somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবারো সার! প্রসংগ

২৬ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশী এক কৃষক কৃষিতে সার ব্যাবহারে এক যুগান্তকারী ইতিহাস সৃস্টি করতে যাচ্ছেন!তার নাম "চাষা আঃ আজিজ"(ওনার নামটা উনি ওভাবেই লিখতে/ বলতে গর্ব বোধ করেন)। জনাব আঃ আজিজের গ্রাম সিংহের চালা, থানা-ঘাটাইল, জেলা-টাংগাইল। বয়স প্রায় ৫০ বছর। তিনি লেখা পড়া করেছেন ক্লাশ সিক্স পর্যন্ত। কৃষি তার পেশা।

বাংলাদেশে বছরে শুধু কৃষিখাতেই ২২/২৩ লক্ষ টন ইউরিয়া সার প্রয়োজন হয়। তাছারাও ডেয়ারী-পোল্ট্রি-ফিশ ফুড, গরু মোটা তাজা করন, অসাধু মুড়ি উতপাদন কারীদের এবং চোরা কারবারীদের চাহিদা মিলিয়ে দেশে প্রতি বছর ২৮/৩০ লক্ষ টন ইউরিয়া সারের প্রয়জন হয়। যার মুল্য ৩০ হাজার কোটি টাকা। আমাদের কৃষগণ BRRI এবং BADC'র বিজ্ঞানীদের উপদেশ মত প্রতি বিঘা জমিতে ডাইরেক্ট ছিটানো পদ্ধতিতে জমির প্রকার ভেদে ৫০-৫২ কেজি ইউরিয়া সার ব্যাবহার করে থাকেন। জনাব আঃআজিজ গত ১৬ বছর যাবত নিজস্ব একটা ফরমুলা আবিস্কার করে ইউরিয়া সার তার জমিতে প্রয়োগ করে ১০০ ভাগ সাফল্য পেয়েছেন। এই পদ্ধতির নাম করণ নিজেই করেছেন-"আজিজ ফর্মুলা"। যেখানে প্রথা মাফিক প্রতি বিঘায় ৫০-৬০ কেজি সার প্রয়গ করা হতো-সেখানে আঃ আজিজ তার জমিতে মাত্র ২ কেজি সার ব্যাবহার করেন!

জনাব আঃ আজিজ জমিতে ফসল বোনার পুর্বে কোন সার প্রয়োগ করেননা। জমিতে ধান এর বীজ রোপন করার ১৫ দিন পর প্রথম ২০০ গ্রাম সার ১৬ লিটার পানিতে মিশ্রন করে এক বিঘা জমিতে রোপীত ধানের চারায় স্প্রে করে সার প্রয়োগ করেন। একমাস পর আবারো ঐ একই পদ্ধতিতে ৪০০ গ্রাম সার ধানের চারায় সার স্প্রে করেন।এই ভাবে বিভিন্ন পর্যায় সাকুল্যে ২ কেজি সার পানির সাথে মিশ্রন করে স্প্রে করেন ধান কাটার পুর্ব পর্যন্ত। আঃ আজিজের ভাষ্য হলো-"গাছের খাবারের প্রয়োজন। তাদের দাঁত নেই। শিকড় এবং পাতা দিয়েই গাছ তাদের খাবার গ্রহন করে।তাই সে গাছকে তার খাবার সরাসরি গাছের পাতায় দিয়ে দিচ্ছে। গাছ তার খাবার পাতা থেকে গ্রহন করছে মাত্র"! যেহেতু আজিজ সাহেব সরাসরি লিকুইড সার গাছের পাতায় স্প্রে করে দিচ্ছেন-সেহেতু সারের মোটেই অপচয় হচ্ছেনা। সেক্ষেত্রে উপকার হচ্ছে-প্রতিনিয়ত সার ব্যবহারের কারনে মাটিতে বেশী পরিমানে গন্ধক জমে মাটির উর্বরা শক্তি হারাচ্ছেনা। মিশ্রিত সার ধান ক্ষেতের পানিতে মিশ্রনের মাছ সহ অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী মারা যাচ্ছেনা বা বংশ বিলুপ্ত হচ্ছেনা। ধানের জন্য দেয়া সারমিশ্রিত পানির সাথে জমিতে অন্যনান্য আগাছা, ঘাষ জন্ম কম হওয়ার কারনে জমিতে নিড়ানী কম দেয়া লাগে।সরাসরি মাটিতে সার ব্যবহার নাকরার ফলে মাটির উর্বরা শক্তি অক্ষুন্ন থাকে।

