somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থেরাপীময় দিন

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০০৬ রাত ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মন মেজাজ ভাল ছিল না কয়েক দিন ধরে। অস্থিরতা পেয়ে বসেছিল। খুব ইচ্ছা করছিল কোথাও বের হয়ে যেতে, অনেক দূরে কোথাও ঘুরে আসতে। ফোন করলাম বন্ধুদের। আজ কেউ ফ্রী না। সাঁতারে যাওয়ার নিমন্ত্রন পেলাম বটে, কিন্তু পুকুর আর শীতলক্ষ্যা নদীতে সাঁতার শেখা আমি ক্লোরিনওয়ালা সুইমিংপুল সহ্য করতে পারি না। আমার মাথা ধরে। চুলে গন্ধ হয়ে যায়। বাসায় এসে চোদ্দ বার শ্যাম্পু করার আগে সস্তি হয় না। তাই সুইমিং পুল আইডিয়া বাতিল। তবু বের তো হতেই হবে! মীরাকে বললাম, চল, শপিঙ করি।

সকাল এগারোটা থেকে বিকাল পাঁচটা, মোট ছয় ঘন্টা ক্লান্তিহীন ভাবে ঘুরাঘুরি করলাম দুই জন। এই দোকানে যাই, ওটা টেরাই দেই, জুয়েলারি হাতাতে হাতাতে সময় জ্ঞান পুরো ভুলে থাকি। ঈদ শপিং করতে মন চাইল, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আসার পরে শপিং করি নি একদম। কেমন যেন অপরাধ বোধ হয়। কিনতে পারি না অপ্রয়োজনীয় শখের কাপড়। আজকে কিনব প্রতিজ্ঞা করার পরে বিপত্তি হল। পছন্দ আর হয় না! জিপসী স্কার্ট কিনব কিনব জপছি, কিন্তু ফ্যাশন চলে গিয়ে এখন সামারে নতুন জামা স্টাইল এসেছে। আমি ওগুলোর সাথে হিজাব পড়বো কি করে? ম্যাচিং প্যান্ট আর হিজাব চিন্তা, সাথে ফুল হাতা জামা। ধুর, এত ঝামেলা! হঠাৎ মনে হল, অবার্নে গেলে জিপসী স্কার্ট পাওয়া যাবে। অবার্নে যাওয়া মানে পঞ্চাশ কি.মি. এর ধাক্কা। ট্রেইনে চলিশ মিনি্লট। প্রস্তাব শুনে মীরা হাবা হয়ে তাকায় বলে, তুমি সিরিয়াস? এরকম, হঠাৎ করে?
- য়ু্য বেট

ততক্ষনে আকাশ কালো করে এসেছে। বৃষ্টি হবে হবে ভাব। ট্যান কার্ভিশ সিদ্ধান্ত নিয়েই মন হুট করে ভালো হয়ে গেল। ট্রেইনে উঠেই বিয়ারের মিষ্টি গন্ধ পেলাম। কেউ চুরি করে খাচ্ছে। শনিবার বলে কথা! মীরা আর আমি বসতেই সামনে একটা নাটক শুরু হল। একটা মধ্যবয়সী মহিলার পাশে একজন অচেনা পুরুষ বসতে চাইতেই সে সিট ছাড়বে না। স্যরি, আমার পাশে বসা যাবে না। লোকটা এহেন অভদ্রতায় পুরো স্তম্ভিত। কেন? থতমত খেয়ে লোকটা দূরে গিয়ে বসলো। আমরা হা হা হি হি হাসি। আমার স্কার্ফে কোথাথেকে একটা কালো পোকা। পিছনের লোকটা সেটা দেখিয়ে দিল। হি হি হি। কোথে থেকে গাই সেবেসচিয়ানের গান। উহ উহ উহ। য়াল্লা বৃষ্টি শুরু হলো! হি হি হি।

মীরা ইতিমধ্যে অনেক বার ধমক খেয়ে ফেললো। হাঁটা চলার সময় কেন জানি সে আমার গা ঘেষে হাঁটে। বসার সময় বসছে পুরা আমার উপর হেলান দিয়ে। সর বেটি! ... কিন্তু তুমি এত আস্তে কথা বল কেন? তাছাড়া আই লাভ য়ু, আই লাভ বিয়িং উইথ য়ু।... পাকামি! ভাগ!

