somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন দেওয়ান সাইদুর রহমান এবং একজন কেজরিওয়াল

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের রাজনীতির কথা শুনলে সুধীজন মাত্রই বিরক্ত হন। রাজনীতিতে ভালো কোনো মানুষ নেই বলে আক্ষেপ করেন। সুধীজনের আক্ষেপের কারণ হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতি কতিপয় অসাধু ব্যক্তির হাতে জিম্মি। এই জিম্মিদশা থেকে রাজনীতিকে বের করে নিয়ে আসার জন্য কেউ ভাবেন না। অসাধু মানুষদের হাতে রাজনীতি কুক্ষিগত বলে আক্ষেপ করেন। কিন্তু নোংরার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিজেও নামেন না বা কাউকে লড়াই করার সমর্থনও দেন না। তাই রাজনীতিতে আজ অসাধুদের জয়জয়কার। কিন্তু রাজনীতি যদি শিক্ষিত এবং সজ্জনদের হাতে যেত তাহলে কি হত?

পত্র-পত্রিকায় প্রতিদিনই বাংলাদেশের রাজনীতির নানান সংবাদ থাকে। জাতীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের রাজনীতি পর্যন্ত সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার যুগে সচিত্র সংবাদ ঘন্টায় ঘন্টায় দেখা যায়। ফেসবুক, ব্লগে রাজনীতি নিয়ে সরগরম অবস্থা থাকে। ইউটিউবের কল্যাণে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায় একটি সচিত্র ভিডিও। আধিপত্যবাদের রাজনীতিতে খুন, অপহরণ, দখলের মাধ্যমে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করা হচ্ছে দেশে। এগুলো মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক সাইটগুলোর কল্যাণে।

বাংলাদেশে রাজনীতির এই খবরগুলো হয় সবই নেতিবাচক। সরকারি দলের এক মত আর বিরোধী দলের উল্টো পথ। দেশের মঙ্গলের জন্য একমত হয়ে কাজ করার সংস্কৃতি আমাদের রাজনীতিতে নেই। জেলা উপজেলা পর্যায়ের রাজনীতিতে দখল, খুন, হামলা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, অপহরণ নিত্যদিনকার সংবাদ। আজকাল ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন পর্যায়ের রাজনীতিতেও ভালো কোনো সংবাদ উঠে আসে না। জাতীয় রাজনীতিতেও নোংরামি। এগুলো দেখেশুনে কেউ আর রাজনীতির পথ মাড়াতে চায় না। বাংলাদেশের জেলা উপজেলা পর্যায়ে অনেক রাজনৈতিক নেতা আছেন জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই রাজনীতি করে যাচ্ছেন। কিন্তু অসাধু রাজনীতিকদের চক্রে পড়ে তাঁরা কোনঠাসা হয়ে আছেন। জাতীয় রাজনীতিতেও অবস্থা তথৈবচ।

ভারতের সাম্প্রতিক রাজনীতি থেকে কিছু শিখতে পারি আমরা। দিল্লীতে ৪৯ দিন মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন কেজরিওয়াল। কেজরিওয়াল উপমহাদেশের রাজনীতিতে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার আপোষহীন মনোভাব তিনি দেখিয়েছেন। কেজরিওয়ালের রাজনীতিতে টিকতে না পারাটা 'ভালো রাজনীতির' ব্যর্থতা নয়, বরং একটি উদাহরণের সৃষ্টি। কেজরিওয়াল উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছেন যে, রাজনীতির নোংরা পাঁকে নেমেই রাজনীতি পরিশুদ্ধ করতে হবে। নোংরা রাজনীতির দাপটে সাময়িক পিছু হটেছেন বটে তবে ফিরে আসারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সাধারণ মানুষ তাঁর ডাকে কিভাবে সাড়া দেয় তা-ই এখন দেখার বিষয়।

রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে রাজনৈতিক কূটবুদ্ধি ও দূরদৃষ্টি থাকা চাই। নিজের দল আম আদমি পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে কেজরিওয়াল মূখ্যমন্ত্রীর পদ লাভ করেছিলেন। তাঁর উচিত ছিল কংগ্রেসকে সাথে নিয়ে কাজ করা। একেবারে দুই শত্রু কংগ্রেস এবং বিজেপিকে একসাথে বধ করা যাবে না। একেবারেই সব দুর্নীতি নির্মূল করা যাবে না। বরং কৌশলী হয়ে কংগ্রেসকে সাথে নিয়ে জনগণের জন্য কাজ করার সৃযোগ সৃষ্টি করতে পারতেন কেজরিওয়াল। আপাতত পিছু হটার এই কৌশল কেজরিওয়ালের ভবিষ্যত রাজনীতিতে কি প্রভাব ফেলবে সময়ই তা বলে দেবে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক নোংরামি। এখানে শিক্ষিত সজ্জনরা কেজরিওয়ালের মত এগিয়ে আসতে চাইবেন না। গান্ধীবাদী নেতা আন্না হাজারের শিষ্য কেজরিওয়াল সরকারি চাকুরি ছেড়ে দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন। অনশন, ধর্মঘট করেছেন। রাজ্যের শীর্ষপদ লাভ করে দুর্নীতি বিরোধী 'লোকপাল' বিল পাস করাতে চেয়েছিলেন। সব দুর্নীতিবাজের উচ্ছেদ চেয়েছিলেন। কংগ্রেসের সাপোর্টে টলটলায়মান সরকার নিয়ে তিনি উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারেন নি। রাজনৈতিক অপরিপক্কতার জন্য পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু তিনি একেবারে মাঠ ছেড়ে দেননি। মূখ্য মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি জনগণের সমর্থন নিয়ে পূর্ণ শক্তি নিয়ে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। একজন শিক্ষিত সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে ভারতের রাজনীতিতে তিনি একটি স্থান করে নিতে পেরেছেন। আবারও তিনি ফিরে আসুন রাজনীতিতে ভালো মানুষের প্রতিনিধি হয়ে- এই কামনা করছি।
---------------------------------------------------------------------------------
আজকের এই লেখাটি নিবেদন করছি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেওয়ান সাইদুর রহমানের উদ্দেশে। একটি প্রকল্পের কাজে প্রায়ই হরিরামপুর যেতে হয়। মাত্র দুইদিন তাঁর সাথে কথা হয়েছে। তিনি গতবারও এ উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। সারা বাংলাদেশের দশজন রাষ্ট্রীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে তিনি একজন। সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এ নেতা নোংরা রাজনীতির শিকার। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ এ উপজেলায় নির্বাচন। জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে এগিয়ে থাকা এ নেতার রাজনৈতিক জীবনে ঘটে গেছে এক নৃশংস দুর্ঘটনা। কিছুদিন আগে চেয়ারম্যানের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত স্বার্থান্ধ মহল খুন করতে চেয়েছিল তাঁকে। কিলার বাহিনী ভুলে একই চেহারার ভাতিজাকে খুন করে কুপিয়ে। রাতের অন্ধকারে ছবি দেখে মিলিয়ে এ হত্যাকাণ্ড। একটি উপজেলার রাজনীতিতে এরকম নৃশংস ঘটনা জাতীয় রাজনীতিতে স্থান পায়নি।

শিক্ষিত এবং সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত দেওয়ান সাইদুর রহমান রাজনীতিকেই ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন কানাডা প্রবাসী। তিনিও কানাডায় স্থায়ীভাবেই থেকে যেতে পারতেন। দেশের মানুষের টানে তিনি ছুটে এসেছেন। দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন মানুষের জন্য। হরিরামপুর থানায় মামলা যাওয়ার আগেই নাকি তিনি সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে ডেকে মিটমাট করে দেন। একজন উপজেলা চেয়ারম্যান সাধারণ মানুষের সাথে মিশে থাকতেই পছন্দ করেন। উপজেলা কোয়ার্টারে থাকেন একবারেই নিরাপত্তাহীন অবস্থায়। ঐদিনের ঘটনায় সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এরকম একজন নেতার পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে তিনি রাজনীতি করে যাচ্ছেন গণমানুষের জন্য। হরিরামপুর উপজেলা পর্যায়ের রাজনীতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামীলীগ, বিএনপি এবং অন্যান্য পার্টির অনেকেই। আওয়ামী লীগ করলেও দল থেকে নমিনেশন পান নি। বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিতে ভোট কেনাবেচা হয়। ভোট কেনাবেচার রাজনীতিতে দেওয়ান সাইদুর রহমান আবারও নির্বাচিত হতে পারবেন কিনা তা ২৭ ফেব্রুয়ারি স্পষ্ট হবে। তিনি হেরে গেলে ভালো রাজনীতি হেরে যাবে। তাই দেওয়ান সাইদুর রহমানের পাশ না দাঁড়াতে পারি, তাঁর জন্য শুভকামনা জানাতে পারি নিশ্চয়ই।
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×