নানুবাড়িতে আর প্রতি বেলায় ভর্তা ভাত ছাড়া আর কিছু না থাক, নানুর সীমাহীন মমতা আছে। আদর আছে। উষ্ণতা আছে। নানাভাই ক্যান্সারে মারা গেছে সেই কবে। নানু, তাঁর এক বিধবা মেয়ে, নাতি, এক স্বামী নির্যাতিত এবং বিতাড়িত মেয়ে, আর এক মেয়ে আর তার অসুস্থ ঘর জামাই, মাত্র কৈশোর উত্তীর্ণ উপার্জনহীন কিশোর ছেলে... সাত সাত জনের সংসার। এ সাতজনের সংসার কি করে চলে বলুন তো?
এরকম চিত্র বাংলাদেশে খুব অচেনা কি?
এরপরেও অনেকের চেয়ে খুব ভাল আছে এই পরিবারটা। কারণ স্বামী নির্যাতিত এবং বিতাড়িত মেয়েটা জীবন যুদ্ধে পরাজিত না হওয়ার পণ করে দাঁতে দাঁত চেপে ডিগ্রী পাশ করেছে। এরপর ঢুকে গেছে একটা এনজিও স্কুলে। খাটায় প্রচুর, কিন্তু টাকা তো আসে! খুব অপ্রতুল সে টাকা। সাত সাতটে ক্ষুধার্ত মুখের তিন বেলা ভাত ভর্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও আছে অসুস্থ মায়ের ওষুধের চিন্তা। আপার মুখের দিকে তাকিয়ে মরনাপন্ন দুলাভাইয়ের চিকিৎসার টাকা জোগানো। আছে উপার্জনহীন ভাইটাকে স্বাবলম্বী করার আপ্রান চেষ্টা। আর বাঙালী মেয়ে বলেই, একবার 'হয়ে যাওয়া' বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য এতকাল যত চেষ্টা করা হয়েছে সব কিছুর খেসারত দেয়া মাসের শেষে টাকা গুণে। আর বাবাহীন কিশোরী ভাগ্নীটাকে ইচ্ছা করে অনেক পড়িয়ে অনেক বড় করবে... কিন্তু কি করে? টাকা কি গাছে হয়?
আমার খুব কাছের এবং প্রিয় কিছু মানুষের গল্প বললাম এতক্ষণ। জানি, এই মানুষগুলোর অশ্রু আর দু:খের বোঝা হালকা করার জন্য আমি তেমন কিছু করতে পারি না, পারি নি আজ অব্দি। জানি, বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষগুলো, যারা আছে এর চেয়েও খুব কষ্টে, তাদের সবার চেয়ে খুব বেশি ভাল আছি।
এই ভাল থাকা আমাকে বিব্রত করে এবং স্রষ্টার প্রতি পরম কৃতজ্ঞতায় মাথা নুইয়ে দেয়। স্রষ্টার কাছে আমার আন্তরিক প্রার্থনা... কখনও, কখনই যেন অনুভূতিহীন হয়ে না যাই এ মানুষগুলোর প্রতি। কষ্টগুলোকে টিভির ছোট্ট বক্সে বন্দী রেখে চ্যানেল পাল্টে সব ভুলার চেষ্টা না করি। আমাকে যেন সব সময় কষ্টগুলো তীব্র, তীব্র যন্ত্রনা দিয়ে যায়... অসি্থর করে রাখে দিন রাত... সব সময়...
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০০৬ সন্ধ্যা ৬:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



