটতো না। শেষে এই পথে চলে আসলাম, এখন মোটামুটি সংসার এবং পাশাপাশি আমার আর ছোট ভাইয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি।
মারুফ কিছু বলতে যাবে এমন সময় তার বন্ধু সুমন দরজায় টোকা দিয়ে বলল, দোস্ত তোর কাজকি শেষ হল?তাড়াতাড়ি কর।
মারুফ নিশির দিকে তাকিয়ে বলল, থাকেন তাহলে আমার কাজ শেষ এখন আমি আসি।
মারুফ উঠে দাঁড়াল এবং দরজা খুলে দেখে সুমন দাড়িয়ে আছে, আর তাকে দেখে হাসছে।
সুমন বলল, দোস্ত তুই এবার দাড়া আমি কাজ সেরে আসি।
মারুফ সুমনের হাত ধরল আর তাকে বলল, দরকার নেই চল এখান থেকে।
বলার সাথে সাথেই ওখান থেকে সুমনকে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেল। আসার সময় নিশির দিকে একবার তাকাল মারুফ দেখল, মেয়েটি এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর তার চোখের ভাষা বলছে যেন সে স্বপ্ন দেখছে।

হোটেল থেকে বের হবার পর মারুফের মনে হল আজকে অনেক বেশি গরম পরেছে। তার কাছে হঠাৎ মনে হতে লাগলো পৃথিবীটা জাহান্নামের মত। রাত তেমন একটা হইনি কেবল ১১ টা ১৫ মত বাজে। মারুফ ও সুমন চারদিকে তাকিয়ে দেখল কোন রিকশা নেই, তাই তারা হাঁটতে শুরু করল। কিছুদূর না যেতেই কে যেন পেছন থেকে ডাকল, এই ছোড়া থাম। মারুফ ও সুমন দুজনেই একটু থমকে পেছনে তাকাল, দেখল দুজন লোক দাড়িয়ে আছে। দুজন দু রকম দেখতে। একজন পালোয়ান টাইপের আর অন্য জন খুবই রোগা।
মারুফ বলল, জী আমাদের কিছু বলছেন?
পালোয়ান টাইপের লোকটি বলল, হ্যাঁ তোদেরকেই বলছি।
মারুফ বলল, জী বলেন?
পালোয়ান টাইপের লোকটি বলল, তোরা কি করতে গিয়েছিলি ঐ হোটেলে?
মারুফ বলল, তেমন কিছুনা এমনি টয়লেট করতে গিয়েছিলাম।
পালোয়ান টাইপের লোকটি বলল, আমাকে কি তোর বোকাচুদা মনে হচ্ছে, তোরা এত রাতে বেশ্যালয়য়ে গিয়েছিস পেসাব ফিরতে?
সুমন বলল, এই মিয়া কে আপনি এত কথা বলছেন?
পালোয়ান টাইপের লোকটি বলল, আমি মুহাম্মদপুর থানার ওসি।
মারুফ বলল, বিশ্বাস করেন স্যার সত্যি আমরা টয়লেটে গিয়েছিলাম।
সুমন কিছু বলতে গেল তার আগেই ওসি সাহেব তার সাথে থাকা রোগা লোকটিকে বলল, কাসেম বান্দ দুইটারে।
রোগা লোকটি ওসি সাহেবের কথা শোনার সাথে সাথেই তার কাছে থাকা ব্যাগটি থেকে একটি দড়ি বের করল। যেন সে দড়ি বের করার জন্যেই অপেক্ষা করছিল। যখন সে সুমনকে বাধতে গেল তখন সুমন ওসি সাহেবের কাছে এসে তার পা চেপে ধরল।
সুমন বলল, স্যার আমাদের মাফ করে দেন আমরা আর কোনদিন এইসব জাইগায় আসবনা।
ওসি সাহেব বললেন, না তোদের ছাড়া যাবেনা তোদের থানাই যেতে হবে। পা ছাড়!
সুমন পা না ছেড়ে আরও শক্ত করে ধরে বলল, স্যার পা ছাড়বো না। আপনি যা বলবেন আমরা তাই করব কিন্তু আমাদের ছেড়ে দেন।
মারুফ চুপ করে দাড়িয়ে আছে। সে বিশ্বাস করতে পারছেনা তাদের সাথে আসলে কি হচ্ছে।
ওসি সাহেব তার সাথে থাকা রোগা লোকটিকে বললেন, কি করা যায় বলতো কাসেম?
কাসেম বলল, স্যার ছাইরা দেন। গ্যাদা দুইটা পোলাপান মানুষ।
ওসি সাহেব বললেন, যা তোদের ছেড়ে দিলাম।
সুমন তার পা ছেড়ে দিয়ে বলল, স্যার আপনাকে ধন্যবাদ।
ওসি সাহেব বললেন, ধন্যবাদ পরে দিস আগে বল তোদের কাছে কত টাকা আছে?
সুমন বলল, কেন স্যার?
ওসি সাহেব বললেন, মানিব্যাগ বের কর দুজনে।
মারুফ ও সুমন দুজনে তাদের মানিব্যাগ বের করল আর সাথে সাথেই কাসেম তাদের মানিব্যাগ দুটি নিয়েনিল। কাসেম মানিব্যাগ দুটি থেকে সব টাকা বের করে নিয়ে মানিব্যাগ ফেরত দিল।
ওসি সাহেব বললেন, আর টাকা নাই?
মারুফ এবার বলল, না।
ওসি সাহেব বললেন, কাসেম দুইটারে সার্চ কর।
কাসেম মারুফকে সার্চ করে কিছু পেলনা কিন্তু সুমনের কাছে থেকে ৫০০ টাকার একটা নোট পেল। কাসেম ৫০০ টাকার নোট খুজে পেয়ে মনে হচ্ছে খুব খুশি। তার দাত বের হয়েই থাকল।
সুমন বলল, স্যার এই টাকাটা নিয়েন না। মা এইটা দিছে বই কেনার জন্য।
ওসি সাহেব রেগেগিয়ে বললেন, কুত্তার বাচ্চা মায়ে টাকা দেই বই কিনতে আর তুই মাগি বাড়ি আসিস। যা তোরে বই কিনতে হবেনা। এইটা তোর একটা শিক্ষা।
মারুফ বলল, স্যার আমাদের বাড়ি ফেরার জন্যে কিছু টাকা দেয়া যাবে?
ওসি সাহেব মারুফের হাতে ৫০ টাকার একটা নোট দিলেন আর বললেন যা ভাগ এখান থেকে। মারুফ টাকা নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি হাটতে লাগল। আর সুমন মনে হচ্ছে দৌড়াচ্ছে।
কিছুদুর এসে তারা দুজনে থামল। মারুফ একটা রিকশা ডেকে ভাড়া মিটিয়ে দুজনে রিকশাই উঠল। মারুফ রাস্তার পাশের ফুটপাতের দিকে তাকিয়ে আছে। সে বিশ্বাসই করতে পারছেনা কিছুক্ষণ আগে তার সাথে কি ঘটে গেল। মারুফকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ সুমন হাসতে শুরু করল। মারুফ অবাক হয়ে সুমনের হাসি দেখছে।
মারুফ বলল, হাসছিস কেন?
সুমন বলল, আমার কাছে এখনও ১০০ টাকা আছে। ঐ কাসেম খুজে পাইনি।
মারুফ বলল, কিন্তু কাসেম তো তোকে ভাল করেই সার্চ করেছিল, তাহলে পেলনা কেন?
সুমন বলল, এই টাকাটা আমার আন্ডার অয়ারের পকেটে ছিল তাই পাইনি।
মারুফ অবাক হয়ে বলল, আন্ডার অয়ারের আবার পকেট হয় নাকি?
সুমন বলল, হ্যাঁ কিছু কিছু আন্ডার অউয়ারের পকেট হয়। বলেই আবার হাসতে শুরু করল। এবারের হাসি আগের থেকেও জোরে। রিকশা ওয়ালা মাঝে মঝে পেছনে তাকাচ্ছে।
মারুফ কিছু আর বলল না। সে ভাবতে থাকল নিশির কথা।












দরজা ধাক্কানোর শব্দে মারুফের ঘুম ভেংগে গেল। মারুফ বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের করে দেখল ৭ টা ৩ বাজে। এত সকালে কে তার দরজা ধাক্কাতে পারে এই ভাবতে ভাবতে দরজা খুলতে গেল। দরজা খুলেই সে দেখতে পেল সুমাইয়া দাড়িয়ে আছে।
মারুফ অবাক হয়ে বলল, সুমাইয়া তুমি এত সকালে! কোন সমস্যা হয়েছে নাকি?
সুমাইয়া বলল, না কোন সমস্যা হয়নি।
মারুফ বলল, তাহলে তুমি এত সকালে এখানে কেন?
সুমাইয়া বলল, আমি তোমার এখানে আসলে কি তোমার কোন সমস্যা আছে?
মারুফ বলল, না নাই। কিন্তু এত সকালে এসেছ তাই বললাম।
সুমাইয়া বলল, আমি তোমার কাছে কিছু জানতে এসেছি।
মারুফ বলল, কি জানতে এসেছ বল।
সুমাইয়া বলল, কাল রাতে এত দেরি করে ফিরলে কেন?
মারুফ বলল, আমি আমার এক বন্ধুর সাথে গাজীপুরে গিয়েছিলাম। তুমি জানলে কি করে আমি রুমে দেরি করে ফিরেছি?
সুমাইয়া বলল, আমি কাল তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কয়েকবার তোমার রুমেও এসেছিলাম, কিন্তু তোমার রুম মেট বলল তুমি এখনও ফেরনি। তাই তোমার জন্যে বারান্দাই অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু তুমি যখন ফিরলে তখন অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল তাই আর আসিনি।
মারুফ বলল, কি বলতে চাও বল।
সুমাইয়া বলল, না এখন বলবো না পরে বলবো। এখন যায় আমি।
বলেই সুমাইয়া চলে গেল। মারুফকে কথা বলার কোন সুযোগ দিলনা।
মারুফ দরজা লাগিয়ে দিয়ে আবার বিছানায় এসে শুয়ে ভাবতে থাকল সুমাইয়ার কথা। এই কিছুদিন আগেও সুমাইয়ার সাথে তার কোন রকম কথা হতনা। সুমাইয়া হল তার বাড়ি ওয়ালার মেয়ে। আর কোন বাড়ি ওয়ালার মেয়ে তাদের ভাড়াটিয়ার সাথে কথা বলেনা এটাই স্বাভাবিক। সুমাইয়াও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। কিন্তু কিছুদিন আগের একটা ঘটনার পর থেকে সে মারুফের সাথে কথা বলে। শুধু কথা বলা বললে ভুল হবে, তাদের ভাল বন্ধুত্বও হয়ে গেছে। তেমন কোন ঘটনা ছিলনা, ঘটনাটা ছিল এরকম...
মারুফ ধানমন্ডি লেকে বিকেল বেলাই ঘুরতে গেছে। ঘুরতে ঘুরতে এক সময় দেখে একটা ছেলে একটা মেয়েকে জোর করে কিস করতে চাচ্ছে, কিন্তু মেয়েটা করতে দিচ্ছে না। মারুফ এগিয়ে গিয়ে দেখে সুমাইয়া। সে সুমাইয়ার সাথে কথা বলে জানতে পারে ঐ ছেলেটা তার বয়ফ্রেন্ড। সুমাইয়া কিস করতে চাইনা কিন্তু ছেলেটা তাকে জোর করছে। ওখান থেকে সে সুমাইয়াকে নিয়ে চলে আসে বাসায়। এরপর থেকে মারুফের সাথে সুমাইয়ার একটা ভাল সম্পর্ক হয়ে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতে মারুফ আবার ঘুমিয়ে গেল।

দুপুরের খাবার পরে সুমাইয়া আবার আসলো মারুফের কাছে।
সুমাইয়া বলল, আজ বিকেলে কি তুমি ফ্রি আছ?
মারুফ বলল, হ্যাঁ কেন বলতো?
সুমাইয়া বলল, আজকে আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব। তুমি ঠিক ৫ টাই রেডি হয়ে থাকবে।
মারুফ বলল, ঠিক আছে কিন্তু আমরা যাব কোথায়?
সুমাইয়া বলল, এখনও জানিনা তবে কোথাও গেলেই হল।
মারুফ বলল, ঠিক আছে।

সুমাইয়া বিকেল ৫ টার কথা বলেছিল আর ঠিক ৫ টার সময়ই সে মারুফের দরজায় টোকা দিল। দরজা মারুফের রুমমেট আদিল খুলে দিল।
সুমাইয়া বলল, ভাইয়া মারুফ কোথায়?
আদিল কিছু বলার আগেই মারুফ চলে আসল। মারুফ ও সুমাইয়া বাসা থেকে বের হয়ে গেল। বাসা থেকে বের হবার পর মারুফ একটা রিকশা ডাকল।
মারুফ সুমাইয়াকে বলল, আমরা যাচ্ছি কোথায়?
সুমাইয়া রিকশা ওয়ালাকে বলল, মামা আমরা কিছুক্ষণ ঘুরব আপনি কি যাবেন?
রিকশা ওয়ালা বলল, কই যাইবেন?
সুমাইয়া বলল, তেমন কোথাও না এমনি একটু ঘুরব।
রিকশা ওয়ালা বলল, যাব তবে ঘণ্টা প্রতি ১৫০ টাকা দেওন লাগবো।
সুমাইয়া বলল, ঠিক আছে আপনাকে তাই দিব।
মারুফ এবং সুমাইয়া দুজনে রিকশাই উঠে বসল।
রিকশা ওয়ালা বলল মামা কোন দিকে যাব?
মারুফ বলল, আপনার যে দিকে ইচ্ছে হয় সে দিকে যান।
রিকশা ওয়ালা দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে রিকশা চালানো শুরু করল। তার হলুদ দাঁত দেখা গেল। আজকাল আর আগের মত হলুদ দাঁত দেখা যায়না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে এরকম কিছু মজাদার জিনিসও হারিয়ে যাচ্ছে।
মারুফ সুমাইয়াকে বলল, তোমার কি হয়েছে বলতো?
সুমাইয়া বলল, আমি তোমার বাচ্চার মা হতে চলেছি। বলেই শব্দ করে হেসে ফেলল।
মারুফ সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতে পারছেনা কেন সুমাইয়া এরকম করছে। আগে সে এমন কিছু করত না, কিন্তু এখন তার মাঝে কোন একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু কেন এই পরিবর্তন তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তারা ২ ঘণ্টা মত রিকশা করে ঘুরে ধানমন্ডি ৮ নম্বর লেকের পাড়ে এসে বসল। সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। তার পরেও এখনও আকাশে একটু একটু আলো আছে। মারুফ আশে পাশে তাকিয়ে দেখল কিছু প্রেমিক-প্রেমিকার জুটি বসে আছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে তারা চুটিয়ে প্রেম করছে।
সুমাইয়া বলল, আমি ফুচকা খাব।
মারুফ পাশের ফুচকার দোকান থেকে ফুচকা নিয়ে আসল। সুমাইয়াকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব মজা করেই ফুচকা খাচ্ছে। কিন্তু মারুফের তেমন একটা ভাল লাগছে না।
মারুফ বলল, তোমার কি ফুচকা খুব ভাল লাগে?
সুমাইয়া বলল, হ্যাঁ ফুচকা আমার খুব খব ভাল লাগে। আল্লাহ যদি আমাকে বলেন আমি জান্নাতে শুধু ১ টা খাবার খেতে পারব আর কোন খাবার পারব না। আমি আল্লাহকে বলল আমি শুধু মাত্র ফুচকা খাব।
মারুফ বলল, তাহলে তোমার একটা ফুচকা ওয়ালার সাথে বিয়ে করা দরকার। তাহলে সারাদিন ফুচকা খেতে পারবে।
সুমাইয়া বলল, ভাল কথা বলেছ কিন্তু আমার বাবা তো রাজি হবেনা।
মারুফ বলল, দরকার হলে আমি আঙ্কেলের সাথে কথা বলব। একথা বলেই মারুফ একটা হাসি দিল। মারুফের সাথে সাথে সুমাইয়াও হাসল।
সুমাইয়া বলল, আজকে আমার জন্মদিন।
মারুফ বলল, হ্যাপি নেংটুলুন অ্যান্ড পেনটুলুন ডে।
সুমাইয়া বলল, মানে কি?
মারুফ বলল, শুভ জন্মদিন। আমার খুব কাছের মানুষদের আমি এভাবে বলি।
সুমাইয়া বলল, আমি কি তোমার কাছের কেউ?
মারুফ বলল, এখনও ঠিক বলতে পারছি না। তবে যেহেতু বলেছি হতেও পার।
সুমাইয়া বলল, আমার গিফট কোথায়?
মারুফ পাশে তাকিয়ে দেখতে পেল বাদামের খোসা পরে আছে। সে একটি খোসা তুলে সুমাইয়ার হাতে তুলে দিয়ে বলল এই নাও তোমার গিফট।
সুমাইয়া বলল, বাদামের খোসা! এইটা কোন গিফট হল।
মারুফ বলল, গিফট তো গিফটই সেটা যেকোনো কিছুই হতে পারে।
সুমাইয়া বলল, তাই বলে তুমি একটা মেয়েকে বাদামের খোসা দিবে।
মারুফ বলল, আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে পরে কোন ভাল গিফট দিব।
সুমাইয়া বলল, ঠিক আছে।
মারুফ তার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ৮ টা বেজে গেছে। সে সুমাইয়াকে বলল, তোমার বাসায় যাবার সময় হয়ে গেছে।
সুমাইয়া বলল, হ্যাঁ কিন্তু আমি আজকে বাসায় তাড়াতাড়ি যাবনা। আজকে আমার জন্মদিন তাই আমি আজকে একটু দেরি করে বাসায় যাব।
মারুফ বলল, কিন্তু আঙ্কেল তো রাগ করবেন।
সুমাইয়া বলল, রাগ করবে না। আমি আব্বুকে বলেছি আমি আজকে তোমার সাথে ঘুরবো আর ফিরতে একটু দেরি হবে।
মারুফ বলল, ও আচ্ছা আচ্ছা। তো এখন যাবা কোথায়?
সুমাইয়া বলল, তুমি বল কোথায় যাওয়া যায়।
মারুফ বলল, চল জাহাজ বাড়ি যায়। সেখানে অনেক সুন্দর লেবু চা পাওয়া যায়।
সুমাইয়া বলল, ঠিক আছে চল যাওয়া যাক।

