সমাজে চলতে গিয়ে আমরা প্রায়শই অনেকের অহংবোধের কথা শুনে থমকে যাই, কষ্ট পাই, মন খারাপ হয়।
যারা অহংকার করে কথা বলেন তাদের প্রতি বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয় এবং সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।
আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো অহংকার করতে পারাকে ক্রেডিট মনে করেন, অনেকে হয়তো আত্ততুষ্টি পেয়ে থাকেন।
কিন্তু তিনি হয়তো বুঝতে পারেননা যে এতে তার সম্মান কমছে বৈ বাড়ছেনা। একজনের অহংবোধ কখনই কারো কাছে ভালো অনুভূত হবার নয়।
আমাদের কিসের এত গর্ব? কেন আমরা মানুষকে এত তুচ্ছ জ্ঞান করি?
মহান আল্লাহ্ পাক বলেনঃ
“যমীনে দম্ভভরে চলো না। তুমি না যমীনকে চিরে ফেলতে পারবে, না পাহাড়ের উচ্চতায় পৌঁছে যেতে পারবে। এ বিষয়গুলোর মধ্য থেকে প্রত্যেকটির খারাপ দিক তোমার রবের কাছে অপছন্দনীয়।“ (বনী ইসরাঈল ৩৭, ৩৮)
হাসান আল-বসরী বলেছেন,
“বিনয়ী হলেন তিনি, যখন একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি নিজ ঘর থেকে বের হওয়ার পর যে কোনো মুসলিমের সঙ্গে সাক্ষাত্ হলে তাকে নিজের চেয়ে ভালো মনে করেন।“
পরম শক্তিমান আল্লাহপাকের বড়ত্ব এবং তার শ্রেষ্ঠত্ব যার হৃদয়ে থাকে, সে সবসময় নিজেকে লুকিয়ে রাখতে ভালোবাসে। মানুষের সঙ্গে তার আচরণ বিনয় ও নম্রতায় মিশে থাকে।
এক হাদিসে রাসুল [সা.] বলেছেন,
আল্লাহপাকের জন্য যে যত বেশি নিচু হবে (এই বলে রাসুল (সাঃ) নিজের হাতকে মাটির দিকে নামিয়ে দেখালেন), নিজেকে বিনয়ী করে রাখবে, আল্লাহপাক তাকে তত বেশি উঁচু করবেন (রাসুল (সাঃ) তার হাতের তালু উপরের দিকে উঠিয়ে দেখালেন)। অর্থাত্ মানুষের কছে সম্মানিত করবেন।–(মুসনাদে আহমদ)
মানুষের জীবনে যত উত্তম গুণাবলী রয়েছে তার মধ্যে উত্তম গুণ হলো বিনয় ও নম্রতা। যার মূর্ত প্রতীক হচ্ছেন আমাদের প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবীরা (রাঃ)।
মহান আল্লাহ্ পাক বলেনঃ
রহমানের (আসল) বান্দা তারাই যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়, তোমাদের সালাম।–(আল-ফুরকান ৬৩, ৬৪)
এখানে “মূর্খ” মানে অশিক্ষিত বা লেখাপড়া না জানা লোক নয় বরং এমন লোক যারা জাহেলী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবার উদ্যোগ নিয়েছে এবং কোন ভদ্রলোকের সাথে অশালীন ব্যবহার করতে শুরু করেছে। রহমানের বান্দাদের পদ্ধতি হচ্ছে, তারা গালির জবাবে গালি এবং দোষারোপের জবাবে দোষারোপ করে না। এভাবে প্রত্যেক বেহুদাপনার জবাবে তারাও সমানে বেহুদাপনা করে না। বরং যারাই তাদের সাথে এহেন আচরণ করে তাদের সালাম দিয়ে তারা অগ্রসর হয়ে যায়, (তাফহীমুল কুরআন) যেমন কুরআনের অন্য জায়গায় বলা হয়েছেঃ
“আর যখন তারা কোন বেহুদা কথা শোনে, তা উপেক্ষা করে যায়। বলে, আরে ভাই, আমাদের কাজের ফল আমরা পাবো এবং তোমাদের কাজের ফল তোমরা পাবে। সালাম তোমাদের, আমরা জাহেলদের সাথে কথা বলি না।” (আল কাসাসঃ ৫৫)
বিনয় ও নম্রতা সম্পর্কে হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে,
হযরত আয়েশা [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ [সা.] বলেছেন, আল্লাহ স্বয়ং নম্র, তাই তিনি নম্রতাকে ভালোবাসেন। তিনি কঠোরতার জন্য যা দান করেন না; তা নম্রতার জন্য দান করেন। নম্রতা ছাড়া অন্য কিছুতেই তা দান করেন না।– (মুসলিম)
নম্র ও বিনয়ী ব্যক্তিকে সবাই ভালোবাসতে একপ্রকার বাধ্যই হয় বলা চলে। আর এই গুন একজন মুসলমানের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক এমনকি সামাজিক জীবন পর্যন্ত ব্যাপ্ত।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে বিনয়ী এবং নম্র স্বভাবের অধিকারী হওয়ার তওফিক দান করুন। আমীন।।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:০২