আঃ আজিজের দেখা দেখি ঘাটাইল এলাকার ৮০ ভাগ কৃষক "আজিজ ফর্মুলা" প্রয়োগ করে ১০০ ভাগ সাফল্য লাভ করেছেন। বিশয়টা জানাজানি হবার পর চ্যানেল আই'র শ্রদ্ধেয় শাইখ সিরাজ জনাব আঃ আজিজের সাথে দেখা করেন এবং সরেজমিনে আঃআজিজের বিভিন্ন কৃষি খামার সহ এলাকার অন্যান্য কৃষদের খামার পরিদর্শন করেন। তিনি বিশয়টা নিয়ে বাংলাদেশ ধান/কৃষি গবেষনা ইনিস্টিটিউটের, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদস্থ্য কর্মর্তাদের সাথে আলোচনা করেন। বাংলাদেশ ধান/কৃষি গবেষনা ইনিস্টিটিউটের, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিস্টহগণ তাদের গবেষনাগারে "স্যাম্পল কৃষি খামার" করে গত দুই বছর যাবত পরীক্ষামুলক সব ধরনের ধান এবং অন্যান্য কৃষি/সব্জী/ ফসল চাষ করে সাফল্য লাভ করেছেন।

যারা "আজিজ ফর্মুলা" নিয়ে গবেষণা করেছেন-তাঁরা হলেন ডঃ আব্দুল মজিদ সিনিয়র কৃষি গবেষক এবং এগ্রোনমিস্ট BRRI, ডঃ জ্যোতিষ চন্দ্র বিশ্বাস , এগ্রোনমিস্ট BRRI এবং BADC'র এগ্রো প্রকৌশলী জনাব ইফতেখারুল ইসলাম উল্যখিত প্রতিস্টহানের সম্মানিত গবেষকগণের মতে জনাব আজিজের ফর্মুলা সঠিক তবে সার এবং পানির মিশ্রনে সামান্য পরিবর্তন করতে হবে বলে মতামত দিয়েছেন। কারন সুদুর প্রশারী মাটির উর্বরা শক্তি রক্ষা করার জন্য সামাণ্য সার জমিতেও প্রয়োগ করতে হবে।
শ্রদ্ধেয় শাইখ সিরাজ "আজিজ ফর্মুলা" নিয়ে যোগাযোগ করেছিলেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেমব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয় এর কৃষি গবেষনা অনুষদে। তারাও লিখিত ভাবে "আজিজ ফর্মুলা" সঠিক বলে রায় দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন- তারাও "আজিজ ফর্মুলা" নিয়ে আরো উচ্চতর গবেষনা করবেন এবং শীঘ্রই তাদের একটা প্রতিনিধি দল চাষা আঃ আজিজ এর সাথে দেখা করতে বাংলাদেশে আসার কথা জানিয়েছেন!
জনার শাইখ সিরাজ এবং BRRI এবং BADC'র গবেষকগণ জানিয়েছেন-সারা দেশে কৃষকগণ যদি "আজিজ ফর্মুলা" ব্যাবহার করেন-তাহলে দেশে ৩২ লক্ষ টন ইউরিয়া সারের যায়গায় মাত্র ৮ হাজার টন ইউরিয়া সার প্রয়োজন হবে এবং দেশে চল্লিশ হাজার কোটি টাকা থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়ে মাত্র ৮ হাজার কোটী টাকার ইউরিয়া সারের পিছনে ব্যয় হবে!


বিশয়টা নিয়ে চ্যানেল আই'র শাইখ সিরাজের কৃষি বিশয়ক অনুষ্ঠান "রিদয়ে মাটি ও মানুষ"(রিদয় সঠক বানান্ আমি টাইপ করতে জানিনা), বাংলাদেশ টেলিভিশনের "কৃষি দিবা নিশি" এবং দৈনিক ইত্তেফাকের "মাটি ও মানুষের কৃষি"-তে নিয়মিত আলোচনা এবং লেখালেখি হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ২:২৬
২৬টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×