সুমাইয়া বলল, সত্যি এখানকার লেবু চা টা অনেক সুন্দর হয়।
মারুফ বলল, হুম।
সুমাইয়া বলল, তুমি কি প্রতিদিন এখানে আসো?
মারুফ বলল, না মাঝে মাঝে আসি।
সুমাইয়া বলল, তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
মারুফ বলল, বাবা-মা আর একটা ছোট বোন। বলেই মারুফের তার মায়ের কথা মনে পরে গেল। তার নিজের মা আয়েশা আক্তার মারা গেছেন যখন মারুফের বয়স ছিল ৮ বছর। তার বাবা আবার বিয়ে করে। তার সৎ মা ইয়াসমিন চৌধুরি মারুফকে কখনও সতীনের ছেলে মনে করেনি। মারুফকে তার নিজের ছেলের মতই ভালোবাসে। মারুফও ইয়াসমিন চৌধুরিকে তার নিজের মায়ের মতই ভালোবাসে।
সুমাইয়া বলল, কি হল কি ভাবছ?
মারুফ বলল, কিছুনা চল বাসায় যাওয়া যাক।
সুমাইয়া বলল, আরেকটু বসি!
মারুফ বলল, না আর ভাল লাগছেনা।
সুমাইয়া বলল, ঠিক আছে চল।
মারুফ রিকশা নিতে গেল কিন্তু সুমাইয়া তাকে রিকশা নিতে দিলনা। সে বলল বাসায় হেঁটে হেঁটে যাবে। মারুফও রাজি হয়ে গেল কারন তাদের বাসা বেশি দুরেনা। হেঁটে খুব বেশি হলে ১৫ মিনিট লাগবে। মারুফ ও সুমাইয়া দুজনে খুব কাছাকাছি হাঁটছে। কেউ কোন কথা বলছে না।
হঠাৎ সুমাইয়া বলল, ম তিমিলাই মায়া গাচ্চু।
মারুফ বলল, মানে?
সুমাইয়া বলল, ম তিমিলাই মায়া গাচ্চু।
মারুফ বলল, বুঝিনাই বাংলায় বল।
সুমাইয়া বলল, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
মারুফ কিছু বলল না শুধু মিসকি একটা হাসি দিল।
সুমাইয়া বলল, কি হল হাসছো কেন কিছু বল।
মারুফ বলল, কি বলব?
সুমাইয়া বলল, আমাকে ভালোবাসো কিনা তাই বলবা।
মারুফ বলল, দেখ সুমাইয়া আমি তোমাকে সেই ভাবে কোন দিন দেখিনাই। তাই তোমাকে বলতে পারবনা আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা। কিন্তু আমি তোমাকে আমার একজন খুব ভাল বন্ধু মনে করি।
সুমাইয়া বলল, আমি কি দেখতে খারাপ?
মারুফ বলল, না তুমি দেখতে খারাপ না। তুমি অনেক সুন্দর সুইট একটা মেয়ে।
সুমাইয়া বলল, তাহলে কেন তুমি আমাকে ভালবাসনা?
মারুফ জোরে একটা হাসি দিল। আর তার হাসির শব্দে চারপাশ একটু কেপে উঠলো।
সুমাইয়া বলল, কি হল হাসছো কেন?
মারুফ বলল, তোমার কথা শুনে।
সুমাইয়া আর কোন কথা বলল না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব রেগে গেছে। মারুফ সেটা বুঝতে পেরে আর কিছু বলল না। তার এখন চিন্তা কখন বাসায় পৌঁছানো যায়।








সালমান খানের কথাই মারুফের ঘুম ভেংগে গেল। একবার জো ম্যাইনে কামিটমেন্ট কারলি উসকে বাদ ম্যাই আপনে আপকেভি নেহি শুন্তা। মারুফ চোখ না খুলেই ভাবল সালমান খান তার ঘরে আসলো কীভাবে? সে আদিলের বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল আদিলের মোবাইল বাজছে। আদিল তার মোবাইল ধরল আর সালমান খান তার কথা বন্ধ করে দিল। মারুফ ভাবল বিজ্ঞানের উন্নতির কারনে আজকে তার ঘুম ভাঙ্গালো সালমান খান। কত জনের আর মারুফের মত সৌভাগ্য হয়। মারুফ মনে করার চেষ্টা করল ডায়ালগটি কোন ছবির, কিন্তু তার কিছুতেই মনে পড়লো না ডায়ালগটি কোন ছবির। নিজের ওপরে মারুফের রাগ হল। ছবিটি সে অনেকবার দেখেছে কিন্তু এখন তার মনে পরছে না। আগে তার এমন হতনা, তার পরিক্ষার পর থেকে এমন হচ্ছে। মাঝে মাঝে তার কোন কিছুই মনে আসেনা। কিন্তু এক সময় সে সকল ছবির নাম বলে দিতে পারত। তার বন্ধুদের সাথে সে এই ভাবে অনেক বাজি জিতেছে। মারুফের মোবাইল বাজছে সে দেখল তার বড় মামা ইকবাল হোসেন কল করেছে, ইচ্ছা না থাকার পরেও কল ধরল। ওপার থেকে ইকবাল হোসেনের উৎকণ্ঠা শোনা গেল।
মারুফ বলল, হ্যালো মামা কোন সমস্যা হয়েছে নাকি?
ইকবাল হোসেন বললেন, মারুফ তোর মামী আর বাঁচবে না। মরার আগে তোকে একবার শেষ দেখা দেখতে চাই।
মারুফ বলল, কেন! মামীর কি হয়েছে?
ইকবাল হোসেন বললেন, ফুসফুসে ক্যান্সার লাস্ট ইস্টেজ। বাবা দেরি করিস না তাড়াতাড়ি চলে আই।
মারুফ বলল, ঠিক আছে মামা আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসছি।

মারুফ এখন রাজশাহী যাবার বাসে বসে আছে। মারুফের বড় মামা ইকবাল হোসেনের বাড়ী রাজশাহী। বাস ভাল গতিতেই চলছে। কিন্তু মারুফের মনে হচ্ছে বাসের ড্রাইভার তেমন গতি দিচ্ছে না। মারুফের বড় মামীকে সে যমের মত ভয় পায়। মামীর নাম রিনা চৌধুরী। বাংলা ছিনেমার ভিলেন রিনার মতই মামী দেখতে। আর তার স্বভাবও ভিলেনের মতই। ছোট বেলার একটা ঘটনা মারুফের মনে পড়ে গেল। ঘটনাটি ছিল এরকম......
তখন মারুফের বয়স ৫-৬ বছর হবে। সে তার বড় মামার বাড়ীতে বেড়াতে গেছে। একদিন সে টয়লেটে হারপিক ছিটিয়ে দিল। সে এর আগে কোনোদিন হারপিক দেখেনি। সে দেখল নীল নীল কি যেন টয়লেটের মধ্যে ছিটিয়ে পড়ল। সে খুব ঘাবড়ে গেল, মামী যদি মারে এই ভয়ে বাড়ী থেকে পালিয়ে গেল। বাড়ী থেকে পালিয়ে সে মামার পুকুর পাড়ে একটি বড় গাছের নিচে গিয়ে লুকিয়ে থাকল। দুপুর পার হয়ে বিকেল হয়ে গেল, কিন্তু তার কোন খোজ পাওয়া গেলনা। বাড়ীর সবাই সব জায়গায় খোজ নিলো কিন্তু কোথাও পেলনা। শেষে সন্ধ্যার সময় পাড়ার এক ছেলে তাকে পুকুর পাড়ের গাছের নিচে দেখতে পেয়ে বাড়ীতে খবর দেই। তার পর মারুফের মা আয়েশা আক্তার আর বড় মামা ইকবাল হোসেন গিয়ে মারুফকে নিয়ে আসে বাড়ীতে। মারুফ হেঁসে ফেলল, আর তার একটু লজ্জা করতে লাগলো ছোট বেলার ঘটনা মনে পড়ে। সত্যিই সে অনেক বোকা ছিল। বোকা না হলে কি কেউ এই ভাবে মামীর ভয়ে বাড়ী থেকে পালাই। মারুফের পাশে একটি বুড়া লোক বসেছিল। লোকটি মারুফের দিকে একটু অবাক হয়ে তাকাচ্ছে। যেন বাসের মধ্যে একা একা হাঁসা মস্ত বড় অপরাধ। মারুফ লোকটির দিকে তাকিয়ে একটি মিসকি হাঁসি দিল, এতে লোকটি আরও সরু চোখে মারুফকে দেখতে থাকলো।











মারুফ রাত ৮ তার দিকে মামার বাড়ীতে এসে পৌছালো। ঢাকা থেকে রাজশাহী যেতে খুব বেশি হলে ৬ ঘণ্টা লাগে। কিন্তু মারুফের ৯ ঘণ্টা মত লেগে গেল। নাটোরে বাসের হেল্পারকে মারার ঘটনা নিয়ে অবরোধ। তাই একটু বেশি দেরি হয়ে গেল। মারুফকে দেখে তার বড় মামা ইকবাল হোসেন তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
মারুফ বলল, মামা আপনি কেমন আছেন?
ইকবাল হোসেন বললেন, তোর মামীর এই অবস্থায় কি আর ভাল থাকা যায়।
মারুফ বলল, মামী এখন কি করছে?
ইকবাল হোসেন বললেন, কি আর করবে বিছানাই শুয়ে শুয়ে তার সিরিয়াল দেখছে। কখন মারা যাবে তার ঠিক নাই, সে আছে তার সিরিয়াল নিয়ে। এই সময়ে মানুষ আল্লাহ খোদার নাম নেয়, আর তোর মামী সিরিয়াল দেখে।
মারুফ বলল, চলেন মামীর কাছে যাই।
ইকবাল হোসেন বললেন, না এখন যাবার দরকার নেই। আগে তুই কিছু খেয়ে নে তার পর তোর মামীর কাছে যাস। তাছারা এখন তোর মামী তোর সাথে ঠিক মত কথা বলবে না। এখন তার সব থেকে পছন্দের সিরিয়াল চলছে।
রাতের খাবার মারুফ কখনও এত তাড়াতাড়ি খায়না। কিন্তু আজকে তার খুব খিদে লেগেছে। দুপুরে ঠিক মত খেতে পারেনি, তাই হয়তো একটু বেশি খেয়ে ফেলল। তাছাড়া রান্নাও অনেক ভালো হয়েছে। আয়োজন খুব বেশি না। আলু ভাজি, পুঁটি মাছের ঝোল আর মাশ কলায়ের ডাল। তৃপ্তিতে যেন মারুফের চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।
মারুফ বলল, মামা রান্না অনেক ভালো হয়েছে। কে রান্না করেছে?
ইকবাল হোসেন বললেন, কে আর করবে আমি করেছি। একটা কাজের মেয়ে ছিল কিছুদিন হল চুরি করে পালিয়েছে। তার পরে আর কোন কাজের মেয়ে রাখিনি।
মারুফ বলল, মামা রান্না খুব ভালো হয়েছে। আপনি শিক্ষক না হয়ে বাবুর্চি হলে ভালো করতেন। তাহলে আপনার অনেক নাম হতো। আর যদি আপনার একটা হোটেল থাকতো, তাহলে আপনার হোটেলের সামনে মানুষ লাইন দিয়ে খেত।
ইকবাল হোসেন বললেন, আচ্ছা যা তোর বিয়েতে আমি রান্না করে দিব।

রাত ১০ টার দিকে মারুফ তার মামী রিনা চৌধুরীর সাথে দেখা করতে মামীর ঘরে আসল। ঘরের মধ্যে ঢুকে সে দেখল ঘরে কোন লাইট জ্বলছে না। টিভির আলোয় ঘরটিতে একটা ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মারুফ তার মামীর দিকে তাকাল দেখল তিনি বিছানায় শুয়ে কাদছেন।
মারুফ বিছানাই বসতে বসতে বলল, মামী কাদছেন কেন শরীর কি খুব বেশি খারাপ করছে?
রিনা চৌধুরীর বললেন, না।
মারুফ বলল, তাহলে কাদছেন কেন?
রিনা চৌধুরীর বললেন, আলোর বিয়ে ভেঙ্গে গেছে তাই।
মারুফ বলল, আলো কে আপনার ভাইয়ের মেয়ে?
রিনা চৌধুরীর বললেন, না! নাটকের নায়িকা।
মারুফ হাসতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, মামী চিন্তা করেন না দরকার হলে আমি আলোর জন্যে পাত্র খুঁজবো। পত্রিকায় পাত্র চায় বলে বিজ্ঞাপন দিব।
রিনা চৌধুরীর বললেন, ফাজলামি বন্ধ কর। তুই যতো বড় হচ্ছিস ততো ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস।
মারুফ বলল, মামী ফাজলামি কোথায় করলাম আমিতো শুধু আপনার আলোর একটু হেল্প করতে চাচ্ছিলাম।
রিনা চৌধুরীর বললেন, বাদদে ওসব কথা। তোর মনে আছে তুই ছোট বেলাই একবার আমার ভয়ে বাড়ী থেকে পালিয়েছিলি?
মারুফ বলল, হ্যাঁ মনে আছে।
রিনা চৌধুরীর বললেন, আমি এখনও বুঝতে পারিনা কেন তুই আমার ভয়ে পালিয়েছিলি! আমিতো তোকে কোনদিন বকাঝকা করিনাই বা মারিনাই, তাহলে কেন পালিয়েছিলি?
মারুফ বলল, আমি ছোট বেলাই আপনাকে খুব ভয় পেতাম। তাই হয়তো পালিয়ে ছিলাম।
রিনা চৌধুরীর বললেন, যাই হোক যেহেতু তুই আমার ভয়ে পালিয়েছিলি কাছে আই তোকে একটু আদর করে দিই।
মারুফ মামীর কথা শুনে একটু লজ্জা পেল। রিনা চৌধুরীর বুঝতে পেরে বললেন, আর লজ্জা পেতে হবেনা কাছে আই। মারুফ মামীর কাছে গেল আর মামী মারুফের কপালে চুমা দিলেন আর মাথাই হাত বুলিয়ে দিলেন। মারুফের লজ্জা করতে লাগল। মারুফ মনে মনে ভাবল মামীকে সে যত খারাপ মনে করতো আসলে ততো খারাপ না। মামা-মামীর কোন সন্তান নাই, সেই কারণে মামী একটু কেমন জানি সবার সাথে ব্যবহার করত। হয়তো সে কারণেই মারুফ মামীকে ভয় পেত।
রিনা চৌধুরীর বললেন, মারুফ আমি ঠিক করেছি আমার মৃত্যুর পর আমার সব সম্পত্তির মালিক তুই হবি।
মারুফ বলল, কেন?
রিনা চৌধুরীর বললেন, আমি চাইনা আমার মৃত্যুর পর তোর মামা আরেকটা বিয়ে করে আমার সম্পত্তি ভোগ করুক।
মারুফ বলল, তা ঠিক আছে কিন্তু আমি কেন?আপনার বোনেরও তো ছেলে মেয়ে আছে তাদের দিতে পারেন আপনার সম্পত্তি।
রিনা চৌধুরীর বললেন, হ্যাঁ তা দিতে পারি। কিন্তু আমি তোকে ছোট বেলা থেকে একটু বেশি ভালোবাসি। তাই আমি চাই আমার মৃত্যুর পর আমার সম্পত্তির মালিক তুই হবি।
মারুফ বলল, কিন্তু!
রিনা চৌধুরীর বললেন, কোন কিন্তু না। আমি আগে থেকেই তোর নামে উইল করে রেখেছি। আমার মৃত্যুর পরেই তুই সব সম্পত্তির মালিক হবি। এখন এখান থেকে যা আমি সিরিয়াল দেখব।

