somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভার্সিটির সেইদিন | A love story

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভার্সিটির প্রথম ক্লাস করতে যেয়ে একটু ভয়ে ছিলাম।ক্লাসে যাওয়ার আগে অনেক্ষন বাইরেও বসেছিলাম।ক্লাসে প্রবেশ করার আগে মনে মনে প্রেক্টিস করতে লাগলাম- কিভাবে কথা বলবো,কিভাবে হাসবো,কিভাবে স্যারদের সাথে কথা বলবো। প্রথম ক্লাসে একটু পরিপাটি,একটু গুড লুকিং ধরনের বিষয় আছে না!
তথ্যগুলো পেয়েছি এক পরিচিত একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের সাগর ভাইয়ের কাছ থেকে। আমাকে একদিন ডেকে বলে "শোন রাফি! যা টিপস্ দেই সেইগুলা খালি মেনে চলবি বুঝলি,বাকিটা সে সামলে নিবে"। বাকিটা ঠিক কে সামলে নিবে বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলাম - "ভাই, কে সামলে নিবে? "
সাগর ভাই প্রশ্ন শুনে কিছুখন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।তারপর বিড়বিড় করে বলল "একে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা"। এটা শুনে জানতে ইচ্ছে হলো ঠিক কি হবেনা। কেন জানি আর প্রশ্ন করা হয়নি। সাগর ভাই আরো অনেক কিছু বলল- "মেয়েদের সাথে কথা বলার সময় তাদেরকে প্রায়রিটি দিতে হবে,হাসির কথা বললে সুন্দর করে হাসতে হবে তার পর...ব্লাব্লা"
সাগর ভাইয়ের কথা থামিয়ে প্রশ্ন করলাম "ভাই প্রায়রিটি কিভাবে দেয়?" সাগর ভাই আবারো আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমার প্রশ্ন শুনে সাগর ভাইয়ের রুমমেট ফিক করে হেসে দিলো। নিজেকে নিজেই বলতে লাগলাম, এটা কিছু হইল! আমিতো কিছুই বুঝতেছিনা। তাহলেকি প্রশ্ন করবোনা? আমার আবার একটু একটু কান্নার ভাব হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছিনা বলে! সাগর ভাই আমার চোখে সাগরের নোনা জলের আভাস দেখতে পেলো! ভাই ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল- "ধর তোকে কোনো মেয়ে কিছু বলছে,তখন তুই সেই কথাটা মনোযোগ দিয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে শুনছিস,এটাই প্রায়রিটি দেয়া বুঝছিস্? " আরো অনেক কিছু বলল কিন্তু এত কিছু কি মনে থাকে।আমি রীতিমত টেনশনে পরে গেলাম এই ভেবে ভার্সিটিতে পড়ার জন্য এসেছি নাকি মেয়েদের সাথে কথা বলতে এসেছি!! মুখ ফসকে বলে ফেললাম,

--বুঝতে আসলে সমস্যা হচ্ছে!

পাশে বসা হলুদ জামা পরা মেয়েটা বলল- "কি সমস্যা?"
আমি ভেবলার মত ডানে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম এই মেয়ে কখন পাশে এসে বসলো।সে আবারো জানতে চাইলো "কোনো সমস্যা?" আমি বললাম "কোনো সমস্যা নেই,এমনি একটা কথা ভাবছিলাম,সেটা মুখ দিয়ে বেরহয়ে গেছে!"। সে আমাকে আগা পাঁচতলা দেখে আবার তার বান্ধবির সাথে কথা বলতে লাগলো। আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি,তার চুলগুলো কি সুন্দর।হাতটাও কি সুন্দর এদিকওদিক ছুড়ে দিয়ে কথা বলছে! মেয়েটা আবার আমার দিকে তাকালো,কিন্তু আমি সেটা খেয়াল করিনি। মেয়েটা এবার বলল-

-- কি ব্যাপার! কি সমস্যা আপনার?
-- জ্বি! কোনো সমস্যা নেই।
-- তাহলে তাকিয়ে আছেন কেনো?
-- জ্বি! স্যরি।
--নতুন নাকি?
--জ্বি!
--এত জ্বি জ্বি কর কেনো?!
--জ্বি?!

এ পর্যায়ে মেয়েটির পাশে বসা বান্ধবি আমাকে খুব আদর করে ডাকলো,

--এদিকে এসো ভাইইইয়া...!

এমন আদরের ডাক আমার মা-বাবাও কোনোদিন ডাকেনাই !কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছিল তখন! আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। তার বান্ধবি মোবাইল টিপতে টিপতে বলল,

--জানো? এই আপুটা কে?
--না!
--আইরিন আপু! থার্ড ইয়ারের।
--ওহ,আচ্ছা!
--তোমার এই আপুকে একটা গান শুনাও!

আমি মেয়েটার দিকে ভেবলা হয়ে তাকিয়ে রইলাম!

