somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাত্ররাজনীতি ও কিছু বাস্তবতা

২১ শে মে, ২০০৯ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে বিষয়টা নিয়ে আমি লেখার গোড়াপত্তন করতে চাচ্ছি, ব্যাপারটা ইস্যু হিসেবে মোটেও নতুন কিছু নয়, তবে ভুক্তভোগী হয়ে প্রচন্ড আবেগের বশবর্তী হয়ে কলম ধরেছিলাম। ভেবেছিলাম আমার লেখা হয়তো কারও চোখে পড়লেও পরতে পারে। হয়তো কাজ হলেও হতে পারে। সেই চিন্তাটার সমাপ্তি সেখানেই ঘটেছিল। তবে সেদিনের খসড়াটা আজ এখানে তুলে আনার প্রয়াসে আবার কীবোর্ডে হাত রেখেছি।
পরিবর্তন আর আমূল বদলে যাওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ দেখেছিলাম। স্বপ্ন দেখেছিলাম, উৎফুল্ল হয়েছিলাম। নতুন বাংলাদেশ- ডিজিটাল রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে শিহরিত হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম যাক এবার অন্তত মুক্তি মিলবে, নিজেদের স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আজ স্মৃতি হাতড়ে বেড়াই, কিন্তু সেখানে মরীচিকাময় বিস্তৃত হাহাকার ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না।
বিষয়টা জটিল কিছূ নয়, তবে ব্যাপারটা জটিলতার বাইরের কোন কথাও নয়। কারন ইস্যু যখন ছাত্ররাজনীতি। কারন এখন ছাত্ররাজনীতি তো মসলা হয়ে গেছে। যে কোন তরকারিকে উপাদেয় করার জন্য লবনের যেমন ব্যবহার; আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটে এর একই ব্যবহার, যার ইতিবাচক কোন ব্যবহার দেখি না, তথাপি এর কোন উপকারিতা চোখে পড়ে না। স্বাধীনতা পূর্ব আর স্বাধীনতা পরবর্তী যে গৌরবোজ্জল ছাত্ররাজনীতির কথা শুনেছি তার সম্পূর্ন বিপরীতার্থক কোন বিষয় বলেই আপাত মনে হয়। কারন পত্রিকা খুললেই এ দৃষ্টটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
‍‍"ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ" , ছাত্ররাই একদিন রাষ্ট্রের হাল ধরবে পড়ে পড়ে নিজেদের গড়ে তুলেছি। কিন্তু হায় আশায় গুড়েবালি। নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহন করে, আর অন্যদিকে শুরু হয় হল দখল, গোলাগুলি হত্যাকান্ডসহ সরকারী ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের সশস্ত্র পদচারনা। জিম্মি হয় সাধারন ছাত্ররা। যেখানে আমরা মুক্তি চেয়েছিলাম নিকৃষ্ট রাজনীতির হাত থেকে, উত্তরণ চেয়েছিলাম পূর্বের রাজনৈতিক অবস্তায়। চাইনি রাত জেগে হল পাহারা দিতে , বন্ধুর বুকে অস্ত্র ঠেকাতে, চাদাবাজি করতে, তেমনি সশস্ত্র টহলও দিতে। সুষ্ঠু রাজনৈতিক অবস্থার বহিঃপ্রকাশ চেয়েছিলাম, যে ছাত্ররাজনীতি আমাদের তাড়িত করে নিয়ে যাবে গৌরবোজ্জল অতীতের কাছে। বারবার যে গৌরবোজ্জল ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস আমাদের শিহরিত করে, দেশকে নিয়ে ভাবতে শেখায়, নিজের মাঝে দেশপ্রেমকে জাগ্রত করে।
ছাত্ররাজনীতির বিদ্যমান অবস্থা বিচলিত করেছে বুদ্ধিজীবি মহলকে। একসময় আলোচনার হটকেকে রুপান্তরিত হয়েছে ছাত্র রাজনীতি। সাধারন শিক্ষার্থীদের আকুতি দেখেছি, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের আবেদন দেখেছি। প্রধানমন্ত্রীর সাংগঠনিক পদ থেকে ইস্তফা দিতে দেখেছি। ভেবেছিলাম এবার ছাত্রলীগের কর্মীদের টনক নড়েছে। কিন্তু হায়, মাথাব্যাথাটা বোধহয় আর সারা গেল না। স্বভাব বুঝি আর পরিবর্তন হলো না। বোধহয় এই নোংরা ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাস থেকে আমাদের মুক্তি নেই।
মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষ করে একজন ছাত্র হাজারো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভর্তি হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর আমাদের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে দেখা যায়, ভর্তির পরপরই একজন শিক্ষার্থী ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষক রাজনীতির মাঝে আটকে পড়ে। হলে বড় বাই, ছোটভাই, বন্ধুদের ধমক খেয়ে চলতে হয়, কেননা তারাই তো ছাত্রদের হল অভিভাবক। ডিপার্টমেন্টে স্যারদের ইচ্ছানুযায়ী চলতে হয়, শত ব্যস্ততার মাঝে তারা ক্লাস নেবেন কিভাবে? এই জিম্মি অবস্থার মাঝেও যে একজন শিক্ষার্থী টিকে থাকে তাই তো দেশের বড় প্রাপ্তি। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন শেষ হবে তবে তারা শিক্ষিত হচ্ছে কিনা তা গুরুত্বের সাথে দেখার বিষয়। সেশনজটের করালে শিক্ষার্থীরা যেমন রিক্ত হচ্ছে তেমনি বাবা মাও রিক্ত হচ্ছে।
ছাত্র রাজনীতির বর্তমান ফলাফল গুলো একটু পর্যালোচনা করা যাক। ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী খুন হল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র বিষয়কে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মারামারি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুদল কর্মীদের দীর্ঘদিনের হানাহানি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের অন্ধকারে দুদলের মাঝে তুমুল সংঘর্ষ এবং বিভিন্ন ধরনের ছোটবড় সংঘর্ষের কারনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা। এসব ঘটনার জবাব ও দায় কারা নেবে? ছাত্ররাজনীতির নামে শিক্ষার্থীদের এসব কর্মকান্ডকে একের পর এক এভাবে আর কত বৈধতা প্রদান করা হবে? একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে স্থবির করে তুলেছ, যার ইতিবাচক কোন ফলাফল দেখা যায় না। শিক্ষার্থীর পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে বৃহত্তর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এর কোন সুফল আছে কিনা জানা নেই।
প্রধানমন্ত্রীর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ থেকে ইস্তফা নেয়া দেখে নিজের মাঝে সস্তি খুজে পেয়েছিলাম। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নির্দেশে ভেবেছিলাম এবার পুলিশ প্রশাসন শক্তি ফিরে পাবে, ক্যাম্পাসে সাধারন ছাত্ররা একটু হলেও সাধারন জীবনে ফিরে যাবে। এখানেও দেখি গলদ। এখন দেখি পুলিশ প্রশাসনের সামনেই ছাত্রদের হলের ভেতর তালাবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। উদ্দেশ্য মিছিল করতে হবে। কেউ বের হতে চাইলে বলা হচ্ছে যে যার জীবনের দায় নিয়ে বের হতে হবে। এই তো আমাদের বাস্তবতা, বুদ্ধিজীবিদের মাথাব্যাথা আর সরকারী দলের অবস্থান।
হয়তো বাস্তবতাটা সবাই বুঝতে পারছেন না। তবে আমরা সাধারন ছাত্ররা ছিলাম এর ভুক্তভোগী। হলের ভেতরে আটকা থেকেছি, মুড়ি চিড়া খেয়ে দিন কাটিয়েছি, হলে পুলিশের টিয়ার শেল মারা দেখেছি, দেখেছি রাজনৈতিক বড় ভাইদের নির্বিকারত্ব। আবার হলের বাইরে নির্দিষ্ট হলের ছাত্র বলে প্রহৃত হয়েছি। আমরা তো এ ময়লা রাজনীতি চাইনি।
ছাত্ররজনীতি নামক এই ধারাটা,যার কোন সুফল নেই: সেই বিষয়টার কি আমাদের কোন দরকার আছে? এ ধারা সম্পূর্ণ বিলোপ না হলেও কি এর এমন কোন সংশোধন করা যায় না, যার মধ্য দিয়ে সাধারন শিক্ষার্থীকে লান্ঞিত হতে হবে না, সাধারন ছাত্রকে জিম্মি হতে হবে না, শিক্ষার্থী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা থেকে বিরত থাকবে। আমরা এর সমাধান চাই, স্বল্পমেয়াদি নয় দীর্ঘমেয়াদী।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০০৯ দুপুর ২:১৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×