রাতে ঘুমের মাঝেই রিনা চৌধুরীর মারা গেলেন। তার পাশে থাকা ইকবাল হোসেন বুঝতেও পারলেন না কখন তার স্ত্রী মারা গেল। ভোর বেলাই তিনি ফজরের নামাজ পরার জন্যে তার স্ত্রীকে ডাকতে গিয়ে বুঝতে পারেন তার স্ত্রী রিনা মারা গেছে। আছরের পরেই মাটি দেয়া হয়ে গেল। ইকবাল হোসেন খুব কান্নাকাটি করলেন। মারুফ বুঝতে পারল তার মামা নিজের স্ত্রীকে খুব বেশি ভালোবাসতো। কিন্তু তার মামী রিনা চৌধুরীর হয়তো কখনো বুঝতে পারেনি তার স্বামীর ভালোবাসা। যদি বুঝতে পারতেন তাহলে বলতে পারতেন না যে, তার মৃত্যুর পরে তার স্বামী আরেকটা বিয়ে করে তার সম্পত্তি ভোগ করবে। যেসব আত্ম্যিও স্বজন এসেছিল তারা সন্ধ্যার মধ্যেই চলে গেল। শুধু ইকবাল হোসেনের ছোট ভাই মালেক হোসেন ও তার পরিবার থেকে গেল। রাতে পাশের বাড়ী থেকে সবার জন্যে খাবার আসল। কিন্তু ইকবাল হোসেন কিছুই খেলেন না। কেউ তাকে খাওয়ার জন্য রাজি করাতে পারলো না।







চার দিন পর মারুফ ঢাকায় ফিরল। রুমে ধুকেই দেখল হারুন বসে আছে। হারুন আর মারুফ দুজনে একসাথে স্কুলে পড়ত। দুজনেই একসাথে এস, এস, সি পাশ করে।
মারুফ ব্যাগ রাখতে রাখতে বলল, কি অবস্থা তোর?
হারুন বলল, আর অবস্থা ইচ্ছা করছে এখনই গলাই দড়ি দিই।
মারুফ বলল, কেন তোর আবার কি হল যে তোর আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করছে?
হারুন বলল, বিপাশা বিড়াল সোহেলের সাথে পালাইছে।
মারুফ বলল, বুঝলাম না!
হারুন বলল, ৫ বছর আমার সাথে প্রেম করে বিয়ে করল বিড়াল সোহেলকে। আরে বিয়ে করবি ভালো কথা কোন ভালো ছেলে দেখে বিয়ে কর। কিন্তু না সে বিয়ে করল বিড়াল সোহেলকে তাও আবার পালিয়ে।
মারুফের মনে পরে গেল সোহেলকে বিড়াল সোহেল কেন হারুন বলছে। মারুফ আর হারুন তখন ক্লাস ফাইভে পড়ত। দুজনের বাড়ী পাশাপাশি ছিল। তাদের ২-৩ বাড়ী পরে সোহেল থাকতো। হারুন সোহেলের কাছ থেকে ২০ টাকা দিয়ে একটি বিড়াল কিনেছিল। হারুন বিড়াল টিকে খুব পছন্দ করত। হঠাৎ একদিন দেখে বিড়ালটি নেই। অনেক খোজা খুজির পরেও বিড়ালটি পাওয়া গেলনা। হারুনের খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেবার মত অবস্থা। ২ দিন পর সোহেলের কাছে বিড়ালটি পাওয়া গেল। সে কোন ভাবেই বিড়ালটি ফেরত দিলনা। শেষে আবার ২০ টাকা দিয়ে বিড়ালটি কিনতে হয় হারুনকে। এভাবে হারুন সোহেলের কাছ থেকে ৪-৫ বার একই বিড়াল কিনেছে। তার পর থেকে হারুন সোহেলকে দুচোখে দেখতে পারেনা আর তাকে ডাকে বিড়াল সোহেল বলে।
মারুফ বলল, কি বলছিস তুই! বিপাশার মত এত ভালো একটা মেয়ে কি করে সোহেলকে বিয়ে করতে পারে। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
হারুন বলল, শুধু সোহেল বলবি না। বিড়াল সোহেল বল।
মারুফ বলল, বিড়াল সোহেল।
হারুন বলল, বিশ্বাস কি আমারও হচ্ছে নাকি। কত ভালবাসতাম বিপাশাকে। হয়তো নিজের থেকেও বেশি। যখন প্রথম শুনলাম বিপাশা পালাইছে, তখন মনে হল আমি কোন খারাপ স্বপ্ন দেখছি। বিপাশা সব সময় বলত হাতের পাঁচটা আঙ্গুল সমান না। সত্যি তাই, যদি তা না হতো তাহলে সে বিড়াল সোহেলকে বিয়ে করতো না।
মারুফ বলল, আচ্ছা বলতো বিপাশা বিয়ে করেছে এতে তোর বেশি খারাপ লাগছে। না সোহেলকে বিয়ে করেছে সে জন্য?
হারুন বলল, আবার সোহেল বলে! বিড়াল সোহেল বল। বিড়াল সোহেলকে বিয়ে করেছে তাই বেশি খারাপ লাগছে। যদি রাস্তার একটা ফকিরকে বিয়ে করতো আমি তাতেও এত দুঃখ পেতাম না। আমি ঐ ফইননির পুতরে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে ভিক্ষা দিতাম। কিরে হাসছিস কেন?
মারুফ বলল, তোর কথা শুনে।
হারুন বলল, হাস বেশি করে হাস। তোর যদি এরকম হতো তাহলে বুঝতি।
মারুফের বুকের মধ্যে একটা ধাক্কা লাগলো তার নিশির কথা মনে পরে গেল।

এখন রাত ৯ টা বাজে। মারুফ আর নিশি আগের মত সামনা সামনি বসে আছে। আজকে নিশির কাছে আসতে মারুফকে একটু বেগ পেতে হল। কাউন্টার থেকে তাকে নিশির কাছে আসতে দেয়া হচ্ছিলনা। কাউন্টারের লোক বলেছিল অন্য কাউকে নিতে কিন্তু মারুফের এক কথা সে নিশির কাছেই যাবে। শেষে কাউন্টারের লোককে বেশি টাকা দিলে মারুফকে নিশির কাছে আসতে দেয়।
মারুফ বলল, কেমন আছেন?
নিশি বলল, এক প্রকার জাহান্নামে আছি বলতে পারেন।
মারুফের নিজের ওপরে রাগ হল এই প্রশ্ন না করলেও হতো। সে তার মাথা বোকার মত চুলকাতে চুলকাতে বলল, ছরি আপনাকে এই প্রশ্নটা করা ঠিক হয়নি।
নিশি বলল, এতে আপনার কোন দোষ নেই, যে কেউই কোন সাধারন মানুষকে এই প্রশ্ন করে। আমি যেহেতু সাধারন মানুষের মত জীবন যাপন করিনা। তাই আমি এরকম উত্তর দিলাম। সে কারণে আপনি একটু অপস্তুত হয়ে পড়েছেন। আপনি এরকম উত্তর আসা করেননি। আপনি আর দশটা মানুষ যেরকম উত্তর দেয় সে রকম কিছু আসা করেছিলেন।
মারুফ মিসকি একটা হাসি দিয়ে বলল, আপনি ঠিকই বলেছেন।
নিশি বলল, আজকে কি কিছু করবেন নাকি আগের মত শুধু কথা বলবেন?
মারুফ বলল, আমি আজও আপনার সাথে শুধু কথা বলব। আসলে আমি আপনার জন্যে একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
নিশি বলল, আপনার বাড়ীতে যেতে হবে?
মারুফ বলল, আপনি কি ওসব ছাড়া কিছু বোঝেননা।
নিশি বলল, কি করবো বলেন আপনারা ছেলেরা তো শুধু ওসবই বোঝেন। আর আপনি ওসবের জন্যেই তো প্রথম দিন এখানে এসেছিলেন। যাই হোক বাদ দেন। কি আপনার প্রস্তাব?
মারুফ বলল, আমি আপনার জন্যে দুইটা টিউশনি খুজেছি। আপনি দুইটা টিউশনি থেকে ১০ হাজার টাকা মত পাবেন। আমি জানি এতে আপনার সংসার চলবে না, কিন্তু আপনি সমাজে মাথা তুলে চলতে পারবেন।
নিশি বলল, আপনি কি সত্যি বলছেন?
মারফ বলল, হ্যাঁ। আপনি ইচ্ছা করলে কাল থেকে শুরু করতে পারেন।
নিশি বলল, অবশ্যই আমি করবো। আমি আল্লাহর কাছে সব সময় দোয়া করতাম তিনি যেন আমাকে এই জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন।
মারুফ বলল, ঠিক আছে তাহলে আজকে আমি আসি।



সুমাইয়াদের কাজের ছেলে বল্টু এসে দাড়িয়ে আছে মারুফের রুমে। কিছু বলছে না বলবে কি করে তার বাম হাতের তর্জনী আঙ্গুল যে তার মুখে ঢুকানো আছে।
মারুফ বলল, কিছু বলবি বল্টু?
বল্টু বলল, ভাইজান খালুসাব আপনারে ডাকে।
বলেই আবার মুখের মধ্যে আঙ্গুল পুরে দাড়িয়ে থাকল। যেন আরও কিছু বলার আছে কিন্তু তার মনে পরছেনা।
আদিল বলল, বল্টু আমি তোকে যখনই দেখি তুই মুখের মধ্যে আঙ্গুল পুরে থাকিস। এর কারণ কি?
বল্টু বলল, হইছে কি ভাইজান আমার মা আমারে জন্ম দিবার সময় মইরা গেল। কোনদিন মায়ের দুধ খাইতে পারিনাই। এর লাইগা আমি আমার আঙ্গুল মুখের মধ্যে ধুকাই রাখি, আর মনে করি আমি আমার মায়ের দুধ খাইতাছি। বলেই আবার আঙ্গুল মুখের মধ্যে পুরে দিল।
মারুফ বলল, তুই যা আমি আসছি। বল্টু তাও সেখানেই দাড়িয়ে থাকলো নড়ল না।
হারুন বলল, যা ভাগ বোটা এখান থেকে না হলে তোর ঐ আঙ্গুল তোর পাছার মধ্যে ঢুকায় দিব। হারুনের ধমক খেয়ে বল্টু দৌড়ে পালিয়ে গেল।
মারুফ বলল, হারুন! তুই আগে তো এমন ব্যবহার কারও সাথে করতিনা। আমাদের ক্লাসের সব থেকে ভালো ছেলে ছিলি তুই।
হারুন বলল, আসলে দোস্ত হয়েছে কি বিপাশা চলে যাবার পর আমি কেমন জানি হয়ে গেছি। কোন কিছু ভালো লাগেনা একটুতেই রেগে যায়।
মারুফ বলল, বাদদে চল বাড়ী ওয়ালা চাচার কাছে যায়। কি বলে দেখে আসি।

মারুফ আর হারুফ বসে আছে সুমাইয়াদের বসার ঘরের সোফায়। সুমাইয়ার বাবা মধু মিয়া চোখ বন্ধ করে বসে আছে একটি বেতের চেয়ারে। ঘরে মমতাজের গান বাজছে ...
ফাইটা যায় আরে বুকটা ফাইটা যায়
বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ীর সামনে দিয়া রঙ্গ কইরা হাইটা যায়
ফাইটা যায় আরে বুকটা ফাইটা যায়।
মধু মিয়ার বয়স ৫০ বছরের মত হবে। কিন্তু তাকে দেখে মনে হয় তার বয়স ৬০ বছর। লোকটি বেঁটে ধরনের। তার বিশাল ভুঁড়ির কারণে তাকে আরও বেশি বেঁটে লাগে। লোকটি খালি গায়ে একটি লুঙ্গি পরে বসে আছে।
মধু মিয়া বলল, বুঝলা মারুফ মমতাজের মত শিল্পী হয়না। কি গান্ডাই না গাইছে ফাইটা যায় আরে বুকটা ফাইটা যায়। মধু মিয়ার বাড়ী সিরাজগঞ্জে। ঢাকায় আসার পর তার নিজের আঞ্চলিক ভাষা, আর দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার একটা মেল বন্ধন তৈরি হয়েছে। তার ভাষা এখন জগা খিচুড়ির মত। কখন কোন ভাষায় কথা বলে ঠিক নাই। এই শুদ্ধ এই আঞ্চলিক।
মারুফ বলল, হ্যাঁ চাচা।
মধু মিয়া বলল, তোমরা পোলাপান মানুষ মমতাজের গান শুননা। তোমরা শুনো আজকালের মাথা ঝাঁকানি। দেখে বোঝা যায়না গান গাচ্ছে না মাথা নাচাচ্ছে। আরে ব্যাটা গান গাবি গান গা, তানা মাথা নাচাই। দেখে মনে হয় মাথাই অনেক উকুন হইছে, তাই মাথা ঝাঁকানি দিয়ে উকুন তাড়াই।
মারুফ বলল, না চাচা আমরা মমতাজের গানও শুনি। কনছার্টে তার গান না হলে কনছার্টই জমেনা।
মধু মিয়া হারুনের দিকে তাকিয়ে বলল, এই ছেলেটা কে?
মারুফ বলল, এর নাম হচ্ছে হারুন আমার বন্ধু। চাচা আমাকে ডেকেছেন কেন?
মুধু মিয়া ম্যাচের কাঠি দিয়ে কান চুলকাতে চুলকাতে বলল, আদিলের কাছে শুনলাম তোমার মামী নাকি মারা গেছে। শুনে বড়ই কষ্ট পেয়েছি।
মারুফ বলল, জী।
মধু মিয়া বলল, তিনি নাকি মারা যাবার আগে তার সকল সম্পত্তি তোমারে দিয়ে গেছেন?
মারুফ বলল, জী।
মধু মিয়া বলল, শুনো সম্পত্তি খুব খারাপ জিনিস। সম্পত্তি থাকাও খারাপ আবার না থাকাও খারাপ। এই বৈলটা আমারে একটা ভিজা গামছা দিয়া যা। আর এদের নাস্তা দে।
মারুফ বলল, না না চাচা নাস্তা লাগবে না।
মধু মিয়া বলল, আরে কি কউ অবশ্যই নাস্তা লাগবো।
সুমাইয়া নাস্তা দিয়ে চলে গেল। মারুফের দিকে একবার তাকালো কিন্তু কিছু বলল না। বল্টু মুখের মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে ঘরে ঢুকে বলল, খালুসাব গামছা আনছি। বলেই আবার মুখের মধ্যে আঙ্গুল পুরে দিল।
মধু মিয়া বলল, আমার গা মোছ কইরা দে। বুঝলা মারুফ গরম হেব্বি পরছে। গরমের জ্বালাই জীবন অস্থির, ভেজা গামছা দিয়া গা মোছ করলে একটু শান্তি পাই। কি হল তোমরা বসে আছ কেন খাওয়া শুরু কর।
মারুফ দেখল একটি প্লেটে ৬ টি বড় ধরনের সিঙ্গারা। অন্য একটি প্লেটে টোস্ট বিস্কুট আর একটি প্রিচে চানাচুর। মারুফ সিঙ্গারা মুখে দিয়ে অবাক হয়ে গেল, সিঙ্গারা এত সুস্বাদু কি করে হতে পারে। এই সিঙ্গারা যে তৈরি করেছে সিঙ্গারা তৈরি করার জন্যে যদি নোবেল পুরস্কার থাকতো, তাহলে একটা পেয়ে যেত। সে মনে করার চেষ্টা করল সিঙ্গারা বানানোর বিষয়ে কোন নোবেল পুরস্কার আছে কিনা।
মারুফ বলল, চাচা সিঙ্গারা কে বানিয়েছে?
মধু মিয়া বলল, সুমাইয়া।
মারুফ মনে মনে ভাবল যে এই মেয়েকে বিয়ে করবে তার ভালই হবে। সে ইচ্ছা করলেও সুমাইয়াকে ছাড়তে পারবে না। ছাড়লেতো মস্ত বড় ভুল করবে এত সুস্বাদু সিঙ্গারা মিস করবে। হঠাৎ তার মনে হল সেই তো সুমাইয়াকে ছেড়ে দিচ্ছে। মানে তার প্রেমের প্রস্তাবে না রাজি হয়ে, এক ভাবে এটাইতো ছেড়ে দেয়া।
মধু মিয়া বলল, সিঙ্গারা কেমন হয়েছে?
মারুফ বলল, অসাধারণ! আমার জীবনে আমি এত সুস্বাদু সিঙ্গারা কখনো খাইনি।
মধু মিয়া বলল, আমার মেয়ে সিঙ্গারাটা অনেক ভালো বানাই। কি হল বসে আছো কেন খাও। তোমার নাম কি যেন বললে বারুন?
হারুন বলল, না হারুন!
মধু মিয়া বলল, ও হ্যাঁ হারুন। কি হয়েছে জান আমার আবার কারও নাম মনে থাকেনা। কি হল তুমি কিছু বলছো না কেন চুপ করে আছ যে?
হারুন বলল, আমার দাতে ব্যাথা তাই কথা বলছিনা।
মধু মিয়া বলল, থাক কথা বলার দরকার নাই।
খেতে খেতে মারুফ ৪ টি সিঙ্গারা খেয়ে ফেলল। প্লেটে আর কোন সিঙ্গারা ছিলনা, না হলে আরও খেত। একবার মনে করল সুমাইয়ার কাছে আরও ২ টা সিঙ্গারা চাবে, কিন্তু পরে আবার ভাবল কাজটা ঠিক হবেনা। এমনিই সে ৪ টি সিঙ্গারা খেয়ে ফেলেছে সে যদি আরও ২ টি সিঙ্গারা চাই ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে।
মধু মিয়া বলল, আর সিঙ্গারা নিবা?
মারুফ বলল, না না। এমনিই অনেক খেয়ে ফেলেছি আর খাব না।
মধু মিয়া বলল, তোমরা আজ রাতে আমার এইখানে খাবা সাথে আদিল কেও নিয়ে এসো।
সোফা থেকে উঠতে উঠতে মারুফ বলল, ঠিক আছে চাচা তাহলে এখন আমরা আসি।

সন্ধ্যার দিকে মারুফ দেখতে পেল হারুন পা ওপরে আর মাথা নিচু করে আছে। সে তার পাশে বসতে বসতে বলল, কি হল এমন করে আছিস কেন?
হারুন বলল, ভাবছি।
মারুফ বলল, কি ভাবছিস?
হারুন বলল, আত্মহত্যা করার সহজ উপায় কি? কি করে আত্মহত্যা করলে কষ্ট কম হবে এসব।
মারুফ বলল, কিছু পেলি?
হারুন পা নিচে নামিয়ে ফেলল। মারুফের পাশে বসতে বসতে বলল, হ্যাঁ পেয়েছি।
মারুফ বলল, কি?
হারুন বলল, তার আগে তুই বল কোন পদ্ধতি গ্রহন করলে মৃত্যুর যন্ত্রণা কম হয়?
মারুফ বলল, মৃত্যু মানেইতো যন্ত্রণা এর আবার কম বেশি কি!
হারুন বলল, না! আছে ভেবে বল।
মারুফ বলল, ঘুমের ওষুধ খেয়ে। তাহলে ঘুমের মধ্যে মরণ হবে বুঝতে পারবোনা কখন মরে গেলাম।
হারুন বলল, হয়েছে আবার পুরোপুরি হয়নি।
মারুফ বলল, মানে! বুঝিয়ে বল।
হারুন বলল, তাহলে শোন! তুই যদি ঘুমের ওষুধ বেশি খেয়ে ফেলিশ তাহলে তোর মৃত্যু হতেও পারে আবার না হতেও পারে। যদি মৃত্যু না হয় তাহলে তোর কোমাই চলে যাবার সম্ভবনা থাকবে। এতে করে তোর আর মৃত্যু হল না, বরং তুই সারা জীবনের জন্যে তোর পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে গেলি।
মারুফ বলল, তাহলে ছাঁদ থেকে লাফ দিয়ে।
হারুন বলল, এতেও একটু সমস্যা হতে পারে। মনে কর তুই ১০ তলা বিল্ডিং থেকে লাফ দিলি কিন্তু তোর মৃত্যু হল না। লোকজন তোকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গেল আর তুই বেঁচে গেলি। কিন্তু ১০ তলা থেকে লাফ দেয়ার কারণে তোর ১ টা পা আর কোমর ভেঙ্গে গেল। সারা জীবন তোকে বিছানাই শুয়ে শুয়ে কাটাতে হবে।
মারুফ বলল, পারলাম না। তুই বল কোন পদ্ধতি গ্রহন করলে মৃত্যুর যন্ত্রণা কম হয়।
হারুন বলল, ট্রেনের নিচে মাথা দিলে। যদি তুই ট্রেনের লাইনে শুয়ে থাকিস আর তোর ওপর দিয়ে ট্রেন চলে যায়, তাহলে তুই বুঝতেও পারবিনা কখন তোর মৃত্যু হল। তুই নিজে চাইলেও নিজেকে আর বাঁচাতে পারবিনা। তাই সহজ ও নিশ্চিত মরণ হল ট্রেনের নিচে মাথা দেয়া।
মারুফ বলল, হুম বুঝলাম। তা কবে আত্মহত্যা করবি কিছু ঠিক করলি?
হারুন বলল, ৭-৮ দিনের মধ্যে করতে পারি।
মারুফ বলল, তুই তো খুব স্বার্থপর।
হারুন বলল, কেন! আমি আবার কি করলাম?
মারুফ বলল, তুই তোর এত বুদ্ধি খরচ করে এত সুন্দর একটা আইডিয়া বের করলি। আর এই আইডিয়া যদি কারও সাথে শেয়ার না করিস, তাহলে তোর মত যারা আত্মহত্যা করতে চাই তাদের কি হবে? তারা সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে না পারলেতো লুলা টুলা হয়ে যাবে। ঠিক মত মরতেও পারবেনা।
হারুন বলল, তাইতো! আগে ভেবে দেখিনাই। কি করা যায় বলতো? মরেই যখন যাবো আমার মত কারও উপকার করে মরে যায়।
মারুফ বলল, তুই একটা বই লিখতে পারিস।
হারুন বলল, ঠিক বলেছিস আমি একটা বই লিখবো। আর বইয়ের নাম দিব আত্মহত্যা করার সহজ উপাই।
মারুফ বলল, তাহলে কি এখন মরা cancel?
হারুন বলল, হ্যাঁ। আগে বই লিখবো তার পরে আত্মহত্যা করব।
মারুফ বলল, এটা ভালো আইডিয়া। একদিক দিয়ে তুই সমাজ সেবা করতে পারছিস আবার অন্যদিক থেকে তুই ফেমাস হয়ে যাচ্ছিস। মরার পরেও তোকে সবাই চিনবে তোর নামধাম হবে।
হারুন বলল, হ্যাঁ তাতো হবেই।
মারুফ বলল, দেখিস মরার পরে আমাকে ভুলে যাস না আবার।
হারুন বলল, ফাজলামি করিস না। এখন আমার সামনে থেকে যা আমি এখন চিন্তা করবো।

রাত ৯ টা ৪০ মিনিটের দিকে মারুফ, হারুন ও আদিল গেল মধু মিয়ার বাড়ীতে খেতে। সুমাইয়া আর তার মা পরে খাবে। তাই মধু মিয়া, আদিল, হারুন আর মারুফ খেতে বসল। খাবার টেবিলে মারুফ দেখতে পেল বিরাট আয়োজন। খাসীর রেজালা, শোল মাছের মাথা দিয়ে মুগের ডাল, আলু ভাজি, ইলিশ মাছ ভাজা আর পোলাও। খেতে বসে মারুফের নিজের মনে হল সে রাক্ষস হয়ে গেছে।
খাসীর রেজালা নিতে নিতে মারুফ বলল, চাচা রেজালাটা অনেক ভাল হয়েছে। কে রান্না করেছে চাচী?
সুমাইয়ার পাশেই তার মা রেহানা ইসলাম দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বললেন, না রেজালাটা সুমাইয়া রান্না করেছে। আমি শুধু পোলাও রান্না করেছি বাকি সব কিছু সুমাইয়া রান্না করেছে।
মারুফ সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার রান্নার হাত খুবই ভাল। তোমার সাথে যার বিয়ে হবে সে খুব ভাগ্যবান হবে। সুমাইয়া কিছু বলল না শুধু মিসকি একটা হাসি দিল।
মধু মিয়া বললেন, ঠিকই বলেছ বাবা। আমার মেয়ের রান্নার হাত খুবই ভাল। সে সব থেকে ভাল রান্না করে গরুর ভুঁড়ি। তোমাকে একদিন গরুর ভুঁড়ি খাওয়াবো। গরুর ভুঁড়ির সাথে পরোটা হেব্বি লাগবে। তুমি খেলে তোমার মনে হবে তুমি কোন বেহেস্তি খানা খাচ্ছ। নেও আরেকটু রেজালা নাও।
আদিল বলল, চাচা শুধু মারুফকেই খাওয়াবেন আমরা কি পদ্মা নদীতে ভেসে এসেছি!
মধু মিয়া বললেন, আরে ছিঃ ছিঃ! কি বল তুমি। তোমরা কেন ভেসে আসবা, ভেসে আসবে তোমাদের দুশমন। এই সুমাইয়া আদিল আর বারুনকে রেজালা আর আরেক পিচ ইলিশ মাছ দে।
হারুন বলল, চাচা আপনি ভুল বললেন আমার নাম বারুন না হারুন।
মধু মিয়া বললেন, ও হ্যাঁ হারুন। কিছু মনে করনা। আমার আবার কারও নাম মনে থাকেনা। বলেই জোরে জোরে হাঁসতে লাগলেন।

মারুফ আর সুমাইয়া সুমাইয়ার ঘরের বারান্দায় বসে আছে। বারান্দায় দুটি বেতের চেয়ার। আজ আকাশে অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে। চারদিক আলোয় পরিপূর্ণ। দেখে মনে হচ্ছে চাঁদটি তার সব আলো ছড়িয়ে দিয়েছে এ পৃথিবীর জন্যে। বাড়ীর ভেতর মধু মিয়া মমতাজের গানের ওপরে একটা বক্তব্য দিচ্ছেন তা এখান থেকে শোনা যাচ্ছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মারুফের তার নিজের মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। মারুফের মা আয়েশা আক্তার ঠিক এমনই একটি পূর্ণিমার রাতে মারা গেছেন। সেই দিনও অনেক চাঁদের আলো ছিল। তার বেশি কিছু মনে নেই তার পরেও ভাসা ভাসা কিছু তার মনে আছে। সে রাতের বেলায় ঘুমিয়ে আছে তার বাবা এসে তাকে ঘুম থেকে জাগালো।
মারুফ বলল, কি হয়েছে বাবা?
আফজাল সাহেব বললেন, তোর মার অবস্থা খুব ভাল না। তোকে দেখতে চাচ্ছে চল।
মারুফ তার বাবার সাথে মার ঘরে গিয়ে দেখল তার মা বিছানায় শুয়ে আছে। সে মার পাশে বসতে বসতে বলল, মা তোমার খুব খারাপ লাগছে?
আয়েশা আক্তার বললেন, একটু লাগছে। বাবু আমার হাতে আর বেশি সময় নাই। আমি মরে গেলে বেশি মন খারাপ করবি না। সব সময় তোর বাবার কথা শুনবি আর নিজের খেয়াল রাখবি।
মারুফের এই টুকুই মনে পরে আর কিছু তার মনে পরে না। ঐ রাতেই তার মা মারা যায়। সে একটুও কান্না করে নিই। সবাই বলেছে এ কেমন ছেলে যে তার মার মৃত্যুতে কাঁদেনা। তার ইচ্ছা হয়েছিল একবার বলে, যে তার মা তাকে মন খারাপ করতে মানা করেছে তাই সে কান্না করছে না। কিন্তু পরে আর এ কথা কাউকে বলা হয়নি।
সুমাইয়া বলল, কি হল কি ভাবছো? এমন চুপ করে আছো কেন?
মারুফ চমকিয়ে উঠে বলল, কই নাতো। আসলে চাঁদের আলো দেখছিলাম তাই চুপ করে ছিলাম। আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর তাইনা?
সুমাইয়া বলল, হুম সত্ত্যি চাঁদটা আজকে অনেক সুন্দর লাগছে। তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব কিছু মনে করবে নাতো?
সুমাইয়া এমন ভাবে কথা বলছে যেন কিছুদিন আগে কিছুই হয়নি। সে মারুফকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল আর মারুফ তা গ্রহন করেনি এনিয়ে তার মনের মাঝে কোন প্রকার সংশয় নেই। যেন কিছুই হয়নি।
মারুফ বলল, কিছু মনে করব কিনা তাতো কথাটি শোনার পরেই বলতে পারব। আচ্ছা বল কি কথা তোমার আমি শুনছি।
সুমাইয়া বলল, তোমার কোন গার্লফ্রেন্ড আছে?
মারুফ একটু চুপ থেকে বলল, না নেই। তবে...
সুমাইয়া বলল, তবে কি?
মারুফ বলল, আমার একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল, কিন্তু সে চলে যাবার পর আর কারও সাথে প্রেম করিনি।
সুমাইয়া বলল, কোথায় চলে গেছে?
মারুফ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আসলে চলে গেছে মানে সে মারা গেছে। আত্মহত্যা করেছিল।
সুমাইয়া অবাক হয়ে বলল, আত্মহত্যা! কি হয়েছিল আমাকে সব খুলে বল।
মারুফ কিছুক্ষন চাঁদের দিকে তাকিয়ে থেকে বলতে শুরু করল। আমি আর মিতু এক সাথেই পড়তাম। আমি আর সে ক্লাস থ্রী থেকে টেন পর্যন্ত এক সাথে পড়েছিলাম। ক্লাস নাইনের প্রথম দিকে আমাদের সম্পর্ক হয়। নতুন প্রেমে পরেছি তাছাড়া কিশোর বয়স তাই দুজনে একটু বেশি ইমশোনাল ছিলাম। মাঝে মাঝেই আমরা স্কুল ফাকি দিয়ে বাইরে ঘুরতে যেতাম। সব কিছু ঠিকই চলছিল, কিন্তু একদিন মিতুর বাসার সবাই আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে যায়। এরপর থেকে মিতুর ওপরে তার বাড়ীর সবাই অত্যাচার করা শুরু করে। ওকে বলা হয় আমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেয়ার জন্য। কিন্তু সে রাজি হয়না, তাই ওর ভাই ওকে একদিন খুব মারে। আর মিতু ঐ রাতেই আত্মহত্যা করে।
মারুফ এমন ভাবে এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে যেন আকাশে মিতুকে দেখা যাচ্ছে।
সুমাইয়া বলল, মিতুর সাথে তোমার কবে শেষ কথা হয়েছে?
মারুফ বলল, আত্মহত্যা করার কিছুক্ষন আগে। রাত ২ টা দিকে সে আমাকে ফোন করেছিল। মিতুর কণ্ঠ খুবই শীতল ছিল। সে আমাকে বলল, তোমাকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। তুমি কি আমাকে শেষ বারের মত একটা কিস করবে!
আমি তার কোন কথার আগা মাথা বুঝতে পারছিলাম না। তাই তার কথা মত তাকে একটা কিস করলাম। কিস করার পরে মিতু আমাকে বলল ভাল থেকো আই লাভ ইউ। উম্মা বলে আমাকে একটা কিস দিয়ে ফোন কেটে দিল। তারপর আমি আর তার সাথে কথা বলতে পারিনি। সে ফোন বন্ধ করে দিয়েছিল।
সুমাইয়া বলল, তুমি কি করে জানলে মিতুকে তার ভাই মারধর করেছিল?
মারুফ বলল, আমি ওর লাশ দেখতে গিয়েছিলাম। মিতুর ভাই কাঁদছিল আর বলছিল সে যদি না মারত তাহলে মিতু আজকে বেঁচে থাকত।
সুমাইয়া বলল, বাদ দাও ওসব কথা। তোমার সাথে মিতুর কোন মজার ঘটনা বল।
মারুফ বলল, একদিন রাতের বেলাই কারেন্ট চলে যাবার কারণে আমি, বাবা-মা আর আমার ছোট বোন জ্যোতি ছাদে বসে ছিলাম। এমন সময় মিতু আমাকে ফোন দিয়েছে। আমি বাবা-মার সামনে কি কথা বলব বুঝতে পারলাম না। ইচ্ছা না থাকার পরেও ফোন ধরলাম।
আমি, হ্যালো আজিজ ভাই ভাল আছেন?
মিতু, এই কাকে কি বলছ! আমি তোমার জানু।
আমি, হ্যাঁ ভাই আমি ভাল আছি। আর বইলেন না ভাই, আমাদের এখানে কারেন্ট নাই তাই বাবা-মার সাথে ছাদে বসে আছি।
মিতু, এই কি হল তোমার? তোমার মাথা ঠিক আছে তো? নাকি গরমে খারাপ হয়ে গেল?
আমি, আরে কি যে বলেন না আজিজ ভাই। আমি ভালই আছি শুধু গরমের কারণে একটু কেমন জানি লাগছে। তাছাড়া সব কিছু ঠিক আছে।
মিতু কাঁদতে কাঁদতে বলল, এই তোমার কি হইছে এমন করছ কেন। ও আল্লাহ আমার জান পাখিটার কি হইল।
আমি, ঠিক আছে আজিজ ভাই পরে আবার কথা হবে এখন রাখি। বলেই আমি রেখে দিলাম। আমি তো বুঝতে পারছি মিতু একটু ঘোরের মধ্যে আছে। তাই আমি তাকে ছাদ থেকে নেমে এসে সব কিছু খুলে বললাম। সে প্রথমে মনে করেছিল আমি পাগল হয়ে গেছি। বলেই মারুফ জোরে জোরে হাঁসতে লাগল।











