একদিন আবার খুব বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করে জানিস তো? আমি কথা গুলো মেলানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ঠিক পারছিলাম না। সায়মা আপুর উপস্থাপনা খুব গোছানো হলেও যখনই ওনার সাথে আমার কথা হয় তখনই মনে হয় সব কিছুই বড্ড এলোমেলো। এই তো কিছু আগেই বলছিলেন চায়ের সাথে সমুচার কম্বিনেশন জোস না? হঠাৎ এই শীতকালের ভর দুপুরে বলে বসলেন এই কথা। আমি কিছু না বুঝে মাথা নাড়লাম আর সেই সংকেত পেয়ে তিনি সগৌরবে এগিয়ে চললেন। মনে মনে ভাবলাম, এগুলো কিছুই মাথায় তো ঢুকছেই না আমি বরং অন্য চিন্তা করি আর মাথা নাড়ি আর দু এক বার বিরতি দিয়ে নাহয় হু হা করে দেবো। সায়মা আপুর সাথে আমার পরিচয় ভার্সিটির শুরুর দিকে। একটা ডিবেট কম্পিটিশনে পার্টিসিপেশনের মাধ্যমে। বেশ কিউট ভাবে আমাদের হারিয়ে দিয়েছিলেন। এতো সাবলিল আর তীক্ষ্ণ যুক্তির পাল্লায় পড়ে নাকানি-চুবানি খেয়েছিলাম সেবার। এর পর থেকে ভার্সিটির এই সিনিয়ারের সাথে ওঠা বসার মধ্য দিয়ে হৃদ্যতা। আজ কাল ক্যাফেটেরিয়াতে বসলেই হয় উনি আমাকে কল দেবেন নাহয় আমি, আড্ডাটা না দিলে ঠিক দিনটা জমে না। কতো আলাপ এই যেমন জীবনান্দ দাশ, কাজি নজরুল বা সুকান্ত ভট্টাচার্য্য বা পলিটিক্সে মার্ক্সিজম বা মিনিমালিজম থেকে পার্সোনাল এ টু জেড। অনেকে আঁড় চোঁখে তাকায় আর বর্তমানে যে ট্রেন্ড চলছে সিনিয়ার আপুর সাথে প্রেম তাই ভেবে নেয়। বেশ চাউর হয়ে গেছে আমার ক্লাসে সহ গোটা ভার্সিটিতে। তো যাই হোক লোকে যাই ভাবুক আড্ডা আমাদের নির্ভেজাল ছিলো কিন্তু আজকাল কেমন জানি অদ্ভূত লাগে সায়মা আপুর এলোমেলো কথা গুলোয়।
-কি রে? আমি কখন থেকে পক পক করে যাচ্ছি তুই নিশ্চই কিছু শুনিস নি?
-কই শুনেছি তো!
-শোন মিথ্যা বলবিনা। বল তো কি বলেছি?
-কেন বৃষ্টিতে ভিজতে চান?
-তার পর কি বলেছি বল তো?
-উউউ.....................
- ধরা খেয়ে গেলি তো?
-আমি কবে বলেছি যুক্তিতে আমি আপনার থেকে ভালো?
-তোর উপর মারাত্মক রাগ হচ্ছে যাই হোক শোন আবার কারো হাত ধরে ভিজতে ইচ্ছে করে একদম ১ ঘন্টা ১ মিনিট। একদম ঘড়ি ধরে ১ সেকেন্ড বেশি না আবার কম না। অবশ্য ছাদের তলায় যেতে তো কিছু সেকেন্ড লাগবে বল?
হঠাৎ আবার গুলিয়ে গেলো। কেন যে এই বুদ্ধি নিয়ে ডিবেট করি!
-বুঝলাম, কিন্তু ১ ঘন্টা ১ মিনিটই কেন?
-ওটা দেনমোহর আমার ওই ছেলেটাকেই বিয়ে করবো বুঝিস নাই তো কিচ্ছু এই বুদ্ধি নিয়ে ডিবেট করতে চাস?
যদিও সায়মা আপুর সাথে ঘুরে ঘুরে উদ্ভট কিউট কথা শুনে আমার বুঝে যাওয়া উচিৎ ছিলো তারপও আমি তো গোয়েন্দা না যে সব বুঝে যাবো! কিছু আগে যদিও সেম কথাটা আমারও মনে হয়েছিলো তার পরও আপুর মুখে শুনতেই ইগোতে এসে লাগলো।
আমি বললাম ওকে বুঝলাম কিন্তু কে দেনমোহর হিসাবে বৃষ্টিতে ভেজে পাগল ছাড়া?
-সেটা আমার ইচ্ছে আমি কি নেবো!
আমি কথা শুনে মজা পেয়ে হাসতে হাসতে বললাম আপনার বিয়ে আপনার ইচ্ছে, নেন যা মনে চায়।
আমার নির্লিপ্ততা ভেবে রেগে গিয়ে আপু উঠে গেলেন কফির কাপটা হাতে নিয়েই। আমি চুপ করে বসে থাকলাম আর ভাবতে থাকলাম উনি হঠাৎ রেগে গেলেন কেন? যেয়ে দেখি উনি দাঁড়িয়ে আছেন বারান্দায় বাইরের দিকে মুখ করে। আমি পাশে গিয়ে দাঁড়াতে রেলিং এ রাখা হাতে আলতো ছোঁয়া লাগলো। চোখা-চোখি হতেই কোন এক মোহনিয় মুগ্ধতায় হারিয়ে গেলাম কতক্ষন ঠিক জানি না। কিছু একটা ঠোট গলে বের হতে গিয়েছিলো সসসসরি......! আপু......!!
উনি থামিয়ে দিয়ে বললেন ভালো লাগছে। যেখানে আছিস ওখানেই থাক, বের হয়ে যাস না আবার।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২২ রাত ৮:৪৯