আজ বহুদিন পরে জীবন কবিতার পাতায় হঠাৎ ছন্দপতন ঘটল। যান্ত্রিক জগতের অসহ্য আর একঘেয়েমী ছেড়ে হৃদয়ের গভীরে একটু ডুবতে মন চাইল। প্রতিদিন বাসের হ্যান্ডেল ধরে অফিসে আসা-যাওয়া আর অফিসে বসের পেঁচামুখ দেখতে দেখতে জীবনটা যেন একটা স্রেফ যন্ত্রচালিত মেশিনে পরিণত হয়ে গেছে। শুধুমাত্র গদবাঁধা নিয়মে নির্দিষ্ট কাজ করা আর অর্থ উপার্জন করে জীবনকে জীবন থেকে সরিয়ে রাখাই যেন জীবনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক জীবনে মানুষের কতনা অফুরন্ত চাওয়া আর সেই চাওয়াকে পাওয়ায় পরিণত করার জন্য উদ্দেশ্যের পিছনে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ান। এটা জীবনের কঠিন বাস্তবতা। পথে চলতে গিয়ে পা পিছলে অনেক সময় আঘাত পেতে হয় আবার কখনো রক্তাক্তও হতে হয়। এই দুঃখ বা অসুখ দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। অসুখে বা ব্যাথা পেলে ঔষুধে কষ্ট লাঘব হয় বা রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। কিন্তু জীবনে এমন কিছু মূহুত বা সময় আসে যখন মানুষের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয় আর সেই ক্ষত সারানোর জন্য মানুষের কতই না চেষ্টা। কেউ নিজেকে ঘুমে ডুবিয়ে রাখতে চায়, কেউ আবার নেশায় ভুলে থাকতে চায় আর কেউবা অভিনয় করে বা অভিনয়ের চেষ্টা করে। এ যেন নিজের সাথে নিজে অভিনয়! এটা নিতান্তই আত্মপ্রতারণার সামিল। রক্ত মাংসের মানুষের শরীর পরীক্ষা করলে যত দাগ বা কালিমা বা ব্যাথার চিহ্ন পাওয়া যাবে তার চেয়ে অনেক বেশি দুঃখ, দাগ বা ব্যাথার চিহ্ন পাওয়া যাবে মানুষের হৃদয়ে। এতটা দুঃখ-কষ্ট বুকে চেপে রেখে তবুও মানুষ সুখে থাকার অভিনয় করে যায়। শেক্সপিয়ারের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে, “এ পৃথিবীটা একটা বিরাট নাট্যমঞ্চ, আর আমরা সবাই সেই মঞ্চের এক একজন অভিনেতা।" জীবনটা যেন এক মুখস্ত নাট্যসংলাপ। আমরা শুধু নাটকের অভিনেতার মত মুখস্ত বুলি আওড়ে যাচ্ছি। নিজেকে ভুলে গিয়ে পরিস্থিতির শৃঙ্খলে নিজেকে শৃঙ্খলিত করে এ যেন এক নিবর আত্মবিসর্জন। এক মূহুর্তের জন্যও আমরা নিজের কথা শুনিনা। নিজের আত্মা, মন বা দেহকে নিরবে, নিভৃতে গলাটিপে হত্যা করি। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের জীবন খাতায় রয়ে যায় শুধুমাত্র শূন্যতার মর্মবাণী। তখন জীবনের প্রত্যেকটি মূহুর্তকে মনে হয় মর্মহীন কবিতার এক একটি শব্দহীন, ছন্দহীন, মর্মহীন মর্মবাণী।
লেখাটা নিন্তান্তই একজন মর্মহীন লেখকের এক মর্মহীন বাণী। তাই যুক্তিতর্কের মর্মবাণীর দিকে দৃষ্টি না দিয়ে মর্মহীণ ভাবে পড়লেই কৃতার্থ হব।
ধনবাদান্তে,
মর্মহীণদর্শী লেখক - অর্ণব মাহমুদ
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৭