somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেখার মর্যাদা

১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন তিন তলার এক ফ্ল্যাটে মেস করে থাকতাম। আমার সাথে এক ছোট ভাই ছিল।হুটকরে একদিন আমাকে সে বলল-

-অর্ক ভাই,আমার এক বড় ভাই এখানে এসে কিছুদিন থাকতে চায়।আপনার কোনো সমস্যা হবে নাতো?
-সমস্যা হবে কেনো,সমস্যা নেই।

সমস্যা নেই বললেও আসলে একটা সমস্যা ছিল,তা হচ্ছে শোয়ার সমস্যা।তবে মেসে যারা থাকে তারা কখনই এটাকে সমস্যার চোখে দেখেনা।এ এক অদ্ভূত সাইকোলজিকাল বিহেভিয়ার।এর কোনো ব্যাখ্যা নেই! তবে এটা নিয়ে তাকে আমি কখনই মাথা ঘামাতে দেখিনি। সে ফ্লোরে ধপাস্ করে শুয়ে ঘুমিয়ে পরতো। স্বভাব গত কারনে আমি তার সাথে তেমন একটা কথা বলতাম না।একই রুমে থাকতাম,খেতাম, ঘুমাতাম অথচ, তার সাথে কথা দুই মাসে দু তিনবারের বেশি হয়নি।
বেশির ভাগ সময় তাকে লিখতে দেখতাম। খাতা ভর্তি করে তার লেখা।সব সময় লিখতো বলে একদিন কৌতূহল হল তার লেখা দেখার,আসলে সে কি লেখে এত? একদিন দুপুরবেলা তাকে ঘুমাতে দেখে তার লেখার খাতাটা হাতে নিলাম। দেখলাম খাতায় সে ছোট গল্প আর প্রবন্ধ লিখেছে।আমি পড়া শুরু করলাম।যতই পড়ছি ততই অবাক হচ্ছি। এক পর্যায়ে নিজের মাথায় হাত দিয়ে চুল টানতে টানতে অজান্তেই বললাম - এত সুন্দর করে সে লেখে কিভাবে।মায়ার এক অদ্ভূত জাল লেখার প্রতিটা লাইনে লাইনে মাকড়শারজাল হয়ে আটকে আছে।
দু'মাস থাকার পর সে যখন চলে যাবে আমি তখন মুখ ফসকে বলেই ফেল্লাম-

-আপনার লেখার হাতটা অসাধারন!

তিনি একটু মুচকি হেসে ধন্যবাদ দিলেন।আমি তখন প্রশ্ন করে বসলাম-

-আচ্ছা, কোথায় লেখেন আপনি? কোনো পত্রিকা বা ত্রৈমাসিক পত্রিকায় কি লেখেন?

তিনি বিষণ্ন মনে বললেন-

-না,চেষ্টায় আছি।আগে বিভিন্ন ব্লগে লিখতাম,ফেইসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যেও লিখতাম।এখন আর আগের মত লেখা হয়না।আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।
-কেনো বলুন তো?
-আমি এই ধরনের যায়গায় লেখালেখি করে অনেক দেখেছি।বেশির ভাগ সময় যে বিষয়টি লক্ষ্য করেছি তা হচ্ছে পরিচিতি।পরিচিত মানুষকে প্রাধান্য দেয়া হয় বেশি,অদ্ভূত ভাবে নতুন কে কি লিখছে তা কেউ দেখে না। লেখার লেভেল কে মূল্যায়ন করা হয় অন্যরকম করে, ব্লগের ক্ষেত্রে ভিউ দেখে আর ফেইসবুকে দেখা হয় লাইক দেখে। তাছাড়া যারা মূল্যায়ন করে তাদের মধ্যে অনেকেই লেখালেখির মানেই বুঝেনা! অনেক গুরুত্ব পূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে কেউ হয়তো লিখেছে।অথচ, দেখেছি তার সেই লেখা পরেই রয়েছে।তাকিয়ে দেখার কেউ নেই!...

অনেক রাগ আর অভিমান নিয়ে সে এক নিশ্বাসে বলে গেল।আমি চুপ করে শুনলাম।তার পর বললাম-

-আপনার সব লেখার মধ্যে এমন কিছু লেখা তো অবশ্যই আছে, যা সবথেকে ভাল লেখা ছিল।
-হ্যাঁ, তাতো আছে। তবে অনেক আগের।
-আপনিতো সেইগুলোর কয়েকটা ভাল সম্পাদকের কাছে পাঠাতে পারেন।দেখতে পারেন তাদের ফিডব্যাক টা কেমন আসে।
-কিন্তু পুরোনো লেখা...
-রবীন্দ্রনাথের লেখাও তো পুরোনো, তার মানেতো এই না যে তার লেখা কেউ পড়বেনা! লেখার কখনো বয়স হয়না।

এটাই ছিল তার সাথে আমার শেষ কথা আর শেষ দেখা।এর পর তার সাথে কখনই দেখা হয়নি।তার চলে যাওয়ার এক মাস পর আমিও মেস থেকে চলে আসি। অনেক গুলো বছর পারকরে ফেলেছি।আমি আর এখন মেসে থাকিনা।ছোট একটা চাকরি করি। বাসাথেকে প্রচুর বিয়ের চাপ সামলাতে না পেরে বিয়েটা বাধ্য হয়ে এক পর্যায়ে করেই ফেলি।ঢাকা শহরের চিপাচাপা এক ফ্ল্যাটে দুই জন মানুষ এখন সংসারটা কোনোরকম গুছিয়ে রাখায় ব্যস্ত।
এমনি এক ব্যস্ত সকালে চা খেতে খেতে পত্রিকায় চোখ রাখলাম। একটা লেখায় চোখ আটকে গেল। কেমন একটা পরিচিত লেখার ছন্দ,একটা মায়ার জাল আমি অনুভব করতে লাগলাম।মাথার ভিতরে পুরোনো স্মৃতি গুলোর মধ্যে একটা গুগোল সার্চ হতে লাগলো।কোথায় যেনো পড়েছি?
লেখাটার একদম শেষে এসে যখন নামটা দেখবো।তার ঠিক উপরে একটা ছোট্ট লাইনে এসে আটকে গেলাম!

--কেউ বলেছিল- "লেখার কখনো বয়স হয়না।"

আমার চোখ এই লাইনটি দেখে মুগ্ধতার ছোট ছোট শিশির বিন্দু একটু একটু করে জড়ো করছে।আমার স্ত্রী আমাকে অদ্ভূত ভাবে পত্রিকার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাস করলো-

-তোমার কি কিছু হয়েছে? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

আমি পত্রিকা থেকে চোখ না সরিয়েই বললাম-

-তোমার লিকার চা টা অসাধারন হয়েছে!!
-কিন্তু ঐটা তো লিকার চা না!...

#আরিয়ান_রাইটিং
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৩৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×