একটা সময় ছিলো যখন প্রেম ভালোবাসার কথা বললেই মেয়েরা লজ্জায় লাল হয়ে যেতো || একটা ছেলে একটা মেয়েকে প্রপোজ করতেই লেগে যেত অনেকদিন || অনেকদিন পিছে পিছে ঘুরে আড়চোখে চেয়ে থাকতে থাকতে দুজনই যখন হাপিঁয়ে উঠতো তখনই ভালোবাসার কথা বলতো একজন আরেকজনকে || ভালোবাসি কথাটা বলতেই দীর্ঘ সময় লেগে যেতো || যাকে বলবে তাকে পাওয়ার একটা ইচ্ছা, আকাঙ্খা থাকতো প্রবল || মেয়েটিও পরিবারের কথা ভেবে, সমাজের কথা চিন্তা করে তারপর ছেলেটির প্রশ্নের উত্তর জানাতো || ভালোবাসা হয়ে গেলেও দেখা হতো কম,কথা হতো কত ভেবে চিন্তে || কেউ দেখে ফেলবে,কেউ জেনে ফেলবে,এই ভয়ে দুজনই কাচুমাচু অবস্থা ||
অনেকদিন দেখা না হওয়ার ফলে দুজনই থাকতো অস্থির || একটা মনের প্রতি আরেকটা মনের টান,একজনের প্রতি আরেকজনের ভালোবাসা থাকতো নির্ভেজাল || বহু কষ্টের পর প্রিয়তমার হাতটা একটু ধরতে দেরি হতো কিন্তু এক জটকায় সেটা ছাড়াতে দেরি হতোনা || ভয়ে বলেই ফেলতো এই কি করছেন ? কেউ দেখে ফেলবে,আমি এখন যাই || একযুগ পর দেখা হলেও প্রিয় মানুষটিকে ঠিকই চিনে নিত || বিপরিত মানুষটাও অপেক্ষা করতো যুগের পর যুগ || সেই সময়ে কোনো মেয়ে কোনো ছেলেকে প্রপোজ করা, ভালোবাসার কথা বলা, চাঁদের দেশে পা রাখার সমান ছিল || অথচ আজকাল ভালোবাসার কথা বলতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট || চেনা নেই,জানা নেই,কোনোদিন দেখাও নেই এমন একজনকে ও নির্দিদায় বলে দেয় ভালোবাসি || অপর প্রান্ত থেকেও কোনো ভাবনা ছাড়া,চিন্তা ছাড়া হ্যা বলে দেয় ||
তারপর শুরু হাত ধরাধরি || নেই কোনো ফিলিংস,নেই কোনো ভাবনা || একদিন দেখা হলো,দুদিন দেখা হলো -- ব্যাস দুদিনেই প্রেম সাগরে ভাসতে শুরু করল ,ছেলেটির বলতে দেরি হলে মেয়েটি বলে দেয় ভালোবাসি || এভাবে দুইদিনে গড়ে উঠা সেই প্রেম কাহিনীর মেয়াদ কিন্তু ঐ দুদিনই থাকে ||
একটা সময় ছিল মেয়েদের বিয়ের কথা উঠলেই নিমিষেই সবার সামনে থেকে আড়ালে চলে যেত || মুখটা লজ্জারাঙা হয়ে যেত মেয়েটির || মনের মাঝে বিয়ের ডংকা ডং করে বেজে উঠতো না || উঠলে ও মৃদ্যু হাসির মাঝেই তা সীমাবদ্ধ থাকতো || বান্ধবীদের, ভাবিদের সামান্য রং তামাসার মাঝেও মেয়েটি বড্ড লজ্জা পেতো || মাস্টার্স শেষ করা ছেলেটাও পরিবারে বাবা মায়ের সামনে নিজের বিয়ের কথাটা বলতে লজ্জাবোধ করতো || বাবা মা বললে মাথা নিচু করে অন্য রুমে চলে যেতো || এর মানে ছেলেটি বিয়েতে রাজি নয় এমনটা বুঝাতো না কিন্তু, এর মানে আমি রাজি আছি মা তোমরা ব্যবস্থা করো ||
একটা সময় ছিল বিয়ের স্টেইজে বসা মানে মেয়েটি নিজেকে খুব শক্ত করে তৈরী করতে হতো || সবার সামনে বরের চোখের দিকে চাওয়ার তো কোনো প্রশ্নই ছিলনা || সেকি লজ্জা,সেকি উৎকন্টা নিয়ে একেকটা ছেলে মেয়ের বিয়ের স্টেইজে সময়গুলো কাটতো || আর মনে মনে বলতো কবে যে শেষ হবে বিয়ে টিয়ে করা || কিভাবে কেমন করে সবার সামনে একজন আরেকজনকে মিস্টিমুখ করাবে ভিতরে ভিতরে দুজনই সেই জন্য লজ্জায় লাল হয়ে থাকতো || এমনকি যে মিস্টিমধুর শব্দটা বলে দুজন বাহুডোরে আবদ্ধ হবে সে শব্দটা বলতে মেয়েটার ঘন্টাখানেক সময় লেগে যেত || ছেলেটার কম সময় লাগলেও ভিতরে উৎকন্টা ঠিকই থাকতো ||
বহু কষ্টে সহজ সরল তিনটা বর্নের সংমিশ্রণে তৈরি শব্দটা তিনবার বলে মেয়েটি যখন কান্নায় ভেঙে পড়তো || আবেগে জড়াজড়ি হয়ে সেই কান্না থামাতে গিয়ে বাবা মা ভাই বোন সবাই কেদেঁ একাকার অবস্থা হয়ে যেতো || আর এখনকার দিনে ছেলে মেয়েগুলো বিয়ের আগেই ঠোটের ডগায় শব্দটা বসাইয়া রেখে দেয় || বিয়ের আগেই ঝটপট করে বলতে থাকে বহুবার || আমি হয়তো বুঝিনা ওরা হয়তো অনুশীলন করে যাতে বিয়ের দিন বলতে মুখে না আটকায় -- বাধা না আসে -- পাছে বিয়ে ভেঙে যায় সেই ভয়ে ||
বিয়ের রাতে নববধুর ঘরে প্রবেশ করতেই সময় লেগে যেত অনেক || ঘরে প্রবেশ করে খাটের এক কোনে চুপটি করে বসে থাকতো অনেক্ষন || ভিতরে ভিতরে হয়তো কথা সাজিয়ে নিত নববধুকে কি বলবে || নববধুর ঘোমটাপরা মুখটা দেখার আশায় বেচারাকে কতশত যুদ্ধ করে ঘুমটা খুলতে হতো || দ্বীধা আর লজ্জায় একনজর একপলক দেখার পর পরের পলকে নতুন করে তাকানোর সময়টুকুর মাঝে ও লজ্জায় ঘিরে ফেলতো দুজনকে || একজনের হাতে হাত রাখতে ও দুজনার কতো ভাবনা || তারপর দুজনার সম্বন্ধটা আপনি থেকে তুমিতে আসতে সময় লেগে যেতো কয়েকদিন || এর মাঝে বিয়ের আমেজটা হয়তো কেটে যেতো তবু দুজন দুজনকে আপনি করেই বলতে থাকতো ||
এমন অনেক আছে যাদের দাম্পত্য জীবনের শেষ পর্যায়ে এসেও আপনিতেই রয়ে গেছে || আর এখনকার ছেলে মেয়েগুলো বিয়ের আগেই তুমিতে চলে আসে || আজ দেখা আজই তুমি করে বলা শুরু ||
সময় গুলো দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে ঠিক তার দ্বিগুণ দ্রুত পাল্টে যাচ্ছি আমরা || চোখে চোখ রেখে,হাতে হাত ধরে হাটা আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে || অচেনা যাকে তাকে দুই একটা কথা বলে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়াটাও বড্ড সহজ হয়ে গেছে || এই ধরনের ভালোবাসা অনেকটা হাওয়াই মিঠাই এর মতো -- দেখতে পিংক কালার -- খেতেও মিষ্টি, অথচ মুখে দিতেই শেষ || মিলিয়ে যেতে সময় লাগেনা || মিস্টির রেশ কিছুটা মুখে লেগে থাকলে তাও শেষ হয়ে যায় দ্রুত || যেন দ্রুত শেষ হবার এক প্রতিযোগিতা চলে সবকিছুতে ||
একটা সময় ছিল যখন বাবা মা সুন্দর ছেলের জন্য কালো মেয়ে আর সুন্দর মেয়ের জন্য কালো ছেলে ঠিক করা হলে ও মেনে নিত || কালোতে কি আসে যায় ?
ভিতরটা ভালো হলেই হয় || সে হোক ছেলে অথবা মেয়ে || আর এখনকার ছেলে/মেয়ে দুজনেরই প্রথম পছন্দ আর যাই হোক গায়ের রংটা ফর্সা হওয়া চাই ||
কদাচিৎ খুব কমই পাওয়া যায় যাদের রং নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই ||
সময় পাল্টে যাচ্ছে সাথে পাল্টে যাচ্ছে জীবনের মূল্যবান সবকিছু || তবু সবকিছুর পরেও ভালো ছেলে মেয়ে আছে যারা আগের মতোই লাজুক || তাদের ভিতরের আবেগ,অনুভুতিগুলো অনেক দামি || এরা সংখ্যায় কম তবু আছেতো || ভালো সবকিছুর সংখ্যাই তো দিনে দিনে পৃথিবী থেকে কমে যাচ্ছে -- ভালোর সংখ্যা সবসময় খুব কমই থাকে |||||
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৫০