somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরিচিতা(১ম পর্ব)

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাস রাত ১১ টায়।এখন বাজে ৯ টা।বাস ছাড়বে কলাবাগান থেকে।তার আগেই আমাদেরকে হল থেকে যেতে হবে।

আমি আরো অনেক আগে থেকেই রেডী হয়ে আছি।সুমন অবশ্য তার আগেও রেডী হয়ে বের হয়ে গেছে।আসাদ গেটে তার বউ আসবে।সেখান থেকে তাকে বাস কাউন্টারে নিয়ে আসার কথা।এতক্ষণে মনে হয় চলে এসেছে তারা।আমার নীলক্ষেত যেতে হবে তাই রেডী হয়েছি।আমার তো আর বউ নাই! একটা চিঠি কুরিয়ার করতে হবে।খুব প্রয়োজন, কিন্তু বের হতে পারছি না।অন্যদের কেউ রেডি হয়নি এখনো।আবার একা একা যেতেও ইচ্ছে করছে না।

পাশের রুমে গিয়ে দেখি ইমরান রেডী।ওকে রিকুয়েস্ট করলাম আমার সাথে বের হবার জন্য।প্রথমে রাজী হল না।বলে সবার সাথে বের হবে।পরে অবশ্য আমার জোড়াজুড়ি দেখে না রাজী হয়ে পারল না।আমরা দুজন আমাদের ব্যাগ নিয়ে বের হলাম।মিলু মাত্র শার্ট পরতে শুরু করেছে।কবির খেতে গেছে আর মাসুদ ব্যাগ গোছাচ্ছে।আসিব নাকি এখনো টিউশনি থেকে ফেরেনি।

হল থেকে বের হয়ে দেখি প্রচন্ড শীত।ঠান্ডা বাতাস।আমিও কম না।জ্যাকেট পরেছি-তার উপর আবার নিয়েছি চাদর।ইমরান চাদর নেয়নি;মোটা মানুষদের শরীর গরম থাকে শুনছি।এটা কী তার প্রমাণ?
পলাশী মোড়ে গিয়ে রিকশা নিলাম।নীলক্ষেত পর্যন্ত।কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে।রিকশা চলতে আরম্ভ করল।মিনিট পাচেক পর নীলক্ষেত পৌছালাম।ইমরানকে বাইরে রেখে আমি বাকুশাহ মার্কেটের ভেতর গেলাম।পোড়া কপাল- সুন্দরবন অফিস বন্ধ হয়ে গেছে।কি আর করা।চিঠি খানা পকেটে ভরে বের হয়ে আসলাম গলি থেকে।

আবার একটা রিকশা ঠিক করতে হল। নিউমার্কেটের সামনে থেকে। আগের রিকশা কলাবাগান যাবে না। মোটার পাশে বসতে আমার খুব কষ্টই হচ্ছিল।তার উপর আবার বিশাল বিশাল দুইটা ব্যাগ।ট্র্যাভেল ব্যাগ ভর্তি কাপড়-চোপড়।

পৌনে দশটার দিকে কলাবাগান পৌছালাম।ওয়েটিং রুমে গিয়ে দেখি সুমন আর লিয়া বসে আছে।জিজ্ঞেস করে জানলাম প্রায় ঘণ্টাখানেক হল তারা বসে আছে।আমার সাথে লিয়ার আগে থেকেই পরিচয় আছে।ইমরানের ছিল না তাই তাদের মাঝে হাই-হ্যালো বিতরন হল।তারপর ওদের হেফাজতে আমাদের ব্যাগগুলো রেখে আমরা দুজন ঘুরতে বের হলাম।ইমরান আমাদের জুটির জন্য সাফারি কিনল,নিজের হাতে খাওয়াবে বলে।আমাকেও কিনে দিল।আমি চকলেট কিনলাম।আশেপাশে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে ফিরে এলাম।তখন প্রায় সাড়ে দশটা।বাকিদের কেউ আসেনি।

আমরা চারজন বসে আছি।ইমরান অবশ্য তুলে খাওয়াতে পারেনি,লজ্জা পাচ্ছিল।আমি আগে থেকেই জানতাম ও পারবে না।হঠাত মহামান্য রেজার মুখ দর্শন পেলাম।অতঃপর একে একে মিলু,মাসুদ,কবির এবং আসিব।সবাই জড় হলাম,নয় জন।

ভাবলাম,ট্যুরটা তাহলে ভালই জমবে।তিনটা দিন জম্পেশ যাবে।ভিসি স্যারকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম না।ক্লাশ আরো এক সপ্তাহ পিছিয়েছেন বলেই তো আজ বের হতে পারলাম।তা না হলে কি আর ক্লাশ মিস করে যাওয়া হত!

