somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের উদীয়মান এবং তেজী শিল্প খাত হিসেবে পরিচিত টেক্সটাইল শিল্প ধংশের মুখোমুখীঃ

২৪ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের পর দেশের উদীয়মান এবং তেজী শিল্প খাত হিসেবে পরিচিত টেক্সটাইল শিল্প(স্পীনিং মিলস)। দেশে ইতোমধ্যে প্রায় তিনশতাধিক টেক্সটাইল মিলস স্থাপিত হয়েছে। যা দেশের প্রয়জনীয় সুতার শতকরা ৯৫ ভাগ চাহিদা মিটাতে সক্ষম। এই খাতে বিনিয়োগকারীদের প্রায় ষাট হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা আছে। টেক্সটাইল শিল্পের সাথে প্রায় ৫ লক্ষ কর্মজীবি প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। কিন্তু এই টেক্সটাইল মিলস গুলো প্রতিবেশী দেশ ভারতের সুতা আগ্রাসনের পড়ে এবং সরকারী কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারনে ধংশের মুখোমুখী হয়ে নিভু নিভু হয়ে জ্বলছে। সরকার খুব তড়িত যথাযথ সিদ্ধান্ত না নিলে তা অচিরেই নিভে যাবে টেক্সটাইল খাতে বাতি।স্বাধীনতার পুর্বে আমাদের দেশে টেক্সটাইল মিল ছিল ৪০টি। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারনে ১৯৭৫ সন পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮ টি এবং ১৯৯৩-২০০৬ পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪১ টি। তার মধ্যে ৮০-১০০% উতপাদন রপ্তানী হয় ৩৬ টি মিলের।

বাংলাদেশে স্থাপিত বেশীর ভাগ বস্রকলগুলো(স্পীনিং মিলস) জাপান, কোরিয়া, ইউরোপীয় এবং আমেরিকান অত্যাধুনিক মেশিনারিজ ব্যাবহার করার জন্য উতপাদন ব্যয় কম এবং উন্নত মানের সুতা উতপাদন করতে সক্ষম।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারনে এবং ভারতীয় সুতার নিম্ন মানের কারনে ভারত তাদের উতপাদিত সুতা আগের মত বিদেশী বাজারে বিক্রি করতে পারছেনা। ফলে ভারতের ব্যাবসায়ীরা তাদের অবিক্রিত বিপুল পরিমান সুতা ডাম্পিং (উতপাদিত পণ্য উতপাদন খরচের চাইতে কম দামে অন্য দেশে বিক্রি করাকে ডাম্পিং বলা হয়)ভূমি হিসাবে বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে। আগে স্থল বন্দর দিয়ে সুতা আমদানী্তে শুল্ক বিশয়ে কিছু শর্ত দেয়া ছিল (যে কাউন্টের সুতা দেশীয় মিলগুলোতে উতপাদিত হয় সেই ধরনের সুতা আমদানীতে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ)-ফলে সহসাই ব্যাবসায়ীরা ভারত থেকে সুতা আমদানীতে নিরুতসাহিত হতো। সেই কারনে ভারত থেকে বলতে গেলে সুতা আমদানী একপ্রকার বন্ধ ছিল। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেই শর্ত তুলে দেবার কারনে বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীদের আগ্রহে ভারতীয় ব্যাবসায়ীরা তাদের অবিক্রিত তুলা বাংলাদেশে রপ্তানী করছে। আমাদের দেশীয় নিট গার্মেন্টসগুলো কিছু কম দামের সুতা পেয়ে দেশীয় উতপাদিত ভালোমানের সুতা ব্যাবহার করছেনা।

ইতোমধ্যে ভারত সরকার রুপীর মুল্য শতকরা ২৫ ভাগ অবমুল্যায়ন করায় এবং সুতা রপ্তানীর উপড় প্রায় ১০ শতাংশ ক্যাশ ইনটেন্সিভ প্রদান করায় ভারতীয় রপ্তানীকারকগণ অনেক বেশী লাভবান হওয়ায় তারা রপ্তানীতে আরো বেশী উতসাহিত হয়ে "বন্যার পানি"র মত তাদের অবিক্রিত "সুতা" বাংলাদেশে রপ্তানী করছে। গত তিন দুই বছরে ভারত থেকে সুতা আমদানী বেড়েছে ৩৮০০ শতাংশ! ইতোমধ্যে বিটিএমএ নেতারা গত ১৪ তারিখে বস্র মন্ত্রী, বানিজ্য মন্ত্রী,১৯ তারিখে শিল্প মন্ত্রী এবং ২০ তারিখে অর্থমন্ত্রীর সাথে দেখা করে টেক্সটাইল খাতের সমুহ বিপদের কথা জানিয়ে আশু ব্যাবস্থা নেবার আহবান জানায়।