মারুফ ধানমন্দি ৮ নম্বর লেকের পাড়ে বসে আছে। সে তার ঘড়িতে দেখল ১১ টা ৩ বাজে। সাধারণত সে কখনো এই সময়ে বাসা থেকে বের হয় না, বিশেষ করে পরিক্ষার পর থেকে। পরিক্ষার পর তার হাতে তেমন কোন কাজ নেই। তাই সারাদিন সে বাসায় ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু আজকে কেন জানি তার ঘুম ভেংগে গেল। বাড়ীতে ভালো লাগলো না তাই এখানে এসে বসে আছে। সে এখানে প্রায় ২০ মিনিট ধরে বসে আছে। মারুফ আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সব জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে। তাদের মধ্যে এক মেয়ে স্কুলের ড্রেস পরে আছে। আর সে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ভালই ঢলাঢলি করছে, যেন আশেপাশে কেউ নেই। মারুফ পেছনের দিক থেকে একটা বাচ্চা মেয়ের কান্নার শব্দ শুনতে পেল। পেছনে তাকিয়ে দেখল একটা ফুল ওয়ালী বাচ্চা মেয়েকে মারছে। বাচ্চা মেয়েটির বয়স কত হবে ৭-৮ বছর। ফুল ওয়ালী মেয়েটি বাচ্চা মেয়েটিকে মারছে আর বলছে, যদি এই মালা গুলান সব বিক্রি না করতে পারিস তাহলে তোর আজকে ভাত নাই। যা সব গুলান বিক্রি করে আই। বাচ্চা মেয়েটি চোখ মুছতে মুছতে ঐ ফুল ওয়ালীর হাত থেকে মালা গুলো নিলো। মালা গুলো হাতে নিয়ে একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে ঐ স্কুল পড়ুয়া মেয়ে ও তার বয়ফ্রেন্ডের কাছে গেল।
বাচ্চা মেয়েটি বলল, আপা মালা নিবেন?
মেয়েটি বলল, না নিবনা।
বাচ্চা মেয়েটি বলল, নেননা আপা খুব ভালো মালা বেলি ফুলের।
মেয়েটি বলল, যা ভাগ এখান থেকে না হলে থাপ্পড় দিব।
থাপ্পড়ের কথা শুনে মেয়েটির কোন ভাবান্তর হলনা। সে এবার ছেলেটিকে বলল, ভাইয়া নেননা একটা মালা। মালা নিয়া আপারে দেন।
ছেলেটি মেয়েটিকে বলল, রিংকি একটা মালা নিই?
রিংকি নামের মেয়েটি বলল, না নিতে হবেনা। বলেই বাচ্চা মেয়েটির গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। বাচ্চা মেয়েটি গালে হাত বুলাতে বুলাতে আরেক যায়গায় গেল। কিন্তু সেখানেও কোন মালা বিক্রি করতে পারলো না। মারুফ মেয়েটিকে ইশারায় ডাক দিলে মেয়েটি মারুফের কাছে আসে। মারুফ হাত দিয়ে মালা দেখতে দেখতে বলল, তোর নাম কি?
মেয়েটি বলল, রেশমা।
মারুফ বলল, মালা কত করে রেশমা?
রেশমা একটা হাসি দিয়ে বলল, ৬ টাকা করে। তবে সব গুলা একসাথে নিলে ৫ টাকা করে দাম।
মারুফ বলল, তোর কাছে কয়টা মালা আছে?
রেশমা গুনে বলল, ১০ টা।
মারুফ বলল, আমাকে ১০ টা মালাই দে।
মেয়েটি আবার একটা হাসি দিয়ে সব গুলো মালা মারুফের হাতে তুলে দিল। মারুফ তার মানি ব্যাগ থেকে ৫০ টাকার একটা নোট বের করে মেয়েটির হাতে দিল। রেশমা হাতে টাকা পেয়ে দিল একটা দৌড়। মারুফ তেমন একটা অবাক হল না। সে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। রেশমা দূর থেকে মারুফের দিকে তাকিয়ে আছে। মারুফ তাকে একটা ভেংচি দিল আর মারুফের দেখাদেখি রেশমাও তাকে একটা ভেংচি দিল।
মারুফ দেখতে পেল একটা হ্যাংলা মত ছেলে হেঁটে যাচ্ছে। পেছন থেকে সুমনের মত মনে হচ্ছে। মারুফ উঠে ছেলেটির কাছে গিয়ে দেখলো সুমনই। সে সুমনের মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার দেখলো, সুমন অনেক শুকিয়ে গেছে। আর তার চোখের নিচে কালিও পড়েছে।
মারুফ বলল, একি হয়েছে তোর? কোথায় ছিলি এতদিন?
সুমন মারুফকে দেখে মনে হল খুবই খুশি হয়েছে। যেন তার অনেক দামি কিছু হারিয়ে আবার খুজে পেয়েছে।
সুমন মারুফকে জড়িয়ে ধরে বলল, দোস্ত আমি শেষ!
মারুফ বলল, কেন কি হয়েছে?
সুমন বলল, বলতে পারবো না আমার ভয় করছে। ও আমাকে ছাড়বে না আমাকে মেরে ফেলবে।
মারুফ বলল, কে তোকে ছাড়বে না? কে মেরে ফেলবে!
সুমন বলল, আছে বলা যাবে না।
মারুফ সুমনের হাত ধরে টেনে এনে আবার আগের জায়গায় এসে বসে বলল, কি হয়েছে ঠিক করে বল।
সুমন বলল, কিছুদিন আগে দেশের বাড়ীতে গিয়েছিলাম। তারপর.........
মারুফ বলল, তারপর কি?
সুমন বলল, একদিন রাতের বেলায় বাড়ীতে ফিরছি। হঠাৎ শুনতে পেলাম কে যেন পেছন থেকে কাশি দিল। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই আবার হাঁটা শুরু করলাম। যখন আমাদের বাড়ীর সামনের মেহগনি গাছের নিচে আসলাম, তখন মনে হল আমার মাথার ওপরে গোটা গাছ ভেংগে পরবে। ওপর থেকে কি যেন আমার পায়ের কাছে পড়ল। পকেট থেকে মোবাইল বের করে আলো ফেলে দেখলাম বড় একটা ঢিল। তাড়াতাড়ি বাড়ীতে চলে গেলাম। ঐ রাতে আমার খুব জ্বর হল আর অনেক খারাপ একটা স্বপ্ন দেখলাম। সুমন থেমে গেল, যেন সে স্বপ্নে যা দেখেছে তা এখন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে।
মারুফ বলল, কি দেখলি স্বপ্নে?
সুমন একটা ঢোক গিলে আবার বলা শুরু করল। স্বপ্নে দেখলাম আমি একটা ঘরে বসে আছি। ঘরের কোন জানালা বা দরজা নেই। দেখলাম একটা বিশাল লম্বা কালো লোক ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছে মারা গেছে। কোন সাড়া শব্দ নেই, এমনকি সে নিঃশ্বাসও নিচ্ছে না। লোকটির হাতের থাবা গুলো অনেক বড় বড়। হঠাৎ লোকটির ঘুম ভেংগে গেল আর উঠে বসে আমার দিকে তাকালো। একটু পরে আমার কাছে এগিয়ে আসলো আর আমাকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল। আমি ঐ লোকটির হার্ডের কম্পন অনুভব করতে পারছিলাম। এভাবে কিছুক্ষন চলার পর আমার ঘুম ভেংগে গেল। রাতে আর ঘুম আসলো না। এরপর থেকে আমি আর ঘুমাতে পারিনা। চোখ বুঝলেই ঐ লোকের চেহারা আমার সামনে চলে আসে।
মারুফ বলল, কোন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিস?
সুমন বলল, না তবে কবিরাজের কাছে গিয়েছি।
মারুফ বলল, কি বলেছে।
সুমন বলল, বলেছে আমাকে জীনে ধরেছে আর ঐ কালো লোকটি হল সেই জীন। এই জীনই ঐ রাতে আমাকে ঢিল মেরে ছিল। দোস্ত আমি আর বাঁচবো না। আমার মনে হয় ঐ জীন আমাকে না মারলেও, আমি না ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই মরে যাব।
মারুফ বলল, কিছু হবেনা তোর। তুই এখন কিছুদিন আমার বাড়ীতে থাক। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
সুমন বলল, ঠিক আছে চল বাসায় যায়।
মারুফ বলল, হ্যাঁ যাবো কিন্তু তার আগে একটা কাজ সেরে নিই চল আমার সাথে। মারুফ আর সুমন ঐ স্কুল পড়ুয়া মেয়ে ও তার বয়ফ্রেন্ডের কাছে আসলো।
মারুফ বলল, রিংকি কেমন আছো?
রিংকি নামের মেয়েটি চমকে মারুফের দিকে তাকালো। মনে করার চেষ্টা করল ছেলেটি কে। কিন্তু তার মনে পড়ল না। সে বলল, ভালো। আমি কি আপনাকে চিনি?
মারুফ খুবই অবাক হবার ভান করে বলল, ও আল্লাহ কি বল! কিছুদিন আগেই না তোমাদের বাড়ীতে গেলাম। তোমার বড় বোনের বিয়েতে তোমার সাথে কত গল্প করলাম। আর তুমি এখন আমাকে চিনতে পারছ না। এটা কে তোমার বয়ফ্রেন্ড। মারুফ ছেলেটির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল আমার নাম মারুফ আর আপনি?
ছেলেটি বলল, আমার নাম রায়হান।
মারুফ বলল, রিংকি এভাবে স্কুল ফাকি দিয়ে প্রেম করলে হবে। সামনে তোমার পরিক্ষা এখন এভাবে আর প্রেম করে বেড়াবে না। নাহলে রেজাল্ট খারাপ করবে। কি হল এখনও চিনতে পারনিই আমাকে। যায় হোক আমি চলে যাচ্ছি আর তুমি ভাবতে থাক আমি কে। আর হ্যাঁ তোমার বাবা-মাকে আমার সালাম দিও। ব্রাদার থাকেন তাহলে কি আর করব বলেন। রিংকি যখন চিনতে পারল না, তখন আর আপনাদের সময় নষ্ট করছিনা। প্রেম করেন ভালো করে। বলেই মারুফ ওখান থেকে হাঁটা শুরু করল।
কিছুদুর এসে সুমন মারুফকে বলল, তুই ওদেরকে চিনিস?
মারুফ বলল, না।
সুমন বলল, তাহলে ঐ মেয়ের নাম জানলি কি করে?
মারুফ বলল, একটু আগে ঐ ছেলেকে বলতে শুনেছি।
সুমন বলল, আর কি করে বললি ওর বোনের বিয়েতে তোর সাথে দেখা?
মারুফ বলল, আরে পাগলা এমনি বলেছি।
সুমন বলল, কিন্তু কেন করলি এমন?
মারুফ বলল, ওদের একটু ভোড়কিয়ে দেবার জন্যে।
সুমন বলল, তুই আর চেঞ্জ হলিনা। আগের মতই থেকে গেলি।






