১। আজ থেকে পনেরো বছর আগে ২০ ০ ৫ সালের ১ ৭ ই অগাস্ট সারাদেশের ৬৩ টি জেলায় একসাথে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল , তখন এখনকার মত এতো বেশি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আর সংবাদপত্র ছিলোনা । মোবাইল এর জমজমাট অবস্থা তখন কেবলমাত্র শুরু হয়েছিল , কিন্তু তারপরেও সারাদেশে খবর পৌঁছে যেতে সময় লাগেনি । আমার মনে আছে আমি তখন সবে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কোচিং করছিলাম , সেই প্রয়োজনেই প্রতিদিন ফার্মগেট এলাকায় যেতে হতো । তখন রেজাল্ট পাবলিশড হয়নি , আমাদের কোচিং সেন্টারের খুব কাছেই বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল , এক ভয়াবহ আতংকের মধ্যে আমরা দ্রুত ক্লাস শেষ করে তাড়াহুড়া করে বাসায় এসে পৌঁছাই, এই ঘটনার কয়েকমাস পর বরিশালে আদালত চত্বরে হামলায় দু জন বিচারপতি নিহত হন । তারপর আবারো একই কায়দায় আদালত চত্বরে হামলায় আরো বেশ কিছু মানুষ নিহত হয় । ওই বছরটা খুব কঠিন একটা সময় গিয়েছিলো , সত্যি ভয়াবহ একটা সময় পার করে এসেছি আমরা।
২। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পঁয়তাল্লিশ বছর পার হয়ে গেছে । বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দীর্ঘ একুশ বছর পর আওয়ামীলীগ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে । পরে আবার সাত বছর বিরতিতে ২ ০ ০ ৮ সালের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আওয়ামীলীগ আবার ক্ষমতাসীন হয় রাষ্ট্রক্ষমতায় । সেই থেকে আওয়ামীলীগ দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছে। কিন্তু এতদসময়কালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে কোনো সুপরিকল্পিত কিংবা সুবিন্যস্ত গবেষণা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক নামে একটি পদ তৈরী করা আছে বটে কিন্তু কোনো বৃহৎ আঙ্গিকে গবেষণা এখনো প্রতীয়মান হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড এই উপমহাদেশের ইতিহাসে বর্বরোচিত ঘটনা গুলোর মধ্যে একটি। এর মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের প্রভাব যেমন ছিল রাজনৈতিক তেমনি সামাজিক। আমার মনে হয় বিভিন্ন আঙ্গিকে এই হত্যাকাণ্ডের উপর একাধিক গবেষণা হওয়া উচিত । এবং তা হওয়া উচিত এমফিল কিংবা পিএইচডি লেভেলে । একনাগাড়ে নিবিড়ভাবে কোনো বিশিষ্ট অধ্যাপক কম ঐতিহাসিকের সুপারভিশন কয়েকজন ছাত্র বেশ কয়েক বছর ধরে গবেষণা করলে বহু তত্ত্ব ও উপাত্ত বের হয়ে আসবে যার মধ্যে দিয়ে উন্মোচিত হবে এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা , এর সাথে সরাসরি ও নেপথ্যের লোকজনের সংযোগ , বিদেশী শক্তির ইন্ধন , হত্যাকান্ড সংগঠন ও হত্যা পরবর্তী বাংলাদেশের গতিধারা বদলে দেয়া ও যারা এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন তাদের কথা।
৩। বাংলাদেশের ইতিহাসে যতগুলো সরকার ক্ষমতাসীন ছিল তার মধ্যে সবচাইতে যুগান্তকারী সময়কাল হিসেবে ধরা যায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম শাসনামলের সময়কালটা ( ১ ৯ ৯ ৬ -২ ০ ০ ১ । সেই সময় দেশের প্রভূত উন্নয়নের সাথে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা ছিল তা হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা খুবই সহজ ছিল , জিনিসপত্রের দাম ছিল একেবারেই হাতের নাগালে , ওই সময়ককালেই চালের দাম কেজিতে ১ ০ টাকা চলে এসেছিলো যা এখনো মানুষের মুখে ফেরে ১ ০ টাকা কেজি চাল !!! সয়াবিন তেলের দাম ছিল ২ ৬ টাকা লিটার। অনেক বড় বন্যা পরিস্থিতির পরেও দেশের অর্থনৈতিওক অবস্থা ভালো ছিল । সেই সময় মন্ত্রিসভায় শাহ এ এম এস কিবরিয়া , এ এস এইচ কে সাদেক সহ অনেক গুণী ব্যাক্তির উপস্থিতি ছিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ওই শাসনামলের শেষে শেখ হাসিনা স্বইচ্ছায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিকট শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল , বাংলাদেশে ইতিপূর্বে কখনো শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার হস্তান্তর হয়নি। সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনা ইতিহাস তৈরী করেছিলেন। আমার মতে উনার জীবনের সেরা অর্জনগুলোর মধ্যে এটি একটি যে সমস্ত লোভ লালসার উর্ধে উঠে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর।
৪।
উপরের বিজ্ঞাপনটা ১৯৭৯ সালের একটি বিজ্ঞাপন। হটাৎ ফেসবুকে বিজ্ঞাপনটি চোখে পড়লো। এতে দেখা যায় ১৯৭৯ সালে জিগাতলায় জমির দাম কত সস্তা ছিল। এতে দেখা যায় প্রতি কাঠা প্রতি জমির দাম ছিল ৬,৫ ০ ০ /= টাকা। তাও আবার তিন কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য। তখন নবম গ্রেডের একজন কর্মকর্তার মাসিক বেতন ছিল ৭৫০ /= টাকা। মাসের বেতন থেকে ৩ ০ ০ /= করে বাঁচালে দুই বছরের টাকা জমিয়ে প্লট কেনা তার পক্ষে সম্ভব ছিল। এখন জিগাতলায় প্লটের দাম কাঠাপ্রতি কোটি টাকার ও বেশি , একজন কর্মকর্তা তার মাসের পুরো টাকা জমিও দশ বছরে তার পক্ষে প্লট কেনা সম্ভব হয় না , যদি সে কিনা সৎ থাকে। অসৎ হলে কথা ভিন্ন। কিন্তু ১ ৯ ৭ ৯ সালে সৎ ভাবে জীবনযাপন করেই সেটা সম্ভব ছিল। জীবনযাত্রার মান কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে !!!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:৩৪