বস্র তথা সুতা খাতে আমাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দী দেশ ভারত এবং পাকিস্তান। তারা মুলত তাদের দেশে উতপাদিত তুলা থেকেই সুতা তৈরী করে।তাছারা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যেখানে মাত্র ৫/৬ পার্সেন্ট ব্যাংক সুদ প্রদান করে-সেখানে আমরা ১৫-১৯ পার্সেন্ট পর্যন্ত ব্যাংক সুদ প্রদান করি। সেই সব দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রচন্ড গ্যাস-বিদ্যুত সংকট সত্তেও শুধু মাত্র সস্তা দক্ষ শ্রম শক্তির কারনেই আমরা ইরান, ব্রাজিল, উজবেকিস্তান সহ বিভিন্ন দেশ থেকে তুলা আমদানী করে সুতা তৈরী করে স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পাশা পাশি খুব উন্নত মানের সুতা ইউরোপ সহ বিভিন্ন দেশে প্রতিযোগীতামুলক দামে রপ্তানী করি। যদিও বর্তমানে ভারত পাকিস্তানের মুদ্রার অবমুল্যায়ন, বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে বৈধ এবং অবৈধ ভাবে সুতা আমদানী, কথিত চুক্তির বিপরীতে রপ্তানীর নামে (ব্যাক টু ব্যাক এলসি)সুতা এনে তা খোলা বাজারে বিক্রি করার কারনে দেশীয় উতপাদিত সুতা প্রতিযোগীতায় টিকতে পারছেনা। এরকম পরিস্থিতিতে স্পীনিং মিলগুলোতে দেড় লক্ষ টনের বেশী উতপাদিত সুতা অবিক্রিত পরে আছে। যার মুল্য ২৫ হাজার কোটি টাকা। উতপাদিত সুতা বিক্রি করতে নাপারার জন্য টেক্সটাইল খাতে আর্থিক তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে! কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রপ্তানী অর্ডারের নামে অসাধু শুল্ক কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ঘোষিত ওজনের চাইতে বহুগুণ বেশী পরিমান সুতা ভারত থেকে আমদানী করে স্থানীয় খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে কমন স্টান্ডার্ড(২০ এবং ৩২ কাউন্ট) প্রতি কেজি তুলার উতপাদন খরচ $2.20 সেখানে ভারত সরকার তাদের বস্র রপ্তানী খাতকে প্রায় ১০ শতাংশ ক্যাশ ইনটেনসিভ সহ সাকুল্যে ২৫ ভাগ পর্যন্ত সরকারি সাবসিডি(ভর্তুকি) প্রদান করে শুধু মাত্র বাংলাদেশে মাত্র $2.10 প্রতি কেজি সুতা রপ্তানী করে আমাদের উদীয়মান শিল্প ধংশ করে দিচ্ছে। আমাদের উতপাদিত সুতা সর্বোচ্চ $2.30 ডলার সমমুল্যে স্থানীয় বাজারে এবং প্রতিযোগীতা মুলক দামে বিদেশে রপ্তানী/ বিক্রয় করি।


আমাদের সরকারের উচিত-যেধরনের সুতা আমরা উতপাদন করতে সক্ষম সেই ধরনের সুতা আমদানীতে নিরুতসাহিত করার জন্য সুতা আমদানী শুল্ক বাড়িয়ে দেয়া এবং বিদেশে রপ্তানীর জন্য আমাদের দেশীয় বস্রকলগুলোকে (স্পীনিং মিলস)সামান্য ভর্তুকি দিয়ে টিকিয়ে রাখা। আমাদের সয়ংসম্পুর্ণ পাট শিল্পকেও এক সময় ভারত ঠিক এমন পরিকল্পিত ভাবে ধংশ করে দিয়ে সারা বিশ্বের পাট ব্যবসা আজ ভারত করায়ত্ত করেছে। ঠিক একই কায়দায় বর্তমানে আমাদের উদীয়মান বস্র শিল্প ধংশের পায়তারা করছে! সরকার এবিশয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই বস্র শিল্প ধংশ হয়ে যাবে। বিনিয়োগকৃত ৬০ হাজার কোটি টাকা বিফলে যাবে। প্রত্যক্ষ ভাবে প্রায় ৫ লক্ষ দক্ষ-আধা দক্ষ শ্রমজীবি বেকার হয়ে যাবে। ৫ লক্ষ শ্রমজীবি বেকার হয়ে যাওয়া মানে-৫ লক্ষ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ্য হওয়া!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:৫৬
৩১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×