somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কয়েকটি অপরিচিত জীবন এবং আমার প্রার্থনা

০৩ রা অক্টোবর, ২০০৬ সকাল ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাবার চেহারা কেমন ছিল মনে পড়ে না মেয়েটার। আবছা করে মনে পড়ে, মানুষটাকে খুব ভয় পেতো সে। সারাদিন বাসায় থাকতো না। গভীর রাতে বাসায় এসে মাঝে মাঝে মাকে ভীষন বকাবকি করতো। এতটুকুই মনে আছে ওর। অথচ এই বাবা যেদিন হঠাৎই মারা গেল তখন মা কি আকুল হয়েই না কাঁদছিল। কারণ মৃতু্যটা স্বাভাবিক ছিল না। ছিল ইচ্ছা মৃতু্য। প্রথম প্রথম মা খুব কাঁদত বাবার জন্য। হাপুশ নয়নে। মানুষটা কোন অভিমানে অতটুকু ছোট মেয়ে আর বউ রেখে ইচ্ছা মৃতু্য বেছে নিয়েছিল তাই ভাবত সারাদিন। কিছুদিন যেতেই বদ মেজাজী দাদু একদিন বলেই বসলো, বাবা নাকি মারা গেছে মায়ের দোষে। মা যে অলক্ষুণে! কিছুদিন পরে বড় চাচীও মুখ বাঁকিয়ে বলে গেলেন সে কথা। মা আর বেশিদিন থাকল না সে বাড়ি। আলমারির উপর থেকে ধুলি ঢাকা সুটকেসটা নামিয়ে একে একে ওর সব জিনিস ভরলো। তারপরে, মামার সাথে নৌকা করে চলে আসল নানুবাড়ি।
নানুবাড়িতে আর প্রতি বেলায় ভর্তা ভাত ছাড়া আর কিছু না থাক, নানুর সীমাহীন মমতা আছে। আদর আছে। উষ্ণতা আছে। নানাভাই ক্যান্সারে মারা গেছে সেই কবে। নানু, তাঁর এক বিধবা মেয়ে, নাতি, এক স্বামী নির্যাতিত এবং বিতাড়িত মেয়ে, আর এক মেয়ে আর তার অসুস্থ ঘর জামাই, মাত্র কৈশোর উত্তীর্ণ উপার্জনহীন কিশোর ছেলে... সাত সাত জনের সংসার। এ সাতজনের সংসার কি করে চলে বলুন তো?
এরকম চিত্র বাংলাদেশে খুব অচেনা কি?
এরপরেও অনেকের চেয়ে খুব ভাল আছে এই পরিবারটা। কারণ স্বামী নির্যাতিত এবং বিতাড়িত মেয়েটা জীবন যুদ্ধে পরাজিত না হওয়ার পণ করে দাঁতে দাঁত চেপে ডিগ্রী পাশ করেছে। এরপর ঢুকে গেছে একটা এনজিও স্কুলে। খাটায় প্রচুর, কিন্তু টাকা তো আসে! খুব অপ্রতুল সে টাকা। সাত সাতটে ক্ষুধার্ত মুখের তিন বেলা ভাত ভর্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও আছে অসুস্থ মায়ের ওষুধের চিন্তা। আপার মুখের দিকে তাকিয়ে মরনাপন্ন দুলাভাইয়ের চিকিৎসার টাকা জোগানো। আছে উপার্জনহীন ভাইটাকে স্বাবলম্বী করার আপ্রান চেষ্টা। আর বাঙালী মেয়ে বলেই, একবার 'হয়ে যাওয়া' বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য এতকাল যত চেষ্টা করা হয়েছে সব কিছুর খেসারত দেয়া মাসের শেষে টাকা গুণে। আর বাবাহীন কিশোরী ভাগ্নীটাকে ইচ্ছা করে অনেক পড়িয়ে অনেক বড় করবে... কিন্তু কি করে? টাকা কি গাছে হয়?
আমার খুব কাছের এবং প্রিয় কিছু মানুষের গল্প বললাম এতক্ষণ। জানি, এই মানুষগুলোর অশ্রু আর দু:খের বোঝা হালকা করার জন্য আমি তেমন কিছু করতে পারি না, পারি নি আজ অব্দি। জানি, বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষগুলো, যারা আছে এর চেয়েও খুব কষ্টে, তাদের সবার চেয়ে খুব বেশি ভাল আছি।
এই ভাল থাকা আমাকে বিব্রত করে এবং স্রষ্টার প্রতি পরম কৃতজ্ঞতায় মাথা নুইয়ে দেয়। স্রষ্টার কাছে আমার আন্তরিক প্রার্থনা... কখনও, কখনই যেন অনুভূতিহীন হয়ে না যাই এ মানুষগুলোর প্রতি। কষ্টগুলোকে টিভির ছোট্ট বক্সে বন্দী রেখে চ্যানেল পাল্টে সব ভুলার চেষ্টা না করি। আমাকে যেন সব সময় কষ্টগুলো তীব্র, তীব্র যন্ত্রনা দিয়ে যায়... অসি্থর করে রাখে দিন রাত... সব সময়...
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০০৬ সন্ধ্যা ৬:০১
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বস্তিবাসী সেই অগ্নিকন্যাকে নিয়ে লেখা একটি কাব্যগাথা

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৫৫


ঢাকার আকাশ তখন ধুলোমাখা সন্ধ্যার রঙে ছিল ডেকে
বস্তির সরু গলিতে শিশুদের কান্না
নর্দমার স্রোতের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলে
সেই অন্ধকার জন্মঘরে প্রথম আলো দেখেছিল
এক বস্তিবাসী কন্যা শিরিন
এখনো এক অচেনা নাম
যার ভেতর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাবুল আলীই আমাদের বাংলাদেশের প্রতীক

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৩৭



আপনাদের কি এই ছবিটার কথা মনে আছে? এই বছরের শুরুতে চলতি বছরের জানুয়ারীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বেআইনিভাবে বাংলাদেশের জমিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×