আমাদের নয়জনের গ্রুপ দেখে ওয়েটিং রুমের বাকি লোকেরা তাকাতে লাগল।আমরা লোক দেখানোর জন্য আরোও বেশি চেচামেচী শুরু করলাম।এভাবে কখন যে বাসে চড়ার টাইম হয়ে গেছে টের পাইনি।বাস এসে পড়েছে।আমরা সবাই নিজ নিজ ব্যাগ নিয়ে উঠে পরলাম।সুমনকে অবশ্য দুইটা ব্যাগ টানতে হয়েছিল।কেন তা বলব না।

***
আমাদের সিটগুলো সামনের দিকে।পাশাপাশি দুটো করে সিট।আমরা নয়জন।জ়োড়াসিট চারটে,সিঙ্গেল একটা।সবাই পাশাপাশি বসতে চাচ্ছে।একলা কেউ বসতে চাচ্ছে না।এই নিয়ে বাসে ঝগড়া লাগার মত অবস্থা।আমি টিকিট করেছিলাম,তাই শেষে সিদ্ধান্ত হল আমাকে একলা বসতে হবে।কি আর করা!সবার রায়,মানতেই হল।

মন খারাপ হলেও গিয়ে বসলাম সামনের সিটে।আরো মেজাজ খারাপ হতে লাগল এই ভেবে যে রাতে ঠিক মত ঘুমাতেও পারব না।সামনের সিটে কি আর ঘুমানো যায় শান্তিমত?কে না কে আবার পাশে এসে বসে!উফফ!রাগে ফুলতে লাগলাম।বাকিরা মজা করছে আর আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে।আমাকে ক্ষেপাচ্ছে,“ম্যানেজার সাহেব,টিকিট তো ভালই ম্যানেজ করেছেন”।

বাস ছাড়ল।কিন্তু আমার পাশে কেউ বসল না।যাক,একটা ঝামেলা থেকে বাঁচা গেল।আমি ঘুমানোর ভান করলাম।তা না হলে ওদের জ্বালায় আর টিকে থাকা যাবে না।চাদর খুলে শুয়ে পরলাম লম্বা হয়ে।জুতা খুলে ফেললাম।চাদর বিছিয়ে দিলাম মুখের উপর দিয়ে পায়ের পাতা পর্যন্ত।গুটীসুটি মেরে থাকলাম।

বাস যাচ্ছে।সায়েন্স ল্যাব হয়ে সায়দাবাদ,তারপর ……।ওহ,মেজাজটা আবার ভাল হতে লাগল।
কী করব এই তিন দিন,কই কই ঘুরব,কি কি কিনব-এইসব ভাবতে ভাবতে

কখন যে বাসের দোল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নাই।
***

“এই যে মিস্টার,একটু সাইড দেন।আমি বসব।এটা আমার সিট,আপনার টা পাশেরটা”।

একটা মেয়েলি কণ্ঠে আমার ঘুম ভাঙ্গে।চেয়ে দেখি কেউ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।বাসের ভেতরে আবছা আলো।তবে বুঝতে সমস্যা হয় না যে সে মেয়ে।ভাল করে ঘুম ঘুম চোখে খেয়াল করি তাকে।আমার ধারনা যদি ভুল না হয় তবে সে আমাদের বয়সেরই হবে,কিংবা কম হবে।এবং সে যে আমার পাশেই বসবে এটুকুও সিওর।

আমি মুচকি হেসে পিছনে তাকাই।দেখি বাকি সবার চোখ বড়বড় হয়ে গেছে।মনে মনে ভাবি,ব্যাটারা এইবার দেখ মজা।আমি একটা মেয়ের পাশে বসে যাচ্ছি!তোমরা আমাকে ঠকাতে চেয়েছিলে।হা হা হা।দেখলে তো কার জিত হল!