অবার্নে গিয়ে এই দোকান থেকে সেই দোকান। হয় জিপসি স্কার্ট নেই অথবা এত খ্যাত যে কান্না পায়। অনেক ঘুরে টুরে যখন পরিশেষে স্কার্ট পছন্দ হলো, সেই চমৎকার সাদা রঙের স্কার্টটা, সেটার দাম দেখে ভিমড়ি খাওয়ার জোগাড়। কিন্তু শপিং থেরাপি চলছে, এখন দাম দেখে ভড়কালে চলবে? মীরারও দেখলাম পছন্দ হয়েছে। চেঞ্জ রুমে ঘুরে ঘুরে দেখে আসলাম, ভালোই মানিয়েছে। তখন হঠাৎ কর্ণকুহরে পরিচিত শব্দাবলী। মনোযোগ দিতেই বুঝলাম কোন বাঙালী। সাথে সাথে চিমটা চিমটি, চোখাচোখি। আমরা চুপ! মহিলা দু'জন আমাদের পছন্দ করা স্কার্টটা ঘুরে ফিরে দেখছে আর আফসোস করছে এই সিলিম সাইজের স্কার্ট পড়ার সুদিন চলে গেছে বলে! ঘুরে ফিরে আমাকে আর মীরাকে দেখছেন আর চাপা কণ্ঠে বাংলায় মন্তব্য করছেন। আমরা কোন মতে স্কার্ট কিনে বাইরে বের হয়ে সে কি হাসি!

আরও ঘুরা ঘুরি, উদ্দেশ্যবিহীন। এখান থেকে ওখানে ছুটাছুটি। শেষ মেষ মীরার ত্যক্ত মন্তব্য: আমি এত দিনে বুঝতে পারতেছি মানুষ কেন মেয়েদের সাথে শপিঙে যেতে চায় না। আমি খুব আহত হলাম, 'শাট আপ তুই নিজেও মেয়ে'। 'হ্যা, কিন্তু আস্তমেয়ে না'... মীরার চোখ ঘুরানি মন্তব্য। আমি হাসতে হাসতে প্রায় একটা গাড়ির নিচে পড়ি আর কি! ওকে জরিমানা দিলাম অপত্যর্ের বন্ডাই বার্গার খাইয়ে।

ট্রেইন স্টেশনে পেঁৗছে দেখি ট্রেইন আসতে আরও পনেরো মিনিট। ঝির ঝির বৃষ্টি হচ্ছে। হাত ধরাধরি করে হাঁটতে হাঁটতে প্লাটফর্মের এক প্রান্তে চলে আসলাম। অপেক্ষা করতে করতে আমাদের মজার খেলাটা শুরু করলাম। মুখে মুখে গান লেখা এবং গাওয়া। মীরা এক লাইন, আমি আরেক লাইন। হেভি রোমান্টিক অবস্থা। কত ছড়াময় গান হলো... লাইন গুলো শেষ হচ্ছিল এভাবে... '... পলক/ঝলক, ... উড়ে/পুড়ে, ... চোখ/ নখ' ইত্যাদি।

ফেরার পথে মীরার মাইর খেলো সুবিজ্ঞ মন্তব্য করে: 'মাঝে মাঝে মামনি বাবা এরকম না থাকলে খারাপ হয় না য়ু্য নো... মানে অল্প সময়ের জন্য শুধু!'
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বস্তিবাসী সেই অগ্নিকন্যাকে নিয়ে লেখা একটি কাব্যগাথা

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৫৫


ঢাকার আকাশ তখন ধুলোমাখা সন্ধ্যার রঙে ছিল ডেকে
বস্তির সরু গলিতে শিশুদের কান্না
নর্দমার স্রোতের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলে
সেই অন্ধকার জন্মঘরে প্রথম আলো দেখেছিল
এক বস্তিবাসী কন্যা শিরিন
এখনো এক অচেনা নাম
যার ভেতর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাবুল আলীই আমাদের বাংলাদেশের প্রতীক

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৩৭



আপনাদের কি এই ছবিটার কথা মনে আছে? এই বছরের শুরুতে চলতি বছরের জানুয়ারীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বেআইনিভাবে বাংলাদেশের জমিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×