নিশি আজকে অনেক সুন্দর করে সেজেছে। নীল শাড়ী পরেছে সাথে ম্যেচিং করে কাঁচের নীল চুড়ি ও টিপও পরেছে। চোখে কাজল দিয়েছে, খোঁপায় বেলি ফুলের মালা পরেছে। তাকে আজ দেখতে অনেক অনেক সুন্দর লাগছে। শুধু সুন্দর বললে ভুল হবে এক কথায় তাকে পরীর মত লাগছে। সে মারুফের জন্যে সংসদ ভবনের সামনে বসে আছে প্রায় ২৫ মিনিটের মত। মারুফের আসার কথা ছিল বিকেল ৫ টার সময়। কিন্তু এখন সাড়ে ৫ টা মত বাজতে যাচ্ছে কিন্তু তার এখনও আসার কোন নাম গন্ধ নেই। নিশি ঘড়ি দেখল ৫ টা ৩৫ বাজে। সে ঠিক করল আর ১০ মিনিটের মধ্যে যদি মারুফ না আসে তাহলে সে চলে যাবে। নিশি আশেপাশে তাকিয়ে দেখল মোটামুটি সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে। এক দল ছেলেরা গোল হয়ে বসে গান করছে। নিশি দেখল অনেকক্ষণ ধরে একটা ছেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে নিজেকে একটু অপস্তুত মনে করল। সে ভাবল না এভাবে আর বসে থাকা যায়না। সে উঠতে যাবে ঠিক ঐ সময়ই মারুফ সেখানে চলে আসল।
মারুফ বলল, সরি সরি সরি সরি। আসতে একটু দেরি করে ফেললাম। আসলে কোন রিকশা পাচ্ছিলাম না। তাছাড়া আপনার জন্যে এই গোলাপ খুজতে গিয়েও একটু দেরি হয়ে গেল।
নিশি মারুফের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল এক গোছা সাদা গোলাপ। সে অভিমানী কণ্ঠে বলল, একটু দেরিনা পুরো ৩৭ মিনিট দেরি করেছেন।
মারুফ নিশির হাতে গোলাপ গুলো দিতে দিতে বলল, সরি আর কখনো এমন করবনা। এখন আমাকে কি ক্ষমা করা যায়?
নিশি মিসকি একটা হাশি দিয়ে বলল, ঠিক আছে এবারের মত আপনাকে ক্ষমা করা হল। কিন্তু এরপর যদি আপনি আবার এমন করেন, তাহলে আপনাকে শাস্তি পেতে হবে।
মারুফ বলল, ঠিক আছে। এরপর আমি যদি এমন করি তবে আপনার কাছে আসার আগে একটা লাঠি নিয়ে আসব। আপনি ঐ লাঠি দিয়ে আমাকে যত খুশি ততো বারি দিয়েন।
নিশি বলল, ঠিক আছে। তবে কোথায় বারী দিব সামনে না পেছনে। নিশি হাঁসতে শুরু করল আর তার সাথে মারুফও হেঁসে ফেলল।
মারুফ বসতে বসতে বলল, আজ আপনাকে সুন্দর লাগছে।
নিশি বলল, একটু সুন্দর নাকি অনেক সুন্দর?
মারুফ বলল, অনেক অনেক সুন্দর লাগছে। সত্যি কথা বলতে কি আমি কখনো পরী দেখিনি। শুধু শুনেছি পরীরা দেখতে অনেক সুন্দর হয়। আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি আপনাকে আজ পরীর থেকেও অনেক সুন্দর লাগছে। আপনার আমি নাম দিলাম নীল পরী।
নিশি বলল, কি যে বলেন না। আমি আবার পরীর মত দেখতে!
মারুফ বলল, বিশ্বাস করেন আমি সত্যি বলছি।
নিশি বলল, আচ্ছা ঠিক আছে বিশ্বাস করলাম।
মারুফ বলল, আমরা কি একে অপরকে তুমি করে বলতে পারিনা?
নিশি মিসকি হাসি দিয়ে বলল, হ্যাঁ পারি।
মামা ঝালমুড়ি খাইবেন?
মারুফ তাকিয়ে দেখল একজন মধ্যবয়সী ঝালমুড়ি ওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে। সে নিশিকে জিজ্ঞেস করল ঝালমুড়ি খাবা?
নিশি বলল, হ্যাঁ খাওয়া যায়।
মারুফ বলল, এই মামা দুইটা মুড়ি দাও। আর ঝাল একটু কম দিবা।
ঝালমুড়ি ওয়ালা মুড়ি মাখাতে মাখতে বলল, মামা আমাকে চিনতে পারছেন?
মারুফ বলল, না!
ঝালমুড়ি ওয়ালা বলল, ঐ যে আপনি আমার কাছে কয়দিন আগে ৭০ টাকার ঝালমুড়ি খাইলেন।
মারুফ বলল, হ্যাঁ চিনতে পেরেছি। কিন্তু তুমি এখানে কেন? তোমার তো অন্য কোথাও থাকার কথা।
ঝালমুড়ি ওয়ালা নিশির হাতে মুড়ি দিতে দিতে বলল, মামা ঐখানে বেচাকেনা নাই। তাই এখানে চলে আসছি।
মারুফ বলল, তো এখানে কেমন বেচাকেনা চলছে?
ঝালমুড়ি ওয়ালা বলল, আপনাগো দোয়ায় ভালই চলতাছে। ঐ খানের থাইকা এইখানে বেশি প্রেমিক-প্রেমিকা। তাই বিক্রিও অনেক বেশি হচ্ছে এখানে।
মারুফ বলল, এক কাজ করতে পার তাহলে আরও বেশি বিক্রি হবে।
ঝালমুড়ি ওয়ালা বলল, কি করতে হইব মামা?
মারুফ বলল, এখানে না থেকে তুমি কোন পার্কে থাকবা। যেখানে বেশি প্রেমিক-প্রেমিকা থাকবে তার আশেপাশে। যখন কোন প্রেমিক-প্রেমিকা ঢলাঢলি শুরু করবে তখন গিয়ে বলবা, আপা মুড়ি খাইবেন? যতক্ষণ তারা মুড়ি না নিবে তুমি ওখান থেকে নড়বা না। তাহলে দেখবা তোমার বেশি মুড়ি বিক্রি হবে।
ঝালমুড়ি ওয়ালার চোখ চক চক করছে। সে বলল, ঠিক আছে মামা আমি কাইল থাইকা কোন পার্কে মুড়ি বিক্রি করা শুরু করব।
মারুফ ২০ টাকার একটা নোট দিতে গেলে ঝালমুড়ি ওয়ালা গাছ থেকে পরার মত করল। সে বলল, ও আল্লাহ করেন কি! আপনি আমারে এত সুন্দর একটা আইডিয়া দিলেন। আর আমি আপনার কাছ থাইকা টাকা নিমু! না এ হইতে পারে না। আমি যদি আপনার কাছ থাইকা টাকা নিই তাহলে আমার মাথায় ঠাডা পরবো।
মারুফ বলল, কিন্তু এটা তোমার ব্যবসা। তুমি যদি টাকা না নাও, তাহলে কি করে হয়। তোমাকে টাকা নিতে হবেই।
ঝালমুড়ি ওয়ালা বলল, ঠিক আছে মামা। কিন্তু এরপরে কোনদিন আপনারে আর আপারে আমার কাছে ফ্রি মুড়ি খাইতে হবে।
মারুফ বলল, ঠিক আছে।
ঝালমুড়ি ওয়ালা বলল, মামা থাকেন তাইলে আমি ঐ দিকে গেলাম।
ঝালমুড়ি ওয়ালা চলে যাবার পর নিশি বলল, তুমি এক সাথে ৭০ টাকার মুড়ি খেয়েছ?
মারুফ একটু লজ্জা পাওয়ার মত করে বলল, হ্যাঁ। আসলে আমার ঝালমুড়ি খুবই ভাল লাগে। তাই ঐ দিন খেতে খেতে ৭০ টাকার মুড়ি খেয়ে ফেলেছি।
নিশি তার ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে মারুফের হাতে দিয়ে বলল, কাল আমি প্রথম বেতন পেয়েছি। তাই তোমার জন্যে একটা ছোট উপহার।
মারুফ বলল, এসবের কোন দরকার ছিলনা।
নিশি বলল, দরকার ছিল। তোমাকে আরেকটা কথা বলা হয়নি। আমার একটা চাকরি হয়েছে।
মারুফ বলল, কোথায়?
নিশি বলল, আমি যে একটা মেয়েকে পড়াতাম তার বাবার অফিসে। ঐ ভদ্র লোকই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
মারুফ বলল, Congratulations.
নিশি বলল, ধন্যবাদ।
মারুফ বলল, নিশি! আমার খুদা লেগেছে। চল কোথাও খেতে যায়।
নিশি বলল, চল যাওয়া যাক।
মারুফ ও নিশি একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বসে আছে। নিশি শুধু মেনু কার্ডের পাতা উল্টে যাচ্ছে কিন্তু কোনটা অর্ডার দেয়া যায় বুঝতে পারছেনা।
মারুফ বলল, নিশি কোন সমস্যা?
নিশি বলল, না না কোন সমস্যা না।
মারুফ বলল, তাহলে এভাবে পাতা উল্টে যাচ্ছ কেন? কোন অর্ডার দাও।
নিশি বলল, আসলে আমি এগুলো খেতে পারিনা। আমি শুধু বাঙ্গালী খাবার খাই।
মারুফ বলল, এটা কোন সমস্যা না। অনেকেই চাইনিজ খাবার খেতে পারেনা। চল অন্য কোথাও যাওয়া যাক। কোথায় যেতে চাও? তার আগে বল কি খাবা তুমি?
নিশি বলল, বিরিয়ানি।
মারুফ বলল, চল পুরান ঢাকায় যায়। ঐখানে অনেক ভাল বিরিয়ানি পাওয়া যায়।
নিশি বিরিয়ানি খাচ্ছে আর মারুফ রুটির সাথে কি যেন একটা জিনিস খাচ্ছে।
নিশি বলল, এটা কি খাচ্ছ তুমি?
মারুফ বলল, পরে বলব আগে তুমি খাওয়া শেষ কর।
নিশি বলল, এখন বললে কি হবে?
মারুফ বলল, এখন বললে তুমি তোমার বাকি বিরিয়ানি টুকু না খেতেও পার। তাই পরে বলব এখন চুপ করে খাও।
বিরিয়ানি শেষ করে লাচ্চি খেতে খেতে আবার নিশি বলল, কি খাচ্ছিলা তুমি ওটা?
মারুফ বলল, বিচি।
নিশি বলল, বিচি! এটা আবার এমন কি যে আমি আমার খাবার শেষ করতে পারতাম না।
মারুফ বলল, আসলে ওটা গরুর বিচি ছিল।
নিশি একটা বিষম খেয়ে বলল, ইয়াক! গরুর বিচি! এটা আবার মানুষ খায় নাকি? ছিঃ ছিঃ।
মারুফ বলল, ছিঃ ছিঃ করছো কেন। গরুর বিচি খেতেতো খারাপ না। একটু বেশি করে পেঁয়াজ দিয়ে ভাজলেই হল।
নিশি বলল, থাক আর কিছু বলতে হবেনা তোমাকে। চল বাড়ীতে যাওয়া যাক।
মারুফ আর এ বিষয়ে কিছু বলল না। বিল দিয়ে তারা হোটেল থেকে বের হয়ে এলো।
মারুফ বলল, চল একটু হাঁটি পরে রিকশা নিলেই হবে।
নিশি বলল, হুম চল।
মারুফ বলল, পান খাবা?
নিশি বলল, হ্যাঁ খাওয়া যায়। মিষ্টি পান।
মারুফ বলল, তুমি এখানে দাড়াও আমি পান কিনে নিয়ে আসি।
মারুফ পান কিনে নিয়ে আসার সময় দেখতে পেল নিশি কার সাথে যেন কথা বলছে। কাছে এসে দেখতে পেল ঐ পালোয়ান টাইপের পুলিশটি নিশির সাথে কথা বলছে। যে কিছুদিন আগে মারুফের কাছ থেকে সব টাকা পয়শা নিয়েগেছিল।
নিশি বলল, মারুফ ইনি হলেন কনক ভাইয়া। আমি আগে যেখানে কাজ করতাম তিনিও সেখানে কাজ করতেন।
কনক নামের লোকটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, হ্যালো ব্রাদার।
মারুফ লোকটির সাথে হাত মিলিয়ে বলল, হ্যালো।
কনক বলল, ব্রাদার ঐ দিনের ঘটনার জন্যে আমি সরি। আসলে আমার কাজ হল আপনাদের মত ব্রাদারদের কাছ থেকে টাকা ফাড়া।
মারুফ বলল, এর মানে আপনি পুলিশ না।
কনক একটু হেঁসে বলল, আরে কি যে বলেন। আমার চোদ্দ গুষ্টির মধ্যে কেউ পুলিশ নেই।
নিশি বলল, ভাইয়া আসি তাহলে পরে আবার দেখা হবে।
মারুফ ও নিশি ওখান থেকে চলে আসল। কিছুদূর আসার পর তারা রিকশা নিল। রিকশায় ওঠার পরে কেউ কোন কথা বলছে না। রিকশা ওয়ালা একটা গান ধরল...
দিন গেল তোমারো পথ চাহিয়া
মন কান্দে সখিগো কার লাগিয়া
মারুফ বলল, মামা আপনার গানের গলা ভাল।
রিকশা ওয়ালা বলল, আর গানের গলা! ঢাকা শহরে আইছিলাম বড় শিল্পী হওয়ার লাইগা। কিন্তু ভাগ্য কি দেখেন হইলাম রিকশা ওয়ালা। রিকশা ওয়ালা আবার গান ধরল...
ও শখিনা গেছস কিনা ভুইলা আমারে
আমি অহন রিকশা চালাই ঢাহা শহরে
নিশি বলল, আমার খুব আঁচার খেতে ইচ্ছা করছে।
মারুফ কিছু একটা ভেবে বলল, চল তোমাকে আঁচার খাওয়ায়।
নিশি বলল, না না লাগবেনা। আমি এমনি বললাম।
মারুফ বলল, আরে লাগবেনা মানে অবশ্যয় লাগবে। চল কিছু হবেনা। ঝিগাতলার একটা রেস্টুরেন্টে অনেক ভাল আঁচার পাওয়া যায়। এই মামা ঝিগাতলা চলেন তো।
রিকশা ঝিগাতলার একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে দাঁড়ালো। রেস্টুরেন্টের নাম কড়োয় গোস্ত।
মারুফ রিকশা ওয়ালাকে তাদের সাথে যেতে বললে প্রথমে রাজি হচ্ছিলনা। কিন্তু পরে রাজি হল। সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো তার রিকশা নিয়ে। মারুফ রেস্টুরেন্টের দারোয়ানকে ৫০ টাকার একটা নোট দিয়ে রিকশা পাহারা দেবার দায়িত্ব দিল।
নিশি বলল, উম্মম। আঁচারটা অনেক সুন্দর।
রিকশা ওয়ালা বলল, মামা আমি আমার জিন্দেগিতে এত ভাল আঁচার খাইনি। আপনার মামি কি জানি একটা বানায় ঐডারে আঁচার না বইলা গু বলান ভাল। থুক্কু মামা মুখ খারাপ করে ফেলছি কিছু মনে কইরেন না।
মারুফ বলল, ঠিক আছে কোন সমস্যা নাই। নিশি আরেকটু দিতে বলি? মারুফ নিশির জবাবের আশায় না থেকে ওয়েটারকে আরেকটি আঁচার দিতে বলল। আঁচার খাবার পরে আবার তারা রিকশায় উঠল। কিছুদুর রিকশা চলার পরে রিকশার চাকা ফেটে গেল। মারুফ রিকশা ওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে নতুন রিকশা খোজার চেষ্টা করল। কিন্তু কোন রিকশা রায়ের বাজারের দিকে গেলনা। শেষ মেষ কোন উপায় না পেয়ে মারুফ আর নিশি হাঁটা শুরু করল। নিশির বাসা খুব বেশি দূরে হবার কথা নয়। মারুফ ও নিশি খুব কাছাকাছি হাঁটছে। মাঝে মাঝে নিশির গাঁয়ে মারুফের গাঁ ঠেকে যাচ্ছে। কেউ কোন কথা বলছে না। তারা রায়ের বাজার খেলার মাঠের ওখানে একটি বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ালো।
নিশি বলল, তাহলে আমি যায়।
মারুফ বলল, ঠিক আছে।
নিশি চলে যাচ্ছে আর মারুফ দাঁড়িয়ে আছে। নিশি গেঁটের দরজা খোলার জন্যে হাত রাখল আর তখনই মারুফ বলল, নীল পরী!
নিশি ফিরে তাকিয়ে আবার মারুফের কাছে আসল। নিশি বলল, কি?
মারুফ বলল, নীল পরী আমিনা তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। তুমি কি তোমার সাথে আমাকে সারাজীবন থাকতে দিবে! আমি চাই আমার সারাজীবন তোমার সাথে কাটাতে। এই কি হল তুমি আবার কাদছো কেন?
নিশি ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, আমি কি কোন স্বপ্ন দেখছি! আমার বিশ্বাসই হচ্ছেনা আমার মত একটা মেয়ের এত ভাল ভাগ্য হতে পারে। এই তুমি কি আমাকে সত্যি ভালবাস?
মারুফ বলল, এই আমার নীল পরী কান্না বন্ধ কর। না হলে কিন্তু আমিও কেদে দিব। চোখ মোছ।
নিশি চোখ মুছতে মুছতে বলল, তুমি এখন থেকে আমাকে সব সময় নীল পরী বলে ডাকবে। না হলে আমি তোমার সাথে কথা বলব না।
মারুফ বলল, এর মানে কি তুমি আমাকে তোমার সাথে সারাজীবন থাকার অনুমতি দিলে।
নিশি একটু আহ্লাদী কণ্ঠে বলল, যাহ! এইটুকুও বোঝোনা।
মারুফ বলল, না বুঝতে পারছিনা।
নিশি বলল, আমি বলতে পারবনা আমার লজ্জা লাগছে।
মারুফ বলল, ঠিক আছে আমার নীল পরীকে কিছু বলতে হবেনা আমি বুঝতে পারছি। নীল পরী এখন বাড়ীতে যাও, তোমার মা তোমার জন্যে অপেক্ষা করছেন।
যাবার আগে নিশি মারুফের গালে একটা চুমা দিয়ে দৌড়ে চলে গেল। মারুফ মিসকি একটা হাসি দিয়ে নিজের বাড়ীর দিকে রওনা হল।





