গল্পঃ
তোমাকেও আমি ভালোবাসি। কথাটা মিন করেছিলাম কিনা বলার সময় জানতাম না। যে বাসায় থাকতাম তার উপরতলায় থাকতো নাহিয়ান। অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চা। আমার সাথে যখনই দেখা হতো আমি আগ্রহ বিশেষ না থাকলেও বুঝতে না দিয়ে গল্প করার চেষ্টা করতাম। মনে করতাম বোঝার দরকার নেই ওর পৃথিবী খারাপ। আমার চোঁখের চশমা খুলে নিতো হাতের কাছে পেলেই। আমি মানুষটা বদরাগী না হলেও রাগ হলে ক্ষেপে যাই। এটায় রাগ লাগতো তবু ক্ষেপে গেছি বুঝতে দেইনি নাহিয়ানকে।
নাহিয়ান ৭ বছরের একটা বাচ্চা পূর্বে বলেছি অটিজমে আক্রান্ত একটা বাচ্চা। বাবা চাকরী করে স্বাস্থ্য বিভাগে ভালোই বেতন(হয়তো)। মা বাসায় থাকেন গৃহের কাজ সামলান। ছেলেকে নি অহর্নিশ ব্যাস্ততা তার। খাওয়া, গোছল বা পটি সবটা তিনিই সামলান। তো যাই হোক যা বলছিলাম চশমাটা নিয়ে ও যে হাসি দিতো ফোকলা দাতে হিসহিসে শব্দে তাতে ঝাপসা চোঁখে ঘোর লাগা অবস্থায় বুঝতে পারতাম আমিও রাগ ভুলে মজা পেয়ে হেসে ফেলতাম। দুনিয়াটা বাচ্চার কাছে যখন এক রহস্যে ভরা রঙের যোগান সেখান থেকে আমাকেও মাঝে মধ্যে ধার দিতো। কতো সহজে বলে ফেলতো আই লাভ ইউ ভাইয়া, জবাবে কুন্ঠিত না হয়েই আই লাভ ইউ টু বলতে দ্বিধা করিনি কখনো। বাসা ছেড়ে আসতে হয়েছে জীবনের প্রয়জনে।
জানালায় পর্দা গলে যখন রোদের পরশ পড়ে বিছানায় তখন মনে হয় আরো কিছুক্ষন সেটে থাকি, কিন্তু ঠিক হয়ে ওঠেনি যেতে হবে বহুদূর বলে। বহু মানুষকে পিছে ফেলে আসতে হয়েছে অথবা সময়ে তারা ছেড়ে গেছে। বন্ধু তো ছেড়ে যায়না! বন্ধুত্ব এক অবগুন্ঠন যার ব্যাবহারে মানুষ করে এসেছে, বাচ্চাটি এগুলো কি তা বোঝেইনি।
ট্রেনে করে ফেরার সময় ভাবছিলাম আজ কতো দিন কেউ সহজে মনের সূর্য খুলে কিরন দিয়ে ভালোবাসা বিলি করেনি। কতোদিন ভালোবাসার ফেরিওয়ালা বাড়ি আর ফেরেনি। বিকিকিনি বন্ধ হওয়া বাস্তবতার শহরে একটু দম নিতে চেয়েছি বিশুদ্ধতায় কিন্তু পারিনি। মনে পড়ে গেলো নাহিয়ান এর কথা। হ্যাঁ ৭ বছরের অটিজম আক্রান্ত ছোট্ট ছেলেটা আমা্র মতো বড় বাচ্চার বন্ধু হয়ে উঠেছিলো। যাদের বন্ধু বলে জেনে এসেছি। ফেসবুকের পোস্টে ভুরি ভুরি গল্পে ভরা ক্যাপশন দিয়ে ছবি পোস্ট করেছি তাদের দরকারে লাগলে ইমোশনাল কথার বারি ঝরে, আমি নাকি বন্ধুত্ব রক্ষা করতে জানি না। আমাকে বন্ধুত্ব শেখাতে আসা মানুষগুলো প্রয়োজন শেষে আবার মেঘের মধ্যে হারিয়ে যায়। অথচ আমার একজন বন্ধু আছে সে যে হাসি দিয়েছে অবসরে তা ফিরে আসে বার বার করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০২২ রাত ৯:৪৩