সামনে নববর্ষ!
বাবা আমাকে একটা নীল শার্ট কিনা দিবা?
রফিক সাহেবের চোখ খাবারের থালা থেকে ছেলের দিকে চলে গেল।ছেলে খাচ্ছে না।সে তার বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।বাবার উত্তর শোনার জন্য অপেক্ষা করছে। আবদারের সেই মায়াময় চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছেনা রফিক সাহেব।ছেলেটা ঠিক তার মায়ের মত চোখ পেয়েছে।মা বেঁচে থাকলে হয়তো তার কাছে শার্টের আবদার করতো।
ছেলেকে ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছেনা।রফিক সাহেব একবার টেবিলে রাখা চিঠিটার দিকে তাকালো।গতকাল ছেলের স্কুল থেকে চিঠি এসেছে।এক অংশে লেখা- আপনার ছেলে অনেক মেধাবী ছাত্র।আপনার ছেলেকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে পেয়ে গর্বিত।আরেক অংশে লেখা- পুর্বের দুই মাসের বেতন বাবদ আপনার ছেলের স্কুল ফি এত টাকা এখনো বকেয়া রয়েছে।
ছেলের স্কুলের ফি ঠিক সময়ে দিতে না পারার ব্যর্থতাকে আজকাল রফিক সাহেবের কাধে বড্ড ভারি লাগে।
রফিক সাহেব ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো-
-নববর্ষে নীল শার্ট কেনো?
ছেলের অতি সহজ উত্তর-
-বাবা আমার নীল পছন্দ।
রফিক সাহেব আবার খাওয়া শুরু করলো।ছেলে এখনো তাকিয়ে আছে।সে উত্তর এখনো পায়নি।রফিক সাহেব ছেলের দিকে না তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল- ঠিকাছে কিনে দিবো,এখন খাবার শেষ করো।
বাবার রহস্যের সেই মুচকি হাসিটায় এখন হয়তো ছেলেটা তেমন কিছু খুঁজে পায়নি।বয়সের সাথে সাথে ছেলেটা একদিন তার বাবার হাসিটা আয়ত্ত করে ফেলবে,আর এটা রফিক সাহেব জানে।
ছেলের চোখে-মুখে এখন আনন্দের ছাপ।সে বাবার রান্না করা ছোট মাছ দিয়ে তরকারি টা খুব তৃপ্তি করে খাচ্ছে।বাবার রান্না নিয়ে ছেলের কোনো মন খারাপের বিষয় নেই।পোড়া ভাত হোক আর তরকারি কাঁচা বা লবণ কম হোক,তাতে কিছু আসে-যায়না। রফিক সাহেব আরো একবার ছেলের দিকে তাকালো।ছেলে এখন তার বাবার দিকে তাকিয়ে নেই।সে খাওয়ায় ব্যস্ত।তাকে খাবার শেষ করতে হবে।বাবা বলেছে খাবার শেষ করতে।
#আরিয়ান রাইটিং
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৫৫