যতদূর মনে পড়ে একদিন প্রিয়া বলেছিল,“ দেখো, একদিন আমাদের ছোট্ট একটা বাড়ী হবে। ছোট নয়, বেশ বড় একটা বাড়ী, সামনে অনেকখানি ফাঁকা জায়গা… ছোট্ট একটা বাগান। বাড়ী থেকে একটু দূরে একটা বড় পুকুর, পুকুরের সামনে শ্যাওলাপড়া বাঁধানো ঘাট আর পুকুরে চকচকে জল। আর বাড়ীর ভেতরটা হবে ছিমছাম….ব্যালকনীতে ছোট ছোট টবে সুন্দর লতানো গাছ, বড় বড় ফুল হবে তবে মাঝে মাঝে রোজ নয়, বেশ একটা নতুন নতুন ভাব। বাথরুমটা থাকবে চকচকে, একটু মিষ্টি সুগন্ধ থাকবে। অনেকগুলো শ্যাম্পু থাকবে। ছোট্ট একটা ঝর্না, ঝিরঝির করে ঠান্ডা জল পড়বে। টাওয়েলগুলো হবে খুব নরম আর রোদে শুকানো। বিছানাগুলো হবে ছিমছাম, কোনও ভাঁজ থাকবেনা । জানালাগুলো সকালে খুললে নরম রোদ জানালা দিয়ে এসে পড়বে। স্নানের পর শরীরটা ঠান্ডা হয়ে যাবে। আর তুমি রোজ দাড়ি কামাবা আর সাতদিন পর পর চুল কাটবা একদম ছোট ছোট নয়, একটু বড়সড় চুলে তোমাকে ভাল লাগে, ছোট করলে মুড়ো ঝাঁটার মত লাগে। জানালায় থাকবে সুন্দর ডিজাইনের পর্দা। ঘরে চারপাখাওয়ালা একটা ফ্যান থাকবে যখন বাতাস হবে তখন কোনও শব্দ হবেনা। ঘরে থাকবে একটা নরম শান্ত ভাব।
আমি একটু হেসে বলেছিলাম, তুমি যা বললে তাতে সেটা আর বাড়ী থাকবেনা হবে কোনও রিসর্ট্ নয়তো আশ্রম। বেশ একটু গোস্যা করে ও বলেছিল, আমার কোনও কথা্তেই তোমার বিশ্বাস হয়না। দ্যাখো, একদিন যখন অনেক উঁচুতে উঠবা সেদিন আমি কাছে থাকবনা তখন আমার সবকথা সত্যি মনে হবে।
যদিও আজ কাছে নেই তবু মনে হয় ওর কথা মত্যি হয়েছে। আজ আমার একটা বড় বাড়ী হয়েছে যদিও বাড়ীটা আমার নয় তবুও বাড়ীর মালিক আমাকে বলেছে বাড়ীটাকে আমার নিজের মনে করতে। প্রথম প্রথম না মানলেও এখন বাড়ীটাকে আমার নিজেরই মনে হয়। শুধু সামনে নয় পিছনেও অনেক ফাঁকা জায়গা, বড় না হলেও বেশ বড় একটা পুকুরে আছে আর ফাউ হিসাবে রয়েছে অনেকগুলো রাজহাঁস আর পদ্মফুল। জলটাও বেশ চকচকে কারন নোংরা হওয়ার কোনও উপায় নেই নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। ওহ্…. বলতে ভুলেই গেছি একটা সুন্দর বাঁধানো ঘাট আছে কিন্তু সেটা মোটেও শ্যাওলা পড়া নয়। ভেতরটাও বেশ ছিমছাম। ব্যালকনীতে অনেকগুলো গাছও আছে তবে লতানো নয় আর ফুল ফোটে বেশ মাঝে মাঝে আর সেটা শুনেছি, এখনও পর্যন্ত ঘটেনি। বাথরুমটা চকচকে কিন্তু গন্ধ মানে সুগন্ধ বা দূর্গন্ধ কোনটাই নেই্। অনেকগুলো শ্যাম্পু না থাকলেও ঝর্না আছে যদিও একটু বেলা হলেই সেটা দিয়ে ঠান্ডা জল না বেরিয়ে গরম জল বেরোয় যা শরীর ঠান্ডার বদলে ক্লান্তিকর করে তোলে। রোজ সকালে ইচ্ছে খুব একটা না থাকলেও দাড়ি কামাতে হয় অবশ্যই নিজে নয় আর সাতদিন পরপর চুল। সেটা আর বড়বড় রাখা হয়না…..প্রিয়ার ভাষায় মুড়ো ঝাঁটা ছাঁট। জানালায় পর্দা আছে তবে ডিজাইনের নয় ,সাদা। প্রিয়ার কথামত ফ্যানও আছে তবে তিনপাখাওয়ালা আর যখন ঘোরে তখন হাল্কা ঘরঘর শব্দ হয়। ঘরে একটা ভাব আছে তবে সেটা শান্ত না অশান্ত সেটা সবসময় ঠিক বুঝিনা। তবে বুঝি প্রিয়ার কথামত সেই নরম শান্ত ভাবটা মোটেই নেই।
প্রিয়া বলেছিল, যেদিন সে থাকবেনা সেদিন তার সবকতা আমার সত্যি মনে হবে কথাটা একশত ভাগ সত্যি কারন ওর কথাগুলো আমার এখন খুব সত্যি মনে হয়। আর মনে হয় কারন ও কাছে নেই। আর এখন আমি অনেক না হলেও বেশ উঁচুতে, সাততলায় থাকি আর আমার কথা সত্যি হয়নি( আমার জীবনের কোনও কথাই সত্যি হয়না এই কারনেই কিনা জানিনা) বাড়ীটা রিসর্ট কিংবা আশ্রম হয়নি বাড়ীটা হয়েছে হাসপাতাল আর আমি হয়েছি রোগী।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




