ছবি ইন্টারনেটঃ
গত কয়াক বছর ধরে আমরা দেখেছি ঢাকামুখি মানুষের চাপে ঢাকার নাজেহাল অবস্থা। তবে এ অবস্থা আরো তীব্র হয় ঈদের সময় যখন মানুষ দেশের বাড়ির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ে। এ দায় কি সম্পূর্ণ মিস ম্যানেজমেন্টকে দেবেন নাকি আরো কিছু দায়ী এর পেছনে? খেয়াল করে দেখেছেন মানুষ ঢাকা ছেড়ে ঈদ করার জন্য কতোটা মরিয়া যে একটা ট্রেনের এক ইঞ্চিও ছাড় দিতে নারাজ। কেউ কেউ গরুর ট্রাকে গরুর সাথেই যাচ্ছেন বড়ি ঈদ করার লক্ষে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে সদত্তর নেই কেন জীবন হাতে রেখে এভাবে বাড়ি যাওয়া চাই। আসলে আমাদের দেশের একটা বিরাট জনগোষ্ঠিই নিজেদের লক্ষ্য চাকরি করে ফেলার পর থেকে আমাদের দেশের অর্থনীতি অন্তত ১০ বছর পিছিয়ে গেছে। চাকরিমূখি জনগোষ্টির ভেতর ক্লাসিফিকেশন আমাদের কর্মক্ষম মানুষকে ঢাকামূখি এমনভাবে করেছে যে এদের সবাই কোন না কোন ভাবে ঢাকার উপর নির্ভরশীল। এটা এমন একটা ব্যাবস্থা সবার একটাই লক্ষে ছুটে চলা। দেশের সবথেকে ভালো চাকরী পেতে পড়াশোনা করতে ঢাকা যেতেই হবে।
এমন নয় যে শুধু আমাদের দেশে এমন তবে কি মারাত্মক জনগোষ্টির চাপ এই শহরকে সামলাতে হয় তা এই শহরই জানে। এক্ষেত্রে আরো আগে ডিসেন্ট্রিলাইজেশনের প্ল্যান যদি নেওয়া হতো হয়তো আজ কিছুটা ফল পাওয়া যেতো। এই শহরে যারা আসে কেউ কিন্তু শহরটাকে ভালোবেসে আসে না। ঢাকা শুধু মাত্র কিছু অপরচুনিটি প্লেস এছাড়া একে মানুষ অন্যকিছু মনে করে না। যদি করতো তাহলে এ শহরকে ছাড়তে কটা দিনের জন্য মানুষ মরিয়া হতো না। কোনভাবেই কতৃপক্ষ, পুলিশ আটকাতে পারেনি মানুষের চাপ। সেই এতো রেস্ট্রিকশন আইডি কার্ড ছাড়া ঢুকতে টিকেট দেওয়া হবে না, আর টিকেট ছাড়া যাত্রা করাই যাবে না। তার পরও লোকোমোটিভে এবং ছাদে বিনা টিকিটে যাত্রী নিয়েই ট্রেন গুলো ছেড়ে গেছে।
এক পরিবারকে দেখলাম বেঁচে ট্রেন থেকে নেমে কান্নাকাটি করছে। একজন নিজের আইডি কার্ড এর গল্প করছেন যদি মারা যান এই চাপে তাহলে যেন তাকে আইডি কার্ড দেখে শনাক্ত করা হয়। এ কেমন ঈদ আনন্দ যাত্রা?
জনসংখ্যা এদেশের জন্য একটা মারাত্মক চাপ। তুলনা করলেই এ দেশ সিঙ্গাপুর হবে না। বাংলাদেশের যদি কোন কিছু করার থাকে তাহলে তা যত দ্রুত সম্ভব ঢাকামূখি মানুষের চাপ কমানো। চাকরী করার মানুষিকতা কমিয়ে উৎপাদনমূখি জনগোষ্টি তৈরী করা দরকার ছিলো আমাদের মতো দেশের জন্য। তাহলে এরা হতো আমাদের সম্পদ। শিক্ষা শেষে আমাদের ফার্মিং এ যেতে সমস্যা কোথায়?
আমি জানি না যখন থেকে আমাদের দেশে চাষা বলা গালি কেন? আজ আমাদের দেশে যে চাষীর সন্তান চাষাবাদ বোঝে না এতে আমাদের কি শিক্ষকদের কপালে ভাজ পড়ার কথা ছিলো না? কটু কথা বলার সময় এই সমাজ আজও ভালো জায়গায় যেতে হবে না চাষ করে খাওয়া লাগবে বলে। অথচ এই সমাজকে আমরা ধরি দেশের অগ্রগতির প্রভাবক হিসাবে।
আরো কিছু কথা, যেমন কিছু করতে ঢাকা যেতে হবে আর মনের সাথে যুদ্ধ করে সেখানে থাকতে হবে এই মানুষিকতা আমাদের ভেতরে থাকায় আমরা কোনদিন ঢাকাকে ভালোবাসতে পারিনি, পারিনি এটাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে তেমনি ঢাকা ছাড়তে আমাদের কমার্শিয়াল সেক্টরগুলো এমন ভাবে বিষয়টাকে নিয়ে গেছে যা মানুষ আবেগ হিসাবে নিয়ে ফেলেছে। সাবকন্সিয়াশ প্রোসেস আমাদের দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ড নিজেদের পজেটিভ ইম্প্রেশন ক্রিয়েশনে ব্যাবহার করে আসছে গ্লোবাল পলিসি ফর ব্র্যান্ডিং এর পার্ট হিসাবে। এখন এটা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যেখানে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা আর নিতে পারছে না। যা অন্যতম কারন যার ফলে এই অবস্থা প্রতিবছর দেখতে হচ্ছে।
আমার কাছে এসব আবেগ মূল্যহীন যার জন্য মানুষ প্রায় উন্মত্ত হয়ে উঠছে এবং অন্যের এবং নিজের জীবনের পরোয়া করছে না। বাড়ি মানুষ কেন যাবে না? কিন্তু আসলেই কি সবার ঢাকা থাকতেই হবে আর উৎসব পার্বনে এভাবেই যেতে হবে?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১০:৩৮