সুমন, হারুন ও মারুফ বসে আছে পীর ইয়াদুল্লা আলি খানবাহাদুর চিশতীর দরবারে। সবাই তাকে তাড়ি বাবা বলে এক নামে চিনে। তাড়ি বাবা নাকি শুধু তাড়ি ছাড়া আর কিছু খাননা। মাঝে মাঝে বিশেষ তাবারক হিসেবে অনেক ভাল ভাল খাবারও খেয়ে থাকেন। যেমন বিরিয়ানি, খাসির রেজালা, পোলাও কোরমা ইত্যাদি। তাড়ি বাবার এখানে আসার কারণ হল সুমন। সে আজকাল রাতে ঘুমাতে পারেনা। চোখ বন্ধ করলেই এক লোককে দেখতে পাই। সে সব সময় ভুতের ভয়ে অস্থির থাকে। সুমাইয়ার বাবা মধু মিয়ার কাছ থেকে তাড়ি বাবার ঠিকানা পেয়েছে ওরা। মধু মিয়া বলেছে তাড়ি বাবা খুব কামেল আদমি। বাবার কাছে জীনের বাদশা আছে। বাবা এই জীনের বাদশার মাধ্যমে সকল মুশকিলের আসান করেন। তাড়ি বাবার তাড়ি পড়া খেলে নাকি সব সমস্যা সেরে যায়।
তাড়ি বাবা মুহাম্মদপুরের বস্তীতে থাকেন। তাড়ি বাবার দরবার দেখে মনে হচ্ছে বাবা অনেক কামেল আদমি। কারণ বাবার দরবারে প্রায় তিনশোর মত রোগী বসে আছে বাবার পায়ের ধুলো নেয়ার জন্যে। বাবার দরবারটি দেখতে কিছুটা বিয়ে বাড়ীর মত। বিয়ে বাড়ীতে যেমন ওপরে ছামিয়ানা আর নিচে চেয়ার দিয়ে প্যান্ড্যাল বানানো হয়। এখানেও কিছুটা সেরকমই। শুধু তফাৎ এইটুকু চেয়ারের বদলে মাটিতেও ছামিয়ানা বিছানো রয়েছে।
মারুফ পাশে তাকিয়ে দেখল একটি নবজাতক শিশুকে নিয়ে তার মা আর যত সম্ভব নানী বসে আছে। বাচ্চাটি মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠছে। বাবার ঘরের বাইরে একজন বোতলে করে কি যেন বিক্রি করছেন। মনে হয় বোতলের মধ্যে তাড়ি রয়েছে। একটি লোক ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসল। দেখে মনে হচ্ছে ইনিই বাবার খাস খাদেম। লোকটির পরনে সাদা পাঞ্জাবী আর সাদা লুঙ্গী।
খাদেম সাহেব বলল, বাবা ঘুম থেকে উঠেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আপনারা ভেতরে যেতে পারবেন। বাবা এক সাথে একজন করে রোগী দেখেন। আপনারা একজনের বেশি দুইজন ভেতরে যেতে পারবেন না। তবে রোগী যদি একলা যেতে ভয় পায় তাহলে সাথে কাউকে নিতে পারবে। যাবার আগে ঘরের বাইরে থেকে তাড়ি কিনে নিয়ে যাবেন। শুধু তাড়ির দাম দিলেই হবে। বাবা তার হাদিয়া হিসেবে কিছু নেননা। তবে তার খাদেমদের জন্যে কিছু দিতে চাইলে আমাকে দিতে পারেন। বাবার টাকার দরকার নাই। কিন্তু আমাদের মত খাদেমদের টাকার দরকার আছে। বাবার কাছে টাকা পয়সা খুবই তুচ্ছ জিনিস। এইযে ভাই হ্যাঁ আপনি যান।
একটি অন্ধকার ঘরের ভেতরে তাড়ি বাবা বসে আছেন। ঘর এমনি অন্ধকার আরও বেশি অন্ধকার লাগছে আগর বাতির কারণে। সারা ঘর আগর বাতির ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ। তাড়ি বাবাকে খুব কামেল আদমি টাইপের একজন মনে হচ্ছে। মনে হবার প্রধান কারণ বাবার পোশাক। বাবা শুধুমাত্র একটা সাদা গামছা তার পায়ের ওপরে দিয়ে বসে আছেন। বাবাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি ধ্যান করছেন। বাবার সামনে একটি ছেলে বসল।
তাড়ি বাবা চোখ না খুলে বললেন, কি নাম তোর?
ছেলেটি বলল, জী সেলিম।
তাড়ি বাবা বললেন, সমস্যা বল।
সেলিম বলল, আমি একটা মাইয়ারে ভালোবাসি। কিন্তু ঐ মাইয়া আমারে ভালোবাসে না। সে আরেকজনকে ভালোবাসে। বাবা আমি চাই ঐ মাইয়ার সাথে সংসার করতে। এখন আপনি শুধু ভরসা।
তাড়ি বাবা বললেন, হুম বুঝলাম। পিরিতের মামলা জটিল বিষয়।
সেলিম বলল, বাবা যত টাকা লাগে আমি দিব কোন সমস্যা নাই।
তাড়ি বাবা ধমক দিয়ে বললেন, খামোশ! আমার লগে টাকার গরম দেখাবিনা। আমি টাকার ধার ধারিনা। যদি টাকার আমার দরকার থাকত তাইলে আমি অনেক কিছু করতে পারতাম। আমি আমার জীনের বাদশারে দিয়া এই পৃথিবীর সব টাকার মালিক হইবার পারতাম।
সেলিম বলল, বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে আমারে মাফ কইরা দেন। আর কখনো টাকার কথা বলব না।
তাড়ি বাবা বললেন, হুম ঠিক আছে। তোর সমস্যা জটিল তবে ব্যাপার না আমি আছি কি জন্যে। আমি তোর লগে ঐ মাইয়ার পিরিত কইরা দিব। ঐ মাইয়া তোরে ছাড়া কিছু বুঝবো না। তোর লাইগা পাগল হয়ে যাইবো। মাইয়ার নাম কি?
সেলিম বলল, রোকেয়া।
তাড়ি বাবা বললেন, ঠিক আছে ব্যাপার না হয়ে যাবে। পিরিতের মামলা তাই শুধু তাড়ি পড়াই কাম হইব না। সাথে আরও অনেক কিছু করন লাগব।
সেলিম বলল, বাবা কি করতে হবে?
তাড়ি বাবা বললেন, তোরে যা করতে বলছি মন দিয়ে শোন। তুই ঐ মাইয়ার একটুকরা কাপড় আর নেড়ি কাল কুত্তার ল্যাজের চুল নিয়ে আসবি। আমি পইড়া দিব দেখবি পিরিত হইয়া যাবে।
সেলিম বলল, ঠিক আছে বাবা। কিন্তু নেড়ি কাল কুত্তার লেজের চুল কেন?
তাড়ি বাবা আবার ধমক দিয়ে বললেন, বাবা আমি না তুই? যা করতে বলছি তাই কর। এখন তাড়ি পড়া নিয়ে বিদায় হ।
সেলিম বাবার হাতে তাড়ির বোতল দিল। বাবা চোখ বন্ধ করে বিড় বিড় করে কি যেন দোয়া পরে বোতলে ফুঁ দিলেন।
তাড়ি বাবা বললেন, এই বোতলের সব তাড়ি বাড়ীতে গিয়ে একবারে শেষ করবি। দেখবি যেন তাড়ি মাটিতে না পড়ে। তানাহলে তোর বিরাট সমস্যা হইব। এখন বিদায় হ।
সেলিম নামের ছেলেটি বাবার সামনে থেকে বিদায় হল। কিছুক্ষণ পরে মারুফদের পালা আসল। তাদের তিনজনকে একসাথে খাদেম সাহেব ঢুকতে দিবেনা। অনেক দরবারের পরে তিনজনই বাবার ঘরে যাবার অনুমতি পেল। বাবার সামনে বসার আগে সুমন তাড়ি বাবাকে কদমবুচি করল। সুমনের দেখাদেখি হারুনও বাবাকে কদমবুচি করল।
তাড়ি বাবা হুংকার দিয়ে বললেন, কি সমস্যা কইয়া ফেল।
সুমন তার সব সমস্যা খুলে বলল। বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, তোরে কালো জাদু করছে। আর তুই যেই কালো আদমি স্বপ্নে দেখিস ওইটা হল জীন। ঐ জীনের মাধ্যমেই তোরে কালো জাদু করা হইছে।
সুমন বলল, এখন উপায়?
তাড়ি বাবা বললেন, সমস্যা নাই। আমি সব ঠিক করে দিব। কালো জাদু কাটানোর জন্যে ঐ জীন যা যা করছে সব নষ্ট করতে হইব। চিন্তা করিস না আমি দেখছি। এরপর বাবা কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে থাকলেন। কোন কিছু বলছেন না। শুধু মাঝে মাঝে তিনি কেঁপে কেঁপে উঠছেন। প্রায় ৫ মিনিট মত তিনি এভাবে বসে থাকলেন। হঠাৎ বাবা চোখ খুললেন। হাত সামনে বাড়িয়ে বললেন এই নে।
সুমন দেখল বাবার হাতে একটি মাটির ছোট পুতুল আর একটি গোল শামুক। সে ওগুলো নিয়ে দেখল পুতুলটির গাঁয়ে কয়েকটা পেরেক পুতা।
সুমন বলল, বাবা এগুলো কি?
তাড়ি বাবা বললেন, এগুলো দিয়েই তোকে কালো জাদু করা হইছে। এগুলো তোর গ্রামের বাড়ীর কবর স্থানে পুতা ছিল। আমি আমার জীনের মাধ্যমে এগুলো কবরের মধ্যে থেকে তুলে নিয়ে আসলাম।
সুমন বলল, বাবা আমি কি এখন ভাল হয়ে যাব?
তাড়ি বাবা বললেন, কিছু কাজ বাকি আছে। ঐগুলা করার পরে তুই একেবারে ভাল হয়ে যাবি।
সুমন বলল, আমাকে কি করতে হবে বাবা?
তাড়ি বাবা বললেন, একটা মানুষের মাথার খুলি আর কালো বিড়ালের রক্ত লাগব। তাহলে তুই একেবারে ভাল হইয়া যাবি।
সুমন বলল, এগুলো আমি পাবো কোথায়?
তাড়ি বাবা বললেন, ম্যানেজ কর। সুস্থ হবার লাইগা এগুলা করতে হইব। দে তাড়ির বোতল দে পইড়া দিই।
সুমন বাবার হাতে তাড়ির বোতল দিলে বাবা তাড়ি পরে দেন। আর বলেন যত তাড়াতাড়ি ওগুলো নিয়ে আসবি ততো তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যাবি। এই তাড়ি টুকু সব খাবি। এখন বিদায় হ।

বিদায় হবার আগে আবার সুমন আর হারুন তাড়ি বাবাকে কদমবুচি করল। বাবার ঘর থেকে বের হয়ে বাবার হাদিয়া বাইরে বসা খাদেম সাহেবের হাতে দিল। বাবার দরবার থেকে বেরিয়ে হারুন বলল, বাবা খুব কামেল আদমি তাইনা?
সুমন বলল, হুম। দেখলিনা কবর থেকে এই পুতুল আর এই শামুক নিয়ে আসল।
মারুফ বলল, তোদের বাবা কচু কামেল আদমি। ব্যাটা ভুয়া।
সুমন বলল, এই কথা বলছিস কেন?
মারুফ বলল, এই পুতুল আর শামুক কোন কবর থেকে তুলে নিয়ে আসা না। তোর বাবার ভান্ডারে সব সময় এমন পুতুল আর শামুক থাকে। তোর মত কেউ এলেই বের করে দেয়।
হারুন বলল, কিন্তু আমরাতো বাবার সামনে বসে ছিলাম। বাবা কোথায় থেকে বের করলেন?
মারুফ বলল, তোরা খেয়াল করেছিস কিনা জানিনা। তোদের বাবা মাঝে মাঝে কাঁপছিলেন। আর কাঁপার সময় তিনি তার হাত গামছার নিচে দিচ্ছিলেন। আর তিনি এই পুতুল আর শামুক ওখান থেকেই বের করেছেন। কোন কবর স্থান থেকে নয়।
সুমন বলল, তাহলে এখন কি করব?
মারুফ বলল, তাড়ির বোতল আর এগুলো ফেলে দে। আর চল চা খেতে যায়। চা খেতে খেতে তোর সমস্যা নিয়ে ভাববো।
হারুন বলল, কিন্তু বাবার কথা সত্যি হতেও তো পারে।
মারুফ বলল, তোর বাবার ছাকি নাকা।
সুমন বলল, মানে?
মারুফ বলল, মানে বোঝা লাগবে না।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে। তিনজন রাস্তার পাশের একটা চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে। হারুন চায়ের মধ্যে বিস্কুট চুবিয়ে চুবিয়ে খাচ্ছে।
হারুন বলল, বুঝলি চায়ের মধ্যে বিস্কুট চুবিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা। কিরে সুমন খাবি নাকি?
সুমন বলল, তোর মজা তুই বেশি করে খা।
হারুন বলল, আরে একটা খেয়ে দেখনা মজা পাবি।
সুমন হারুনের কথা মত চায়ে বিস্কুট চুবিয়ে চুবিয়ে খাওয়া শুরু করল।
হারুন বলল, কিরে কেমন লাগছে? ভালনা!
সুমন বলল, হুম।
মারুফ চুপ করে চা খাচ্ছে কোন কথা বলছেনা। সে পাশের একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে তাকিয়ে আছে। গাছের নিচে অনেক ফুল পরে আছে। লাল ফুল গুলোকে দেখে মনে হচ্ছে, যেন একটি লাল চাদর গাছের নিছে বিছানো রয়েছে। চা শেষ করে সে সুমনের দিকে তাকাল।
সুমন বলল, কি হল এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?
মারুফ বলল, মনে হয় আমি তোর সমস্যার সমাধান পেয়ে গেছি।
সুমন বলল, কি?
মারুফ বলল, তুই বলেছিলি তোর বাড়ীর সামনে একটা মেহেগনির গাছ আছে। আর ঐ দিন ঐ গাছের ওপর থেকেই তোর গাঁয়ে কেউ একজন ঢিল মেরে ছিল।
সুমন বলল, হ্যাঁ। তবে কেউ একজন না। জীনে ঢিল মেরে ছিল।
মারুফ বলল, জীনে ঢিল মারেনি।
সুমন বলল, তাহলে কে ঢিল মেরেছিল?
মারুফ বলল, আসলে কেউই ঢিল মারেনি। তোকে আসল ঘটনাটা বলি, তাহলে তুই নিজেই বুঝতে পারবি। তুই খেয়াল করে থাকবি অনেক গাছের পাতা ঝরে যায়। আর মেহেগনি গাছের পাতার সাথে সাথে তার ফলও ঝরে পরে যায়। ঐ দিন তুই রাতের বেলাই বাড়ীতে ফিরছিলি। রাস্তার মাঝে তুই ভয় পাচ্ছিলি। তুই যখন ঐ গাছে নিচে আসলি ঠিক তখনই একটা ফল তোর সামনে এসে পরে। তুই লাইট মেরে দেখলি একটা ঢিল পরে আছে। আসলে ফলের পাশে ঢিলও পরে ছিল ওখানে। কিন্তু তুই শুধু ঢিলের দিকে নজর দিলি। তাই মনে করলি তোকে জীনে ঢিল মেরেছে। তোর কি মনে হয় এমন কি হতে পারে?
সুমন বলল, হ্যাঁ হতে পারে।
মারুফ বলল, হতে পারেনা। এটাই হয়েছে। অন্য কোন ব্যাপার নেই এর মাঝে। এখন থেকে আর এসব কিছু ভাববি না। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
সুমন বলল, এটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু ঐ কালো লোকটার বিষয়ে কি বলবি?
মারুফ বলল, ঐ রাতে তোর জ্বর হয়েছিল। আর তুই প্রথম ঐ লোকটিকে জ্বরের ঘোরে স্বপ্নে দেখেছিলি। এরপর ঐ লোকের চেহারা মনের মাঝে গেথে যায়। তাই তুই ঐ লোককে সব সময় দেখতে পাস। আমার মনে হয়না তুই আর ঐ লোকটিকে স্বপ্নে দেখবি। কারণ তুই জেনে গেছিস আসলে ওটা তোর মনের কল্পনা। কি বিশ্বাস হচ্ছে আমার কথা?
সুমন বলল, হ্যাঁ।
মারুফ বলল, চল এবার ওঠা যাক। এই মামা আপনার বিল কত হল।







১০
মারুফ বলল, কিরে তোর বই লেখার কতদূর হল?
হারুন বলল, এইতো প্রায় শেষের দিকে চলে আসছি।
মারুফ বলল, দিনকাল কেমন কাটছে তোর?
হারুন বলল, ভালই কাটছে। বই লেখা বাদে যতটুকু সময় পাই ওপরের চাচার সাথে গল্প করি।
মারুফ বলল, কি গল্প করিস?
হারুফ বলল, মমতাজের গান নিয়ে। গান শুনি আর গল্প করি। চাচা মমতাজের সাথে দেখা করার ব্যবস্থাও করেছেন। পরশুদিন আমি আর চাচা যাব মমতাজের সাথে দেখা করতে।
মারুফ বল্ল, তাই নাকি! তাহলেতো ভালই।
হারুন বলল, দোস্ত কালকে বিপাশা ফোন করেছিল।
মারুফ বলল, কি বলছে?
হারুন বলল, কি আর বলবে। বলছে সে বিড়াল সোহেলকে বিয়ে করে ভুল করেছে। এখন আবার আমার কাছে ফিরে আসতে চাই। আরও অনেক প্রেমের কথা।
মারুফ বলল, তা তুই কি বললি?
হারুন বলল, বলেছি হাইগি বেড়াতে। যখন আমাকে ছেরে বিড়াল সোহেলকে বিয়ে করল, তখন আমার কথা মনে হয়নি। এখন বিড়াল সোহেলকে আর ভাল লাগছেনা তাই আবার আমার কাছে চলে আসতে চাচ্ছে। কিছুদিন পর আবার দেখা যাবে অন্য কারও সাথে আবার পালাই যাবে। তাই রাস্তা মাপতে বলেছি। দরকার হলে অন্য কারও সাথে পালাই বিয়ে করতে বলেছি।
মারুফ বলল, না হয় মাফ করে দে। সে এখন তার ভুল বুঝতে পেরেছে।
হারুন বলল, পাগল নাকি তুই! মাফ করব আমি? কখনও নয়। বাদদে ঐ শাঁকচুন্নির কথা। তোর দিনকাল কেমন কাটছে তাই বল।
মারুফ বলল, এইতো চলছে।
হারুন বলল, দোস্ত আমি তোর ঘাড়ের ওপরেতো সিন্দাবাদের ভূতের মত চড়ে বসলাম। এতদিন হয়েগেল এখনও যাবার নাম নিচ্ছিনা।
মারুফ বলল, আরে পাগলা এসব কোন ব্যাপার না। তোর যতদিন ভাললাগে ততদিন থাক। কোন সমস্যা নাই। সুমন কোথায়?
হারুন বলল, ও হ্যাঁ তোকে বলা হয়নি সুমন আবার তার মেসে চলে গেছে। সে যাবার আগে বলে গেছে তোর সাথে পরে কথা বলবে।
মারুফ বলল, ওহ! ঠিক আছে। দোস্ত তুই থাক আমি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি। কিছু কাজ আছে।
হারুন বলল, কি কাজ?
মারুফ বলল, আছে কিছু কাজ আর কি।

