ব্লগে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণে সাহায্য চেয়ে অনেক পোস্ট চোখে পড়েছে। কেউ পরীক্ষার্থীকে কোনো কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কেউ বা লেখককে শুভেচ্ছা জানিয়ে চলে গেছেন। বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণের জন্য আগে দুইটি পোস্ট দিয়েছি। এটি সর্বশেষ পোস্ট। পোস্টটি পড়লে বুঝবেন আসলেই বিসিএস পরীক্ষা দিতে পূর্ব থেকেই আপনার একটি অনুসন্ধিৎসু মন গড়ে উঠতে হবে।
বিসিএস পরীক্ষা দিবেন- প্রস্তুতি নিন এখন থেকেই
বিসিএস পরীক্ষা দিবেন- আরও কিছু টিপস
সাধারণত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। বর্তমানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা শিক্ষার্থীরাও বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। ১৬ কোটি লোকের দেশে প্রতি বছর মাত্র দেড়-দুই হাজার ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতি বছর গড়ে দেড় লাখ পরিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে এই পরীক্ষায়। তাই এটি তুমুল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা।
বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি কিন্তু আপনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই ধরে নিতে হবে। আপনার পড়াশুনার আসল লক্ষ্য কি তা নির্ধারণ করবেন আপনি নিজেই। যদি পাশ করে একজন ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে চান, আপনার শুরু করতে হবে প্রথম বর্ষ থেকেই। বিজ্ঞানমনষ্ক মন নিয়ে সব কিছু জানতে কৌতুহলী হোন। হাতের কাছে চলতি বিশ্বকোষ রাখতে পারেন। অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে আপনি বিশ্বকোষে মাঝে মাঝে চোখ রাখবেন।
আপনি এই কাজগুলো শুরু করে দিন এখনই-
১. বাঁধাই করা লম্বা সাইজের কয়েক শ পাতার একটি খাতা কিনুন। এটি আপনার প্রতিদিনের সাধারণ জ্ঞানের ভাণ্ডার হয়ে উঠবে ধীরে ধীরে।
২. আরেকটি খাতা কিনবেন পেপার-পত্রিকার কাটিং সংরক্ষণের জন্য। নিউজটি পড়ে আপনার মনে হলো এটি ইম্পর্টেন্ট। কাঁচি দিয়ে কেটে আইকা বা গাম দিয়ে পৃষ্ঠাজুড়ে লাগিয়ে রাখবেন।
৩. ফুটপাথে আজকাল বড় সাইজের বাংলাদেশ ম্যাপ, বিশ্ব ম্যাপ পাওয়া যায়। দুটো ম্যাপ কিনে নিন। গ্রাফোসম্যানের ভূ-চিত্রাবলি বই আকারে পাওয়া যায়। বাজারে খুঁজলে আরও ভালো প্রতিষ্ঠানের ম্যাপ পাওয়া যেতে পারে।
৪. আপনার কাজ শুরু করে দিন। অনিয়মিত হলেও অসুবিধা নেই। দেয়াল জুড়ে ম্যাপটা যখন টেবিলের সামনে থাকবে, আপনার চোখে পড়বেই। কৌতুহলী হয়ে একটা দেশের নাম স্মরণ করে ম্যাপটাকে একটু চোখ বুলিয়ে নিলেন। এই দেশের আশেপাশের কয়েকটা দেশ দেখে নিলেন। দেশটি কোন মহাদেশে অবস্থিত তা দেখে নিলেন। এভাবেই আপনার কৌতুহল জাগবে।
৫. আপনি পত্রিকা পড়তে গিয়ে একটি নিউজ জানলেন যে, ২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশের চাকরিদাতা অর্থাৎ উদ্যোক্তা ১ লাখ ছিল। অর্থাৎ ৪ বছরে উদ্যোক্তা বাড়েনি একজনও। একটি আর্থ-সামাজিক সমস্যা সংকুল দেশে এই তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ। (তথ্যসূত্র- প্রথম আলো, ২৯ জানুয়ারি ২০১২, ১৫ পৃষ্ঠা, কর্মসূত্র বাড়লেও বেকারত্ব কমেনি।) নিউজটি আপনি কেটে সংরক্ষণ করতে পারেন অথবা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটুকু আপনার খাতায় তুলে রাখতে পারেন। ভবিষ্যতে কখনো চোখ বুলালে আপনার মস্তিষ্ক এই তথ্যটিকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করবে।
৬. বিশ্ব পরিস্থিতি এখন কোন দিকে ধাবিত- তা আপনাকে ভালো করে বুঝতে হবে। এর জন্য পত্রিকার আন্তর্জাতিক নিউজগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। আর ফলোআপ রাখতে হবে। এভাবে আপনার বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়বে।
৭. লাইব্রেরী ওয়ার্ক করবেন মাঝে মাঝে। বিভিন্ন রচনা/আর্টিকেল লেখার সময় কয়েকটি বই নিন। যে বই থেকে যে তথ্যটুকু প্রয়োজন মনে করবেন তা টুকে নিয়ে নিজেই একটি রচনা/আর্টিকেল প্রস্তুত করলেন।
মনে করুন সাম্প্রতিক আরব বসন্তে বিশ্ব পরিস্থিতি এখন কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে- এটি নিয়ে আপনি একটি আর্টিকেল সাজাবেন। লাইব্রেরীতে চলে যান। অনেক পত্রিকা ম্যাগাজিন পাবেন। গুগল সার্চ দিলেও অনেক আর্টিকেল পাবেন। সবগুলো পড়ে আপনার মতো করে একটি আর্টিকেল দাঁড় করান।
এই চর্চাটি আপনার ভবিষ্যত জীবনে খুব কাজে দেবে।
৮. তথ্যপ্রযুক্তির সর্বশেষ তথ্য, বিজ্ঞানের সর্বশেষ আবিষ্কার- এ তথ্যগুলো সংরক্ষণ করবেন কিংবা নোটে তুলে রাখবেন। আপনার সাথে সবসময় একটা ছোট্ট নোটবুক এবং কলম রাখবেন। কোথাও কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চোখে পড়লে ঐ ছোট্ট নোটবুকে তুলে রাখবেন। বাসায় এসে বড় খাতাটিতে স্থায়ীভাবে তুলবেন। এতে দেখবেন এই তথ্য আপনার পরীক্ষায় কি কাজে দেয়!
৯. আজকাল অনলাইনে বিসিএস পরীক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। গুগলে বিসিএস পরীক্ষা নামে সার্চ দিলেই কিছু প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে। অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে এ সাইটগুলো দেখুন। তারা কিভাবে মডেল টেস্ট নিচ্ছে অনলাইনে তা দেখুন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
আপনি নিজেই অনলাইনে এরকম একটি ফ্রি ওয়েবসাইট গড়ে তুলতে পারেন। এতে আপনার বিসিএস প্রস্তুতিটাও হয়ে যাবে আবার দশজনের উপকারও করলেন। আপনার বিজ্ঞানমনষ্ক এবং অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে আপনি এখন থেকেই একজন ক্যাডার কর্মকর্তা হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:৫৫