--কি হইছে? গান কর!
--আমিতো গান পারিনা আপু!
--ওলেলে..! গান পারনা! তাহলে কি পারো?

আমি চুপ করে আছি,কি করবো বুঝতে পারছিনা। হুটকরেই দেখি আইরিন আপুর বান্ধবিটা ধমক দিয়ে বলল,

--গান কর!!!

ধমক খেয়ে আমি ফটকরে আইয়ুব বাচ্চুর "সেই তুমি" গান গাইতে শুরু করলাম।আমি জীবনে কোনোদিন কারো সামনে গান গাইনাই,কিন্তু এখন গাচ্ছি! প্রথম লাইন গাইলাম ভাঙা গলায়,তারপর দ্বিতীয় লাইনটা যখন গাইতে ছিলাম "সেই আমি কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম" তখন কি মনেকরে যেন আমি আইরিন আপুর চোখের দিকে তাকালাম। এরপর আর একলাইনো গাইতে পারিনি! আইরিন আপু দেখি কিভাবে জানি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা কোমল কন্ঠে আমাকে বলল,

--আর গাইতে হবেনা,তুমি যাও!

আমি বড় বড় পা ফেলে ভার্সিটি থেকে অনেক দূর চলে আসলাম। একবার পিছনে তাকিয়ে ছিলাম,দেখি আইরিন আপু তখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে পরে দৌড় হাটা দেয়া শুরু করলাম। চোখের চশমা ঘোলা দেখে খুলে দেখি চোখের পানিতে ভিজে গেছে। আমি বুঝিও নাই যে গান গাওয়ার সময় থেকে আমি কেঁদে যাচ্ছি!
অনেক দূর এসে রাস্তার পাশে বসার জায়গা পেলাম।সেখানে অনেক্ষন বসে ছিলাম। নিজেকে নিজেই অনেক প্রশ্ন করতে লাগলাম,এত ইমোশনাল কেনো আমি?

আর এভাবেই আমার ভার্সিটির প্রথম ক্লাসটা আর করা হয়নি। প্রথম ক্লাস বললে ভুল হবে,প্রথম সাত-আট্টা ক্লাস করা হয়নি। মা জানতে চাইতো ক্লাসে কেনো যাইনা ? আমি একটা কিছু বলে দিতাম।আমি এত ইমোশনাল দেখে ঠিক করেছিলা ক্লাস আর করবোনা।কিছুটা নিজের উপর রাগ করেই সিদ্ধান্ত নেয়া।
তারপর হঠাৎ একদিন মা আমার রুমে এসে বলে,

--তোর ভার্সিটির এক বান্ধবি আসছে। ভার্সিটিতে গেলি একদিন আর একদিনেই তোর বান্ধবি!!বাবারে বাবা! ড্রয়িংরুমে বসে আছে,দেখা কর!

মার কথা শুনে আমি থ খেয়ে গেলাম। বান্ধবি... মানে কি?!বান্ধবি কোথা থেকে টপকালো?
বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠলাম,একটা টি-শার্ট গায়ে দিয়ে ড্রয়িংরুমে গেলাম। তারপর যা দেখলাম তা বিশ্বাস করি কি করে। এটা কোনো বান্ধবি না,এটা সেই আইরিন আপু!! এ তো খুবি ডেনজারাস দেখছি!বাসা জানলো কি করে? আমি আবার ভেবলার মত তারদিকে তাকিয়ে আছি! আমাকে দেখে আইরিন আপু বলল,

--কি, তুমি ক্লাসে যাওনা কেনো?এদিকে এসো!

আমি আস্তে আস্তে কাছে গেলাম।আমার হাতে একটা চিরকুট দিয়ে বলল,

--কালকে থেকে ক্লাসে যাবে,ঠিকাছে?

আমি চুপ করে আছি,কিছুই বলতে পারতেছিনা।

--কি?কালকে আসবেতো?
--জ্বী আসবো।

তারপর আইরিন আপু চলেযাবে বলে উঠে পরলো। মা বলল নাস্তা করে যেতে,কিন্তু শুনলোনা।আইরিন আপু চলে যাবার পর মা জিজ্ঞাসা করলো,

--তোর এই বান্ধবিকে একটু বড় বড় মনে হয়না?

আমি মার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালাম। মা আর কিছু না বলে তার রুমে চলে গেল। আমি হাতের চিরকুট খুললাম। গোটাগোটা অক্ষরে সেখানে আইয়ুব বাচ্চুর গানের কথা লেখা,

"তুমি কেন বোঝনা তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়,
আমার সবটুকু ভালবাসা তোমায় ঘিরে,
আমার অপরাধ ছিল যতটুকু তোমার কাছে
তুমি ক্ষমা করে দিও আমায়।"

এর পর কি হয়েছে আপনারা সেটা জানেন!
আমার চশমাটা আবার খুলতে হয়েছে ,কারন সেটা আবার ঘোলা দেখাচ্ছিল!
.
#ছোট_গল্প
#আরিয়ান_রাইটিং
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:০৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×