নিশি আজকে একটা কালো রঙের শাড়ি পরেছে। চুল খোঁপা করে তাতে পেন্সিল দিয়ে আটকানো। চোখে কাজল দিয়েছে আর ঠোঁটে হালকা করে লাল রঙের লিপিস্টিক।
নিশি ব্যাগ থেকে টিফিন বাটি বের করতে করতে বলল, আজকে আমি নিজের হাতে পিঠা তৈরি করেছি। শুধুমাত্র তোমার জন্য।
মারুফ বলল, কিন্তু আমিতো পিঠা তেমন একটা খাইনা। তার পরেও দাও খেয়ে দেখি তোমার হাতের পিঠা কেমন। কি পিঠা?
নিশি বলল, দুধ পিঠা।
মারুফ খাচ্ছে আর নিশি ভয়ে ভয়ে তার দিকে তাকাচ্ছে। সে ভাবছে না জানি মারুফের পিঠা কেমন লাগবে।
নিশি বলল, কেমন হয়েছে পিঠা?
মারুফ বলল, একেবারে জঘন্য! আমি আমার জীবনে এত খারাপ পিঠা কখনো খাইনি।
মারুফ নিশির দিকে তাকাল তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে এখনি কেঁদে ফেলবে। মারুফ জোরে জোরে হাঁসতে লাগল।
নিশি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কি হল এমন করে হাসছ কেন?
মারুফ বলল, তোমাকে দেখে।
নিশি বলল, আমাকে দেখে এভাবে হাসার কি হল?
মারুফ বলল, আমি যখন তোমাকে বললাম পিঠা ভাল হয়নি, তখন তোমাকে দেখে মনে হচ্ছিল তুমি কেঁদে ফেলবে। তাই হাসছিলাম।
নিশি অভিমানী সুরে বলল, বারে আমি এত কষ্ট করে শুধু তোমার জন্যে পিঠা তৈরি করলাম। আর সেই পিঠা যদি তোমার ভাল না লাগে, তাহলে তো আমার কান্না পাওয়া টাই স্বাভাবিক।
মারুফ বলল, আসলে তখন তোমাকে মিথ্যা কথা বলেছি। সত্যি বলতে কি তোমার পিঠা অনেক মজার হয়েছে। তোমার পিঠা খেয়ে আমার মায়ের কথা মনে পরে গেল। তিনিও এভাবে দুধ পিঠা তৈরি করতেন। তুমি শুনলে অবাক হবে, তোমার বানানো পিঠা আর আমার মায়ের বানানো পিঠা খেতে এক রকম। তোমার এই পিঠা খাচ্ছিলাম আর আমার মনে হচ্ছিল, যেন আমি আমার মায়ের হাতের তৈরি পিঠা খাচ্ছি। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। এতদিন পরে এমন পিঠা খাওয়ানোর জন্যে।
নিশি মিসকি একটা হাসি দিল। কিন্তু কিছু বলল না।
মারুফ বলল, তুমি আমাকে একটা কথা দিবে?
নিশি বলল, কি?
মারুফ বলল, বিয়ের পরে তুমি আমাকে এই পিঠা প্রতি সপ্তাহে একবার তৈরি করে খেতে দিবে।
নিশি মারুফের ঘারে মাথা রেখে বলল, ঠিক আছে। নিশি নিঃশব্দে কাঁদছে। সে এমন ভাবে কাঁদছে যাতে মারুফ বুঝতে না পারে।
মারুফ নিশির গালে হাত দিয়ে বুঝতে পারল নিশি কাঁদছে। মারুফ বলল, এই কাঁদছ কেন?
নিশি চোখ মুছতে মুছতে বলল, তোমার জন্যে।
মারুফ বলল, আমি আবার কি করলাম?
নিশি বলল, তুমি এত ভাল কেন! এই জন্যে কাদছি।
মারুফ বলল, ঠিক আছে আর কাঁদতে হবেনা আমার নীল পরীকে। এই নীল পরী চোখ মোছ বলছি। তুমি যদি কান্না বন্ধ না কর তাহলে কিন্তু আমিও কেঁদে দিব।
নিশি ফিক করে হেঁসে ফেলল। তার দেখা দেখি মারুফও হাসল।
আরে মামা আপনি! ভাল আছেন?
মারুফ পেছনে তাকিয়ে দেখল ঝালমুড়ি ওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে। মারুফ বলল, হ্যাঁ ভাল আছি। তুমি ভাল আছতো?
ঝালমুড়ি ওয়ালা দাঁত বের করে বলল, আপনাগো দোয়ায় ভালই আছি। মামা মুড়ি দিই?
মারুফ বলল, আচ্ছা দাও। তোমার ব্যাবসা কেমন চলছে?
ঝালমুড়ি ওয়ালা বলল, আপনার বুদ্ধিতে কাম দিছে। আপানার কথা মত এখন কাজ করি। আগের থাইকা এখন দ্বিগুণ বিক্রি হয়। আপনার কথা মত এখন কোন প্রেমিক প্রেমিকাকে ঢলাঢলি করতে দেখলেই বলি মামা মুড়ি খাইবেন? যতক্ষণ তারা মুড়ি না নেই দাড়ায় থাকি। এক সময় বিরক্ত হয়ে মুড়ি নেই।
মারুফ বলল, গুড। এভাবেই চালিয়ে যাও তাহলে। এই নেও তোমার টাকা।
ঝালমুড়ি ওয়ালা বলল, না না মামা। আপনার সাথে এই কথা তো ছিলনা। আপনি কথা দিয়েছিলেন এর পরের বার টাকা দিবেন না। কি হল আপা কিছু বলেন। আপনিও তো ছিলেন ঐ দিন।
মারুফ বলল, তার পরেও রাখো টাকাটা।
ঝালমুড়ি ওয়ালা বলল, না মামা আমি নিবনা। আমারে মাফ করেন। মামা এখন অনুমতি দিলে ঐ দিকটাই জায়তাম। ঐ দেখেন ঢলাঢলি শুরু হইয়া গেছে।
মারুফ বলল, ঠিক আছে যাও।
মারুফ দেখল ঝালমুড়ি ওয়ালা এক জুড়ির সাথে কথা বলছে। মনে হচ্ছে তারা ঝালমুড়ি নিতে চাচ্ছে না। কিন্তু ঝালমুড়ি ওয়ালা সেখান থেকে নড়ছে না। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ঝালমুড়ি না বিক্রি করে সেখান থেকে নড়বে না।

রাত ৯ টা মত বাজে। মারুফ আর নিশি ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে। মারুফ নিশির কাঁধে হাত দিয়ে আছে। আর নিশি মারুফের কোমর জড়িয়ে ধরে আছে।
মারুফ বলল, আজকের আবহাওয়াটা অনেক সুন্দর তাই না?
নিশি বলল, হ্যাঁ।
দুজনে একটু থমকে দাঁড়ালো। নিশি বলল, ওটা কি?
মারুফ বলল, দেখে মনে হচ্ছে কোন মানুষ শুয়ে আছে। চল কাছে গিয়ে দেখি।
দুজনে কাছে গিয়ে দেখল একটি লোক সাদা শার্ট গাঁয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে। দেখে মনে হচ্ছে লোকটিকে কেউ অনেক মারধোর করেছে। লোকটির মুখ দেখা যাচ্ছে না। মারুফ লোকটিকে পাশ ফিরিয়ে দেখতে পেল কনক নামের ঐ ভুয়া পুলিশটি।
নিশি বলল, এত কনক ভাইয়া। কিন্তু ভাইয়ার এ অবস্থা কি করে হল।
মারুফ বলল, অজ্ঞান হয়ে আছে। এখনই ইনাকে হাঁসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। নিশি তুমি একটা সিএনজি বা কোন গাড়ী থামাবার চেষ্টা কর। আমি কনক ভাইকে তোলার চেষ্টা করি।



১১
সকাল ১১ টার সময় কনকের গ্যান ফিরল। সে ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখল একটি সাদা রঙের ফ্যান ঘুরছে। সে ফ্যান থেকে চোখ ফিরিয়ে দেখতে পেল তার পাশে নিশি বসে আছে।
নিশি বলল, এখন কেমন লাগছে কনক ভাইয়া?
কনক বলল, তেমন জুতের না। মাথার মধ্যে ভন ভন ভন ভন করছে।
নিশি বলল, কাল রাতে আমি আর মারুফ ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের ফুটপাত দিয়ে হাটছিলাম। ফুতপাতে আপনাকে পরে থাকতে দেখে হাঁসপাতালে নিয়ে এসেছি। আপনার এ অবস্থা কেমন করে হল?
কনক বলল, মারুফ কোথায়?
নিশি বলল, ও একটু বাইরে গেছে চলে আসবে। আপনি বলেন আপনার এ অবস্থা কেমন করে হল?
কনক বলল, আর বইলো না। আমার ধান্দার কারণে আমার এই অবস্থা হইছে।
নিশি বলল, মানে?
কনক আবার বলতে শুরু করল, প্রতিদিনের মত কাল কেউ আমি আমার ধান্দা করতে বের হয়েছি। হোটেল থেকে সবুজ কালারের শার্ট পরা এক লোককে বের হতে দেখলাম। দেখে মনে হল নিরীহ টাইপের লোক। আমি আর কাসেম গেলাম তার পিছু পিছু। কিছুদুর যাবার পরে তাকে বললাম এই লোক পতিতা লয়ে যাও। আমারে চিনো আমি মুহাম্মদপুর থানার ওসি। চল থানায় চল। তোমারে পতিতালয়ে যাবার জন্যে এরেস্ট করা হল।
লোকটি আমারে বলল, কি বললি তুই? তুই কোন থানার ওসি?
আমি বললাম, মুহাম্মদপুর থানার। ক্যান কি হইছে।
লোকটি আমারে একটা ঘুসি দিয়ে বলল, MC মাগীর পোলা। আমারে চিনস? আমিই মুহাম্মদপুর থানার ওসি। আমার লগে বাইলচামি করস।
দেখলাম কাসেম দৌড়ে পালিয়ে গেল। আমার পা নড়ছেনা। আমি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
আমি বললাম, স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে। আমারে মাফ করে দেন আর কোনদিন এমন করবনা।
ওসি সাহেব বলল, সালা শুয়োরের বাচ্চা। তোরে মাফ করব আমি? তোরে শ্বশুর বাড়ীর খানা না খাওয়াইলে, তুই বুঝবি না শ্বশুর বাড়ীর কদর কত। ভুয়া পুলিশ সাজো!
আমি বললাম, স্যার আমার এখনও বিয়েই হইনি। আর আমি চাইনা শ্বশুর বাড়ীর খানা খাইতে। আমারে ছেরে দেন। আমি বুঝতে পারিনাই আপনার আবার টান বাজারে যাবার অভ্যাস আছে।
ওসি সাহেব বললেন, থাম তোমারে বুঝাবার ব্যবস্থা করতাছি। তোমার অনেক রস মনে হচ্ছে। একটু ওয়েট কর চান্দু।
ওসি সাহেব অয়ার লেছে কাকে যেন আসতে বললেন। ৫ মিনিটের মধ্যে একটা পুলিশের জিপ চলে আসল। আমাকে নিয়ে চলে গেল থানায়। সেখানে ওসি সাহেব আমাকে দেখিয়ে সেকেন্ড অফিছারকে বললেন, এরে শ্বশুর বাড়ীর খানা খাওয়ানোর দায়িত্ব তোমার। আর মনে রেখ খাবারে যেন কমতি না থাকে। ওসি সাহেবের কথা মত সেকেন্ড অফিছার আমাকে আচ্ছা তাকে খাওয়ালেন। আমি যত তাকে বলছিলাম আমার পেট ভরে গেছে আর খাবনা। তিনি তার পরেও অনেক খাবার খাওয়ালেন।
শেষে আমাকে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে গেল। আমি প্রথম কিছুক্ষণ গাড়ী চলাচল দেখছিলাম। পরে মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গেছি। তাই আর কিছু মনে নাই। নিশি আমি এই মুহূর্তে তওবা করলাম, আমি আর কখনো ভুয়া পুলিশ সেজে মানুষকে ঠকাবনা। যতদিন বাঁচবো সৎ ভাবে বাঁচবো।
মারুফ ছুপের বাটি নিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকল। সে বলল, কি অবস্থা এখন আপনার?
কনক বলল, ভালনা। মাথার মধ্যে ভন ভন ভন ভন।
নিশি বলল, ভাইয়া একটু উঠে বসার চেষ্টা করেন। আপনার জন্যে ছুপ নিয়ে আসা হয়েছে। একটু ছুপ খান।
কনক বলল, এখন খেতে পারবনা। পরে খাব।
নিশি বলল, ঠিক আছে।
মারুফ বলল, ভাই আপনার বাড়ীর কারো নাম্বার দেন। তাদের বলি আপনি এখন হাঁসপাতালে।
কনক বলল, ঢাকাতে আমার কেউ নাই। গ্রামে শুধু আমার মা আছে। তাকে ফোন করা যাবেনা। তোমাদের কাউকে কোন ফোন করতে হবেনা। আমি একাই এখানে থাকতে পারব।
নিশি বলল, তা কি করে হয়। ভাইয়া আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আর মারুফ আপনার দেখা শোনা করব।
মারুফ বলল, হ্যাঁ ঠিক তাই। ভাই আপনি এখন একটু ঘুমানোর চেষ্টা করেন। আমি আর নিশি সন্ধ্যার দিকে আরেকবার আসব।








১২
ছয় বছর পরে......
মারুফের বড় মামা ইকবাল হোসেনকে খুবই বেস্ত দেখাচ্ছে। তিনি সবাইকে দৌড়ের ওপরে রেখেছেন। তিনি মারুফ আর নিশির বৌভাতের রান্না করছেন। তার মেজাজ এখন খুবই খারাপ, কারণ লবণের প্যাকেট খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। মারুফের বাবা আফজাল সাহেব বললেন, কি হল তুমি এত রাগারাগি করছ কেন? লবণ পাওয়া যাবে একটু থাম।
ইকবাল হোসেন বললেন, আরে কি বলেন দুলাভাই। আমি রাগবনা মানে। আমার ভাগ্নে আমার কাছে একটা আবদার করছে। আমি যেন তার বৌভাতের রান্না করি। আর যদি সেই আবদারে ঘাপলা হয় তাইলে কেমন করে হয় বলেন। এই বান্দির পোলারা লবণ কেউ পাইলি?
আফজাল সাহেব বললেন, আমার বউমারে দেখছ? কত সুন্দর।
ইকবাল হোসেন রাগি গলাই বললেন, আপনার বউমা মানে। বলেন আমাদের বউমা। বউমা কি শুধু আপনার একার।
আফজাল সাহেব মিসকি হাসি দিয়ে বললেন, আমাদের বউমা।
ইকবাল হোসেন বললেন, আমাদের বউমা শুধু সুন্দর না অনেক গুণবতীও।
আহজাল সাহেব বললেন, হ্যাঁ এই কথাটা একেবারে ঠিক বলেছ।

হারুন সুমনকে বলল, কিরে মুখ এমন ব্যাজার করে রেখেছিস কেন?
সুমন বলল, আর বলিস না। তোর ভাবীরে বলসি তার থেকে মারুফের বৌ নিশি দেখতে সুন্দর। সেই ঘটনা নিয়ে আমার সাথে তার কথা বন্ধ। সেতো বিয়ে বাড়ীতেও আসতে চাচ্ছিলনা। আমি তার পা ধরে ক্ষমা চেয়ে তার পরে নিয়ে আসলাম।
হারুন বলল, আমি এই দিক দিয়ে লাকি। বিপাশাকে কিছু বললে ও কিছু মনে করেনা। করলে আমি বলি যাও তোমার বিড়াল সোহেলের কাছে। আমার কাছে থাকা লাগবে না। তখন আর কিছু বলেনা।
সুমন বলল, দোস্ত এইটা কিন্তু ঠিক না। ভাবী একবার না হয় ভুল করেই ফেলছে। তাই বলে তুই সারা জীবন এই ভাবে খুটা দিয়ে যাবি।
হারুন বলল, আরে খুটা না খুটা না। এটা আমার এক প্রকারের ঔষুধ। মাঝে মাঝে ডোজ দিই তখন ভাল থাকে। আবার যদি ট্যেঠামু করে তখন আবার আরেক ডোজ দিই।
সুমন বলল, মারুফকে দেখ। এখনও সালার প্রেম প্রেম ভাব গেলনা। কালকে সালার বিয়ে হয়ে গেছে। এখনও এমন ভাবে বৌয়ের সাথে কথা বলছে যেন তার পুরানো প্রেমিকা।

মারুফ নিশিকে বলল, আমি কি তোমার হাতটা একটু ধরতে পারি?
নিশি বলল, এত লোকের মাঝে!
মারুফ বলল, আরে দাওনা। আমি আমার বৌয়ের হাত ধরব। এতে লোকের কি আসে যায়।
নিশি বলল, না এখন না পরে। আমার লজ্জা করছে। এমনিতেই দেখ সবাই আমাদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
মারুফ বলল, আরে তাদের তাকিয়ে থাকতে দাও। আমি আমার নীল পরীর হাত ধরব আর তারা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখুক। আচ্ছা তোমাকে আর লজ্জা পেতে হবেনা। এবার তোমার হাতটা একটু দাও ধরি।
মারুফ নিশির হাত ধরল। নিশিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সে খুবই লজ্জা পাচ্ছে। সে বড় করে একটা ঘোমটা দিল। মনে হয় সে নিঃশব্দে কিছুক্ষণ কাঁদবে। সে চাইনা কেউ তার কান্না দেখুক।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×