" রুস্তমের পাঠশালা "
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
রুস্তমের ‘লাইক রুস্তম’ হইয়া ওঠার গল্পটা শুরু হুইয়াছিল কতকটা নব্বই দশকের বাংলা সিনেমার মতই! অনার্সে পড়িতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘মুখবইয়ে’ সে যে অসংখ্য লাইক আর ফ্যান-ফলোয়ার কামাইয়া লইয়াছিল সে ঘটনা অনেকেই জানে। কিন্তু জীবন তো আর কেয়া পাতার নৌকা বা বাংলা সিনেমা নহে! যে তাহা এক নির্দিষ্ট খাপে খাপ মিলাইয়া সর্বদা সুচারু রুপে চলিবে। গার্লফ্রেন্ড ময়নার সহিত রুস্তমের বিবাহ প্রায় ঘটিয়াই গিয়াছিল, কিন্তু ময়নার বাবা ‘চৌধুরী সাহেব’ শেষমেশ বাকিয়া বসে। শর্ত জুড়িয়া দেন অনার্স পাশ করিতে হইবে।
এদিকে মা-বাবা হারা রুস্তম অনার্স ফাইনাল ইয়ারে থাকিতেই ভীষণ অর্থ কষ্টে পড়িল। বকেয়া জমিয়া মাসিক অন্তর্জালিক সেবা (নেট কানেকশন) বন্ধ হইয়া যাইবার উপক্রম, আর ময়নাকে লইয়া কেএফসি সে তো দূরঅস্ত! কাজেই অর্থ উপার্জনের একটি পথ বাহির করা অতি আবশ্যক হইয়া উঠিল। সে চিন্তা করিল, যে বিষয়ে সে দক্ষ সেটিকেই অবলম্বন করিয়া কিছু একটা করিতে হইবে। অনেক ভাবিয়া সে মন স্থির করিল ‘মুখবইয়ে’ লাইক ও ফ্যান-ফলোয়ার বৃদ্ধিকরণ নিয়া সে একটি পাঠশালা প্রকল্প চালু করিবে। এই একটি বিষয়ে সে বিশেষ পারদর্শি আর জ্ঞানী লোকেরা কহে গিয়াছেন “হোয়েন ইউ আর এক্সপার্ট এট সামথিং, নেভার ডু দ্যাট ফর ফ্রি!”
যে ভাবনা সেই কাজ, রুস্তম পাঠশালা চালুর আয়োজন শুরু করিল। এলাকার অলিতে গলিতে দেওয়ালে, বিদ্যুতের খাম্বায় আর তার ‘মুখবইয়ের’ পাতায় বিজ্ঞাপন ঝুলিতে লাগিল। বিজ্ঞাপনে লেখা হইয়াছিল- “রুস্তম পাঠশালা” এখানে যত্নসহকারে স্বার্থক মুখবই সেলিব্রেটি হয়ে ওঠার কৌশল এবং লাইক বৃদ্ধির অভেদ্য নিয়ম কানুন শেখানো হয়। কোর্স ফি মাত্র ৭০০ টাকা।
রুস্তম তাহার পাঠশালায় তেইশ জন ছাত্র-ছাত্রী পাইয়াছিল। তাহাদিগের কেউ কেউ আবার কোর্স ফি বকেয়া রাখিয়াই ক্লাস করিতে শুরু করিল। যাহা হউক যথাসময়ে পাঠশালা আরম্ভ হইলো। কলেজের দপ্তরি কমলাকান্তকে ৫০০ টি টাকা ঘুষ দিয়া কলেজের একটি রুম আর একখানা প্রক্ষেপণ যন্ত্র (প্রজেক্টর) বাগাইয়া লইতে সক্ষম হইয়াছিল রুস্তম। তাহাতেই তার পাঠশালা।
টেবিলের উপর সানগ্লাস রাখিতে রাখিতে গলা খাকরি দিয়া রুস্তম শুরু করিল- নিজের পরিচয় পর্ব, অতঃপর ছাত্র-ছাত্রীর দিগে তাকাইয়া তাহাদের নাম ধাম শুনিতে লাগিল। হাজিরা বইয়ে দাগ কাটিয়া রাখিল। প্রক্ষেপণ যন্ত্র চালু করিয়া সকলকে খাতা কলম বাহির করিয়া বিষয়বস্তু টুকিয়া রাখিতে বলিল।
প্রক্ষেপণ যন্ত্রে ভাসিয়া আসিল- “মুখবই সেলিব্রেটি হইবার প্রাথমিক নিয়ম কানুন”
১। নিজ লোকালয়ে ছোটভাই-ব্রাদার, বড়ভাই, ধোপা, মুচি, কামার-কুমার নির্বিশেষে সকলকে মুখবইয়ে বন্ধু করিতে হইবে যাতে তাহারা উপযুক্ত লাইকের যোগান দিতে পারে। মনে রাখিতে হইবে “চ্যারিটি বিগিন্স ফ্রম হোম”। (* প্রাথমিক অবস্থায় খুবই কার্যকরী পদ্ধতি)