আমি আমার সিটে বসলাম।মায়েটি আমার পাশে বসল।নিরাপদ দুরত্ম বজায় রাখলাম আমরা।

আমি সিটের নিচ থেকে জুতা বের করে পরে ফেললাম।মেয়েটা হাল্কা করে জানালা খুলে দিল।এখন বাস থেমে আছে।বাতাস লাগার ভয় নাই।ভেবেছিলাম পরে বন্ধ করে দিবে।

আমি আবার ঘুম ঘুম বোধ করলাম।ঘুমিয়েও পরেছিলাম।
বাস সায়দাবাদ থেকে ছাড়ার আগেই ঘুমিয়ে পরলাম।

***

হঠাত বাসের ঝাকুনিতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।আমি তখনো চাদরের ভেতর।কিন্তু অনুভব করতে পারছি আমার কানের পাশ দিয়ে ঠান্ডা বাতাস বইছে।আজব তো!তারমানে জানালা এখনো খোলা।আমি চাদর সরাই মুখ থেকে।দেখি মেয়েটা জেগে আছে।বাইরে তাকিয়ে আছে।আমি বোঝার চেষ্টা করলাম কই এখন বাস।দেখি মেঘনা সেতুর উপর।

মেয়ের মাথা থেকে কয়েকটা চুল উড়ে এসে আমার মাথায় পরছিল।আমি সরানোর চেষ্ট করছিলাম,চুপি চুপি।মেয়েটা টের পেয়ে যায়।হালকা কুয়াশা ঢাকা চাদের আলোতেও বুঝতে পারি সে লজ্জা পেয়েছে।আমি নিজেও লজ্জা পাই।বলি, “প্লিজ জানালাটা বন্ধ করে দেন।আমার ঠাণ্ডা লাগছে”।

মেয়েটা কিছু না বলে জানালাটা বন্ধ করে দেয়।
আমি আবার চাদর মুখে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।মুখ বের করে পিছনে তাকাই।সবাই হা করে ঘুমাচ্ছে।
আবার ঘুমাই।

কতক্ষণ হয়েছে জানি না।আবার ঘুম ভাঙ্গে।তবে এবার বাসের ঝাকুনিতে নয়,অন্য কোন কারনে।আমি ঘুমের মাঝেই টের পাই কিছু একটা আমার ডান কাধে ভর করে আছে।আমি আস্তে আস্তে চাদরের কোনা সরিয়ে দেখার চেষ্টা করি।যা দেখলাম তাতে আমার লাফ দিয়ে ওঠার কথা।দেখি মেয়েটা আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।ভাবলাম ডেকে তুলে ঝাড়ি মারি।

পারলাম না।এখানে কুয়াশা কম,চাদের আলোয় পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম মেয়েটা ঘুমাচ্ছে।কী মমতাময় লাগছিল আর নিষ্পাপ মনে হচ্ছিল।বাচ্চাদের মত জড়সড় হয়ে ঘুমাচ্ছে।ডাকতে ইচ্ছে করল না।মনে হল এমন ঘুম ভেঙ্গে দেয়া একটা অপরাধ।

ডাকলাম না।

হঠাত একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম,এই শীতেও তার কোন শীতের কাপড় পরা নেই।আজব মনে হল।ঠোট দুটো কাপছে।
আমি আস্তে আস্তে আমার চাদর খুলে তার গায়ে বিছিয়ে দিলাম যেন সে বুঝতে না পারে।ভয় লাগছিল এই ভেবে যে যদি জেগে গিয়ে আমাকে গালি দেয়।

আরে দিলে দেবে।তখন দেখা যাবে।
আমি আর ঘুমালাম না।নড়াচড়াও করলাম না,পাছে যদি তার ঘুম ভেঙ্গে যায়!এক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে থাকি।রাতের স্নিগ্ধতা আমাকে তখন ছুয়ে যাচ্ছিল।কিছুক্ষণ পরপর সাই সাই করে বাস ছুটে যাচ্ছে আমাদের বাসের পাশ দিয়ে।কোনকোন বাস আবার আমাদের বাস ওভারটেক করতে চাচ্ছে,পারছে না।মজাই লাগছিল।আমি আধোঘুম চোখে দেখছি রাতের সৌন্দর্য,আর আমার কাধে এক নারীর ঘুমন্ত মাথা।সত্যিই বেশ ভাল লাগছিল ।হোক না সে অপরিচিতা,তাতে কি।বার বার মনে হচ্ছিল যদি এই বাস আর কোন দিন না থামত অথবা মেয়েটির ঘুম আর কোনদিন না ভাঙ্গত!তাহলে কেমন হত?নিশ্চই মন্দ হত না!

ড্রাইভার বাসের গতি কমিয়ে দেয়।কারনটা কি দেখার জন্য আমি চোখ খুলি।দেখি বেশ আলোর ঝলকানি।বুঝতে পারি,স্ন্যাকস ব্রেক।বাস থামবে।বাস রাস্তা থেকে বামে নামতে থাকে ।আমি এই সুযোগে কেউ দেখে ফেলার আগেই মেয়েটিকে আমার কাধ থেকে সরিয়ে সিটে হেলান দিয়ে রাখি।বাস থামে।বিশ মিনিটের বিরতি।

সবাই নামতে শুরু করে।আমাদের বাকিরাও নামে।আমাকে ডাকে।আমি বলি তোরা যা আমি আসছি।মিলু খোটা মারে, “ও কি আর আমাদের সাথে যাবে।ও তো….” কথা শেষ না করেই নেমে যায়।আসিব এমন ভাবে আমার দিকে তাকালো যেন আমি কোনকিছু চুরি করে ধরা খেয়েছি।মেয়েটি জেগে গেছে।তার গায়ে এখনো আমার চাদর।ভাগ্যিস ড্রাইভার সামনের লাইট জ্বালায়নি!তাই কেউ বুঝতে পারেনি যে মেয়েটার গায়ে আমার চাদর।

আমাদের সবাই নামার পর মেয়েটা আমাকে চাদর ফেরত দিয়ে বলে, “থ্যাংক্স”।
আমি ওয়েলকাম না বলে জিজ্ঞেস করি, “ আপনি নামবেন না”?
“না”,মেয়েটির কাটছাট উত্তর।
আমি চাদরটা আমার সিটে রেখেই নেমে যাই।

ওয়াশিং রুমে হাতমুখ ধুয়ে আমরা সবাই একটা বড় টেবিলে বসি।সবাই আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।আর আমি মুচকি হাসছি।হঠাত সবাই সমস্বরে হেসে উঠি।আমি বলি, “কি মামারা,সিংগেল সিট লাগবে নাকি কারো?”
রেজা বলে, “না আমাদের কারো লাগবে না।দেখি তুমি কি করতে পার?”
লিয়া বলে, “আমার মনে হয় এতক্ষনে পারা হয়ে গেছে।দেখ গেটে..।”রেস্টুরেন্টের গেটের দিকে মাথা দিয়ে ইশারা করে আমাদের ভাবী।আমরা সবাই তাকাই।দেখি মেয়েটা ভেতরে ঢুকছে।তাতে অবশ্য কোন সমস্যা ছিল না।সমস্যা হল মেয়েটা আমার চাদর পরে নেমে আসছে।আমার মুখ যে লাল হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারি।

আমার লজ্জায় মাথা নিচু করার কথা ছিল।কিন্তু আমি মেয়েটাকে দেখতে লাগলাম।বাসের ভেতর বুঝতে পারিনি মেয়েটা এতটা সুন্দর।অপূর্ব লাগছে তাকে।সে আমাদের কাউকে পাত্তাই দিল না।ওয়াশিং রুমে গেল।
আমরা পরোটা খাচ্ছি।মেয়েটা হাত-মুখ আমার চাদরে মুছতে মুছতে এসে আমার চেয়ারে টোকা দিয়ে বলে, “আমি কি আপনাদের সাথে চা খেতে পারি?”

