somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আরিয়ান রাইটিং
"হারিয়ে যাওয়া মানুষ দ্বিতীয় বার হারায়না, হারিয়ে যেতে চাইলে তাকে ফিরে আসতে হবে। আমি বার বার ফিরে এসেছি, বার বার হারিয়ে যাওয়ার জন্য " --- আমি

মধ্যবিত্ত

০৭ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছেলে কখনো বাবার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারেনি।
যেখানে "অপদার্থ ছেলে" নামক এক শিরোনামে বাবার প্রতিটা কথা শুরু হয়,সেখানে ছেলে হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলার জন্য সত্যি সাহসিকতার প্রয়োজন। সেই ছেলে যদি অনেক ক্ষুদ্র কিছু করতে পারে তখন তার ইচ্ছে হয় একটু বুক ফুলিয়ে বাবার সামনে দাঁড়াতে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনা। কিছু বলার জন্য দরজার সামনে হাটা হাটি করতে থাকা এক জোড়া পা ব্যস্ত ভঙ্গিতে চলতে থাকে। হঠাৎ পর্দার আরাল থেকে কখনো যদি বাবার চোখে বিষটি ধরা পরে যায় তখন ধমকের সুরে শুনতে হয় "কিরে গাধা,ওখানে ডায়বেটিক্স রোগির মত বারবার হাটছিস কেনো? কিছু বলবি?" ছেলে মিনমিন করে বলে কেটে পরে "কিছুনা বাবা,এমনি!"
নিজের রুমে বসে ছোট্ট এক নিশ্বাস ফেলে ভাবে - "আজকেও বলতে পারলাম না"। বলবে কি করে,অভ্যাসটা তো নেই।

এমন অনেক অনুভূতি আছে যা বেশি দিন লুকিয়ে রাখা যায়না,তাই বাবার সামনে থেকে ছেলের মুখটাই লুকিয়ে রাখতে হয়।কারন ছেলের কাছে এটাই সব থেকে সহজ কাজ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা এক ধরনের দায়ের বোঝা অনুভব করতে শুরু করে। আপনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান না হলে লিখে এই অনুভূতি বোঝানো সম্ভব না।

কিছু বিষয় ভাষা জগতের বাইরে থাকে। কাউকে যেমন বোঝানো যায়না ঠিক তেমন করে সহ্যও করা যায়না। এক পর্যায়ে হাসিখুসি থাকার মানে হারিয়ে ফেলা। অযথাই নিজের চুপচাপ থাকার জগত তৈরি করে ফেলা। এমন এক জগত যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ।ভাল লাগার বিষয় গুলো ভাল না লাগার বিষয়ে কবে পরিবর্তন হয়ে যায় সে নিজেও জানেনা।
বন্ধুরা মিলে যখন চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বসে বিভিন্ন খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত থাকে, তখন টি স্টলে বসে এক কাপ চা আর একটা সস্তা সিগারেটে যেনো ভালবাসা আর জীবনের মানে খুঁজে চলা। ছোট ছোট ধোয়াটে নিশ্বাসে যেনো দিনকে দিন সে শিখে-এখানে ভালবাসা বড়ই ধূসর প্রকৃতির।

ব্যস্ততার দিন শেষে ঘরে ঢুকতেই যখন ছোট বোনটি রুমে এসে বলে, "ভাইয়া, আমার কানের দুলটা এনেছো?ঐ দিন যে বললাম মামুন ভাইয়ের দোকানে নতুন এসেছে... "
ভাই হয়ে ছোট বোনটির সাথে ইনিয়ে বিনিয়ে মিথ্যা বলতে হয়, "আরে যাহ্,ভূলেগেছি! কাল এনে দিবো"
ছোট বোনের কিছু বোঝার বাকি থাকেনা।বোনটা যে তার এই উঠোনেই বড় হয়েছে। ভাইয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বোনটিও বলে "ভাল করেছো ভূলে গিয়েছ,আমার তো কানের দুল খুব একটা ভাল লাগেনা, তাছাড়া পরাও হয়না। আনতে হবেনা ভাইয়া"
বোনের রুক্ষপ্রকৃতির মুখটা সেদিন কোনো ভাই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখার শক্তি যেনো হারিয়ে ফেলে।

সেই ছেলেই হয়তো একদিন সাহস করে বাবাকে একটা ফোন করেই ফেলে। সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার থেকে বাবার কাছে ফোন কল করাটা যেনো একটু সহজ!

বৃদ্ধ বাবার কমদামি ফোনটি বেজে উঠে।
ছেলে ফোন করেছে...

ফোনের ঐ পাশ থেকে ছেলের ভাঙা কন্ঠে সংক্ষেপে বলা "বাবা,চাকরিটা হয়েগেছে"।

অশ্রুসিক্ত চোখ বাবার অসাধারণ ব্যক্তিত্বের সাথে মিশে থাকা চশমাটা কে কেমন ঘোলাটে করে দিয়েছে,সেটা ছেলে আর দেখতে পেলোনা। চশমা খুলতে খুলতে আবেগ প্রবন বাবা আজকেও বলে উঠলো-"শুনছো, তোমার অপদার্থ ছেলে চাকরি পেয়েছে।"

মা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে,অজানা সুখের দু'ফোঁটা চোখের জল তার মলিন আঁচলে মুছতে ব্যস্ত হয়ে যায়।

বাবা-মা কখনই জানতে পারেনা,তাদের ছেলে কে বলা "অপদার্থ" শব্দটাকে ঘিরে কত ভালবাসা লেপ্টে আছে।
আর ছেলে জানতে পারেনা,এই "অপদার্থ" শব্দটা তাকে কবে পদার্থে রূপান্তরিত করেছে।

উৎসর্গঃ সকল মধ্যবিত্ত অপদার্থদের কে!

#অপদার্থ
#সুপ্ত_জীবন_চক্র

#আরিয়ান_রাইটিং
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:২৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের কবিতা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৪



বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, লক্ষ প্রাণে লেখা বিজয়ের
সেই সোনালি অক্ষর,
দিকে দিকে শুনি জয়ধ্বনি বাংলাদেশের নামে, এই
স্বাধীনতা কেনা রক্তের দামে;
হৃদয়ে হৃদয়ে বাজে মুক্তির শত গান, ডিসেম্বরে
পেয়েছি আমরা বিজয়ীর সম্মান;
মার্চের সেই অমর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×