২। পারস্পারিক বন্ধুদের (মিউচুয়াল ফ্রেন্ড) মধ্যে নজর রাখিতে হইবে কে সর্বদা মুখবই কার্যক্রম চালাইয়া যায় এবং লাইক দিতে পারঙ্গম। উহাকে জরুরি ভিত্তিতে দলে ভিড়াইতে হইবে।
৩। কোন মতেই মুখবইয়ে ঘনঘন পার্শ্বচিত্র (প্রোফাইল পিক) পরিবর্তন করা যাইবে না। একের বেশি দুটি পার্শ্বচিত্র না থাকাই উত্তম। (*এটি অত্যাধিক গুরুত্বপুর্ণ একটি নির্দেশনা)
৪। ঢাকনি বা প্রচ্ছদ চিত্রে (কভার পিক)ঋষি-মনীষীদের জ্ঞানী-গুণী বক্তব্য থাকিলেই ভালো। নিজের ব্রণ খচিত কিংবা ভেকচানো মুখমন্ডলের ছবি না টাঙানোই উত্তম। অবশ্য ঢাকনি চিত্রে মজার মজার কথা বার্তাও লেখা যাইতে পারে।
৫। মা-বাবার সাথে কাটানো সুসময়, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়া রঙ তামাশা এই জাতীয় বিষয়বস্তুর ছবি মুখবইয়ে প্রকাশ করা যাইবে না। কার্যত কোন রকম পারিবারিক ছবিই উৎপাদন না করা ভালো। মনে রাখিতে হইবে সকলে তোমার সুসময়, পারিবারিক রঙ্গলীলা এসব দেখিতে তোমাকে অনুসরন করিবে না। বরং উপদেশ বানী, চলতি হাওয়া কথন এইসব জানিতেই অনুসরণে(ফলো) সকলে ব্যাগ্র হইবে।
৬। চলতি হাওয়া কথন ক্রমান্বয়ে লিখিয়া যাইতে হইবে। বাতাস যেদিকে যাইবে লেখা সেদিকে টানিতে হইবে। সর্বদা চলতি হাওয়া সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রাখিতে হবে, এবং সকলের আগে সেটিকে ভিন্ন মাত্রায় তুলিয়া ধরিতে পারিলে বেশি লাভ হইবে।
৭ নিজ বক্তব্যের আগে নিজ বন্ধু-অনুসারীদের মনোভাব বুঝিয়া লইতে পারিলে ভালো। তা হইলে সেই মোতাবেক বক্তব্য পেশ করিতে হইবে।
৮। আগামীকালের জন্য সর্বদা লেখা প্রস্তুত রাখিতে হইবে। সময়-সুযোগ বুঝিয়া তাহা পেশ করিতে হইবে।
এমনি কিছু সাধারণ বিষয় লইয়া আলোচনা করিয়া রুস্তম তাহার পাঠশালার প্রথমদিনের ইতি টানিয়াছিল। এরপর রুস্তমের পাঠশালায় কিরুপ অগ্রগতি বা কি পরিণতি ঘটিয়াছিল এবং তাহার পাঠ দান প্রক্রিয়ায় "লাইক বৃদ্ধির অভেদ্য নিয়ম কানুন" কিভাবে শেখানো হইয়াছিল সে গল্প আরেকদিন বলিব। আজ এ পর্যন্তই থাকুক।
(রুস্তমের পাঠশালা - লাইক রুস্তম স্পেশাল এডিশন)
১০ মে ২০১৪
দেখতে পারেনঃ সিকুয়্যাল - লাইক রুস্তম™ (একজন ফেসবুক আসক্তের গল্প)
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?
মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন
অভিনেতা
বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়
প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)
সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন
তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?
আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন