somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেনিয়ান ক্রিকেটের পতন: একটি নিরপেক্ষ পর্যালোচনা

০৩ রা মে, ২০২৩ বিকাল ৫:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কেনিয়ান ক্রিকেটের পতন দুঃখজনক। একসময় ওরা খুব ভালো করেছিলো ক্রিকেটে। নব্বইয়ের শেষে ও শূন্য দশকের শুরুর দিকের ক্রিকেট যারা দেখেছে, খোঁজখবর রাখতো, তারা জানে। কেনিয়ায় তখন দারুণ কিছু ক্রিকেটার ছিলো। যারা ক্রিকেট বিশ্ব মাতিয়ে রেখেছিলো। আমি নিজেও কেনিয়ান ক্রিকেটের একজন ফ্যান। তখন কৈশোর। এখানে ওখানে খেলা দেখে বেড়াতাম। সে সময় ক্রিকেটের দারুণ ক্রেজ তৈরি হয়েছিলো দেশে। আপামরজনসাধারণ বুঁদ হয়ে থাকতো। কেনিয়া বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে তখন দ্বিতীয় সারির দল। এর মধ্যে আবার বাংলাদেশ দু’দেশের থেকে অল্প পিছিয়ে পড়েছিলো। ওদের সঙ্গে নিয়মিতই হেরে যেতাম। সেভাবে পেরে উঠতাম না। তিনচারটি ম্যাচ হলে একটা বের করে আনতে পারতাম। এরকম করুণ দশা ছিলো আমাদের। মনে পড়ছে, বড়ো ব্যবধানে এই দুটি দেশের সাথে পরাজয়ের পরিস্থিতি তৈরি হলে, টিভি সেটের সামনে দর্শকবৃন্দ হিংস্র, আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতো। এলোপাতাড়ি গালিগালাজের তুবড়ি ছোটাতো খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে। তখনকার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক আকরাম খান হতো প্রধান টার্গেট। এ সময় কেনিয়ান ক্রিকেট বেশ ভালো করতে লাগলো। স্টিভ টিকোলো, টমাস ওডোয়া, মরিস ওদুম্বে, আসিফ করিম, রাভিন্দু শাহ প্রমুখ বেশ কিছু ভালো খেলোয়াড় আরেক মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলো ওদের ক্রিকেটকে। একা স্টিভ টিকোলোই ব্যাট হাতে যে কোনও ম্যাচ বের করে আনার ক্ষমতা রাখতো। নিঃসন্দেহে তার সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান তিনি। দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার পাশাপাশি ঢাকার লীগে মোহামেডানের হয়ে খেলতে এসেছিলো। ব্যাট হাতে ছক্কা চারে দীর্ঘ সময় মাতিয়ে রেখেছিলো দেশের ক্রিকেট অঙ্গন। তখন ভারত শ্রীলংকার মতো বড়ো দলকেও দুয়েকবার হারিয়ে দিয়েছিলো কেনিয়া। বাংলাদেশকে এ সময় টেস্ট স্টেটাস দেয়া হয়। কেনিয়ান ক্রিকেট আপত্তি করেছিলো এটা নিয়ে। প্রশ্ন তোলে, বাংলাদেশকে দেয়া হলে তাদের কেন নয়? মাঠের ক্রিকেটে বাংলাদেশের থেকে এগিয়ে তারা। দাবিটা পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিঃসন্দেহে যৌক্তিক ছিলো। যে কোনও বিচারেই তখন বাংলাদেশের থেকে শ্রেয় দল কেনিয়া। কিন্তু সমস্যা হলো যে, বাংলাদেশ সে সময় মোটের ওপর যা হোক ভালো একটা ক্রিকেট অবকাঠামো গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলো। যেটা কেনিয়া পারেনি। (কিংবা তারা হয়তো করেনি।) খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত স্কিলই যথেষ্ট ছিলো না কেনিয়ান ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে। বর্তমান খেলোয়াড়রা সময়ের সাথেসাথে পুরনো হবে, বুড়ো হবে। তখন হাল ধরবে কারা? আগামী প্রজন্ম কতোটা প্রস্তুত সে চ্যালেঞ্জ নিতে? বড়ো দুর্ভাগ্যজনক যে, কেনিয়ার তৎকালীন প্রশাসন, ক্রিকেট বোর্ড, স্থানীয় জনগণ কেউই তাদের খেলোয়াড়দের শ্রেষ্ঠ সময়েও দেশের ক্রিকেটের জন্য কিচ্ছু করেনি। ফলাফল অবশ্যম্ভাবী, তারকা খেলোয়াড়দের বিদায়ের সাথেসাথে রসাতলে যেতে লাগলো কেনিয়ার ক্রিকেট। এভাবে এক পর্যায়ে সমাপ্ত হয়ে গেলো। যা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক; কেনিয়ার জন্য যেমন, তেমনি অবশিষ্ট ক্রিকেট বিশ্বের জন্যেও। স্টিভ টিকোলোকে একবার এ নিয়ে আফসোস করে বলতে শুনেছিলাম, কেনিয়ার তরুণ প্রজন্ম ক্রিকেটে মোটেই আগ্রহী নয়। ওদের সমস্ত আগ্রহ এ্যাথলেটিক্স ও ফুটবলে।

এভাবেই বিরাট সম্ভাবনা জাগিয়ে কেনিয়ান ক্রিকেট একসময় সমাপ্ত হয়ে যায়। সেভাবে স্পন্সর ও অন্যান্য সাপোর্ট পেলে হয়তো এ পতন ঠেকানো যেতো। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক তখন হয়ে ওঠেনি। ফলাফল, টিকোলো ওডায়োদের খেলোয়াড়ি জীবন সমাপ্তির সঙ্গেসঙ্গে কেনিয়ান ক্রিকেটও তাদের পুরনো জুতো জোড়া শোকেসে তুলে রাখে। মাঠে পারফরম্যান্সের বিচারে বাংলাদেশের থেকে ভালো দল হয়েও কেনিয়াকে টেস্ট সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিলো। জিম্বাবুয়ে আগেই পেয়েছিলো। আইসিসি যদি তখন তাদের টেস্ট সুবিধা দেয়ার উদারতাটুকু দেখাতো, তাহলে হয়তো কেনিয়ান ক্রিকেটের এই পতন ঠেকানো সম্ভব হলেও হতে পারতো। এটা হলে হয়তো পরবর্তীতে স্পন্সর ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধা পেতো তারা। কিন্তু তা হয়নি। সব আজ নিছকই অতীত। কেনিয়ান ক্রিকেটও আজ ধূসর অতীত। ডিস্টেন্স রানিংসহ এ্যাথলেটিক্সের অন্যান্য শাখাতেও কেনিয়া আজ বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। নিজের দেশ ছাড়াও ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে কেনিয়ার ডিস্টেন্স রানাররা দীর্ঘদিন ধরে দাপটের সঙ্গে ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডের এলিট লেভেল শাসন করে আসছে। ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে। অন্যান্য খেলাতেও তারা ভালো করছে। শুধু ক্রিকেটটাই এর মাঝে নির্বাসনে গেছে!

যা হোক অনেক কথা বললাম কেনিয়ান ক্রিকেটের স্বর্ণালি অতীত ও পরবর্তীতে এর দুর্ভাগ্যজনক পতন নিয়ে। লেখার উপসংহারে এসে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি সেই সব মহান তুখোড় ক্রিকেটারদের। কেনিয়ার পতাকাতলে আমাদের শৈশব কৈশোরকে মাতিয়ে রেখেছিলো, রাঙিয়ে রেখেছিলো। কৃতজ্ঞতা তাদের প্রতি।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১২:২৮
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×