সকাল এগারোটা থেকে বিকাল পাঁচটা, মোট ছয় ঘন্টা ক্লান্তিহীন ভাবে ঘুরাঘুরি করলাম দুই জন। এই দোকানে যাই, ওটা টেরাই দেই, জুয়েলারি হাতাতে হাতাতে সময় জ্ঞান পুরো ভুলে থাকি। ঈদ শপিং করতে মন চাইল, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আসার পরে শপিং করি নি একদম। কেমন যেন অপরাধ বোধ হয়। কিনতে পারি না অপ্রয়োজনীয় শখের কাপড়। আজকে কিনব প্রতিজ্ঞা করার পরে বিপত্তি হল। পছন্দ আর হয় না! জিপসী স্কার্ট কিনব কিনব জপছি, কিন্তু ফ্যাশন চলে গিয়ে এখন সামারে নতুন জামা স্টাইল এসেছে। আমি ওগুলোর সাথে হিজাব পড়বো কি করে? ম্যাচিং প্যান্ট আর হিজাব চিন্তা, সাথে ফুল হাতা জামা। ধুর, এত ঝামেলা! হঠাৎ মনে হল, অবার্নে গেলে জিপসী স্কার্ট পাওয়া যাবে। অবার্নে যাওয়া মানে পঞ্চাশ কি.মি. এর ধাক্কা। ট্রেইনে চলিশ মিনি্লট। প্রস্তাব শুনে মীরা হাবা হয়ে তাকায় বলে, তুমি সিরিয়াস? এরকম, হঠাৎ করে?
- য়ু্য বেট
ততক্ষনে আকাশ কালো করে এসেছে। বৃষ্টি হবে হবে ভাব। ট্যান কার্ভিশ সিদ্ধান্ত নিয়েই মন হুট করে ভালো হয়ে গেল। ট্রেইনে উঠেই বিয়ারের মিষ্টি গন্ধ পেলাম। কেউ চুরি করে খাচ্ছে। শনিবার বলে কথা! মীরা আর আমি বসতেই সামনে একটা নাটক শুরু হল। একটা মধ্যবয়সী মহিলার পাশে একজন অচেনা পুরুষ বসতে চাইতেই সে সিট ছাড়বে না। স্যরি, আমার পাশে বসা যাবে না। লোকটা এহেন অভদ্রতায় পুরো স্তম্ভিত। কেন? থতমত খেয়ে লোকটা দূরে গিয়ে বসলো। আমরা হা হা হি হি হাসি। আমার স্কার্ফে কোথাথেকে একটা কালো পোকা। পিছনের লোকটা সেটা দেখিয়ে দিল। হি হি হি। কোথে থেকে গাই সেবেসচিয়ানের গান। উহ উহ উহ। য়াল্লা বৃষ্টি শুরু হলো! হি হি হি।
মীরা ইতিমধ্যে অনেক বার ধমক খেয়ে ফেললো। হাঁটা চলার সময় কেন জানি সে আমার গা ঘেষে হাঁটে। বসার সময় বসছে পুরা আমার উপর হেলান দিয়ে। সর বেটি! ... কিন্তু তুমি এত আস্তে কথা বল কেন? তাছাড়া আই লাভ য়ু, আই লাভ বিয়িং উইথ য়ু।... পাকামি! ভাগ!
অবার্নে গিয়ে এই দোকান থেকে সেই দোকান। হয় জিপসি স্কার্ট নেই অথবা এত খ্যাত যে কান্না পায়। অনেক ঘুরে টুরে যখন পরিশেষে স্কার্ট পছন্দ হলো, সেই চমৎকার সাদা রঙের স্কার্টটা, সেটার দাম দেখে ভিমড়ি খাওয়ার জোগাড়। কিন্তু শপিং থেরাপি চলছে, এখন দাম দেখে ভড়কালে চলবে? মীরারও দেখলাম পছন্দ হয়েছে। চেঞ্জ রুমে ঘুরে ঘুরে দেখে আসলাম, ভালোই মানিয়েছে। তখন হঠাৎ কর্ণকুহরে পরিচিত শব্দাবলী। মনোযোগ দিতেই বুঝলাম কোন বাঙালী। সাথে সাথে চিমটা চিমটি, চোখাচোখি। আমরা চুপ! মহিলা দু'জন আমাদের পছন্দ করা স্কার্টটা ঘুরে ফিরে দেখছে আর আফসোস করছে এই সিলিম সাইজের স্কার্ট পড়ার সুদিন চলে গেছে বলে! ঘুরে ফিরে আমাকে আর মীরাকে দেখছেন আর চাপা কণ্ঠে বাংলায় মন্তব্য করছেন। আমরা কোন মতে স্কার্ট কিনে বাইরে বের হয়ে সে কি হাসি!
আরও ঘুরা ঘুরি, উদ্দেশ্যবিহীন। এখান থেকে ওখানে ছুটাছুটি। শেষ মেষ মীরার ত্যক্ত মন্তব্য: আমি এত দিনে বুঝতে পারতেছি মানুষ কেন মেয়েদের সাথে শপিঙে যেতে চায় না। আমি খুব আহত হলাম, 'শাট আপ তুই নিজেও মেয়ে'। 'হ্যা, কিন্তু আস্তমেয়ে না'... মীরার চোখ ঘুরানি মন্তব্য। আমি হাসতে হাসতে প্রায় একটা গাড়ির নিচে পড়ি আর কি! ওকে জরিমানা দিলাম অপত্যর্ের বন্ডাই বার্গার খাইয়ে।
ট্রেইন স্টেশনে পেঁৗছে দেখি ট্রেইন আসতে আরও পনেরো মিনিট। ঝির ঝির বৃষ্টি হচ্ছে। হাত ধরাধরি করে হাঁটতে হাঁটতে প্লাটফর্মের এক প্রান্তে চলে আসলাম। অপেক্ষা করতে করতে আমাদের মজার খেলাটা শুরু করলাম। মুখে মুখে গান লেখা এবং গাওয়া। মীরা এক লাইন, আমি আরেক লাইন। হেভি রোমান্টিক অবস্থা। কত ছড়াময় গান হলো... লাইন গুলো শেষ হচ্ছিল এভাবে... '... পলক/ঝলক, ... উড়ে/পুড়ে, ... চোখ/ নখ' ইত্যাদি।
ফেরার পথে মীরার মাইর খেলো সুবিজ্ঞ মন্তব্য করে: 'মাঝে মাঝে মামনি বাবা এরকম না থাকলে খারাপ হয় না য়ু্য নো... মানে অল্প সময়ের জন্য শুধু!'
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



