অনু নামের মেয়েগুলো মনে হয় খুব ভাল হয়। আমি কখনও প্রেমে পড়ি নি। আমার খরতপ্ত জীবনে একপশলা বৃষ্টি এনে দিয়েছিল অনু। আমার আর অনুর প্রেম ছিল ঠিক পনের দিন। এই পনের দিনে আমি ভালবাসতে শিখেছিলাম।
আমি বরাবরই একটু রূঢ় টাইপের। আমার ধারণা ছিল, কোন মেয়ের মনে হয় আমাকে ভালবাসতে নেই। সেই ধারনা একদিন পাল্টে দিয়েছিল অনু।
আমরা ভাড়া বাড়ীতে থাকি। আমাদের পাশের ঘরটা বাড়ীর মালিক গরমে থাকবেন বলে ফেলে রেখেছিলেন। একদিন শুনলাম বাড়ীতে ভাড়াটে আসছে। আমার রাগ হয়েছিল খুব। আদতে একা থাকার অভ্যেস আমার। এর মাঝে অন্য কেউ এসে থাকবে, আমার বিরক্তি চরমে উঠেছিল। আরও রাগ উঠে গেছিল যখন শুনলাম, এদের ফ্যামিলীতে দুটো মেয়ে আসছে। ভাড়া বাড়ী বলে কিছু করারও ছিলনা।
অনু ছিল শ্যামলা রঙের অতি সাধারণ মেয়ে। কখনও তাকিয়ে দেখার প্রয়োজনও মনে করিনি। ওর দিদি ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড চাইতে আসলেও ও আসেনি। ওর দিদি বেশ সুন্দরী। বেশ কথা বলে। আর অনু চুপচাপ থাকে বরাবরই। একদিন মোবাইল ঠিক করার বদৌলতে ওদের সাথে বেশ খাতির হয়ে গেল। হোয়াটস এপ এ এড হল। হ্যালো হাই চলতে লাগল। একদিন বুঝলাম অনুকে আমি পছন্দ করি। শুধু পছন্দ না বেশ পছন্দ করি।
একদিন কথা প্রসঙ্গে ও বলল, “তুমি রাত জাগো কেন?” আমি বললাম, “আমার ঘুম পায়না তাই রাত জাগি”। অনু বলল, “না, তুমি তাড়াতাড়ি ঘুমোবা।”
সেই রাতে কেন জানিনা রাত বারোটা বাজার আগেই আমার ঘুম পেতে লাগল। আমি ঘুমিয়ে গেলাম।
দিন দুয়েক পরে ও আমাকে বলল, “তুমি এত দুঃখের গান শোন কেন ? সুখের গান শুনতে পারনা ?”
আমি সেইদিন থেকে সুখের গান শুনতে লাগলাম। এর মানে আমার মতন লোকও প্রেমে পড়তে পারে।
একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?” আমি বললাম “তুমি কিছু বলতে চাও?” ও বলল, “হ্যাঁ, আমি তোমাকে ভালবাসি।” আমি আমার সীমাবদ্ধতাগুলো ওকে বললাম। আরও বললাম ভেবে দেখ।
ও বলল, “দেখেছি।”
আমি বললাম,“ রাস্তায় থাকতে হবে।”
ও বলল,“ থাকব।”
আমরা প্রেমে পড়লাম। আস্তে আস্তে আমার বৌদি ব্যাপারটা জানল। বৌদি আমাকে প্রাণাধিক ভালবাসে। বৌদিরও দেখলাম ওকে খুব পছন্দ।
হাসি-কাঁন্না একাকার হয়ে আমরা ভালবাসলাম।
ঠিক চৌদ্দদিনের মাথা ওর বাড়ীর লোকজন ব্যাপারটা জানল। ও নিজেকে গুটিয়ে নিল। এক রাতে সবকিছু বদলে গেল।
ওর বাড়ীর লোকজন আমাকে ডেকে নিয়ে চরম সব অপমানজনক কথা বলল। আমি কোনও উত্তর করিনি। আমি সব আমার দোষ ছিল বলে সব অপমান মুখ বুজে মেনে নিয়েছি। আমি আমার ভালবাসাটাকে লুচ্চামির মোড়কে ঢেকে দিয়ে অনুকে নীরপরাধ প্রমান করে দিয়েছি। আমার ভালবাসাকে আর ভালবাসার মানুষটাকে দুনিয়ার চোখে অপরাধী প্রমান করার কোনও অধিকার কারও নেই। এভাবে ভাবি বলেই হয়তো আমি খারাপ মানুষ।
বৌদি সারারাত ধরে কাঁদল আর দাদা ঘুমাল না।
এখন প্রায় মাসের উপরে অনু আমার সাথে একটাও কথা বলেনি। আমার কাছেও একটা বড় রহস্য কেমন করে মানুষ একরাতে নিজেকে বদলে নেয়?
হয়তো এভাবেই বদল হয় সবকিছু। মানুষ মেনে নিতে শেখে। আমার রূঢ় জীবনটাকে, আমার ফ্যামিলীর ক্ষুদ্র ভালবাসাটুকু নিয়ে কি দরকার ছিল পনের দিনের খেলার আমি জানিনা।
এটা অভিনয়, না অন্যকিছু সেটা আমি জানিনা।
আমি অবাক হয়ে যাই। একাকী দাঁড়িয়ে ভাবি, কি দরকার ছিল এই পনের দিনের? আমি মাথা থেকে মুছে দিতে পারিনা এই পনের দিন। আমার কান্না পায়। আমার চেপে থাকা হতাশা বোধটা জাগিয়ে দেওয়ার কি কোনও দরকার ছিল ?
এটার দরকার ছিল হয়তো। মাঝে মাঝে পাহাড়েরও কাঁন্নার দরকার পড়ে আমি তার জ্বলজ্যন্ত প্রমান। জানিনা জীবনে সামনে কি আছে। আমার অনুকে বুকে রেখে একরাশ অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখতে চাই, জীবন তুমি কতটা খেলতে পার ??
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