জবাবের অপেক্ষা না করে চেয়ার টেনে নিয়ে আমার বাম পাশে বসে পরে।সবাই আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যে আমি ইচ্ছে করে মেয়েটাকে ডেকে নিয়ে এসেছি।

সে শুধু এক কাপ চা খেল।ওয়েটারকে ডেকে এক কাপ চায়ের দাম দিয়ে চলে গেল।

সে চলে যাবার পর কবির বলল, “এইবার বুঝছি ও কেন আমাদের সাথে নামেনি।সিস্টেম শিখাচ্ছিল”।

সবাই মাথা নেড়ে সায় দিল।আমি অবশ্য মজাই পাচ্ছি।সবার এখন মুখে মুখে আমি থাকব ভাবতেই ভাল লাগতেছে।তাছাড়া জার্নিটাও তো খারাপ হচ্ছে না।

সবাই বাসে গিয়ে উঠি।মেয়েটি জানালার দিক মুখ করে বসে আছে।আসিব বলে, “আমীন,দোস্ত, তুই আমার সীটে গিয়ে বস।তোর মনে হয় আলোতে ঘুম হচ্ছে না ঠিক মত।তুই তো আবার ঘুম পাগল।”

আমি বলি ,“না থাক দোস্ত,আসছি ঘোরা ঘুরি করতে।কয়টা দিন না হয় নাই ঘুমালাম”।

বাস আবার চলতে শুরু করে।এরপর আর কোথাও থামা নেই।সোজা চট্টগ্রাম গিয়ে থামবে।সেখানে গিয়ে বাস চেঞ্জ করতে হবে।
সুপারভাইজার গান ছাড়ে।কুমার শানুর হিন্দি গান।সুমন বলে, “আরে হিন্দি না,বাংলা রোমান্টিক গান ছাড়েন”।

ব্যাটা বউ নিয়ে আসছে,রোমাণ্টিক হয়ে গেছে।

ড্রাইভার গান ছাড়ে কিনা আমি জানিনা।আমি আমার ফোন বের করে হেডফোন কানে লাগিয়ে দেই।কিছুক্ষণ চেষ্টা করি এফ.এম. রেডিও ধরে কিনা তা দেখার জন্য।না,কুমিল্লাতে নেটওয়ার্ক পায় না।তাই আমি ফোন থেকেই গান শুনতে শুরু করি।বাংলা হিন্দি ইংলিশ সব ধরনের গান মিক্স ।
সবাই জেগেই আছে।পাশে তাকাই,দেখি মেয়েটাও জেগে আছে।আমি সামনে তাকাই।গান শুনি।ফাহমিদা নবীর কণ্ঠে-“কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে রাতের নির্জনে………”।সত্যি আমার কবিতা পড়তে ইচ্ছে করছে।মনে মনে হাসি আমি।

পাশ থেকে কে যেন টোকা দিল।ভাবলাম আমাদের কেউ।দেখি না।মেয়েটি।আমি কান থেকে হেডফোন বের করি।তাকাই তার দিকে।
“কতক্ষণ ধরে ডাকছি,শুনেন না কেন?”মেয়েটি জিজ্ঞেস করে।“তাইতো টোকা দিলাম,স্যরি”।

আমি বললাম, “না ঠিক আছে।স্যরি বলা লাগবে না।আমি গান শুনছিলাম,তাই আপনার কথা শুনতে পাই নি।কিছু বলবেন?”
“না কিছু বলব না।চাদরের জন্য ধন্যবাদ।”আজব তো মেয়েটা।একবার না থ্যাঙ্কস দিল।তাহলে কি আমার সাথে কথা বলতে চায়?
“আচ্ছা ওয়েলকাম”,এইবার বলেই ফেলি।
“আমি কি একটু গান শুনতে পারি আপনার কাছ থেকে”। আমি তো এটাই চাচ্ছিলাম।কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলি, “অবশ্যি পারেন।”বলেই আমার বাম কান থেকে হেডফোনটা বের করে তার বাম কানে নিজেই দিয়ে দেই।পরে মনে হল,নিজে দেয়াটা মনে হয় ঠিক হল না।খারাপ ভাবতে পারে আমাকে।স্যরি বলি।

গান শুনছে,মনে হয় আমার স্যরি তার কানেই ঢোকে নি।

বাস ছুটে যাচ্ছে দক্ষিণ থেকে আরো দক্ষিণে।রাতের আধার ভেদ করে ছুটে ছুটে যাওয়া দেখতে ভালই লাগে।এর আগেও অনেক জার্নি করেছি।কই আগে তো কখনো এত ভাল লাগেনি?
কানে বাজছে-“এই পথ যদি না শেষ হত……………”।

না ,পথ শেষ হয়েছিল।চট্টগ্রামে।


Click This Link (পরের পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৩:৩১
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×